-
ঘনঘটা
ঘনঘটা জাহাঙ্গীর পানু গভীর রজনী হবে কী প্রত্যাশিত ভোর? নতুন আলোয় হাসবে কী কুয়াশাচ্ছন্ন প্রকৃতি? আচমকা রাত জেগে চিন্তাক্লিষ্ট ভাবাবেগ নিয়ে নিশাচর পাখির সাথে মিতালি। নতুন আলোয় উদ্ভাসিত ভোরের অপেক্ষায় চৌদ্দ শিকায় বন্দিদের আর্তনাদ কোনো দিশা খুঁজে পায় না হাওয়ায় উড়তে থাকা সাদা সিংহ শাবকের দল। অভিনয়ের আগুনে জীবন্ত চিতায় পোড়ে শত মানুষের স্বপ্ন। আতঙ্কিত সিংহাসনের কাঁপুনিতে রাজপথে রক্তিম হয় গার্মেন্টসের সাদা সুতো। উদাস দুপুরে আকাশের পানে ছলছল করে চেয়ে থাকে পিতৃস্নেহ বঞ্চিত শিশুর চোখ; আবার কবে আসবে ফিরে আপন গৃহে। জনগণের সেবায় নিয়োজিত পাইক পেয়াদারা আজ সিংহাসনের খুটি ধরে বসে আছে; যদি আবার পরে যায়, উন্মত্ত হাওয়ায়। থমথমে রাজপথের…
-
শীতার্ত, ফায়ার ফাইটার সীতাকুণ্ড
শীতার্ত রাফিয়া লাইজু কিলিজ তোমরা যারা দালান কোঠায় কিংবা অট্টালিকায় থাক তারা কি কখনও আমাদের খোঁজ রাখ? অপরিচ্ছন্ন-জীর্ণশীর্ণতায় বসবাস প্রতিনিয়ত তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য ভরা হেয়তায় ভাসমান একটু আশ্রয়, একটু খাবারের জন্য কত যুদ্ধ করতে হয় রোজ! কখনও ফুটপাতে, কখনও ওভার ব্রিজের নিচে, বস্তিতে… কখনও বা স্টেশনের প্ল্যাটফরমে কিংবা ঝুঁকিপূর্ণ রাস্তার ধারে… ক্ষুধার তাড়নায় কখনও বা তোমাদের উচ্ছিষ্টের খোঁজে ডাস্টবিনে… আবার কখনও বা আবর্জনার স্তূপে….কুকুরের সাথে সন্ধি! ক্যান পানীয় বোতল-প্লাস্টিক বা পরিত্যক্ত জিনিস টোকাই বলে… তোমরা যারা আমাদের নাম দিয়েছ টোকাই… হ্যাঁ, আমরা গৃহহীন-বস্ত্রহীন জীবিকার দুর্ভাবনায় জর্জরিত। একটু আশ্রয়, একটু উষ্ণতার খোঁজে বহুল কাঙ্ক্ষিত…উৎকণ্ঠিত দৃষ্টিতে… সূর্যের তীব্রতার অপেক্ষায় দিন শুরু হয় কুয়াশার চাদর…
-
বাংলা ভাষার দুর্দশা
বাংলা ভাষার দুর্দশা তাহমিনা খাতুন দুখিনী বাংলা কাঁদে, কাঁদে আমার মায়ের ভাষা যেদিকেই চাই, দেখি শুধু হায় তাহার দুর্দশা! ভাষার মান রাখিবে বলিয়া, বাংলার সন্তান পিচ ঢালা পথে ঢালিয়া দিল, আপন প্রিয় প্রাণ, “রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাই” গর্জিল দৃপ্ত শপথে তপ্ত শোণিত ঢালিয়া দিল, কঠিন সে রাজপথে। বিদেশি প্রভুর রক্ত চক্ষু, উপেক্ষিয়া অনায়াসে রফিক, শফিক, বরকত সেদিন, রক্ত গাঙেতে ভাসে, যে ভাষার তরে জীবন সঁপিল শফিউর, জব্বার, সে ভাষার তরে কারও কারও আজ, ঘৃণা ভরা অন্তর। বাংলা ভাষারে উপেক্ষিয়া চলে, বিদেশি ভাষার বন্দনা বুঝি না এ কোন আত্মগ্লানি, আত্মপ্রবঞ্চনা, ভিনদেশি ভাষা আসীন আজ,আত্ম অহমিকায় বাংলা ভুলিতে ব্যস্ত যেন, না…
-
খুঁজি স্বাধীনতা
খুঁজি স্বাধীনতা জহুরা ইরা একটি স্বাধীন দেশ বাংলাদেশ আছে যার নিজস্ব পতাকা, মানচিত্র জাতীয় রাষ্ট্রিয় প্রতীক আছে জাতীয় দিবস, সংগীত কিন্তু স্বাধীনতা কোথায়? নারীর চলার পথ আজ কন্টকাকীর্ণ শিশু, কিশোরী, কুমারী, বধু, মাতা হয় বঞ্চিত, লাঞ্ছিত, ধর্ষিত, দূর্বৃত্তদের লোলুপ দৃষ্টির ঘায়, তবে স্বাধীনতা কোথায়? শিশু কিশোরকে হতে হয় অপহরণ হরণ হয় তাদের ন্যায্য অধিকার খর্ব করা হয় বেঁচে থাকার অধিকার অর্থ লোভীদের অশুভ অর্থ লিপ্সায় তবে স্বাধীনতা কোথায়? কর্মশেষে ঘরে ফিরে আসা প্রিয়জনের অধীর প্রতিক্ষার অবসানে এসে পৌছে প্রাণহীন দেহ মানুষ খেকো মানুষের থাবায় তবে স্বাধীনতা কোথায়? কষ্টে অর্জিত কিঞ্চিত ধন সাধ করে কেনা প্রিয়জনের উপহার মানুষ আকৃতির সব…
-
মরা নদী, শ্রেষ্ঠ মানুষ, শিক্ষা গুরু
মরা নদী মো. হাতেম আলী ফেলে আসা স্মৃতিগুলো মরূঝড়ে এলোমেলো নিমিষে হারিয়ে গেলো ভালোবাসার ঘর। তুমিহীনা এ জীবন বাকহীন সারাক্ষণ অনুভবে এ-ভূবন ধু-ধু বালুচর। এক ডালে দুটি ফুল বাতাসে খেলেছি দোল হাসি-গল্পে মশগুল থাকতাম দু’জনাতে। কি এমন ছিল ভুল যার লাগি ভাঙে কুল ভেবে হই বিহ্বল জেগে নিশী রাতে। পাষাণে বাঁন্ধিয়া হিয়া গেলি বন্ধু পর করিয়া কাঁন্দি বসে তোর লাগিয়া বিষন্ন বদনে। করি আমি এই মিনতি কিঞ্চিৎ সময় থাকে যদি দেখে যেও ভরা নদী শুকাইছে যৌবনে…! আরও পড়ুন মো: হাতেম আলীর কবিতা- পাশ্চাত্য শিক্ষা সুশিক্ষার অভাব মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব শ্রেষ্ঠ মানুষ উঁইপোকা তুই ভালোই ছিলি মাটির ডিবিতে…
-
নিশুতি রাতের সনদ, রাতের ভূচিত্র
নিশুতি রাতের সনদ আবু জাফর খান মধ্যরাতে মুখোশ পরা কজন লোক- একটা ডেডবডি এনে বলল, ‘ডাক্তারবাবু, লিখে দিন মেয়েটা সুইসাইড করেছে’। না লিখলে – কাল খবরের কাগজের শিরোনাম হবেন, ‘আততায়ীর হাতে একজন চিকিৎসকের মৃত্যু’ লিখে দিন! বিষাদ চোখে তাকালাম – মৃত মেয়েটির দিকে, জ্যোৎস্নায় ভরে গেল ঘর ভেসে গেল বুক বানভাসা জলের তোড়ে, আমার আকাশে কাজল মেঘ! লিখে দিলাম, যেভাবে লেখা হয় ভেজা শালিকের গল্প যেভাবে লেখা হয় কাতর প্রেমের কবিতা যেভাবে কফিনে পেরেক পুঁতি আমরা যেভাবে দেয়ালে তৈরি করি ক্ষত, যেভাবে নাজারেথের যিশুকে ক্রুশবিদ্ধ করব বলে- তৈরি করি ইতিহাস, যেভাবে অসমাপ্ত কবিতার সামনে দাঁড়িয়ে বিলাপ করেন কবি, সেভাবে…
-
দ্বিধা, অপেক্ষা, ঘ্রাণ, গন্তব্য
দ্বিধা রিঙকু অনিমিখ এতো যে দ্বিধা কেন তবে রুমালে গেঁথেছো লাল সূর্য— নীলের নেপথ্যে সুইয়ের ডুব-সাঁতার—নিপুণ হাতের ঢেউ ঢেউয়ের চাতুর্য—কী এক রহস্য আঁকো অবিরত ! রুমালে রক্তের বিভ্রম। যতবার গেঁথেছো ফুটো বুকের পাজরে নীল বিন্দু; এতো যে বেদনার ভার নীরবে লুকিয়ে—কার দ্বিধা ভেঙে কামিজের ভাঁজে সাজাও গোপন উত্তাপ! আরও পড়ুন কবি রিঙকু অনিমিখের কবিতা- প্রচ্ছন্ন কুয়াশার দিন বটগাছ নিরবে বাড়ে অপেক্ষা মেঘের উৎস তবে নদী ধরা যাক, নীলিমার চোখে জল মেঘের শরীর থেকে উড়ে গেলো অন্ধকার এবং হিম হিম আর্দ্রতা নদীর আরশিতে কম্পন – ক্রমাগত নরম ত্রিশূল… বিদ্ধ জমাট ত্রিশূলে জল আজ জলকেলি জলের উঠোনে ফুলে ফেঁপে একাকার…
-
দূরবর্তী তুমি একাত্তর
দূরবর্তী তুমি একাত্তর খলিফা আশরাফ তোমাকে এখন আর ছুঁতেই পারি না একাত্তর আমার নাগাল থেকে ক্রমাগত দূরবর্তী তুমি শপথের পাঠ ভুলে আজ আমি হয়েছি পাতক লজ্জায় অতি সংকুচিত কত আর উচ্চতায় যেতে পারি আমি? বামনের হাত আমার পারে না স্পন্দিত-স্পর্শ করতে বিপুল অবয়ব তোমার কেবলই ফিরে আসি ব্যর্থতার গ্লানিতে ভেসে ভেসে, আমার অস্তিত্বের সাথে প্রাণময় বাঁধা আছো তুমি সেই কবে থেকে তোমার মুক্তিলগ্নে অগ্নিঝরা রণাঙ্গন হতে, তখন স্থির প্রতিজ্ঞায় প্রত্যেয়ী কথা ছিলো স্বাধীনতা-স্বাদ আদিগন্ত প্রতিঘরে পৌঁছে দেবো সোনার বাংলার প্রশান্ত সৌরভ সহাস্য বিলাবো চৌদিকে, ধানের মৌ মৌ ঘ্রানে জুড়াবে কিষাণের প্রাণ সৌভাগ্যের অমল হাসি উৎকীর্ণ হবে শ্রমিকের ঠোঁটে মেহনতি মানুষের…
-
ভালোবাসি যারে, কবি ওমর আলী
ভালোবাসি যারে পথিক জামান ভালোবাসি যারে পাইনিকো তারে এই পৃথিবীর মাঝে, তাই ঘুরি ফিরি এখানে-সেখানে মন বসে নাকো কাজে। জানি আমি কি যে করিয়াছি ভুল, তাই বাগিচায় ফুটিল না ফুল, গাহিল না গান পাখি না পেয়ে তোমায় কী করে ঘুমায় আমার তৃষিত আঁখি? তুমি ছিলে মোর নয়নের মনি তোমার কথা ভাবি যখনি মন কাঁদে বারে বার, মানে না বারণ, কাঁদে সারাক্ষণ কী করিব আমি তার? জান না তোমাকে কত ভালোবাসি, তাই শত বার ফিরে ফিরে আসি, তোমাকে দেখার ছলে, তোমার বিহনে বিরহ অনল ধিকি-ধিকি বুকে জ্বলে। কিভাবে বল থাকিব দাঁড়ায়ে? পাগল হয়েছি তোমাকে হারায়ে একুশ বছর আগে, আজও নিশিদিন…
-
হৃদয়পটে, আসবো ফিরে, দহন দাবানল
হৃদয়পটে পূর্ণিমা হক এখানে আকাশ নীল জমিনের বিস্তৃত সুবিশাল পরিসরে নির্জনতায়, নিঃশব্দে সাড়ে তিন হাত মাটির হৃদয়ে ঠিকানা হয়েছে তোমার। তোমার রেখে যাওয়া আনন্দ বেদনাগুলো করে বাস অবিচ্ছেদ্য আত্মীয়ের মতো- আমার হৃদয় পিঞ্জরে। ঋতু যায় ঋতু আসে জীবন শুধু যেতে পারে না ফেরার দেশে। তুমি তো নিসর্গের মতো- আপন আত্মার বিচ্ছেদে হয়েছো বিলীন, হাত রেখেছি আমি তোমার নিথর দেহে, শীতল কপালে- শেষ স্পর্শের অনুভূতিটুকু নিয়ে আমিও হয়েছি বিলীন। তবুও ব্যথার নীল বেয়ে জ্বলে ওঠে অন্য এক সুখ। পূর্ণিমার চাঁদ, স্নিগ্ধ হাওয়া, পাখির কলতান আকাশের নীলে তোমার বসতি যেনো নতুন দিনের মতো পুবাকাশে নতুন জীবন। তোমার প্রেরণাগুলো ঘাসফুল হয়ে রয়…