-
তিনি একজন মহিলা মুক্তিযোদ্ধা (৩য় পর্ব)
তিনি একজন মহিলা মুক্তিযোদ্ধা (৩য় পর্ব) খলিফা আশরাফ একদিন রাতে মধুকে তাঁর ঘরে ডেকে নিয়ে হাজি সাহেব বললেন, “ওই মধু তুই তো বহুতদিন আমার এইহানে কাম করছস। তর মেলা ট্যাকা জইমা গ্যাছে। আমারও বয়স হইচে। কহন কি হয়া যায় কয়া তো যায় না। আমি দেনা রাইখ্যা মরবার পারুম না। তর ট্যাকা তুই হিসাব কইরা লইয়া ল।” মধু কোন কথা না বলে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে। লোকটাকে সে বাবার মতো শ্রদ্ধা করে। এই মানুষটা কখনো মধুকে কর্মচারীর মতো দেখেননি। সন্তান স্নেহেই আগলে রেখেছেন। বিশাল বাড়িতে তাঁর অন্য দুই ছেলের মতো মধুর জন্যেও আলাদা একটা রুম দেয়া হয়েছে। এক সময়ের নিরাশ্রয়…
-
তিনি একজন মহিলা মুক্তিযোদ্ধা (২য় পর্ব)
তিনি একজন মহিলা মুক্তিযোদ্ধা (২য় পর্ব) খলিফা আশরাফ গরিব মুদি দোকানদার সহ-মুক্তিযোদ্ধা শফি সাহেব, তাঁর ঘরের বারান্দায় থাকতে দিয়েছেন বীর মহিলা মুক্তিযোদ্ধাকে। বাঁশের চাটাই দিয়ে চার পাশটা ঘিরে দিয়ে একটা ঘরের মতো করা হয়েছে। সেখানেই থাকেন তিনি। কোন ভাড়া দিতে হয় না। শুধু তিন বেলা খাবারের জন্যে প্রতি মাসে যা পারেন দেনতিনি। তাও ধরাবাঁধা কিছু নেই। কোন মাসে একেবারেই দিতে পারেন না। আবার কোন মাসে হয়তো প্রয়োজনে মুক্তিযোদ্ধা ভাতার পুরোটাই দিয়ে দেন। এ নিয়ে আশ্রয়দাতার কোন অনুযোগ বা চাহিদা নেই। একজন অসহায় সহ-মুক্তিযোদ্ধাকে যে তিনি সহযোগিতা করতে পারছেন, সেটাই বড় কথা তার কাছে। বরং সবিনয়ে তিনি বলেছেন, “আপা, আমি…
-
তিনি একজন মহিলা মুক্তিযোদ্ধা (১ম পর্ব)
তিনি একজন মহিলা মুক্তিযোদ্ধা (১ম পর্ব) খলিফা আশরাফ বাসে করে মিরপুর যাচ্ছি। প্রচণ্ড ভিড়। সিট ছাড়াও গাদাগাদি করে দাঁড়িয়ে আছে অনেক যাত্রী। কয়েকজন মহিলা যাত্রীও রড ধরে দাঁড়িয়ে আছেন। এমনিতেই তিল ধারনের জায়গা নেই, তারপর আরও যাত্রী তুলতে “মিরপুর-১১/১২, মিরপুর-১১/১২” করে চেঁচাচ্ছে হেল্পার। গরমে অতিষ্ঠ কয়েকজন যাত্রী ক্ষেপে উঠলো, “ঐ মিয়া যাত্রী কি তোমার মাথায় লইবা?” কয়েকজন তো রেগে খুব বিশ্রী ভাষায় গাল দিলো হেল্পারকে। কিন্তু হেল্পার ছেলেটা খুবই বেহায়া টাইপের। ওইসব নোংরা গালটাল গায়ে না মেখে দাঁত কেলিয়ে হাসছে সে। আবার গদগদ বিনয় দেখিয়ে বলছে, “রাগ কইরেন না সাব। একটু পিছায়া খাড়ান, কম কইরা আরও ১০ জন লওন…
-
অন্ধকারে জ্বলে দ্বীপশিখা (শেষ পর্ব)
অন্ধকারে জ্বলে দ্বীপশিখা (শেষ পর্ব) খলিফা আশরাফ মেম্বারের ছেলেরা নিজেদের মধ্যে আলাপ আলোচনা করে এভাবে আপোসে রাজি হয়ে গেলো। চেয়ারম্যান সাহেব বললেন, ── ঠিক আছে, আমি একটু শুকুর আলির সাথে কথা বলে নেই। আমার মনে হয়, তার পাছেও শিক্ষিত লোক আচে। তা না হলি সে DNA টেস্ট বুঝতো না। সে জন্যে, সব গোপন ভাবেই করা লাগবি। তোমরা এখন যাও, খবর দিলি আসো। পরদিন সকালে শুকুর আলিকে আসবার জন্য খবর দিলেন তিনি। শুকুর আলি কাজ কাম সেরে বিকালে এলো। চেয়ারম্যান সাহেব তাকে নিয়ে একা বসলেন। মেম্বারের ছেলেদের সাথে আলোচনার কথা গোপন রেখেই বললেন, ── দ্যাখো শুকুর আলি, তোমরা সগলেই আমার…
-
অন্ধকারে জ্বলে দ্বীপশিখা (২য় পর্ব)
অন্ধকারে জ্বলে দ্বীপশিখা (২য় পর্ব) খলিফা আশরাফ পরদিন সকালেই জজ কোর্টে ছুটলো শকুর আলি। মাস দেড়েক পরে কোর্ট থেকে মতিন মেম্বারের নামে DNA টেস্টের জন্য সমন জারি হল, সিভিল সার্জনকে দুই মাসে মধ্যে DNA টেস্টের রিপোর্ট দাখিল করতে নির্দেশ দিলো কোর্ট। কোর্টের সমন এলাকায় একেবারে হৈচৈ ফেলে দিলো। অনেক দিনের পুরনো প্রায় মৃত বিষয় আবার আলোচনার প্রধান আকর্ষণ হয়ে দাঁড়ালো। মতিন মিয়া মুখে এটাকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিতে চাইলেও মনের কছে সঙ্কিত হয়ে উঠলেন। তিনি চেয়ারম্যানকে সাথে নিয়ে শহরের সবচেয়ে বড় উকিলের কাছে গেলেন। তাঁর পরামর্শেই urgent fee দিয়ে আর্জির নকল তুললেন। উকিল সাহেব মনোযোগ দিয়ে আর্জিটা পড়লেন। তারপর…
-
অন্ধকারে জ্বলে দ্বীপশিখা (১ম পর্ব)
অন্ধকারে জ্বলে দ্বীপশিখা (১ম পর্ব) খলিফা আশরাফ তার নাম শুকুর আলি। দশাসই শরীর। ছয় ফুটের মতো লম্বা। মেধহীন পেটা শরীর। প্রচণ্ড শক্তি গায়ে। ২৭/২৮ বছর বয়স। নিতান্তই গরীব। নাজিরগঞ্জ বাজারে পাটের কুটিতে কুলির কাজ করে সে। তাদের কাজ হচ্ছে পাটের বেল কুটি থেকে নৌকায় তুলে দেয়া। এক একটা বেলের ওজন তিন মণ সাড়ে তিন মণ। বহনকৃত বেল গুনে মজুরী। এ সব ভারী বেল অনায়াসে বহন করে সে। অন্য কুলিদের মাঝেমধ্যেই জিরিয়ে নিতে হয়, কিন্তু শুকুর আলি একটানা কাজ করে। কোন কুলি তাৎক্ষণিক কোন সমস্যায় পড়লে তার কাজটাও করে দেয় সে। সবাই ভালোবাসে তাকে। তার সহমর্মিতা আর শারীরিক শক্তির কারণেই…
-
দূরবর্তী তুমি একাত্তর
দূরবর্তী তুমি একাত্তর খলিফা আশরাফ তোমাকে এখন আর ছুঁতেই পারি না একাত্তর আমার নাগাল থেকে ক্রমাগত দূরবর্তী তুমি শপথের পাঠ ভুলে আজ আমি হয়েছি পাতক লজ্জায় অতি সংকুচিত কত আর উচ্চতায় যেতে পারি আমি? বামনের হাত আমার পারে না স্পন্দিত-স্পর্শ করতে বিপুল অবয়ব তোমার কেবলই ফিরে আসি ব্যর্থতার গ্লানিতে ভেসে ভেসে, আমার অস্তিত্বের সাথে প্রাণময় বাঁধা আছো তুমি সেই কবে থেকে তোমার মুক্তিলগ্নে অগ্নিঝরা রণাঙ্গন হতে, তখন স্থির প্রতিজ্ঞায় প্রত্যেয়ী কথা ছিলো স্বাধীনতা-স্বাদ আদিগন্ত প্রতিঘরে পৌঁছে দেবো সোনার বাংলার প্রশান্ত সৌরভ সহাস্য বিলাবো চৌদিকে, ধানের মৌ মৌ ঘ্রানে জুড়াবে কিষাণের প্রাণ সৌভাগ্যের অমল হাসি উৎকীর্ণ হবে শ্রমিকের ঠোঁটে মেহনতি মানুষের…
-
চাইনি এমন স্বদেশ
চাইনি এমন স্বদেশ খলিফা আশরাফ চাইনি কষ্ট-দগ্ধ এমন স্বদেশ আমি রক্তে ভেজা তপ্ত জন্মভূমি পাপাচারীর চাকায় পিষ্ট ধর্ষিত শান্তি অনাবিল ঘাতকের উন্মত্ততা খণ্ডিত শবদেহের নিলাজ মিছিল, চাইনি এমন দেশ সাধের আবাস তপ্ত উনুন গনগনে লাভা দুর্বহ পোড়ায়, ঝরায় নিত্য খুন যেখানে ঘাতক দুর্জন কর্তা অধিশ্বর তাদের নির্দেশে ওঠা-নামা করে বৈরী সময়-স্বর, চাইনি এমন দেশ সবিশেষ মিথ্যার কারুকাজ সত্য নির্বাসনে, অসত্যই চালায় তক্ততাজ সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে গলিত-গন্ধ বিষবাস্প ছড়ায় অষ্ট প্রহর কাটে দুঃসহ যাতনায়, চাইনি এমন দেশ যেখানে মৃত্যু অঝোর ধারায় নামে দিবস মধ্যযামে যেখানে অসুর বেসুরে সুরের ভনিতা করে করতালি আর অশেষ সমাদরে যেখানে পাদ্রী পুরোহিত ভিক্ষু মৌলানা নির্বিকারে…
-
এখানে স্নিগ্ধ সকাল
এখানে স্নিগ্ধ সকাল খলিফা আশরাফ লোকটার নাম শ্রী হরিদাস চন্দ্র হালদার। সবাই তাকে হারে হলদার বলেই ডাকে। তাতে সে কিছু মনে করে না। গরীবদের মনে করতে নেই, সবকিছু মেনে নিতে হয়। মৎস্য আহরণ বিক্রয়ই তার পেশা, জীবিকা নির্বাহের একমাত্র উপায়। খুব ছোট বেলায় বাবাকে হারিয়েছে, সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময় মা চলে গেলেন। ভিটেমাটি ছাড়া যে সামান্য জমি আছে, তাতে ২/৩ মাসের খোরাক হয়। তাতে বছর চলে না। বাধ্য হয়েই পৈতৃক মাছ বেচা পেশাতেই যুক্ত হতে হল তাকে। হরিদাস দীর্ঘাঙ্গ, পেটা শরীর। বেশ পৌরুষদীপ্ত। কিন্তু হাড়ভাঙ্গা খাটুনিতে এক সময়ের ফর্সা রং জলে ভিজে, বৃষ্টিতে পুড়ে এখন তামাটে, আগের ঔজ্বল্য আর…
-
পাথরে শৈবাল খেলে
পাথরে শৈবাল খেলে খলিফা আশরাফ সিদ্দিকের সাথে দেখা হল বই মেলাতে। বিনতির ভার্সিটিমেট সে। কিন্তু বিনতি সেই সিদ্দিক আর এই সিদ্দিককে মেলাতে পারছে না কিছুতেই। এ যেন অন্য কোন সিদ্দিক। ক্লিন সেভ, জিন্স প্যান্টের সাথে লাল টি সার্ট, চোখে শোভন রিমলেস ফ্রেমের চশমা, ঘাড় অবধি ঝাঁকড়া চুল, একেবারে নিখুঁত পরিপাটি আধুনিক। দারুণ স্মার্ট। সাথে সুন্দরী এক শেতাঙ্গিনী। স্টলে স্টলে ঘুরে ঘুরে বই কিনছে। অথচ সে যখন ভার্সিটিতে ফিজিক্সে প্রথম ভর্তি হয়, তখন সবাই ওকে ‘ক্ষাত সিদ্দিক’ বলতো। ওর কথাবার্তা আচরণেও ছিলো প্রচুর গ্রাম্যতা। খুব ধার্মিক ছিল সিদ্দিক। পরকালে অবধারিত ফজিলতের জন্য জীবনে কোনদিন দাড়ি কাটেনি সে। সব সময় মাথায়…