-
চোখের আলোয় দেখেছিলেম (৩য় পর্ব)
চোখের আলোয় দেখেছিলেম (৩য় পর্ব) এ কে আজাদ দুলাল সকালের নাস্তা প্রতিদিন রাজন দিয়ে যায়। টেবিলের ওপর খাবারটা রেখে মৌমাছির মতো ভোঁ করে বের হয়ে যায়। মুখে তো কলুপ আঁটাই আছে। আজ তার ব্যতিক্রম হলো না। জামী একটু সময় নিতে চায়। আগে ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞাপনটা হাতে পেতে হবে। নাস্তা শেষ করে বের হয়ে যায় নিত্যদিনের প্রাইভেট পড়ানোর জন্য। আজ ফেরার পথে মিষ্টি ভাইয়ের অফিস হয়ে আসবে। ইদানীং রুমে তালা দিতে হয় না। চুরি হওয়ার মতো কোনো দামী জিনিসপত্র নেই। প্রায় দেড়টার দিকে মিষ্টি ভাইয়ের অফিসে ঢোকে। মিষ্টি ভাই তার স্বভাব মতো হাসি দিয়ে বলল, — তা কি খবর জনাব মোহাম্মদ…
-
জলচোখ, নীলজল, রক্তমুখী চাঁদ, উপপাদ্য
জলচোখ আদ্যনাথ ঘোষ আতুর ঘরের পূর্ণিমা চাঁদ ইচ্ছের আক্ষেপে রমণীর ভ্রুণ থেকে উঠে আসা আলো শরীরের গোপনে বেড়ে ওঠা ছায়া আজ বুঝি সহজেই বিদায়ী ট্রেনের মতো হুইসেল বাজায়। ভররাত অভিসারে মুগ্ধময়ী নিয়তির কাঠগড়ায় বাসা বাঁধে শ্লেষ আলোর বিছানা পড়ে থাকে জলচোখ, তৃষ্ণার ভেতর। ঝরে কি গেছে ফাগুন পালক? অথচ অরণ্য কাঁদে সবুজের ধ্বনিময় বুকভরা ফসলের কোলে। স্মৃতিগুলো অতৃপ্ত রয়, ভেসে উঠে সেফটিফিনের ফোঁড় সূর্যের উচ্ছ্বাসে সবুজের গন্ধ জ্বলে দহনে ভরে উঠে ভরণ কলস, ঘোরের আকাশ। বাসনার অঙ্গারগুলো মেতে উঠে ধ্বংসের উৎসবে কোথাও সাজানো নেই; আলোর শিরদাড়ায় ঢুকেছে পেরেক উড়ন্ত পাখির ঠোঁটে শিঙগুলো গুঁতো মারে আঁধার রাতে। কীভাবে যে গিলে ফেলি…
-
তাজমহলের শহর আগ্রায়
তাজমহলের শহর আগ্রায় তাহমিনা খাতুন মোগল সম্রাট শাহজাহানের অমর সৃষ্টি পৃথিবীর সাত আশ্চর্যের এক আশ্চর্য আগ্রার তাজমহল! শত শত বছর ধরে অতুলনীয় এই সৌন্দর্য শোভা নিজের চোখে একবার দেখার জন্য পৃথিবীর সব প্রান্তের মানুষ বিস্ময়কর এই সমাধি সৌধ স্থলে ছুটে যায়। সাত আশ্চর্যের একটা আশ্চর্য দেখতে পাওয়া তো বিরল এক সৌভাগ্যের ব্যাপার বৈকি। সেই বিরল সৌভাগ্যের ভাগীদার হওয়ার সুযোগ পাওয়া গেল। দিল্লী থেকে আগ্রার দূরত্ব ২৪৩ কিলোমিটার। সড়ক পথে ঐতিহাসিক এই শহরে পৌঁছাতে সময় লাগে সাড়ে চার ঘন্টার মতো। জুলাই মাসের এক ভোরে মাইক্রোবাসে দিল্লী থেকে আগ্রা যাত্রা শুরু করলাম। দিল্লী থেকে আগ্রার যাত্রা পথে আরও এক ঐতিহাসিক ঐতিহাসিক…
-
দহন, রোমস্থন, প্রকৃত কান্নার স্মৃতি, গমন ও গন্তব্য
দহন রিঙকু অনিমিখ অপেক্ষার পরিধি ভেঙে সে যখন মগ্ন হলো মন্ত্রে মুগ্ধতা তখন নিমেষেই ছড়ালো প্রতিবেশ মুগ্ধতাই যে নীরবতার প্রতিরূপ তার প্রচল প্রথা ভেঙে সে আরো একবার চূড়ায় দাঁড়ালো ধমনীর ভেতর যে লোহিত স্রোত তাকে বলি আগুনের নদী চোখ বেয়ে নামে যে উদ্গীরিত লাভা—লাভাস্রোত হৃদপুর থেকে আসে বিপরীতগামী পথ পথের শেষে নোনতা জ্বরের উপগ্রাম আরও পড়ুন কবি রিঙকু অনিমিখের কবিতা- দ্বিধা শোকবার্তা রোমস্থন যে প্রেমিক তার প্রেয়সীর মুখে ছড়াতো আগুনের হল্কা, সে আর কিছু নয় ঢেউয়ের ফেনা থেকে কুড়িয়ে আনা নাবিকের দীর্ঘশ্বাস। ঢেউয়ে ঢেউয়ে হাতছানি— দূরের সমুদ্র ডাকে—আয়! যেতে যেতে ক্লান্ত অভিযান; মরীচিকা সাঁতরায় সৈকতে দাঁড়িয়ে যাকে সমুদ্রের হাহাকার…
-
চোখের আলোয় দেখেছিলেম (২য় পর্ব)
চোখের আলোয় দেখেছিলেম (২য় পর্ব) এ কে আজাদ দুলাল শুক্রবার। আজ ছুটির দিন। প্রয়োজনীয় কাজ সেরে বসে চাকরির গাইড পড়ছে জামি। এমন সময় গৃহকর্তী তার ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে হাজির। প্রমোদ গুনলো জামী; কোনো অভিযোগ নিয়ে এলেন না-কি। সরাসরি প্রশ্ন, — কোনো অসুবিধা হচ্ছে কি? জামী স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে বলল, — না, তেমন কিছু না। — না বলতে তো হবে না। আমার ধারণা হচ্ছে। আপনার অসুবিধার কথা ভেবেই বলছি। এতে আপনার সুবিধা বেশি আমার একটু বাড়তি কাজ। — বেশ, বলুন। আপনার প্রস্তাব কি ভেবে দেখা যেতে পারে। — আমাদের সাথে পেইনগেস্ট হিসেবে খেতে পারেন। সকালের নাস্তা এবং দু’বেলা ভাত। আমরা…
-
প্রেম ও নির্জনতা
প্রেম ও নির্জনতা আবু জাফর খান কত আর তাঁবু পালটানো যায়? চোখের ভেতর রৌদ্র পোড়ে, সুর মেলাতে পারি না ডাহুক ওড়ে যন্ত্রের মতো স্বপ্ন টলে; আমি এতকাল নির্জন খুঁজে… শমেশ্বরীর তীর ধরে হেঁটে হেঁটে না পেয়েছি ওমের জল না জোনাকির বাতিঘর। আঙুলের ভাঁজে শূন্যতার শোক আমাকেই দেখে! না বিপুল তুষার না তেতে ওঠা আগুন, কিচ্ছু নেই বারবার শরণার্থী হতে গিয়ে পুড়ে গেছে ঠোঁটের ঘ্রাণ, হারিয়েছি পাতার শরীর; হিম ডিঙিয়ে অগ্নি-আতশের দিকে দীর্ঘ সফর আসলে… জলের ভেতরে জমে ওঠা অন্ধকার ছাড়া কিছু নয়। জানালার রৌদ্রালোক ধীর হতে ধীরে… ঘন হয় যখন, আমরা বিভাজন করি বিকেল-সন্ধ্যা, কিংবা পাহাড়ের গা বেয়ে রোদ…
-
চোখের আলোয় দেখেছিলেম (১ম পর্ব)
চোখের আলোয় দেখেছিলেম (১ম পর্ব) এ কে আজাদ দুলাল শ্রাবণের শেষ বিকেল। রোদের তীব্রতা তখনো কমেনি। বাংলাদেশ ব্যাংক হতে বের হয়ে সোজা হাঁটা শুরু করে দিয়েছে মোহাম্মদ জামী। উদ্দেশ্য ভালো; ছোটো এক রুমের বাসা। কিন্তু সে যে ব্যাচেলার! তাকে কে ভাড়া দিবে। মিষ্টি ভাইয়ের আদেশ, মেসে থেকে চাকুরির স্বপ্ন না দেখাই ভালো। জামীর ছোটো চাচির বড়ো বোনের ছেলে মিষ্টি। ভালো নাম জারিফ জাহিদ। মিষ্টি চেহারা এবং মুখখানা হাসি ভরা তাই সবাই মিষ্টি বলে ডাকে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারি পরিচালক পদে চাকরিরত। অমায়িক ব্যবহার। কত বছর আগের কথা। সবেমাত্র ছোটো চাচার বিয়ে হয়েছে। ছোটো চাচির সাথে তার বড়ো বোনের বড়ো ছেলে…
-
অসমাপ্ত অধ্যায়, কবিতার আকাশে তুমি
অসমাপ্ত অধ্যায় কে এম আশরাফুল ইসলাম তুমি ছিলে তাই ফুটিলে কবিতার সুষম ছন্দে, পথ ভুলে চলে গেলে ভালোবাসার দ্বিধাদ্বন্দে! দৃঢ় শপথে বাঁধিয়া হিয়াতে বিনিময় করিলে মন, দিবা-রাতে এখনো খুঁজি হারানো কাঙ্ক্ষিত রতন! চলি ভাবনায় সেই ভালোবাসায় যা কেড়ে নিয়ে সুখ, অযথা হারায় না ফেরার মান্সে দিয়ে অযাচিত দুখ। বলিতে তখন আমাদের ভুবন আসিলেও প্রলয় ঝড়, অটুট এ বন্ধন রহিবে অটুট না হবো কখনো পর! সময়ের চাকা সরল না বাঁকা অজানাই আদি অন্ত, ফাঁকিতে ফাঁকা রচিয়া অদেখা করিলে চির অশান্ত। অবগুণ্ঠন চোরাগুপ্তা নয়ন তীর্যক চাহনিতে দেখে, সর্বস্ব লুণ্ঠন করিয়া প্রত্যয় আপনাকে দূরে রাখে। অযাচিত দূর পথ বন্ধুর প্রত্যাশার বাতিঘর দোলে,…
-
প্রিয়তমার লাল চোখ (শেষ পর্ব)
প্রিয়তমার লাল চোখ (শেষ পর্ব) মোহাম্মদ সেলিমুজ্জামান মিজান সাহেব দ্রুত হোস্টেল থেকে বের হয়ে একটা রিকশা নিয়ে হোস্টেল অরবিন্দতে গিয়ে ব্যাগ নিয়ে এলো। তারপর সিট বুঝে নিয়ে চাবিটা হাতে করে রাঁধুনি রেস্টুরেন্টের দিকে রওনা দিলো। রাঁধুনি রেস্টুরেন্টে এসে দেখে রেস্টুরেন্টটি মোটামুটি ফিল-আপ। বসার জায়গা তেমন নেই। এমন সময় হঠাৎ দেখলো এক ভদ্র মহিলা তার দুই সন্তান নিয়ে নাস্তা করছে। সামনের সিটগুলো ফাঁকা । মনে পড়ে গেল তার সন্তানদের কথা, সে গিয়ে সামনের সিটে বসে পড়লো। মিজান সাহেব দেখলো বাচ্চাগুলো কী সুন্দর করে একাই ডাল দিয়ে পরোটা খাচ্ছে। কিন্তু তার ছেলেরা একা খেতে চায় না। তাদের গালে উঠিয়ে খাওয়াতে হয়।…
-
ফেলানী
ফেলানী তাহমিনা খাতুন ফেলানী! সে এক ছোট বালিকার নাম পেটের ক্ষিধে নিয়ে কাঁদে অবিরাম। ঘরে তার আছে আরও ছোট ভাই বোন ক্ষুধায় তাদেরও বুঝি না থামে ক্রন্দন। পিতা তার জোটাতে না পারে ক্ষুধার আহার বাঁচার তরে সে যুদ্ধ তাই করে অনিবার। প্রাণান্ত পরিশ্রম সে করে দিন রাত সন্তানের মুখে তবু পারে না দিতে দুই মুঠো ভাত। ক্ষুধাতুর শিশুর কান্না সহিতে না পারে ফেলানীরে সাথে নিয়ে তাই দেশ ছাড়ে। সীমান্ত পাড়ি দিয়ে তবে, যাবে সে ভারত ভাবিল জুটিবে এবার দুটো ডালভাত। ক্ষিদের জ্বালা বড় জ্বালা না মানে দেশ কাল ক্ষুধার অন্নের লাগি বাড়ালো জঞ্জাল। ছোট্ট ফেলানীও ভাবিল বুঝি দুঃখ হবে…