-
যে রঙে রং নেই
যে রঙে রং নেই আবু জাফর খান কারও কারও প্রেম থাকে কেউ কেউ প্রেমে যায় অস্থিরন্ধ্রের আর্দ্র ঢেলে তারপর বিমূর্ত শিল্পের মতো ছেঁড়া কাগজের রং… ভাসানের মৌন ফিউনারাল। শোকযাত্রার রং কখনো কালো কখনও বৈধব্যের পালক-ওড়া বকফুল; আদতে ভাসানের এইসব কিছুই থাকে না আগুনে পোড়া হাওয়ার মতো কিছু দাহ থাকে শুধু। প্রেম কখনও বাতাসে দোলা বনের আকুল অনঙ্গ প্রভার মতো বৈজু বাওরার গান; কখনও জল কখনও ক্যাথরিন দ্য গ্রেটের রতিবিলাস কখনও ভিনসেন্ট ভ্যানগগের মতো খ্যাপা কিংবা পল গঁগ্যার মাওরি প্রেমিকা তহুরার আদিম নগ্নতা। প্রেম মাখে না কোনও কিছুই! জলে ভেজা বনস্থলির ছায়া ছায়া মাটির গন্ধ… থাকুক বা না থাকুক কখনও…
-
তিনি একজন মহিলা মুক্তিযোদ্ধা (শেষ পর্ব)
তিনি একজন মহিলা মুক্তিযোদ্ধা (শেষ পর্ব) খলিফা আশরাফ যুদ্ধাহত মহিলা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ময়নার তখন আলাদা সম্মান। এলাকার মানুষের কাছে তার বীরের মর্যাদা। একদিনের অপাংতেয় ময়না এখন সকলের গর্বের প্রতিক। ক্র্যাচে ভর করা ময়নাকে যেদিন এলাকায় নিয়ে যাওয়া হলো, অবাক হয়ে সে দেখলো তার জন্যে আয়োজন করা হয়েছে বীরোচিত সংবর্ধনা। প্যান্ডেল টাঙ্গিয়ে স্টেজ করা হয়েছে, দুপাশে বাঁশের মাথায় বাঁধা হয়েছে মাইক, তিনকোণা করে রঙ্গিন কাগজ কেটে আর বাংলাদেশের ছোট ছোট পতাকা দড়িতে আঠা দিয়ে লাগিয়ে দিয়ে সাজানো হয়েছে চারিদিক। উঁচু করে তৈরি করা হয়েছে স্টেজ। তার উপর টেবিল, পেছনে কয়েকটা চেয়ার। মাঝখানের চেয়ারটা একটু বড়। উপরে সুন্দর একটা তোয়ালে বিছানো।…
-
রক্তে স্বাধীনতার নেশা, শহিদের রক্ত
রক্তে স্বাধীনতার নেশা মোহাম্মদ সেলিমুজ্জামান ভোরের আলো না ফুটতেই ঠা… ঠা… শব্দে কেঁপে উঠে গ্রাম-জনপথ চারিদিকে বারুদের গন্ধ, নারী শিশুর চিৎকারে আকাশ বাতাস ভারী হচ্ছে, মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতরাছে হাজারও মানুষ মাঠ-ঘাট, মেঠোপথ ভেসে যাচ্ছে রক্তে ধানক্ষেত, পাটক্ষেত, নদী তীর, বাজার মোড় লাশের স্তুপ দাউ দাউ আগুনে পুড়ছে বাড়িঘর, দোকানপাট গ্রাম-জনপথ অগণিত বৃদ্ধ, নর-নারী, শিশু-কিশোর, যুবক-যুবতী দৌড়াচ্ছে দীর্ঘশ্বাসে, মুখে একই শব্দ মিলিটারি আসছে…মিলিটারি আসছে… পিছনে ছুটছে, জলপাই রঙের ট্যাঙ্ক, অস্ত্র তাক করা জীপ সবার কণ্ঠে গগণ বিদারি কান্না বাঁচাও…বাঁচাও… কিশোরী, যুবতী, গৃহবধূ হায়নার থাবায় রক্তাক্ত ছিন্ন দেহ, অরু বেয়ে রক্তের স্রোত গুলিতে এফোঁড়-ওফোঁড় হওয়া বৃদ্ধের পেটের নাড়ী ঝুলছে, তারপরও বাঁচার…
-
তিনি একজন মহিলা মুক্তিযোদ্ধা (৪র্থ পর্ব)
তিনি একজন মহিলা মুক্তিযোদ্ধা (৪র্থ পর্ব) খলিফা আশরাফ ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ। কাল রাত্রে ঢাকায় হাজার হাজার নিরস্ত্র নিরীহ বাঙ্গালীকে হত্যা করলো বর্বর পাকিস্তানি বাহিনী। নৃশংস হত্যাকান্ড। রাস্তা-ঘাট, অলি-গলি, ঘরে-বাইরে সর্বত্র লাশের স্তুপ। পুড়িয়ে দেয়া হলো ঘর-বাড়ি, দোকান-পাট, অফিস-আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ঢাকা নগরী ভাগাড়ে পরিণত হলো। জীবন বাঁচাতে সব কিছু ফেলে ঊর্ধ্বশ্বাসে মানুষ পালাতে শুরু করলো। কেউ পারলো, আবার কেউবা পালাতে গিয়ে বেঘোরে প্রাণ দিলো। ২৬ মার্চে হাজি সাহেব দোকানও খোলেননি, বাইরেও বের হননি। বংশাল মেইন রোডের সাথেই তিন তলা বিশাল বাড়ি তাঁর। দোকানের ম্যানেজারও তাঁর বাড়িতেই ছিলেন। কিন্তু কেউই বাঁচতে পারেনি। কসাই পাকসেনারা নির্মমভাবে হত্যা করেছিলো পুরো পরিবারকে।…
-
অন্তরালে, ছোটোবেলার মতো, পুনশ্চ প্রশ্ন করেছি
অন্তরালে পূর্ণিমা হক কোথায় দেখেছি তারে আবছা আঁধারে মনে না পড়ে চেতনে মননে, সেই অবয়ব জেগে ওঠে মানসপটে অতীতের অলৌকিকতায়। কোথায় দেখেছি তারে নয়নের নদীতট নিসর্গের নিরন্তর স্রোতে খুঁজে ফিরি হৃদয়-ক্যানভাসে। সেই মুখ, চকিত নয়ন কল্পনা কিংবা বাস্তবতায় অর্ধবৃত্তাকারে মন-মোহনার সৈকতে আছড়ে পড়ে বারে বারে। কোথায় দেখেছি তারে সুনশান গাঁয়ের মাঠে, বটবৃক্ষের ছায়ায়, প্রকৃতির নির্জনতায় চেনাজানা অনুভূতির অন্তরালে মনে না পড়ে। কোথায় দেখেছি তারে নেইকো স্মরণে, ভুলেই তো যাই সে সব কথা যখন ছিলো সত্তাজুড়ে চেনা-জানা অনুভূতির অন্তরালে। আরও পড়ুন পূর্ণিমা হকের কবিতা- ভালোবাসি তোমায় হৃদয়পটে সন্ধ্যা ছো্বেটোলার মতো সেই যে ছোটোবেলায় বাড়ির পাশের কাদাজলে মাছ ধরতে গিয়েছিলাম,…
-
রক্তে জ্বলে একাত্তর (শেষ পর্ব)
রক্তে জ্বলে একাত্তর (শেষ পর্ব) এ কে আজাদ দুলাল হঠাৎ রাশেদ এসে ঢুকে দেখে, তার মা একজন অপরিচিত লোকের সাথে কথা বলছে। ইতোপূর্বে এ ধরনের লোককে এ এলাকায় কখনো নজরে পড়েনি। তার মা-র চোখে চোখ পড়তেই বলল, ── তোমাদের সভার কাজ শুরু করো। এই ভদ্র লোকের সাথে কথা বলে আসছি। একটু সময় লাগবে। রাশেদ কোন কথা না বাড়িয়ে বের হয়ে গেল। পঁত্রিশ বছর পর রাশেদার জীবনে কি ঘটেছিল, সে সব ঘটনা মাহি সুলতানের জানা ছিলো না। দীর্ঘ দশ বছর বিদেশে কাটিয়ে দেশে ফিরে গার্মেন্টস ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে। সময়ের সাথে সাথে ভুলে যায় অতীতের অনেক ঘটনা। একজন মানুষের জীবনে তো…
-
তিনি একজন মহিলা মুক্তিযোদ্ধা (৩য় পর্ব)
তিনি একজন মহিলা মুক্তিযোদ্ধা (৩য় পর্ব) খলিফা আশরাফ একদিন রাতে মধুকে তাঁর ঘরে ডেকে নিয়ে হাজি সাহেব বললেন, “ওই মধু তুই তো বহুতদিন আমার এইহানে কাম করছস। তর মেলা ট্যাকা জইমা গ্যাছে। আমারও বয়স হইচে। কহন কি হয়া যায় কয়া তো যায় না। আমি দেনা রাইখ্যা মরবার পারুম না। তর ট্যাকা তুই হিসাব কইরা লইয়া ল।” মধু কোন কথা না বলে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে। লোকটাকে সে বাবার মতো শ্রদ্ধা করে। এই মানুষটা কখনো মধুকে কর্মচারীর মতো দেখেননি। সন্তান স্নেহেই আগলে রেখেছেন। বিশাল বাড়িতে তাঁর অন্য দুই ছেলের মতো মধুর জন্যেও আলাদা একটা রুম দেয়া হয়েছে। এক সময়ের নিরাশ্রয়…
-
কবির পাণ্ডুলিপি, এই মাটিই বাঁধে লাশের ঘর
কবির পাণ্ডুলিপি জিন্নাত আরা রোজী কবির কবিতায় ফুটে উঠে বিচিত্র রূপ। কত না ভাষায় ছেঁয়ে যায় তার পাণ্ডুলিপি, নিপুন হাতের লেখাগুলো কখনো হাসায়, কখনো কাঁদায়। অনুভূতির জোয়ারে ভেসে যায় মন নামের এক অদৃশ্য শক্তি; সাগরের ঢেউয়ের মতো খেলে তার শব্দগুচ্ছ কখনো শরতের কাশফুলকে আরাধ্য করে, কখনো হেমন্তের নবান্নের উৎসবে মাতোয়ারা হয়ে; আবার কখনো বসন্তের বাহারি আয়োজন নিয়ে। ছুটে চলা ট্রেনের মতো থামে না তার কলম, যতই আসুক গ্রীষ্মের ঝড়, অথবা নামুক বর্ষা সে তো নিঃশব্দের দেয়াল ভেঙে তার স্বপ্নের কথা লিখবেই! শীতের বিষণ্ন রোদ, কিম্বা ধোঁয়া ধোঁয়া কুয়াশার দর্পনে ঢাকে না তার হৃদয়। কত গল্প, কত কথা, স্মৃতি হয়ে…
-
রক্তে জ্বলে একাত্তর (৫ম পর্ব)
রক্তে জ্বলে একাত্তর (৫ম পর্ব) এ কে আজাদ দুলাল রাত নয়টার মধ্যে ভোট গণনা শেষ। সবগুলো নির্বাচনী কেন্দ্রের ভোট যোগফলে রাশেদ বেসরকারি ভাবে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছে। তৃতীয় স্থানে অবস্থান সরকারি দলের প্রার্থী শমসের সুলতান ওরফে শমু সুলতান। স্থানীয় নেতাদের কোন্দলের ফসল। এমপি সাহেব রাশেদকে নীরব সমর্থন দিয়েছেন। রাশেদের পরিবারের সঙ্গে এমপি সাহেবের বাবার ঘনিষ্ট সম্পর্ক ছিলো, এখনো আছে। তাঁরা আজ কেউ জীবিত নেই। কিন্তু রেখে গেছেন সুসন্তান। আগামীকাল নতুন একটা সুর্য উঠবে, নতুন আলো নিয়ে। আর নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান নতুন পথ দেখাবে, এই ইউনিয়নের তরুণ সমাজকে। সকাল নয়টার মধ্যেই রহিম মাস্টার তার স্কুলের উদ্দেশে বের হলেন। তার স্কুল ভোট কেন্দ্র…
-
তিনি একজন মহিলা মুক্তিযোদ্ধা (২য় পর্ব)
তিনি একজন মহিলা মুক্তিযোদ্ধা (২য় পর্ব) খলিফা আশরাফ গরিব মুদি দোকানদার সহ-মুক্তিযোদ্ধা শফি সাহেব, তাঁর ঘরের বারান্দায় থাকতে দিয়েছেন বীর মহিলা মুক্তিযোদ্ধাকে। বাঁশের চাটাই দিয়ে চার পাশটা ঘিরে দিয়ে একটা ঘরের মতো করা হয়েছে। সেখানেই থাকেন তিনি। কোন ভাড়া দিতে হয় না। শুধু তিন বেলা খাবারের জন্যে প্রতি মাসে যা পারেন দেনতিনি। তাও ধরাবাঁধা কিছু নেই। কোন মাসে একেবারেই দিতে পারেন না। আবার কোন মাসে হয়তো প্রয়োজনে মুক্তিযোদ্ধা ভাতার পুরোটাই দিয়ে দেন। এ নিয়ে আশ্রয়দাতার কোন অনুযোগ বা চাহিদা নেই। একজন অসহায় সহ-মুক্তিযোদ্ধাকে যে তিনি সহযোগিতা করতে পারছেন, সেটাই বড় কথা তার কাছে। বরং সবিনয়ে তিনি বলেছেন, “আপা, আমি…