-
নিঃশব্দে নীড়ে ফেরা ।। ৪র্থ পর্ব ।। ধারাবাহিক উপন্যাস ।। এ কে আজাদ দুলাল
নিঃশব্দে নীড়ে ফেরা ।। ৪র্থ পর্ব এ কে আজাদ দুলাল রাকার দাদা ছিলেন একজন কৃষক পরিবারের সন্তান। মাত্র তিন বছর বয়সে মাকে হারিয়ে এতিম হয়ে যান শিশু আলা উদ্দিন। সবাই আলা বলে ডাকত। শিশু আলাকে কোলে তুলে নেন তার বাবার খালাতো বোন। আলার বাবার বয়স কম তাই পুনরায় দ্বিতীয়বার বিয়ে করে সংসারী হয়েছিল। বাবার সংসার হতে আস্তে আস্তে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ফুফার অবস্থা সে রকম ভালো নয়। ফুফাতো ভাইদের সাথে ভর্তি হয় মক্তবে। তখনকার দিনে প্রাইমারি স্কুলের সংখ্যা ছিল নগন্য। গ্রামেই মক্তব। সেখানে আরবি, বাংলা এবং ইংরেজি শিক্ষা দেওয়া হতো। ফুফাতো ভাইদের চেয়ে আলা ছাত্র হিসেবে মেধাবী ছিলেন। ফুফার নেক…
-
নিঃশব্দে নীড়ে ফেরা ।। ৩য় পর্ব।। ধারাবাহিক উপন্যাস ।। এ কে আজাদ দুলাল
নিঃশব্দে নীড়ে ফেরা ।। ৩য় পর্ব এ কে আজাদ দুলাল মনিকা চাকমা রাঙামাটি পাহাড়ি এলাকার এক নিম্নবিত্ত পরিবারের মেয়ে। দু’ভাই বোনের সংসার তাদের বাবা-মায়ের। মনিকা বড়ো। পরিবারের মোট চার জন সদস্য আর আছে একটা গোরু-ছাগল এবং সব সময়ের সাথি বিশ্বস্ত টমি নামের কুকুর। বাবা মাইল তিনেক দূরে একটা কারখানার শ্রমিক। সেই সকালে কারখানায় যেত আর ফিরত রাত করে। রাতে খাবারের পর ঘুমিয়ে পড়ত, দেখা হতো না বাবার সাথে। সকালে ঘুম ভাঙার আগেই বাবা কাজে চলে যেত। সারাদিন মন খারাপ করে টমি আর দুটো বোবা জন্তু নিয়ে তাদের দিন কেটে যেত। শুধু সাপ্তাহিক একদিন ছুটি ছিল; তাদের আনন্দের পরিপূর্ণ দিন। সারাদিন…
-
নিঃশব্দে নীড়ে ফেরা ।। ২য় পর্ব।। ধারাবাহিক উপন্যাস ।। এ কে আজাদ দুলাল
নিঃশব্দে নীড়ে ফেরা ।। ২য় পর্ব এ কে আজাদ দুলাল মেয়েকে বিদায় দিয়ে ঘরে ঢোকেন রাকিব আহমেদ। এর আগে এভাবে কখন একাকী ঢাকার রাইরে যায়নি রাকা। একটা অশান্তি বয়ে বেড়াচ্ছে মনের ভেতরে। মনে মনে মেয়ের মঙ্গল কামনা করেন। পনের মিনিটের মধ্যে রেলস্টেশনে পোঁছে যায় রাকা। সকালে যানজট কম থাকে। বারিধারা হতে রেল স্টেশন বেশি দূরে নয়। গাড়ি হতে নেমেই দেখা হয়ে যায় মনিকার সাথে। একজন কুলি আগেই ঠিক করে অপেক্ষা করছিল মনিকা। কুলি তাদের লাগেজ মাথায় আর হাতে নিয়ে আগে হাঁটতে থাকে। তারা দুজন পিছনে হাঁটছে। রেল স্টেশন রাকার কাছে অদ্ভুত লাগছে। বিভিন্ন ধরনের মানুষের আনাগোনা। অপরিষ্কার, অপরিচ্ছন্ন এবং অস্বাস্থ্যকর…
-
নিঃশব্দে নীড়ে ফেরা ।। ১ম পর্ব।। ধারাবাহিক উপন্যাস ।। এ কে আজাদ দুলাল
নিঃশব্দে নীড়ে ফেরা ।। ১ম পর্ব এ কে আজাদ দুলাল প্রবল আপত্তির মুখে শেষ পর্যন্ত বাবার কথা রাখতে হলো রাকার। এককালের জাঁদরেল সিএসপি কর্মকর্তা রাকিব আহমেদ রাকার বাবা। চলনে, কথাবারতায় ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী। বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে রের্কড নম্বর পেয়ে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকারী তিনি। কিছু দিন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছিলেন। শিক্ষকতা জীবনে বৈচিত্র্য আনতে পারেননি এই তুখোড় মেধারী রাকিব আহমেদ। স্বপ্নের জাল বঙ্গোপসাগরের ধুঁ ধুঁ দৃষ্টির বাইরে। সিনিয়র বড়ো ভাইদের সরকারি চাকরিতে প্রশাসনিক ক্ষমতার কথা শুনে নিজের ভেতরে নতুন স্বপ্ন জেগে ওঠে। তার চাই উপরে ওঠা আর ক্ষমতা। বলতে গেলে এই বয়সে তাকে ক্ষমতার মোহ পেয়ে বসেছিল। সারা পাকিস্তানে সুপিরিয়র সার্ভিস প্রতিযোগিতা…
-
শেষ বিকেলের ঝরা ফুল (শেষ পর্ব)
শেষ বিকেলের ঝরা ফুল (শেষ পর্ব) এ কে আজাদ দুলাল এত সময় ধরে ফাহির কাহিনি শুনে যাচ্ছিলেন। এবার মুখ খুললেন। – আচ্ছা, কী কারণে বিচ্ছেদ হলেন তা বললেন না? – যদি অনুমতি এবং সময় দেন তাহলে বলতে কোনো দ্বিধা করব না। – শুনব। বলুন। আজ অন্তত একজন মানুষ পেয়েছে তাকে তো বলা যাবে। যেসব কারণে সুজিতের সাথে ঘর করা হয়নি তার মধ্যে ছিল মাত্র উনিশ বছর বয়সে দৈহিক মিলন এবং সন্তান জন্ম না দেওয়া। এটাই তো জীবনের উদ্দেশ্য হতে পারে না। কিন্তু আমি কখনো চিন্তা করে দেখেনি যে আমি কোন পরিবাবে, কোন পরিবেশ জন্ম নিয়েছি। ভাবনাটা ছিল বিপরীত মেরুর। –…
-
শেষ বিকেলের ঝরা ফুল (২য় পর্ব)
শেষ বিকেলের ঝরা ফুল (২য় পর্ব) এ কে আজাদ দুলাল সুজিত রায়হান আশ্চর্য হয়ে শুনে যাচ্ছে সেই উনিশ বছর বয়সি চঞ্চল মেধাবী তরুণীকে। তার ইচ্ছের প্রতি সম্মান দেখিয়ে ডির্ভোস দিয়েছিল। আজ তার এই পরিণতি কেন। সে যদি নিজে না বলে তবে বলার অনুরোধ করবে না। কারণ এটা তার একান্তই ব্যক্তিগত বিষয়। হয়তো ফাহিমিদা ফাহি মনে করবে কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা দিচ্ছে। তাকে অপেক্ষা করতে হলো না। ফাহি একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বলল, – যদি অনুমতি দেন, বলতে চাই। আপনাকে বলে শেষ বেলায় যদি কিছুটা শান্তি পাই। যদিও আপনার সঙ্গে শুধুই বিয়ে হয়েছিল কিন্তু কোনো দৈহিক মিলন হয়নি। আমাদের সমাজে বিয়ে স্বামী-স্ত্রীর…
-
শেষ বিকেলের ঝরা ফুল (১ম পর্ব)
শেষ বিকেলের ঝরা ফুল (১ম পর্ব) এ কে আজাদ দুলাল এই মাত্র ফাল্গুনের শেষ বিকেলে এক পশলা বৃষ্টি হয়ে গেল। রাজধানী শহর ঢাকার বাইরে গাজীপুরে অবস্থিত একটা দামি রিসোর্টে আয়োজিত একটা অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে এসেছেন সুজিত রায়হান। সমাজকল্যাণ অধিদপ্তরে অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত মহাপরিচালক। বলতে গেলে পঁচিশ বছর চাকুরি মেয়াদ শেষ হতেই স্বইচ্ছায় অবসরে গিয়েছেন। যোগ দিয়েছেন একটা খ্যাতমানা আন্তর্জাতিক এনজিওতে। একটু নিরিবিলি এবং একাকি থাকতে পছন্দ করেন। জীবনকে একটা নিয়মে বেঁধে নিয়েছেন। শখ বইপড়া এবং ভ্রমণ। নিজ জন্মভূমিতে কোথায় কী আছে তা দেখে বেড়ানো আর বইপড়া। নতুন লেখকদের বই পড়তে বেশি আগ্রহী। একটু আগে অতিথিদের সাথে খাওয়া শেষ করেছেন। খাওয়া…
-
চোখের আলোয় দেখেছিলেম (শেষ পর্ব)
চোখের আলোয় দেখেছিলেম (শেষ পর্ব) এ কে আজাদ দুলাল বাড়িওয়ালি খালাম্মা কোনো কথা না বলে শুধু চোখের পানি ফেলে, ছেলে রাজনকে নিয়ে রুম হতে বের হয়ে আসে। জামী কিছু সময় চুপচাপ থেকে খাবার খেতে বসে। তার মনে আজ খুব আনন্দ। একটা পরিবারকে ধ্বংসের কিনারা হতে রক্ষা করতে পেরেছে। যাকে সাহায্য করছে আজ পর্যন্ত তার দেখা মেলেনি। সে কি ভাবছে। আসলে কি মেয়েটির প্রতি করুণা না-কি এই অসহায় পরিবারকে ধ্বংসের হাত রক্ষার মন-মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে এসেছে। হয়ত সময় একদিন বলে দিবে। তবে না দেখে তো কারও প্রেমে পড়া যায় না। এমন কি তার কোনো প্রশংসা শুনেনি। এখন পর্যন্ত তাকে নিয়ে…
-
চোখের আলোয় দেখেছিলেম (৫ম পর্ব)
চোখের আলোয় দেখেছিলেম (৫ম পর্ব) এ কে আজাদ দুলাল জামী এখন চাকুরিতে যোগদানের বিষয় নিয়ে ভাবছে না। হাতে বেশ সময় আছে। একবার যোগদান করলে সময় দিতে পারবে না। কিন্তু যার জন্য এত ভাবনা সে কি আদৌ নিয়োগপত্র পেয়েছে। চুপিসারে সব কাজ সম্পন্ন করেছে। কিন্তু যদি নিয়োগপত্র পেয়ে থাকে তার মতো বেশ কিছু ডকুমেন্টস তেরি করতে হবে। যেমন পুলিশ তদন্ত সংক্রান্ত; তবে অন্যান্য কাগজ হয়তো অফিস থেকে সাহায্য পেয়ে যাবে। তিন দিন অতিবাহিত হতে চলেছে। তিন তলায় আগের মতো ভূতুরে বাড়ির মতোই আছে। রাজন নিয়মিত জামীর কাছে পড়ে যাচ্ছে তবে প্রয়োজনীয় কথা ছাড়া বাড়তি কোনো কথা বলে না। দুপুরে খাবার…
-
চোখের আলোয় দেখেছিলেম (৪র্থ পর্ব)
চোখের আলোয় দেখেছিলেম (৪র্থ পর্ব) এ কে আজাদ দুলাল রাজনের সাথে জামীর বেশ জমে উঠেছে। রাজন খোলাখুলি মনে কথা বলে। তবে নিজেদের দুর্ঘটনার কথা মুখ ফুটে এখনো জামীকে বলেনি। জামী অপেক্ষায় আছে একদিন বিস্তারিত ঘটনা সে জানতে পারবে। রাজনের এইচএসসি পরীক্ষা সামনে আবার জামীর যে কোনো সময় লিখিত পরীক্ষার কার্ড পেয়ে যেতে পারে। ছোটো চাচির বড়ো ভাইয়ের ছেলে মিশু। ছোটো চাচুর বিয়ের সময় দেখেছিল। চেহারা মনে নেই। এখন বিসিএস (পুলিশ) ক্যাডারের অফিসার। ছোটো চাচির লেখা একটা চিঠি মিশু ভাইকে দিতে হবে। অনেকদিন হলো যাওয়া হয়নি। অফিসের ঠিকানা নিয়েছে। ডিএমপির হেড অফিসে বসেন। মিষ্টি ভাইয়ার কাছ হতে ঠিকানা নিয়েছে। মিষ্টি…