-
প্রিয়তমার লাল চোখ (শেষ পর্ব)
প্রিয়তমার লাল চোখ (শেষ পর্ব) মোহাম্মদ সেলিমুজ্জামান মিজান সাহেব দ্রুত হোস্টেল থেকে বের হয়ে একটা রিকশা নিয়ে হোস্টেল অরবিন্দতে গিয়ে ব্যাগ নিয়ে এলো। তারপর সিট বুঝে নিয়ে চাবিটা হাতে করে রাঁধুনি রেস্টুরেন্টের দিকে রওনা দিলো। রাঁধুনি রেস্টুরেন্টে এসে দেখে রেস্টুরেন্টটি মোটামুটি ফিল-আপ। বসার জায়গা তেমন নেই। এমন সময় হঠাৎ দেখলো এক ভদ্র মহিলা তার দুই সন্তান নিয়ে নাস্তা করছে। সামনের সিটগুলো ফাঁকা । মনে পড়ে গেল তার সন্তানদের কথা, সে গিয়ে সামনের সিটে বসে পড়লো। মিজান সাহেব দেখলো বাচ্চাগুলো কী সুন্দর করে একাই ডাল দিয়ে পরোটা খাচ্ছে। কিন্তু তার ছেলেরা একা খেতে চায় না। তাদের গালে উঠিয়ে খাওয়াতে হয়।…
-
প্রিয়তমার লাল চোখ (৩য় পর্ব)
প্রিয়তমার লাল চোখ (৩য় পর্ব) মোহাম্মদ সেলিমুজ্জামান মিজান সাহেব বিকেল পাঁচটার দিকে কুড়িগ্রাম বাসস্ট্যান্ডে নামলো। নেমেই দেখে দুইটা আবাসিক হোটেল। একটার নাম সুফিয়া, অন্যটা অরবিন্দু। মিজান সাহেব হোটেল অরবিন্দুতে গিয়ে ম্যানেজারকে জিজ্ঞাসা করলো, — ভাই সিট হবে? — হবে, সিঙ্গেল না ডাবল? — সিঙ্গেল। ভাড়া কত? — এসি না নন এসি? — এসির ভাড়া কত? আর নন এসি কত করে? — এসির ভাড়া আটশত আর নন এসি সিঙ্গেল ছয়শত টাকা। এ তো অনেক ভাড়া। ঢাকার মতোই ভাড়া। এই মঙ্গা এলাকায় হোস্টেল ভাড়া এত! মিজান সাহেব হতাশ হয়ে গেল। যা টাকা আছে তা দিয়ে তো বেশি দিন চলা যাবে না।…
-
প্রিয়তমার লাল চোখ (২য় পর্ব)
প্রিয়তমার লাল চোখ (২য় পর্ব) মোহাম্মদ সেলিমুজ্জামান মিজান সাহেব চিন্তা করলো প্রতিদিনের ক্যাচক্যাচানি, ছেলেমেয়েদের অবহেলা আর ভালো লাগে না। কিছু দিন বাইরে থেকে আসি। আমার অনুপস্থিতি তারা ঠিকই টের পাবে। মিজান সাহেব রাগ করে কাপড়-চোপড় পাল্টিয়ে, বিছানায় শুয়ে পড়লো। মিজান সাহেবের স্ত্রী রান্না শেষ করে ছেলেমেয়েদের পড়াতে বসালেন। রাতের খাবার শেষে বিছানার কাছে এসে বললো, — ওষুধ খেয়েছো? মিজান সাহেব কোনো কথা বললো না। স্ত্রী এবার শুরু করলেন তার স্বভাব সুলভ অভিযোগ। — ঠিকমতো ওষুধ খাও না, মরে গেলে তোমার ছেলেমেয়ে দেখবে কে? আমি এ সংসার ছেড়ে চলে যাব। মিজান সাহেব চিন্তা করলো, বিকেলের নাস্তা নেই, রাতের খাবারের জন্যও…
-
প্রিয়তমার লাল চোখ (১ম পর্ব)
প্রিয়তমার লাল চোখ (১ম পর্ব) মোহাম্মদ সেলিমুজ্জামান বাবা, তুমি মাকে অত কথা বলো না তো, পারলে রান্না করে খাও। মা যা পেরেছে তাই করেছে। মেয়ে পারিয়া এ কথা বলতেই মিজান সাহেব বললো, — না, তাই বলে মাছের পিস এত ছোট করে কাটে? এতে তো একটুও মাছ নেই, শুধু কাঁটা। খেতেও আবার দাঁতের উপর পাটির মধ্যে খাড়া হয়ে ঢুকলো। কথাই তো ঠিক মতো বলতে পারছি না। তারপর আবার খাবো কী করে?” তুমিই তো বলেছ মাছ ছোট করে কাটতে। যাতে অনেকদিন খাওয়া যায়। মাছের যা দাম কেনার উপায় নেই। তাই ছোট করে কেটেছি। — কিন্তু পিছা? পিছাও কী ছোট করে কাটতে…
-
জয় বাংলা জয়, বঙ্গমাতা
জয় বাংলা জয় মোহাম্মদ সেলিমুজ্জামান পিতা তোমায় ভালো লাগে দেখতে মুজিব কোটে। কি চমৎকার দেখায় তোমার রাখলে পাইপ ঠোঁটে! কালো ফ্রেমের চশমা তোমায় মানায় ভালো বেশ পাজামা আর পান্জাবিতে-ই এলো বাংলাদেশ। তোমার চুলের উল্টো ভাজে জানায় ‘ডোন্ট কেয়ার।’ শত্রু তোরা অনেক করেছিস এবার বাংলা ছাড়। তোমার কথা ভালো লাগে ‘মুক্তির সংগ্রাম’ আগুল তুলে দেখিয়ে দিলে স্বাধীনতা তার নাম। আকাশ ছোঁয়া তর্জনীতে শত্রু পেল ভয়। বিশ্ববাসি দেখলো বসে বাংলা স্বাধীন হয়। বীর বাঙালি আওয়াজ দিলো শেখ মুজিবের জয় বাংলাদেশ স্বাধীন হলো জয় বাংলার জয়। আরও পড়ুন মোহাম্মদ সেলিমুজ্জামানের কবিতা- রক্তে স্বাধীনতার নেশা উইপোকাদের ঘরবসতি বঙ্গমাতা ঠিকানা আমার বঙ্গবন্ধু জয়…
-
ছোটবেলার ইদ ও আমি
ছোটবেলার ইদ ও আমি মোহাম্মদ সেলিমুজ্জামান ছোট্টবেলায় ইদ বলতে -আমার গ্রামে আর দশজন ছেলের মত আমার ইদ ছিল না। আমি খুব সুখের এবং দুঃখের দুই ধরনের অনুভূতি লাভ করেছি। সুখের অনুভূতি এমন যা আজও অনুভবে নিজেকে হারিয়ে যাই। আমাদের গ্রামের বাড়ি পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার সাতবাড়িয়া ইউনিয়নের গুপিনপুর গ্রামে। তখন আমি খুব ছোট্টো। এ টুকুই বলতে পারবো, আমার বাবা পরিবারের সবার জন্যই নতুন জামা-কাপড় কিনতেন। আমার পরিবার গ্রামের ধনী পরিবারের মধ্যে একটি ছিলো। আমার বাবা পরিবারের বড় ছেলে। তিনি দাদা-দাদী, দুই চাচা-চাচী, চাচাতো ভাইবোন, একমাত্র ফুফু, ফুফাতো ভাইবোন সবার জন্যই জামাকাপড় কিনতেন। ফুফু’র বাড়িতে আগেই নতুন কাপড় পাঠিয়ে দিতেন।…
-
রক্তে স্বাধীনতার নেশা, শহিদের রক্ত
রক্তে স্বাধীনতার নেশা মোহাম্মদ সেলিমুজ্জামান ভোরের আলো না ফুটতেই ঠা… ঠা… শব্দে কেঁপে উঠে গ্রাম-জনপথ চারিদিকে বারুদের গন্ধ, নারী শিশুর চিৎকারে আকাশ বাতাস ভারী হচ্ছে, মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতরাছে হাজারও মানুষ মাঠ-ঘাট, মেঠোপথ ভেসে যাচ্ছে রক্তে ধানক্ষেত, পাটক্ষেত, নদী তীর, বাজার মোড় লাশের স্তুপ দাউ দাউ আগুনে পুড়ছে বাড়িঘর, দোকানপাট গ্রাম-জনপথ অগণিত বৃদ্ধ, নর-নারী, শিশু-কিশোর, যুবক-যুবতী দৌড়াচ্ছে দীর্ঘশ্বাসে, মুখে একই শব্দ মিলিটারি আসছে…মিলিটারি আসছে… পিছনে ছুটছে, জলপাই রঙের ট্যাঙ্ক, অস্ত্র তাক করা জীপ সবার কণ্ঠে গগণ বিদারি কান্না বাঁচাও…বাঁচাও… কিশোরী, যুবতী, গৃহবধূ হায়নার থাবায় রক্তাক্ত ছিন্ন দেহ, অরু বেয়ে রক্তের স্রোত গুলিতে এফোঁড়-ওফোঁড় হওয়া বৃদ্ধের পেটের নাড়ী ঝুলছে, তারপরও বাঁচার…
-
বেআবরু মন, উইপোকাদের ঘরবসতি
বেআবরু মন মোহাম্মদ সেলিমুজ্জামান প্রেয়সি, তোমার ঠোঁটের ভাঁজের দাম দিয়েছি বিধবা মায়ের চোখের জলে; তোমার চোখের গহিন জলে ডুবেছি কত! গোলাপি ঠোঁটে, মায়াবি কেশের বুননে অনেক দাম দিয়েছি; তুমি কি জানো—তোমার কণ্ঠে ঝুলছে যে মালা, তাতে বেশ্যার দেহের ভাগ রয়েছে; তোমার হাতের কাঁকনে, মার্ডার কেসের মিথ্যা আসামি ঐ বৃদ্ধটির ভাগ রয়েছে; তোমার দামী গাড়িতে, অসহায় শহীদ পরিবারের ভিটা দখলদারের ভাগ রয়েছে; তোমার রুপশৈলীর ঐ কসমেটিক্সে, ধর্ষিতা নারীর ভাগ রয়েছে; প্রেয়সী, তুমি কি জানো—তোমার সুরম্য বাড়ি ও ফ্লাটে, ঐ যুবকের নেশার টাকার ভাগ রয়েছে; তোমার হাজার শাড়ির রকমারি ভাঁজে, ভূমিদস্যুর ভাগ রয়েছে; তোমার ঐ বেলুয়াড়ী ঝাড়বাতিতে, রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটেরার ভাগ…
-
স্বপ্ন জল (শেষ পর্ব)
স্বপ্ন জল (শেষ পর্ব) মোহাম্মদ সেলিমুজ্জামান মাঝে মধ্যে দু’জনের ক্যাম্পাসে দেখা হয়, হাই-হ্যালো হয়। তারপর চলে যায় যে যার গন্তব্যে। একদিন শিলা সীমান্তের কাছে এলো। বললো, __ভাই, আমি একটু সাহায্য চাই আপনার। তবে সাহায্য তো প্রায়ই করেন। এবার একটু ভিন্ন বিষয়। __বলো। __দুই একদিন বিকেলে ক্যাম্পাসে আপনি আমাকে সময় দিবেন। কারণ আমি বিপদের মধ্যে আছি। আমাকে অনেকেই বিরক্ত করে। আর সে-তো আছেই। সে আমার কাছে অনেক ক্ষমা চায়, মাফ চায়। আমি আর কোনো প্রেম-ভালোবাসায় জড়াবো না। আমি আমার সবকিছু গুছিয়ে রাখছি ভবিষ্যতের স্বপ্ন পূরণের জন্য। আমি বিসিএস পাস করলে আমার সব স্বপ্ন পূরণ হওয়া সম্ভব। তাই আপনি যদি সময়…
-
স্বপ্ন জল (২য় পর্ব)
স্বপ্ন জল (২য় পর্ব) মোহাম্মদ সেলিমুজ্জামান শিলার চেহারা খুবই সুন্দর! গ্রামের মেয়ে হলেও আলাদা একটা মাধুর্য্য ও লাবণ্য রয়েছে তার। যে কোনো ছেলে দেখলেই তার প্রেমে পড়তে চাইবে। কিন্তু শিলা কেন প্রেম করবে? গ্রামের মেয়ে চিন্তা ভাবনা করে কাজ করবে না? কি এমন হয়েছিল, যে তার সাথে তার প্রেম করতে হবে। এমন সব অগোছালো এলোমেলো কথা ও নানা প্রশ্ন নিয়ে কখন যেন কাদোয়া পৌঁছেছে সীমান্ত, টেরই পায়নি। সীমান্ত একটা ভ্যান ডেকে তাতে উঠে বসলো। রাস্তায় অনেক মানুষের সাথে দেখা, সবার সাথে হাই-হ্যালো করতে করতে তার নিজ বাড়ি গুপিনপুর পৌঁছে গেল। ঈদের ছুটি শেষে সীমান্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে এলো। একদিন টিএসসি’র…