-
লীলাচোখ, তুমি নেই, ঢেউতলে
লীলাচোখ আদ্যনাথ ঘোষ পাখিভোর আজ লীলাচোখে কুমারীত্ব হারায়। লীলাচোখ দুষ্টুমি জানে, পার ভাঙে, গড়ে পার- জলে জলে জ্বলে উঠে স্রোতস্বিনী নদী। জোছনামুখর গ্রহণে গ্রহণ লাগা কাঁঠালি ভরণথোর, রোদেতে প্লাবন; রোদেতে রোদপোড়া ত্রিবেণী মাতঙ্গিনী সোহাগকলস। তবু তার ভাঙন-গড়ন হয়ে উঠে উৎসব; সৃষ্টিপাগল-জলচোখ- ক্ষরণের দহনজ্বালা জোয়ারের পুণ্যতোয়া নদী। এ কেমন জ্বালায় জ্বলে ওঠো, ওগো মেয়ে দহনে দাহনে পুড়ে সুখ পাও, লীলাচোখ পাড়ায়- উল্লাসে মাতাল চোখ, উৎসব ভোর। সবুজ উৎসব মাতে, নদীর এধার ওধার জলেতে জল চায়; বিনিময়ে হয়ে উঠে উর্বরা জমিন। লীলাচোখ জমিন দেখে; নতুনের সৃষ্টিসুখে, স্বপনের সূর্যসকাল। এ কেমন গান গেয়ে ওঠো, ওগো মেয়ে তোমার সর্বনাশা জলের নেশায় সবুজে ভরে উঠে…
-
জলচোখ, নীলজল, রক্তমুখী চাঁদ, উপপাদ্য
জলচোখ আদ্যনাথ ঘোষ আতুর ঘরের পূর্ণিমা চাঁদ ইচ্ছের আক্ষেপে রমণীর ভ্রুণ থেকে উঠে আসা আলো শরীরের গোপনে বেড়ে ওঠা ছায়া আজ বুঝি সহজেই বিদায়ী ট্রেনের মতো হুইসেল বাজায়। ভররাত অভিসারে মুগ্ধময়ী নিয়তির কাঠগড়ায় বাসা বাঁধে শ্লেষ আলোর বিছানা পড়ে থাকে জলচোখ, তৃষ্ণার ভেতর। ঝরে কি গেছে ফাগুন পালক? অথচ অরণ্য কাঁদে সবুজের ধ্বনিময় বুকভরা ফসলের কোলে। স্মৃতিগুলো অতৃপ্ত রয়, ভেসে উঠে সেফটিফিনের ফোঁড় সূর্যের উচ্ছ্বাসে সবুজের গন্ধ জ্বলে দহনে ভরে উঠে ভরণ কলস, ঘোরের আকাশ। বাসনার অঙ্গারগুলো মেতে উঠে ধ্বংসের উৎসবে কোথাও সাজানো নেই; আলোর শিরদাড়ায় ঢুকেছে পেরেক উড়ন্ত পাখির ঠোঁটে শিঙগুলো গুঁতো মারে আঁধার রাতে। কীভাবে যে গিলে ফেলি…
-
তৃষ্ণাদুপুর, শিল্পলিপি, যমুনার জল, স্বপ্নভঙ্গ
তৃষ্ণাদুপুর আদ্যনাথ ঘোষ ও আলো যৌবন দাও, ঢেলে দাও তোমার অতল ফাগুন। পৃথিবীর দুঃখভরা গভীর বিষাদ দূর হয়ে যাক, দ্রুত- শনশন ঝড়ের বেগে ঊর্বরা হাওয়ায়। চরম সত্যের পথে যদি পাহাড়ের বাধা, তবে কীভাবে যে ফুটবে ফুলের কুসুম! ডানা মেলে দেখা দেবে পাখির ঝলক। ছয়টি ঋতু কীভাবে যে গোপনেই গুছিয়ে ফেলে তোমার তৃষ্ণাদুপুর! ভাঙা বাসনায় যদি গ্রাস করে শরীরের জল- তৃষ্ণার পৃথিবী ছুঁয়ে একবার দেহখানি কামনার গন্ধে ভাসে; তবে কী বিলীন হয় সাধ! আরও পড়ুন আদ্যনাথ ঘোষের কবিতা- নিরাশার মাঝে উৎসব আনন্দের ধারা শিল্পলিপি অর্ধেকটা রেখে দিয়ে বাকি অর্ধেক উনুন জ্বেলে অসমাপ্ত রাখিনি তো জল মাটি হাওয়া। যতই লিখি…
-
প্রেমমৃত্তিকা, নিরাশার মাঝে, মঙ্গল প্রবাহে
প্ৰেমমৃত্তিকা আদ্যনাথ ঘোষ জীর্ণ-শীর্ণ ঝরা পাতাগুলো শুধুই কেঁদে কেঁদে যায় অনন্ত বিরহ বেদনায়- বিকেলের হলুদ-রক্তিম আভার সাথে পশ্চিমে হেলেছে সূর্য সিঁদুরের সাথে দুধে-আলতা মিশানো অই অসহ্য বেদনার সাক্ষী হয়ে। হেমন্তের ধান কাটার পরে রিক্ত মাঠের যে বিপন্ন-বিষণ্ণতা কন্যার বিদায়ের সাথে পিতার যে শূন্যতার আহাজারি কার বুকে কতো কষ্ট-কার বুকে কতো প্রেম- কার বুকে কতো কতো ঝড়- অশান্ত মনের ধূসর মেঘমালা থেকে— শুধুই ঝরে ঝরে পড়ে বৃষ্টির ফোঁটায় ফোঁটায়। হৃদয়ের দুঃসহ ক্ষত-বিক্ষত, শিরায় শিরায় অবিরত বয়ে চলে রক্তস্রোত আর আমি চেয়ে চেয়ে থাকি রিক্ত হাতে প্রেমমৃত্তিকা থেকে অসীম শূন্যতার দিকে অবলীলায় । আরও পড়ুন আদ্যনাথ ঘোষের কবিতা- কান্নার কৈলাসে কবিতার…
-
বিবাগী মন, বিষণ্ণ বাতাসে, উৎসব
বিবাগী মন আদ্যনাথ ঘোষ বারোয়ারী বসন্ত জীবনের যতোসব সাধ-আহ্লাদ কোথায় হারিয়েছে সেই দিন তার বিষণ্নতায় যেন হৃদয়ের চত্বরে মুঠো মুঠো রোদ্দুর আজ বিবেকের ক্ষয়িষ্ণু হাটে। স্বপ্নময় আশান্বিত বৃক্ষেরা উপড়ে গেছে হায়! কালবৈশাখী ঝড়ে। স্রোতসিনী যমুনায় জেগে গেছে চর প্রেমময় রাধার খেয়াঘাটে প্রসন্ন হৃদয় থেকে গানের পাখিরা উড়ে গেছে অই বিন্দু বিন্দু জলকণার মন্ত্রিত মেঘমালার কাছে গভীর আঁধারের জ্বালাময়ী-দুঃসহ দুঃখমালা শ্রাবণের বৃষ্টি হয়ে ঝরছে অবিরত। সবকিছু কেনো আজ ঝাপসা মনে হয় কেনো উড়ে যায় বিদগ্ধ বিবাগী মন সর্বহারা বাউলের বিষাদিনী একতারা করুণ সুরে। কেন পুনশ্চ গায় হারানো সেই গান …. আরও পড়ুন আদ্যনাথ ঘোষের কবিতা- স্মৃতিছায়া দেহের ভাঁজে কত পথ…
-
আনন্দের ধারা, হে তরুণ, কান্নার কৈলাসে
আনন্দের ধারা আদ্যনাথ ঘোষ প্রসন্ন আলোয় আনন্দের ধারা বহিছে অবিরল বুকে তার ছলছল ছোট বড় ঢেউ অঙ্গে তার আনন্দের উচ্ছল হাসির মুখরতা। উদাসি রোদ্দুরে কৃষ্ণচূড়ার দল চোখে ভেসে আসে তার সাথে জেগে ওঠে কামিনী কাঞ্চন আর রাধাচূড়া অসীম আনন্দে ওড়ে আকাশেতে পাখি। কতো যে স্বাধীন আজ তাদের আকাশ খাল বিলে ফোটে শাপলা, শালুক, কলমিলতা আরও কতো যে ভাগ্যের অলীক লতা তার পাড়ে মনসার ঝোপে ফোটে লাবণ্যভরা ফুল আশেপাশে আগাছার ছন্দময় বিস্তারের ছোট ছোট জাল উজ্জ্বল সোনালি রোদ্দুরে মেঠো পথও সেখানে পথ হারায়- উত্তাল বাতাস ডেকে নেয় আনমনা পথের ভাসমান ধূলি শব্দের পত্রালি আর স্নেহমাখা আদরের সাথে প্রজাপতিগুলো ঢেউ তুলে…
-
আত্মকথন (১ম পর্ব)
আত্মকথন (১ম পর্ব) আদ্যনাথ ঘোষ আমি আদ্যনাথ ঘোষ। নেশা লেখালেখি। মানুষের অন্তরে বসবাস। জন্ম পদ্মা নদীর তীরবর্তী হেমরাজপুর গ্রামে। পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলায়। আমি যখন ছোটবেলায় সাতবাড়ীয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ি, তখন কবিতা লেখা শুরু করি। সেটা ছিল ১৯৮৪ সাল। ছন্দে ছন্দে লিখতাম। হতো কিনা সেটা বলা মুশকিল। আমার পাশের গ্রামের একটি ছেলে পাবনা শহরে মাঝে মধ্যেই আসত। তার নাম এখন আর বললাম না। তার কাছে একটি কবিতা দিলাম পাবনার একটা পত্রিকায় দেওয়ার জন্য। সে কবিতাটি নিজের নামে পাবনার একটি পত্রিকায় ছাপিয়ে ফেলল। আমি দেখে হতাশ, হতবাক। যাহোক, পরবর্তীতে পাবনা শহরে ১৯৯১ সালে সরকারি এডওয়ার্ড কলেজে স্নাতক কোর্সে…
-
আকাশে ডানা মেলে, কবিতার জমিনে, যদি তুমি হও কালোরাত্রি
আকাশে ডানা মেলে আদ্যনাথ ঘোষ তোমার হৃদয়ের গোপন গান বসন্ত বাতাসের ডানায় ভর করে সকলকে ছাড়িয়ে সব পথ ফেলে আকাশের পানে মেঘের রাজ্যে কেন বারে বারে উড়ে যায় ফেলিয়া তোমার দেহ-তনু-মন কাহারে ভালোবাসো সখি? নিবিড় ভালোবাসার সংগীতে কী গান শোনো অই নক্ষত্রপুঞ্জে আর দূর অশেষ নীলিমার কানে কী চাওয়া তোমার গোপন প্রাণে তোমাকে পাবার আশায় ঝরাপাতার মতো নিজেরে ছেড়ে বহুবার তোমার বৃক্ষতলে লুটিয়ে পড়েছি চৈতি হাওয়ার দাপটে ঘুমাতে চেয়েছে সে তোমার ছায়াতলে পাতাহীন তুমিও মৃত বৃক্ষের মতো আকাশে মেলে ডানা হারিয়ে ছিলে তুমি আপন স্বর্গ ভুবনে। আরও পড়ুন আদ্যনাথ ঘোষের কবিতা- স্মৃতিছায়া দেহের ভাঁজে কত পথ কান্নার কৈলাসে …
-
জলখেলা, দেহের ভাঁজে কতো পথ, নৌকোজীবন, রঙছবি
জলখেলা আদ্যনাথ ঘোষ আমার চোখের নদী জলের নূপুর হয়ে ঢেলে দেয় সবুজ দুপুর চেয়ে থাকে ঘাট থেকে নদী নদী থেকে কষ্ট, প্রেম। এতসব জল খেলা ভিতরে ভাঙন আনে ঋতুর খেলায়। ডুবো জলে ডুবে থাকি নদীর আশায় তবু কেনো প্রেম প্রেম নেশা কার যেন ঘর ভাঙে জলের খেলায়। আর হাঁটু গেড়ে বসে থাকি তোমার ডেরায়। আরও পড়ুন আদ্যনাথ ঘোষের কবিতা- শূন্যের নিক্তিরা যদি তুমি হও কালোরাত্রি হে তরুণ দেহের ভাঁজে কতো পথ দেহের ভাঁজে কতো পথ কতো তার তান কতো তার লয় অনুরাগে ঝরে ঝরে পড়ে। শুকনো পাতা আর ঝরা ফুল মরাঘাট নদী, জ্বালাপোড়া মাঠ গতিহীন, নিথর নীরব। হুহু…