তাহমিনা খাতুন ছড়া, কবিতা, ভ্রমণ কাহিনী, নারীর অধিকার নিয়ে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে নিয়মিত কলাম লিখছেন। পেশায় একজন আইনজীবী। তিনি ১৯৫৭ সালের ১ মার্চ, পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার অন্তর্গত আহম্মদপুর ইউনিয়নের দ্বারিয়াপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

  • কবি-নজরুল
    কবিতা,  তাহমিনা খাতুন,  সাহিত্য

    কবি নজরুল

    কবি নজরুল তাহমিনা খাতুন সাম্যের কবি তুমি, তাই গাহিয়াছ সদা সাম্যের গান তোমার গানেতে উঠিয়াছে বাজি, মানবতার জয়গান। ধর্ম, বর্ণ, স্থান, কাল, পাত্র অভেদ করি তুমি উড়ায়েছ বিজয় কেতন, আহা! অপরুপ মরি। বিদ্রোহী কবি তুমি তোমার লেখনী হয়েছে শাণিত, প্রনমি আপন ভূমি। দ্রোহের মন্ত্রে জাগিয়াছিলো, নিদ্রাতুর জাতি উৎসাহিলে তাদেরে পাড়ি দিতে, কঠিন ভয়াল রাতি। যেথা দেখিয়াছ অন্যায়, আর যেথায় অবিচার গর্জিয়া উঠেছে লেখনী তোমার, হইয়াছে ক্ষুরধার বিদ্রোহী তুমি, কবিতায় তব জ্বালালে অগ্নি শিখা বাংলা কাব্যের ভালে পরায়েছ, জলন্ত রাজটীকা। কি দুর্মর বাজি ধরিয়াছ তুমি, ভয় শূন্য চিতে ‘শৃঙ্খল ভাঙার’ গান শুনায়েছো, তোমার অভয় গীতে। ‘শিকল পরা’ পায়ে বেজেছিল, শিকল ভাঙ্গার…

  • স্নেহশীল-কজন
    আত্মজীবনী,  সাহিত্য,  স্মৃতিচারণ

    স্নেহশীল কজন

    স্নেহশীল কজন তাহমিনা খাতুন   কয়েকজন স্নেহশীল মানুষের কথা মনের গভীরে আজও ছায়া ফেলে যায়। যাদের কথা মন হলে আজও মনের গহীনে চিনচিনে একটা ব্যথা অনুভব করি। যারা আমার রক্ত সম্পর্কীয় না হয়েও আমার শৈশবের স্মৃতির সঙ্গে এমন একাকার হয়ে মিশে আছেন যে, তাঁদেরকে বাদ দিয়ে স্মৃতিচারণ করাটা অসম্পূর্ণ রয়ে যাবে। আমাদের শৈশবে দেখেছি, যাদেরকে আমাদের গৃহস্থালী কাজে বা কৃষি কাজে নিয়োজিত করা হত, তাদেরকে পরিবারের একজন সদস্য হিসাবেই গণনা করা হত। আমার মা, চাচি অথবা ফুফুকে বায়োজ্যষ্ঠ কাউকে কখনো নাম ধরে ডাকতে বা অসন্মান করে কথা বলতে শুনিনি। তাদের অমুকের ‘মা’ অথবা ‘বাপ’ এমন সম্বোধন করতে শুনেছি। আমরাও ওনাদেরকে…

  • কিশোর-কবি
    কবিতা,  তাহমিনা খাতুন,  সাহিত্য

    কিশোর কবি

    কিশোর কবি তাহমিনা খাতুন   এক কিশোর, কিইবা বয়স এমন, মেতে থাকার কথা যার দূরন্তপনায় অথচ সে অবাক হয়, জন্মেই  ক্ষুব্ধ স্বদেশ অবাক করে তাকে পৃথিবী অবাক তার কবিতার চরণে। বিশ্ব হতবাক, দেশলাইয়ের বারুদের মতো জ্বলে ওঠা এক কিশোর বিস্ময়ে চেয়ে রয় পরাধীন দেশ। লেখে সে কবিতা, সে কবিতা অন্তরে দোলা দেয় বিপ্লবী সুরে সে তো বুঝি কবিতা নয়, যেন স্ফুলিঙ্গ! দ্যুতি ছড়ায়, লাইনে লাইনে তার বিদ্রোহ, বিপ্লব তার ছত্রে ছত্রে! এ কোন ক্ষুদে বিদ্রোহী? এ যেন আর এক  বিদ্রোহী নজরুলের অভ্যুদয়, পরাধীন ভারতের গগণ তলে সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশুর চিৎকারে, যে  শুনতে পায় তীব্র প্রতিবাদ অন্যায় আর অসাম্যের বিরুদ্ধে, সে…

  • মে-দিবসের-গান
    কবিতা,  তাহমিনা খাতুন,  সাহিত্য

    মে দিবসের গান

    মে দিবসের গান তাহমিনা খাতুন   পয়লা মে দিনটি কেন ঘুরে আসে বার বার? দিনটি যে সব দুখী মানুষের, সাহসী হয়ে ওঠার। যুগ যুগ ধরে কঠিন আঁধারে, জীবন হতো যে পার সয়ে যেত শুধু, শত অন্যায় আর যত অবিচার। মানুষ তো নয় শ্রমিক যেন, ভারবাহী কোন প্রাণি জনম হতে জনমে টানিত অপমান আর গ্লানি। কল-কারখানার শ্রমিক মজুর সারা দিনমান খাটে তবুও তাদের ক্ষুধার অন্ন, অনেক কষ্টে জোটে। অন্ন নাই বস্ত্র নাই, নাইকো চিকিৎসা ধুঁকে ধুঁকে মরে তাদের শিশুরা, এমনই দুর্দশা। সারাটি দিনের খাটুনির পরে, যবে আসে ঘরে ফিরে ভাঙ্গা ছাউনিতে বৃষ্টির জল, ঘরটি ভাসিয়ে ছাড়ে। নাইকো শিক্ষা, নাইকো দীক্ষা, নাই…

  • ঈদুল-ফিতর
    কবিতা,  তাহমিনা খাতুন,  সাহিত্য

    ঈদুল ফিতর

    ঈদুল ফিতর তাহমিনা খাতুন   সাঁঝের আকাশে এক ফালি চাঁদ উঠেছে ফের হেসে ছুটিছে সবাই দেখিতে তাহারে, বড়ই ভালোবেসে। নিত্য দিন একই চাঁদ ওঠে, একই আকাশ কোলে সবার অলক্ষে ডুবে যায় ফের, মন কি সদাই দোলে? ঈদের খুশী এনেছে সে বহিয়া, বিশ্ব মুসলিম তরে আকাশ বাতাস তার বারতা জানায়, মহা আড়ম্বরেক। সাগর নদী সে কথা জানায়, ছলাৎ ছলাৎ গানে পাখ-পাখালি জানায় সে খুশী, তাদের কলতানে। হরেক রঙের পোশাক পরিবে খোকা খুকুর দল ফিরনী পোলাও পায়েস খাবে, হবে তারা উচ্ছ্বল। কিশোরী তরুনী মেহেদীর রঙে, রাঙাবে হস্ত খানি খুশী আনন্দ আর উচ্ছ্বলতায়, ভাসিবে তাহারা জান। আতর গোলাপ খুশবু ছড়াবে, সারাটি দুনিয়া জুড়ে…

  • নবতান
    কবিতা,  তাহমিনা খাতুন,  সাহিত্য

    নবতান

    নবতান তাহমিনা খাতুন   একটি বছর পার করে আবার এসেছে বৈশাখ, চারদিকেতে বাজছে বুঝি তাই, আনন্দেরই শাঁখ। ঢোল বাজে, সানাই বাজে, বাজে মোহন বাঁশি সেই সঙ্গে আরো বাজে, সবার হাতের কাঁসি। বছরের আজ প্রথম ক্ষণে, এই কামনা করি, শান্তি বারি ঝরে পড়ুক, সারা ভুবন ভরি। বছরের সব পঙ্কিলতা ধুয়ে মুছে যাক অমিয় ধারা দিয়ে আবার, জগতকে ভরাক। আসুক নেমে ধরনীতে, সোনালী এক ভোর, ঘরে ঘরে বাঁধুক সবাই ভালবাসার ডোর। দূর করে দিক আবর্জনা, দূর হোক সব পাঁক, পাহাড়, নদী, বন-বনানী জীবন ফিরে পাক। কালবোশেখীর রুদ্র রোষে অশান্তি হোক দূর, মধুর মায়ায় সবার জীবন করুক সে ভরপুর। জগতে আজ হয় যেন…

  • নীল-রক্ত
    কবিতা,  তাহমিনা খাতুন,  সাহিত্য

    নীল রক্ত

    নীল রক্ত তাহমিনা খাতুন   শ্বেত বর্ণ মানব, রক্তের রং নাকি তার নীল আজব কথা শুনে হাসে বুঝি বিশ্ব নিখিল। রক্তের রং সেকি হয় কভু নীল? শরীর চিড়িয়া দেখাক তবে, উন্মাদ বালখিল। নির্মম আর নিষ্ঠুরতায় যাদের ছিল না কোন জুড়ি, জগত জুড়িয়া আজও কি তারাই ঘোরাবে শক্তির ঘুড়ি? বাদামী, পীত, কাল মানুষেরা ছিল তাদের ক্রীতদাস, তাদেরে দমিতে জগত জুড়িয়া সাদারা চালাতো ত্রাস। ফন্দি ফিকিরে দখল করিল কতশত জনপদ, সব সম্পদ লুটে নিয়ে গেল শ্বেত রঙা হার্মাদ। নীল রক্তের দাবী করে তারা ভাবে নিজেদেরে শ্রেষ্ঠ, তাদের আজব ভাবনাখানি যে ছিল একেবারে ভ্রষ্ট। নীল রক্তের দাবীদার যারা তাদের ইতিহাস বলে, দয়া মায়া…

  • কবিতা,  তাহমিনা খাতুন,  সাহিত্য

    প্রশ্ন নারী দিবসে

    প্রশ্ন নারী দিবসে তাহমিনা খাতুন   নারী, সে নাকি মায়ের জাতি তবে সে কেন নিগ্রহ হতে, পায় না অব্যাহতি? পুত্র, সে জনম লভিল মায়ের উদরে পায় কি সে মা, যোগ্য মান কঠিন এ ভূধরে? কন্যা, সে একদা জ্যান্ত  যাইতো আঁধার কবরে নয় তো মরিতো নুনের বিষে, জানে তা জগৎ জুড়ে। নারীরে বানায় দেবী, গড়ে তারে দশভূজা রুপে! ষষ্ঠ উপাচারে পূজা দেয়, তারে পুষ্প আর ধুপে। দেবী মায়ের পূজা দেয় যবে, মঙ্গল প্রদীপ জ্বেলে, শুভ কাজে কেন পতি হারা নারী, দূরে যায় অবহেলে? সেদিন তো নয় অনেক দূরের সময়, পতির আয়ু হলে শেষ জলন্ত চিতায় জীবন্ত নারী, পুড়ে হতো নিঃশেষ! পঞ্চ…

  • বাংলা-ভাষার-দুর্দশা
    কবিতা,  তাহমিনা খাতুন,  সাহিত্য

    বাংলা ভাষার দুর্দশা

    বাংলা ভাষার দুর্দশা তাহমিনা খাতুন   দুখিনী বাংলা কাঁদে, কাঁদে আমার মায়ের ভাষা যেদিকেই চাই, দেখি শুধু হায় তাহার দুর্দশা! ভাষার মান রাখিবে বলিয়া, বাংলার সন্তান পিচ ঢালা পথে ঢালিয়া দিল, আপন  প্রিয় প্রাণ, “রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাই” গর্জিল দৃপ্ত শপথে তপ্ত শোণিত ঢালিয়া দিল, কঠিন সে রাজপথে। বিদেশি প্রভুর রক্ত চক্ষু, উপেক্ষিয়া অনায়াসে রফিক, শফিক, বরকত সেদিন, রক্ত গাঙেতে ভাসে, যে ভাষার তরে জীবন সঁপিল শফিউর, জব্বার, সে ভাষার তরে কারও কারও আজ, ঘৃণা ভরা অন্তর। বাংলা ভাষারে উপেক্ষিয়া চলে, বিদেশি ভাষার বন্দনা বুঝি না এ কোন আত্মগ্লানি, আত্মপ্রবঞ্চনা, ভিনদেশি ভাষা আসীন আজ,আত্ম অহমিকায় বাংলা ভুলিতে ব্যস্ত যেন, না…

  • মধুর-স্মৃতি
    আত্মজীবনী,  আহম্মদপুর,  দ্বারিয়াপুর,  লেখক পরিচিতি,  সাহিত্য,  স্মৃতিচারণ

    মধুর স্মৃতি

    মধুর স্মৃতি তাহমিনা খাতুন   অল্প বয়সের স্মৃতি হয়তো মানুষ কখনো ভোলে না। তেমনি একটি স্মৃতি এখনও মনে পড়ে। আমার বড় ভাবী ও ওনার মায়ের টাইফয়েড বা ম্যালেরিয়া জাতীয় কোন জ্বর হয়েছিল। আমার ভাবী ছিলেন বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। ভাবীর বাবার একার পক্ষে দুই জন অসুস্থ মানুষকে সুশ্রুষা করা কঠিন হয়ে উঠেছিল। খবর পেয়ে মা ওনাদের সেবা করার জন্য আমাকে আর ছোট দুই ভাই-বোন বাসার আর তুষারকে নিয়ে ভাবীর বাবার বাড়ি সৈয়দপুর গেলেন। কয়েকদিন পর আব্বা আমাকে আনতে গেলেন। কয়দিনেই ভাবীর চাচাত বোনদের সাথে আমার বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছিল। আমি ফিরে আসার আগে আমার বন্ধুটি আমাকে ভালবেসে তার কিছু পুতুলের কাপড় আমাকে…

error: Content is protected !!