-
পৃথিবীর স্বর্গ সুইজারল্যান্ডে (শেষ পর্ব)
পৃথিবীর স্বর্গ সুইজারল্যান্ডে (শেষ পর্ব) তাহমিনা খাতুন পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশের মতোই সুইজারল্যান্ডের চিকিৎসা এবং উচ্চশিক্ষা গ্রহণ অত্যন্ত ব্যয়বহুল। সে কারণে সাধারণ মানুষের পক্ষে এই ব্যয় বহন করা বেশ কষ্টসাধ্য। তবে সুইজারল্যান্ডে চিকিৎসার জন্য অনেক সময় বিভিন্ন দাতব্য সংস্থার সহায়তা পাওয়া যায়। সুইজারল্যান্ডের প্রত্যেক নাগরিকের জন্য স্বাস্থ্যবীমা করা বাধ্যতামূলক। এমন কী কোনো বিদেশি ট্যুরিস্ট ভিসায় সুইজারল্যান্ডে বেড়াতে গেলেও তার জন্য স্বাস্থ্যবীমা করা বাধ্যতামূলক! নিম্নতম দুইশত সুইস ফ্রাঁ (যা বাংলাদেশি টাকায় দুই হাজার টাকার সমমানের) থেকে শুরু করে পাঁচশত বা আরও বেশি মূল্যমানের স্বাস্থ্যবীমা করা যায়। তবে কেউ যদি নিম্নতম মূল্যের স্বাস্থ্যবীমা করে, সে প্রথমেই বীমার সুযোগ পায় না। তাকে বীমার…
-
পৃথিবীর স্বর্গ সুইজারল্যান্ডে (২য় পর্ব)
পৃথিবীর স্বর্গ সুইজারল্যান্ডে (২য় পর্ব) তাহমিনা খাতুন লুকার্নে বা লুজার্নে ইউরোপের সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন শহর! শহরটি ফ্রান্স, ইতালি এবং সুইজারল্যান্ডের এক মিলিত সংস্কৃতির শহর। জেনেভা থেকে লুকার্নে পৌঁছাতে সময় লাগে প্রায় ৪ ঘণ্টা ২০ মিনিট। জেনেভা থেকে সড়ক পথে লুকার্নে যেতে সুইজারল্যান্ড, ইতালি, জার্মানি এবং ফ্রান্স-ইউরোপের এই ৪টি দেশের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। এ প্রসঙ্গে একটি গুরত্বপূর্ণ তথ্য জানিয়ে রাখি, সুইজারল্যান্ড ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভূক্ত দেশ নয় কিন্তু কোন বিদেশি নাগরিকের সুইজারল্যান্ডের ভিসা থাকলে সে কেবল মাত্র যুক্তরাজ্য ছাড়া ইউরোপের আটাশটি দেশ ভ্রমণের সুযোগ পেয়ে থাকে। সেই সুযোগ নিয়ে ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশে ভ্রমণের সুযোগ পাওয়া গেল। শামনী (Chamonix) সুইজারল্যান্ডের সবচেয়ে রোমাঞ্চকর, ভীতি…
-
পৃথিবীর স্বর্গ সুইজারল্যান্ডে (১ম পর্ব)
পৃথিবীর স্বর্গ সুইজারল্যান্ডে (১ম পর্ব) তাহমিনা খাতুন সুইজারল্যান্ড! নাম শুনলেই মনে হয় এক স্বপ্নের দেশ। কাউকে এমনও বলতে শুনেছি, আহা! এমন দেশ শুধু হয়তো ছবি দেখেই খুশি থাকতে হবে। নিজের চোখে দেখার সৌভাগ্য কি হবে কখনও! সেই স্বপ্নের দেশ, শুধু মাত্র দেখা নয়, দীর্ঘ তিনটি বছর থাকার সৌভাগ্য হলো! সুইজারল্যান্ডের নাম শুনলেই কয়েকটি জিনিসের নাম যেন সাথে সাথেই মনে চলে আসে যেমন-ঘড়ি, চকোলেট, পনির, ব্যাংক, যাতায়াত ব্যবস্থা। সুইজারল্যান্ডের সত্তর ভাগ এলাকা পর্বতবেষ্টিত। আল্পস্ পর্বতমালাসহ অসংখ্য পর্বত, হৃদ, ঘন সবুজ বন-বনানী, ইউরোপের সর্ববৃহৎ জলপ্রপাত, বিখ্যাত সব দর্শনীয় স্থান সমৃদ্ধ পশ্চিম ইউরোপের মধ্যভাগের একটি দেশ সুইজারল্যান্ড। এখানে তিন হাজার মিটারের বেশি উচ্চতাবিশিষ্ট…
-
রবি কবির জন্মদিনে শুভেচ্ছা
রবি কবির জন্মদিনে শুভেচ্ছা তাহমিনা খাতুন পঁচিশ বৈশাখ বিশ্বে হলো এক নতুন সূর্যোদয় সে রবির আলোয় উদ্ভাসিত সকল লোকালয়। জোড়াসাঁকোর ঠাকুর বাড়ি আলোকোজ্জল হলো সে আলোয় বুঝি জগৎ খানি হলো ঝলমলো। দিনে দিনে বাড়ল আলো, রঙিন হলো ধরনী নতুন মাঝি কলম বৈঠায়, বাইলো ভাবের তরণী। গল্প, কবিতা, নাটক, নভেল কিছুই রয়নি পিছে রবির হাতের যাদুর ছোঁয়ায়, মুগ্ধতা ছড়িয়েছে। কত কাব্য হলো লেখা নাই তো কোনো সীমা বিশ্ব পদক, যশ আর খ্যাতি রবির ঝুলিতে জমা। গান কবিতা পেল প্রাণ রবির হাতের ছোঁয়ায় রবির গানের সুরের যাদু, ছড়াল বিশ্বময়। রবির গানেই আশ্রয় নিই, হলে উদাসীন গান শেষ হলেও মনে বাজে নানা ছন্দের…
-
বোশেখ বন্দনা
বোশেখ বন্দনা তাহমিনা খাতুন চৈত্রের অগ্নিবান হলো সবে শেষ বোশেখ এলো যেন নিবারিতে সব ক্লেশ। চৈত্রের রোদ্দুরে মাঠ-ঘাট চৌচির কোথাও মেলে না দেখা শান্তির নীড়। জনশূন্য ফাঁকা নিস্তব্ধ চারিধার ভুলেছিল প্রাণীকূল শোনাতে কলস্বর। ঘুঘুর ক্লান্ত সুর ভরাত দুপুর মনের তারে বাজাতো শুধু বিষাদের সুর। বন-বনানী হয়েছিল কাতর পিপাসায় চাতকের মতো গুনছিল দিন বোশেখের প্রতীক্ষায়। চৈত্রের ভয়াল তাপে ওষ্ঠাগত সব প্রাণ রুদ্র কালবৈশাখী গাইল যেন নতুন দিনের গান। রুদ্র বোশেখের আজ হলো আগমন নতুন দিনের তরে জানাল আমন্ত্রণ। ঈশানকোণে শুনি মেঘের গুরু গুরু সোনালি দিনের বুঝি হলো আজ শুরু। দুরন্ত দূর্বার ঝড়ের হাওয়ায় পুরনো দিন সে তো উড়ে চলে যায়। উন্মাতাল…
-
একটি তর্জনী আর বজ্রকণ্ঠ
একটি তর্জনী আর বজ্রকণ্ঠ তাহমিনা খাতুন আজ হতে শতবর্ষ আগে জন্ম নিয়েছিল দেবদূত সম এক মানব এক দুখী জনপদে, সে জনপদের নাম বাংলা সহস্র বছরের পরাধীন জাতি। শোষণে, শাসনে তিলে তিলে হয়ে ছিল মৃতপ্রায় দরদী হৃদয় কেঁদে হয়েছিল আকুল, অসহায় জাতির দুর্দশায় তাই কঠিন শপথ নিয়েছিল সহস্র বছরের নিপীড়িত, বঞ্চিত, দুখী জনতার দুঃখ মোচনের। জগৎ দেখল একটি তর্জনী, কি অসীম শক্তিধর একটি ক্ষুদ্র তর্জনী! পৃথিবী শুনল একটি কণ্ঠের বজ্র নির্ঘোষ কি অপরিসীম বলে বলীয়ান! কি তেজদৃপ্ত সেই বজ্রকণ্ঠ! ঈশান কোণে জমে থাকা কালো মেঘ তা থেকে বিচ্ছুরিত হলো বিজলীর ঝলকানি, তীব্র ঝলকানির সে তড়িৎ শিখায় আলোকিত হলো বাংলার জনপদ উজ্জ্বল…
-
আট ফাল্গুন
আট ফাল্গুন তাহমিনা খাতুন ভিনদেশি প্রভু চেপে ধরেছিল বাংলার কণ্ঠনালি বাংলা ভুলে শিখতে হবে তাদের শেখানো বুলি! ‘মা’ বলে ডাকা চলবে না, আর দিল এই ফরমান উর্দু ভাষা শেখার তরে, হও বাঙালি আগুয়ান। ‘মানি না মানব না’ যতক্ষণ আছে প্রাণ। গর্জে উঠল বাংলার মানুষ ‘রুখবই রুখব’ মায়ের এ অপমান। ‘রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাই’ উঠল ধ্বনি সাগরের কূলে কূলে সে ধ্বনি ক্রমে ছড়িয়ে গেল সকল মর্মমূলে। গৃহকোণ ছাড়ি পথে নেমে এল বাংলার লাখো তরুণ তাদের দমাতে ঝলসে উঠল শাসকের সিসার আগুন। জীবন দিল রফিক-বরকত-জব্বার-শফিউর বাংলাভাষার সন্মান যেন তখনো খানিক দূর। জীবন দিল অহিউল্লা, আট বছরের শিশু মায়ের কোল খালি করে, সে…
-
হারানো ফাল্গুন
হারানো ফাল্গুন তাহমিনা খাতুন ফাল্গুন এসেছে আবার ফিরে শূন্য রিক্ত হাতে খুঁজে ফিরি ফাল্গুনী মায়া রুক্ষ অকরুণ খাঁ খাঁ প্রান্তরে। ফাল্গুন খুঁজে ফিরি জারুলের বনে, খুঁজে তো পাই না তা হারায়েছে জারুলের বন। সাথে নিয়ে গেছে স্নিগ্ধ মনোরম বেগুনির মায়া ফাগুনের আগুন খুঁজি কৃষ্ণচূড়ার বনে। কৃষ্ণচূড়ার বোন উধাও! সাথে হারায়েছে ফাগুনের আগুন রাধাচূড়া ফিরে গেছে, নয়ন জুড়ানো হলুদের আলপনা মুছে গেছে তাই। বৃক্ষহীন শাল বনে নাই পাতা ঝরার গান ফাল্গুনে শুনি না তাই কোকিলের ‘কুহুতান। বাঁশ বন উধাও, ঘাস ফড়িং পুচ্ছ নাচায় না আর বাঁশের কঞ্চির ডগায় ফাগুনের দিনে। ‘বউ কথা কও’ বুঝি ভুলেছে আহ্বান নিষ্ফল বেদনায় দোয়েল ফিঙে ভুলেছে…
-
সুতা ছেঁড়া ঘুড়ি (শেষ পর্ব)
সুতা ছেঁড়া ঘুড়ি (শেষ পর্ব) তাহমিনা খাতুন চৌব্বিশ. দেখতে দেখতে কতগুলো বছর পার হয়ে গেছে। হাবিবুর, মোমিনা দুজনেরই বয়স বেড়েছে। ছেলে-মেয়েরা লেখাপড়া শিখে সবাই জীবনে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। তবুও হাবিবুর রহমান এখনো পুরোপুরি অবসরে যাননি। গ্রামের মসজিদে ইমামতি, সংসারের টুকটাক কাজ কর্ম, বাড়ির সঙ্গে লাগোয়া জমিতে শাক-সবজি লাগানো ইত্যাদি করে সময় কাটান। আষাঢ় মাস। আকাশ কালো করে অঝোরে বৃষ্টি নেমেছে। নূরপুরের মসজিদ থেকে আজানের ধ্বনি ভেসে আসছে। হাবিবুর রহমান একটা ছাতা নিয়ে অনেকক্ষণ আগেই মাগরিবের নামাজের ইমামতি করার জন্য মসজিদে চলে গেছেন। মাগরিবের নামাজের ইমামতি শেষ করে হাবিবুর রহমান সাধারণত এশার নামাজের সময় হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করেন এবং একেবারে এশার…
-
সুতা ছেঁড়া ঘুড়ি (১১তম পর্ব)
সুতা ছেঁড়া ঘুড়ি (১১তম পর্ব) তাহমিনা খাতুন বাইশ. নূরপুরের মধ্যপাড়ার জান্নাতুল ফেরদৌসের বাড়ির বড়ো উঠানের এক কোণে অনেকগুলো বাঁশের চাটাই আর খেজুর পাতার পাটি বিছানো। সন্ধার কিছুক্ষণ পরে পূবপাড়া আর দক্ষিণপাড়ার বেশ বিশ-পঁচিশজন বিভিন্ন বয়সের মানুষ উঠানে বিছানো চাটাইয়ের উপর এসে বসল। কিছুক্ষণ পরে জান্নাতুল ফেরদৌসের এক মাত্র ছেলে ফেরদৌস তার বিছানার পাশের জানালা খুলে সবাইকে সালাম দিল। ফেরদৌসের বয়স এখন চব্বিশ বছর। চাটাইয়ে অপেক্ষমান লোকজনের মধ্য থেকে ত্রিশ পঁয়ত্রিশ বছর বয়সের আক্কেল আলি উঠে এল ফেরদৌসের জানালার পাশে। ফেরদৌস আক্কেল আলিকে সালাম দিয়ে বলল, “আক্কেল ভাই, আপনারা সবাই যে উদ্দেশ্যে আমার বাড়িতে এসেছেন, তা আমি জানি। নূরপুরের সমাজ প্রধান…