-
গোলাপি শহর জয়পুরে
গোলাপি শহর জয়পুরে তাহমিনা খাতুন জয়পুর। ভারতের রাজস্থান রাজ্যের রাজধানী। ভারতের রাজধানী দিল্লি থেকে সড়ক পথে ৪/৫ ঘন্টার দূরত্বে জয়পুর। জয়পুর এক ঐতিহাসিক শহর। ২০১১ খ্রিষ্টাব্দের জুলাই মাসে দিল্লি থেকে সড়ক পথে ঐতিহাসিক এই শহর দেখতে গেলাম। ঐতিহাসিক এই শহরের ভবনগুলো অধিকাংশই গোলাপি রঙের! ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৮৭৬ খ্রিষ্টাব্দে বৃটিশ সম্রাজ্ঞী ভিক্টরিয়ার স্বামী প্রিন্স আলবার্টের জয়পুর ভ্রমণকালীনে জয়পুরের মহারাজা রাম সিংহ কর্তৃক শহরের ভবনগুলো গোলাপি রঙ করা হয়। কারণ গোলাপি রঙ আতিথেয়তার প্রতীক। অধিকাংশ ভবনের রঙ গোলাপি হওয়ায় এই শহরের নাম হয়েছে পিংক সিটি বা গোলাপি নগরী। জয়পুরকে রাজধানী হিসেবে তৈরি করার আগে আম্বর ফোর্ট বা আম্বর দূর্গ থেকেই…
-
রূপসী বাংলার কবি
রূপসী বাংলার কবি তাহমিনা খাতুন রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশ বাংলার ছবি এঁকে গেছো কত সহজ, অনায়াস! বিশালাক্ষী দিয়েছিল বর জনম লভেছিলে তাই, নীল বাংলার ধান আর ঘাসের ভিতর। নাটোরের বনলতা সেন পাখির বাসার মতো চোখ দেখে যার হয়েছিল কবি ভাবনা মগন। সোনালি ডানার চিল, সদা কেঁদে যায় এ কবির ভাবনায় লক্ষ্মী পেঁচা শিমুলের ডালে বসে অবিরাম ডেকে যায়। কার্তিক মাস আর ধানের ছড়া হৃদয়ের গহন কোণে, কেবলি দিয়ে যায় নাড়া। ধানসিঁড়ি নদী আর হিজল তমালের বন রূপমুগ্ধ কবির মনে সদা, করে গেছে বিচরণ। বাংলার নদী মাঠ ভাঁট ফুলের বর্ণিল সুষমায় ঘুরে ফিরে আসে দেখি তাহার কবিতায়। চায়নি এ…
-
তাজমহলের শহর আগ্রায়
তাজমহলের শহর আগ্রায় তাহমিনা খাতুন মোগল সম্রাট শাহজাহানের অমর সৃষ্টি পৃথিবীর সাত আশ্চর্যের এক আশ্চর্য আগ্রার তাজমহল! শত শত বছর ধরে অতুলনীয় এই সৌন্দর্য শোভা নিজের চোখে একবার দেখার জন্য পৃথিবীর সব প্রান্তের মানুষ বিস্ময়কর এই সমাধি সৌধ স্থলে ছুটে যায়। সাত আশ্চর্যের একটা আশ্চর্য দেখতে পাওয়া তো বিরল এক সৌভাগ্যের ব্যাপার বৈকি। সেই বিরল সৌভাগ্যের ভাগীদার হওয়ার সুযোগ পাওয়া গেল। দিল্লী থেকে আগ্রার দূরত্ব ২৪৩ কিলোমিটার। সড়ক পথে ঐতিহাসিক এই শহরে পৌঁছাতে সময় লাগে সাড়ে চার ঘন্টার মতো। জুলাই মাসের এক ভোরে মাইক্রোবাসে দিল্লী থেকে আগ্রা যাত্রা শুরু করলাম। দিল্লী থেকে আগ্রার যাত্রা পথে আরও এক ঐতিহাসিক ঐতিহাসিক…
-
ফেলানী
ফেলানী তাহমিনা খাতুন ফেলানী! সে এক ছোট বালিকার নাম পেটের ক্ষিধে নিয়ে কাঁদে অবিরাম। ঘরে তার আছে আরও ছোট ভাই বোন ক্ষুধায় তাদেরও বুঝি না থামে ক্রন্দন। পিতা তার জোটাতে না পারে ক্ষুধার আহার বাঁচার তরে সে যুদ্ধ তাই করে অনিবার। প্রাণান্ত পরিশ্রম সে করে দিন রাত সন্তানের মুখে তবু পারে না দিতে দুই মুঠো ভাত। ক্ষুধাতুর শিশুর কান্না সহিতে না পারে ফেলানীরে সাথে নিয়ে তাই দেশ ছাড়ে। সীমান্ত পাড়ি দিয়ে তবে, যাবে সে ভারত ভাবিল জুটিবে এবার দুটো ডালভাত। ক্ষিদের জ্বালা বড় জ্বালা না মানে দেশ কাল ক্ষুধার অন্নের লাগি বাড়ালো জঞ্জাল। ছোট্ট ফেলানীও ভাবিল বুঝি দুঃখ হবে…
-
তৎকালীন গ্রামীণ চিকিৎসা ব্যবস্থা
তৎকালীন গ্রামীণ চিকিৎসা ব্যবস্থা তাহমিনা খাতুন আমাদের ছোটবেলায় দেখেছি, গ্রামের মানুষের রোগবালাই তেমন একটা ছিল না!। ভেজাল মুক্ত খাবার, কায়িক পরিশ্রম, অনেক বেশি হাঁটা-হাঁটি করার অভ্যাসের কারণে গ্রামের মানুষের মধ্যে অসুস্থ হওয়ার প্রবণতা বিস্ময়করভাবে কম ছিল। কোথাও যেতে হলে কোনো যানবাহনের সহজ লভ্যতা বর্তমান সময়ের মত ছিল না। স্বভাবতই লোকজনকে মাইলের পর মাইল হাঁটতে হতো। সাধারণত বর্ষাকালে বা শীতকালে ঠাণ্ডাজনিত কারণে জ্বরে ভুগতো মানুষ। আমরা ভাই-বোনেরা জ্বরে আক্রান্ত হলে মাথায় অনেকক্ষণ ধরে পানি ঢালতেন মা। কখনও কখনও দ্রুত জ্বর কমানোর জন্য পুকুর থেকে ভেজা কাদা তুলে এনে কাপড়ে জড়িয়ে পেটের উপর দিয়ে রাখতেন! বড় জোর আব্বা আমাদের গ্রামের ডা.…
-
আত্রাই নদী
আত্রাই নদী তাহমিনা খাতুন আত্রাই! ছোট্ট এক নদী ছোট্ট! তবু সে ছুটিতেছে বুঝি নিরবধি। ছোট্ট তার দুটি কূল এপার ওপার যায় দেখা তার না হয় কোন ভুল। কূল ঘেঁষে আছে তার ছোট ছোট গ্রাম। স্নেহে আর মমতায় ঘিরে রাখে অবিরাম। হয়তো বা ছিল কভু বিশাল জলধি কঠিন সময়ের সাথে হইয়াছে শীর্ণকায়া নদী। বড় বড় পানশি আর পাল তোলা নাও ছুটে যেত বহু দূরে কোন দূর গাঁও। গুন টেনে যেত নাও কোন সে দূরের পানে ভাটিয়ালি সুরের যাদু ভেসে আসত কানে। বিশাল জলধির চিহ্ন আজ নাহি খুঁজে পাই, ধুঁকিয়া বাঁচার আকুলতা তার দেখি যে সদাই। নিষ্প্রাণ স্রোত ধারা নিয়ে তবু…
-
রোমান সাম্রাজ্যে কয়েক দিন (শেষ পর্ব)
রোমান সাম্রাজ্যে কয়েক দিন (শেষ পর্ব) তাহমিনা খাতুন রোমান সাম্রাজ্যের ক্ষমতাধর সম্রাটদের পতনের পর সাম্রাজ্যের ক্ষমতা চলে যায় চার্চের বা গির্জার হাতে এবং কয়েক শতাব্দী পর্যন্ত গির্জার মাধ্যমেই রোমান সাম্রাজ্য পরিচালিত হতে থাকে। রেঁনেসাসের শুরু থেকে প্রায় সব পোপই রোম শহরটিকে শৈল্পিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে পরিণত করার চেষ্টা চালিয়ে যান। রেঁনেসাস স্থপতিরা রোমকে তাঁদের স্থাপত্য কর্মের কেন্দ্রে পরিণত করেন এবং শহরটি জুড়ে শ্রেষ্ঠ সব শিল্প কর্ম তৈরি করেন। রোম ১৮৭১ সালে ইতালিয় রাজ্যের এবং ১৯৪৬ সালে স্বাধীন ইতালির রাজধানী হয়। রোমের সব প্রাচীন স্থাপনাই ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ। ‘ভ্যাটিক্যান সিটি’ বা পোপের দেশ! এক দেশের অভ্যন্তরে আরেক দেশ! বিশাল…
-
রোমান সাম্রাজ্যে কয়েক দিন (৩য় পর্ব)
রোমান সাম্রাজ্যে কয়েক দিন (৩য় পর্ব) তাহমিনা খাতুন রোম পর্যায়ক্রমে রোমান রাজ্য, রোমান প্রজাতন্ত্র এবং রোমান সাম্রাজ্যের রাজধানী ছিল। টাইবার নদীর তীরে রোম। সাতটি পর্বত দিয়ে বেষ্টিত। প্রথম দিকে রোমান সভ্যতা গ্রীক সভ্যতার মতোই অনেকগুলো নগর রাষ্ট্রের সমষ্টি বা কনফেডারেশন ছিল, যার নাম ছিল ‘রিপাবলিকা বা প্রজাতন্ত্র’। সিনেটর বা জনপ্রতিনিধিদের পরামর্শে রোম পরিচালিত হতো। রোম প্রজাতন্ত্রের স্থায়িত্বকাল ছিল পাঁচ শত বছর আর রাজতন্ত্র স্থায়ী হয়েছিল পনের শত বছর! এই দুই হাজার বছর মানব সভ্যতার ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে আছে। এর প্রভাব এবং ফলাফল আইনী ব্যবস্থা থেকে শুরু করে অদ্যাবধি অনেক কিছুতে রয়ে গেছে। ‘রোমান জাতি’ বসবাস করার কারণে…
-
রোমান সাম্রাজ্যে কয়েক দিন (২য় পর্ব)
রোমান সাম্রাজ্যে কয়েক দিন (২য় পর্ব) তাহমিনা খাতুন ‘পালাজ্জো ডুকেল’ (Palazzo ducale) বা ডজের প্রাসাদ মার্কস স্কোয়ারের আরেক অনবদ্য সুন্দর স্থাপত্য। এটি ভেনিসের প্রাচীনতম এবং সবচেয়ে সুন্দর প্রাসাদগুলোর একটি। গথিক স্থাপত্যের এক অনন্য নিদর্শন এই পালাজ্জো ডুকেল। পালাজ্জো ডুকেল ছিলো ডজের বাসভবন। ডজ ছিলেন ভেনিসের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের দ্বারা আজীবনের জন্য নির্বাচিত নেতা এবং ম্যাজিষ্ট্রট। ৭২৬-১৭২৭ শতাব্দী পর্যন্ত ডজ এর শাসন ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল। এই ব্যবস্থা কোন রাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা ছিল না, ছিল রীতিমতো গণতান্ত্রিক। ডজের প্রাসাদের বাইরের দেয়াল স্বর্ণ এবং বহুমূল্য রত্ন খচিত! এই প্রাসাদের সাদা মার্বেল পাথরের থামের মাঝে রয়েছে দুটি গোলাপি রঙের থাম। এখান থেকেই ডুকেল অপরাধীদের মৃত্যুদন্ড…
-
রোমান সাম্রাজ্যে কয়েক দিন (১ম পর্ব)
রোমান সাম্রাজ্যে কয়েক দিন (১ম পর্ব) তাহমিনা খাতুন ইতালি। নাম শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে হাজার হাজার বছরের এক প্রাচীন সভ্যতা, যার পাতায় পাতায় জড়িয়ে আছে জুলিয়াস সিজার, ক্লিওপেট্রা, মাইকেল অ্যাঞ্জেলো, লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি, ভ্যাটিক্যান সিটি, ভেনিসের গন্ডোলা, ফুটবল প্রেমী মানুষদের প্রিয় ক্লাব এ সি মিলান ইত্যাদি। সেই শতাব্দী প্রাচীন, ঐতিহাসিক ইতালি দেখতে যাওয়া হল। আমার মেয়ে সঞ্চিতার সহকর্মী জাবেদ ইতালির মিলানের কনসাল জেনারেল। জাবেদের আমন্ত্রণে জেনেভা থেকে মিলানে যাত্রা করলাম। জেনেভা থেকে বাসে চার ঘন্টার কিছু বেশি সময়ে মিলানে পৌছালাম। মিলানের বাস টার্মিনালে জাবেদের পাঠানো গাড়িতেই আমাদের ইতালি ভ্রমণ শুরু হলো। আমাদের ভ্রমণ সঙ্গী মিলান কনসুলেটের আর এক…