-
রক্তে জ্বলে একাত্তর (শেষ পর্ব)
রক্তে জ্বলে একাত্তর (শেষ পর্ব) এ কে আজাদ দুলাল হঠাৎ রাশেদ এসে ঢুকে দেখে, তার মা একজন অপরিচিত লোকের সাথে কথা বলছে। ইতোপূর্বে এ ধরনের লোককে এ এলাকায় কখনো নজরে পড়েনি। তার মা-র চোখে চোখ পড়তেই বলল, ── তোমাদের সভার কাজ শুরু করো। এই ভদ্র লোকের সাথে কথা বলে আসছি। একটু সময় লাগবে। রাশেদ কোন কথা না বাড়িয়ে বের হয়ে গেল। পঁত্রিশ বছর পর রাশেদার জীবনে কি ঘটেছিল, সে সব ঘটনা মাহি সুলতানের জানা ছিলো না। দীর্ঘ দশ বছর বিদেশে কাটিয়ে দেশে ফিরে গার্মেন্টস ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে। সময়ের সাথে সাথে ভুলে যায় অতীতের অনেক ঘটনা। একজন মানুষের জীবনে তো…
-
রক্তে জ্বলে একাত্তর (৫ম পর্ব)
রক্তে জ্বলে একাত্তর (৫ম পর্ব) এ কে আজাদ দুলাল রাত নয়টার মধ্যে ভোট গণনা শেষ। সবগুলো নির্বাচনী কেন্দ্রের ভোট যোগফলে রাশেদ বেসরকারি ভাবে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছে। তৃতীয় স্থানে অবস্থান সরকারি দলের প্রার্থী শমসের সুলতান ওরফে শমু সুলতান। স্থানীয় নেতাদের কোন্দলের ফসল। এমপি সাহেব রাশেদকে নীরব সমর্থন দিয়েছেন। রাশেদের পরিবারের সঙ্গে এমপি সাহেবের বাবার ঘনিষ্ট সম্পর্ক ছিলো, এখনো আছে। তাঁরা আজ কেউ জীবিত নেই। কিন্তু রেখে গেছেন সুসন্তান। আগামীকাল নতুন একটা সুর্য উঠবে, নতুন আলো নিয়ে। আর নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান নতুন পথ দেখাবে, এই ইউনিয়নের তরুণ সমাজকে। সকাল নয়টার মধ্যেই রহিম মাস্টার তার স্কুলের উদ্দেশে বের হলেন। তার স্কুল ভোট কেন্দ্র…
-
রক্তে জ্বলে একাত্তর (৪র্থ পর্ব)
রক্তে জ্বলে একাত্তর (৪র্থ পর্ব) এ কে আজাদ দুলাল রাত আস্তে আস্তে গভীরে তলিয়ে যাচ্ছে আর দুই চেয়ারম্যান প্রার্থী ভোটের শেষ অংক হিসেব কষে চলেছে। খান্দানি সুলতান পরিবার চায় ক্ষমতাসীনদের কাঁধে ভর দিয়ে আবার সমাজে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে। আর অন্য দিকে একজন শিক্ষিত যুবক চায় একজন সৎ নিবেদিত এ প্রজন্মের প্রতিনিধি হয়ে দেশের সঠিক নেতৃত্ব দিতে। মাথায় শত চিন্তা নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে রাশেদ। ভোরে উঠতে হবে। আগামীকালের ভোটযুদ্ধে তাকে জিতে হবে, তবে নির্বাচনের মাধ্যমে। ভোট কারচুপি কাউকে করতে দেয়া হবে না। সকাল ৮টা হতে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ চলবে। সব কেন্দ্রে সাহসী নির্লোভ পুলিং এজেন্ট দেয়া হয়েছে।…
-
রক্তে জ্বলে একাত্তর (৩য় পর্ব)
রক্তে জ্বলে একাত্তর (৩য় পর্ব) এ কে আজাদ দুলাল গ্রামের বয়স্ক ছামাদ শেখ এসে শামসুর চায়ের দোকানের সামনে দাঁড়ায়। কেটলির পানি টগবগ করে ফুঁটছে আর ফুঁটুন্ত পানি বাষ্প হয়ে কেটলির নল দিয়ে বের হয়ে, সামনে বসা বাবুল সরদারের মুখে লাগছে। বাবুল সরদারের মনের ভেতরে কেমন যেন তাপ অনুভব করছে। এটা কিসের অনভূতি বুঝে উঠতে পারছে না। ভাবছে আজকের সকালটা কেমন যাবে। ছামাদ শেখ চারদিকে তাকিয়ে বাবুল সরদারের পাশে গিয়ে বসলো। যদিও বাবুল সরদার বয়সে বেশ ছোট। কিন্তু ছেলেটা সব খবর রাখে। ─ বাবুল, বড় সুলতানের মেজ ছেলে নাকি বাড়ি আয়ছে? ─ হ। হুনচি। তাকে তো কোনদিন চামড়ার চোহে দেহিনি।…
-
রক্তে জ্বলে একাত্তর (২য় পর্ব)
রক্তে জ্বলে একাত্তর (২য় পর্ব) এ কে আজাদ দুলাল নির্বাচনী হাওয়ায় মুখরিত এলাকা। নমিনেশন পেয়েছে সরকারি দলের পক্ষে শমসের সুলতান। এ নিয়ে হাওয়ায় ভাসছে নানান গুজব। কেউ বলছে বিশ লক্ষ, আবার কেউ এক ডাকে পঞ্চাশ পর্যন্ত। এ যেন কোরবানি ঈদের গরুর মূল্য। তবে এটা ঠিক টাকার পরিমাণ যাই হোক, শমসের সুলতান মোটা অর্থ খরচ করেছে, তো বটেই। তা না হলে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান সৈয়দ রাশেদ হাসান; সুদর্শন,মার্জিত এবং সুশিক্ষিত; উপজেলা পর্যায়ে সরকারি দলের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক; তাকে নমিনেশন হতে বঞ্চিত করলো। এছাড়াও তিনি একটা বেসরকারি কলেজের শিক্ষক। স্বামী-স্ত্রী দুজনই শিক্ষক। এলাকায় শিক্ষিত পরিবার বলে খ্যাত। বিসিএস পরীক্ষা কৃতকার্য হয়েও,…
-
রক্তে জ্বলে একাত্তর (১ম পর্ব)
রক্তে জ্বলে একাত্তর (১ম পর্ব) এ কে আজাদ দুলাল গাজীপুরের কোনাবাড়ি পোশাক শিল্প এলাকা বলে খ্যাত। রাস্তার দুপাশ দিয়ে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছে গার্মেন্টস ফ্যাক্টরীগুলো। পরপর নামগুলো পড়ে যাচ্ছে শমসের সুলতান ওরফে শমু সুলতান। একটা চারতলা গার্মেন্টস ফ্যাক্টরীর সামনে এসে থমকে দাঁড়ায় সে। এখানে তার প্রথম আগমন। ঢাকায় বেশ কয়বার এসেছে কিন্তু কোনাবাড়িতে এই প্রথম পদার্পণ। বিপদে পড়ে এই খাটাস টাইপের লোকের কাছে আসা। সম্পর্কে আপন চাচাতো ভাই। এক কালে প্রাণের বন্ধু ছিলো। প্রায় ত্রিশ-পঁত্রিশ বছর পর দেখা হবে। চেহারা কেমন হয়েছে কে জানে। গার্মেন্টসের মালিক। ভবনের ওপর লেখা আছে মাহি গার্মেন্টেস ফ্যাক্টরী। সহজেই মিলে গেল সোনার চাঁদ হরিণ। আসার…
-
একজন কিশোরীর প্রেম (শেষ পর্ব)
একজন কিশোরীর প্রেম (শেষ পর্ব) এ কে আজাদ দুলাল ──জানো বৌদি, দেশ ছেড়ে যাওয়ার ঠিক রাতে কি ঘটেছিলো? আমরা দেশ ছেড়ে চলে যাবো এটা মোটামুটি সিদ্ধান্ত ছিলো। সব জায়গায় কেমন যেন থমথমে আতঙ্কভাব। নিরাপত্তার অভাব সবার ভেতরে। আমাদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বিক্রি হয়ে গেছে। যারা কিনেছিল তারাই বাবাকে আশ্বাস দিয়েছিলো সুযোগ বুঝে বর্ডার পাড় করে দিবে। তারা কথা রেখেছিলেন। কিন্তু বর্ডার পাড় হয়ে আমাদের বেশ ক’মাস কষ্টে দিন কাটাতে হয়েছিল। মামা আমাদের সব ব্যবস্থা করে রেখেছিলো। তখন গ্রামের কথা খুব মনে পড়তো। দিন তো সমান যায় না। ──প্রতিবারের মতো এবাবও দূর্গাপূজা দেখতে গেছি ঠাকুর বাড়িতে। বিমলদা তার বন্ধুদের নিয়ে রাতে…
-
একজন কিশোরীর প্রেম (২য় পর্ব)
একজন কিশোরীর প্রেম (২য় পর্ব) এ কে আজাদ দুলাল ──সাগরদা কেমন আছো? সাগর ক্রমান্বয়ে কেমন যেন অতল চিন্তার ভেতরে ঢুকে যাচ্ছে। বিমল-বাসন্তীর পাতা এ কোন ধরনের ফাঁদে ফেললো তাকে। এটা নিছক মজা বা কৌতুক নয় তো? শীতের সকাল সাগরের শরীর ঘামছে। ফুলহাতা সোয়েটার পরেছে। অস্বস্তি বোধ করছে। এটা কি রসিকতা, না অন্য কিছু? ──বাসন্তীদি, তোমাদের বন্ধু ঘামছেন। ফ্যান চালু করে দাও। সাগরদা বলতো ছোট বেলায় তোমার কোন ফুল প্রিয় ছিলো? সাগর আরও আশ্চর্য হয়ে গেলো সরাসরি তুমিতে এবং ছোট বেলায় তার কোন ফুল প্রিয় ছিলো। হ্যাঁ, ছিলো তো বটেই। এই তো গাঁদা ফুল। এখনই হয়ত বলবে প্রতিদিন স্কুলে ফুলগুলো…
-
একজন কিশোরীর প্রেম (১ম পর্ব)
একজন কিশোরীর প্রেম (১ম পর্ব) এ কে আজাদ দুলাল শীতের সকাল। গ্রামে শীতের আমেজ আলাদা। ইচ্ছে করে বিছানায় শুয়ে থাকা যায় না। অনেক দিন পর সপরিবারে গ্রামের বাড়িতে এসেছে সাগর। গ্রামের লোকজন এবং আত্মীয়-স্বজনের কাছে সাগর নামেই পরিচিত। সমবয়সী এবং বয়োজ্যেষ্ঠ আত্মীয়-স্বজন এবং গ্রামবাসী তাকে এই নামে চেনে। এ প্রজন্মের অধিকাংশ ছেলে-মেয়ে তার নাম শুনেছে, তবে পরিচয় হওয়ার সুযোগ হয়নি। বছর দুয়েক হলো নিয়মিত গ্রামে যাতায়াতে অনেকেই এখন তাকে চেনে। তাদের সঙ্গে আড্ডা দেয় সাগর। সাগর বাড়িতে এলে আলাদা আনন্দের ঢেউ বয়ে যায়। যে ক’দিন ছেলে-মেয়ে নিয়ে থাকে, সবার সাথে মিলেমিশে থাকে। ছেলে-মেয়েরা বেশ আনন্দ করে অবকাশ সময় কাটিয়ে…
-
জোছনা মাখা আলো (শেষ পর্ব)
জোছনা মাখা আলো (শেষ পর্ব) এ কে আজাদ দুলাল হক সাহেবের পিছনে পিছনে পশ্চিম দিকের দরজা দিয়ে ঢুকতেই চোখে পড়ে লম্বা বারান্দা। বারান্দায় ডান দিকে পর পর দুটো কামরা। তালা দেয়া। তারপর রান্না ঘর। রান্না ঘরের সামনে ডাইনিং। বাম দিক পুরোটা গ্রিল দিয়ে আটকানো। বেশ বড় উঠোন এবং তারপর বিভিন্ন জাতের ফলজ গাছ। আছে বিভিন্ন জাতের ফুল গাছ। এটা একটা সৌখিন রুচিশীল শিক্ষিত ভদ্রলোকের বাড়ি এতে কোন সন্দেহ নেই। দু’ভাই একে অপরের দিকে তাকায়। আলো বুঝতে পারছে, এ রকম পরিবেশ দেখে মনে খটকা লাগছে দু’ভাইয়ের মনে। —কি, বিশ্বাস হচ্ছে না গ্রামে এ রকম একটা বাড়ি থাকতে পারে? এটা আমার…