-
কিশোর কবি
কিশোর কবি তাহমিনা খাতুন এক কিশোর, কিইবা বয়স এমন, মেতে থাকার কথা যার দূরন্তপনায় অথচ সে অবাক হয়, জন্মেই ক্ষুব্ধ স্বদেশ অবাক করে তাকে পৃথিবী অবাক তার কবিতার চরণে। বিশ্ব হতবাক, দেশলাইয়ের বারুদের মতো জ্বলে ওঠা এক কিশোর বিস্ময়ে চেয়ে রয় পরাধীন দেশ। লেখে সে কবিতা, সে কবিতা অন্তরে দোলা দেয় বিপ্লবী সুরে সে তো বুঝি কবিতা নয়, যেন স্ফুলিঙ্গ! দ্যুতি ছড়ায়, লাইনে লাইনে তার বিদ্রোহ, বিপ্লব তার ছত্রে ছত্রে! এ কোন ক্ষুদে বিদ্রোহী? এ যেন আর এক বিদ্রোহী নজরুলের অভ্যুদয়, পরাধীন ভারতের গগণ তলে সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশুর চিৎকারে, যে শুনতে পায় তীব্র প্রতিবাদ অন্যায় আর অসাম্যের বিরুদ্ধে, সে…
-
মাধবী নিশীথিনী (শেষ পর্ব)
মাধবী নিশীথিনী (শেষ পর্ব) আবু জাফর খান কুপির আবছা আলোয় দেখে, কুচকুচে কালো কারুকার্যময় পালঙ্কে রক্তিম মখমলের বিছানায় শায়িত এক নারী। গোটা শরীর ধবধবে সাদা চাদরে ঢাকা। শুধু মুখ অনাবৃত। যেন একটি মমের শব। গোটা মুখে হীরকের ঔজ্জ্বল্য। যেন মমির দেশের কোনো রাণীকে মমি করে রাখা হয়েছে। শাওনের ছুটে পালানোর কথা। কিন্তু সে সম্মোহিতের মতো পালঙ্কের দিকে এগিয়ে যায়। তার দৃষ্টি শবের মুখমণ্ডলে নিবদ্ধ। দৃষ্টি ফেরানোর ক্ষমতা যেন হারিয়ে গেছে। ভীষণ চেনা এই মুখ, বড় আপন! কে ইনি? “শাওন, এসেছিস?” শবের ঠোঁট মৃদু নড়ে ওঠে। তিনি অতি ক্ষীণ স্বরে ফিসফিস করে বলেন। রুদ্র শাওন কেঁপে ওঠে। ছিটকে সরে যায়।…
-
অগ্নিঝরা বৈশাখ
অগ্নিঝরা বৈশাখ জহুরা ইরা বৈশাখের নতুন সূর্য হয় যেন জ্বলন্ত অগ্নিকুন্ড যার তাপদাহে শরীর থেকে নির্গত হোক অজস্র ধারায় ঘাম, জমে থাকা পুঁজ, ভীরুতার ভিত আর দূষিত রক্ত। যে রক্ত ধমনীতে বয়ে মানুষকে করছে সংক্রমিত। বৈশাখ বয়ে আনো, ধরার বুকে এক অগ্নিবান, জ্বালিয়ে দাও যত জরা, অনাকাঙ্ক্ষিত আবর্জনা, অভিশাপ নিভৃতে, গঞ্জে, নগরে, দেশ জুড়ে যেখানে শুদ্ধ হোক বুকের গহীন ক্ষত আর ঘুনে ধরা হৃৎপিন্ড। কালবৈশাখি হয়ে তুমি তান্ডব নৃত্য কর ভূপৃষ্ঠে উড়িয়ে দাও যত ধুলো মরা পাতা, আর সব অমানুষগুলো, পায়ের তলায় থাকবেনা মিথ্যার পাতা ফাঁদ, নির্বিঘ্নে বেড়ে উঠবে নবজাতক পাবে যোগ্য আবাস বৈশাখে বিদ্যুৎ চমকাক থেকে, তীব্র বেগে,…
-
কালো কঙ্কাল (১ম পর্ব)
কালো কঙ্কাল (১ম পর্ব) সাইফুর রহমান তালেব মিয়াকে দেখলে যে কোনো তীক্ষ্ণ দৃষ্টিসম্পন্ন মানুষেরই চমকে ওঠার কথা। এত মানুষ নয়, যেন জীবন্ত এক কঙ্কাল। পার্থক্য বোধকরি এতটুকুই, যেখানে মানুষ সাদা কঙ্কাল দেখে অভ্যস্ত, সেখানে হয়তো তারা দেখে জাজ্বল্যমান কালো এক কঙ্কাল। মুখ বুজে কাজ করছে কামারশালায়। লিকলিকে, দির্ঘাঙ্গী ও কুচকুচে কালো হাত-পাগুলো এতটাই শীর্ণ যে, শরীরের হাড়গুলো যেন চামড়া ভেদ করে বেরিয়ে আসার জন্য সদা উন্মুখ। হাড়চর্মসার মানুষটি যখন উবু হয়ে বসে হাপরটা টানতে থাকে, তখন খানিকটা দূর থেকে সত্যি বোঝা যায় না কোনটা হাপর আর কোনটা তার পেট। জীর্ণ ও কৃষ্ণাভ লুঙ্গিটা হাঁটু ডিঙ্গিয়ে চলে যায় একেবারে উরু…
-
তোমাকে পাইনি বলে
তোমাকে পাইনি বলে পথিক জামান তোমাকে পাইনি বলে আমার দুঃখে ভরা প্রাণ, তাইতো আমি সবখানে গাই দুঃখে ভরা গান। তোমাকে পাইনি বলে আমার মনে অনেক জ্বালা, তুমি ছাড়া আমার গলায় কে পরাবে মালা? একুশ বছর পড়ে আছি তোমার প্রেমের ফাঁদে, তাই নিশিতে পরাণ আমার গভীর ব্যথায় কাঁদে। মুক্তি পেতে যতই আমি করি না কেন ফন্দি, শেষ দেখি আমার সকল তোমার প্রেমেই বন্দী। জানি আমি কোনদিন আর তোমায় পাব না, তবু কেন তোমায় নিয়ে এত ভাবনা? এমনি করে তোমায় নিয়ে হয়তো আরো ভাববো, তোমায় নিয়ে হয়তো আরো লিখবো প্রেমের কাব্য। তোমায় নিয়ে ভাবি আমি সকাল দুপুর রাতে, বুকের ব্যথা বাড়ে…
-
মাধবী নিশীথিনী (১ম পর্ব)
মাধবী নিশীথিনী (১ম পর্ব) আবু জাফর খান ‘মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, চিরদিন কেন পাই না? কেন মেঘ আসে হৃদয়-আকাশে, তোমারে দেখিতে দেয় না? ক্ষণিক আলোকে আঁখির পলকে তোমায় যবে পাই দেখিতে হারাই-হারাই সদা হয় ভয়, হারাইয়া ফেলি চকিতে॥’ সত্তর দশকের গোড়ার কথা। রুদ্র শাওন গুনগুন করতে করতে হনহন করে হাঁটছে। তার হাঁটার গতি দেখে যে কেউ বলবে, কোনো জরুরি কাজে বহুদূর পথ পেরবে। অবিশ্যি যারা চেনে, তারা বলবে না। দৈবাৎ দেখা হলে বরং পথ ছেড়ে সরে দাঁড়াবে। রুদ্র শাওন খান পরিবারের একমাত্র বংশধর। এই তরুণ যুবক যে বদ্ধ পাগল, তাতে ঐ তল্লাটের কারও বিন্দুমাত্র সংশয় নেই। রুদ্র শাওন…
-
ভালোবাসার চিঠি, ভালোবাসা ডাকে ঐ, কে কাঁদে
ভালোবাসার চিঠি কে এম আশরাফুল ইসলাম জাগি নিশি জানে ঐ শশী আর মম হিয়া, নহে পড়শি ভালোবাসা নিও ওগো প্রিয়া। অর্পিত মন দেখে স্বপন যতনে আঁকি ছবি, ওগো জীবন তোমার ভাবনায় হয়ে যাই কবি। লিখে যাই ছন্দ হারাই না হারিয়ে তোমায়, আমাতে পাই অন্তরের গভীরে অতি মমতায়। ঐ আঁখি আমাকেই ডাকি অপলক বাঁধনে, হইয়া পাখি করে উতলা ঘুমে কি জাগরণে। অপরূপ সৃজন অতুল নয়ন সুকান্তি সুকেশিনী, শিল্পীত আনন লিওনার্দো পিকাসোও দেখেনি! যতই দেখি সতৃষ্ণ আঁখি সতত দেখিবারে, পিঞ্জরে পাখি করিয়া রাখিতে তাড়ার আমারে। নয়নের আড়ে যাপিত অন্তরে কুঠারে করে আঘাত, নিঃশব্দে ঝরে তাপিত অশ্রু হইয়া নায়াগ্রা প্রপাত! দোহাই সখী…
-
উপজেলার ইতিহাস, জমিদার, তাঁতিবন্দ (গ্রাম), তাঁতিবন্দ ইউনিয়নের ইতিহাস ও ঐতিহ্য, তাঁতিবন্ধ, সুজানগর উপজেলা
জমিদার বিজয় গোবিন্দ চৌধুরী
জমিদার বিজয় গোবিন্দ চৌধুরী বিজয় গোবিন্দ চৌধুরী ছিলেন ইতিহাসখ্যাত এক হিন্দু জমিদার ও প্রখ্যাত শিকারি। জন্ম: বিজয়গোবিন্দ চৌধুরী আনুমানিক ১৮২৪ সালে, পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার তাঁতিবন্দ ইউনিয়নের তাঁতিবন্দ গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত হিন্দু পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম গুরুগোবিন্দ চৌধুরী। তৎকালীন নাটোর কালেক্টরির সেরেস্তাদার উপেন্দ্রনারায়ণ চৌধুরী তাঁতিবন্দের জমিদার বংশের প্রতিষ্ঠাতা হলেও তার উত্তসূরী বিজয় গোবিন্দ চৌধুরীর শাসনামলেই তাঁতিবন্দসহ আশপাশের এলাকায় তাদের জমিদারিত্বের প্রভাব প্রতিপত্তি ছড়িয়ে পড়ে। জমিদারী: অত্যন্ত দক্ষ এবং প্রতিভাবান বিজয় গোবিন্দ চৌধুরী অতি অল্প সময়ে জমিদারিত্বের হাল ধরে তাঁতিবন্দসহ আশেপাশের এলাকায় হাজার হাজার বিঘা জমি ক্রয় করে তাঁর জমিদারিত্বের বিস্তৃতি এবং প্রসার ঘটান। মূলত বিজয় গোবিন্দ চৌধুরীর…
-
মে দিবসের গান
মে দিবসের গান তাহমিনা খাতুন পয়লা মে দিনটি ঘুরে আসে বার বার দিনটি যে সব দুখী মানুষের, সাহসী হয়ে ওঠার। যুগ যুগ ধরে কঠিন আঁধারে, জীবন হতো যে পার সয়ে যেত শুধু, শত অন্যায় আর যত অবিচার। মানুষ তো নয় শ্রমিক যেন, ভারবাহী কোনো প্রাণী জনম হতে জনমে টানিত অপমান আর গ্লানি। কল-কারখানার শ্রমিক মজুর সারা দিনমান খাটে তবুও তাদের ক্ষুধার অন্ন, অনেক কষ্টে জোটে। অন্ন নাই বস্ত্র নাই, নাইকো চিকিৎসা ধুঁকে ধুঁকে মরে তাদের শিশুরা, এমনই দুর্দশা। সারাটি দিনের খাটুনির পরে, যবে আসে ঘরে ফিরে ভাঙ্গা ছাউনিতে বৃষ্টির জল, ঘরটি ভাসিয়ে ছাড়ে। নাইকো শিক্ষা, নাইকো দীক্ষা, নাই আনন্দ…