-
আলতা বানু (৩য় পর্ব)
আলতা বানু (৩য় পর্ব) শাহানাজ মিজান আমাদের সংসারে একের পর এক দূর্যোগ নেমে আসতে লাগল। শাশুড়ি আম্মা তার ছেলের বউদের খুব ভালোবাসতেন। বিশেষ করে বড়ো বুবুকে তিনি নিজে পছন্দ করে বড়ো ছেলের বউ করে ঘরে এনেছিলেন। তার ছেলের সমস্যা, আমাদের দুজনের কষ্ট এসব তিনি সহ্য করতে পারলেন না। ভালো মানুষ রাতে শুয়েছিলেন, ফজরের ওয়াক্তে তিনি আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন চিরদিনের জন্য। শাশুড়ি আম্মার মৃত্যুর খবরে আমার বাপের বাড়ির সবাই দেখতে এল। আব্বা আমার মুখের দিকে তাকাতে পারলেন না। সবাই সবটা জেনে গেছে। সবার অপরাধবোধ চোখ আমার দিকে। দাদি এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করলেন। শাশুড়ি আম্মার…
-
আলতা বানু (২য় পর্ব)
আলতা বানু (২য় পর্ব) শাহানাজ মিজান আমাদের বাড়িতে উঠোনে বসে নতুন জামাই সমাজের কিছু গণ্যমান্য লোকজনের সাথে কথা বলছিলেন। আর ঘরের মধ্যে আমি আমার পরিবারের সবাইকে ডেকে নিয়ে এলাম কথা বলার জন্য। আব্বার সাথে কথা বলার সাহস আমার আজো হলো না। কান্না চেপে রাখতে পারলাম না। কাঁদতে কাঁদতে মেজো চাচার পা জড়িয়ে ধরে বললাম, — চাচা, আমি তোমাদের কাছে এত বড়ো বোঝা হয়ে গিয়েছিলাম, আগে কেন বলোনি? তাহলে আমি গলায় দড়ি দিয়ে মরে যেতাম। একজন বিবাহিত পুরুষ যার ঘরে বউ আছে, তার সাথে কেন আমার বিয়ে দিলে? লোকে তো তোমাদের বড়োলোক বলে, তাহলে কীসের এত অভাব পরেছিল যে আমাকে এভাবে…
-
রূপসী বাংলার কবি
রূপসী বাংলার কবি তাহমিনা খাতুন রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশ বাংলার ছবি এঁকে গেছো কত সহজ, অনায়াস! বিশালাক্ষী দিয়েছিল বর জনম লভেছিলে তাই, নীল বাংলার ধান আর ঘাসের ভিতর। নাটোরের বনলতা সেন পাখির বাসার মতো চোখ দেখে যার হয়েছিল কবি ভাবনা মগন। সোনালি ডানার চিল, সদা কেঁদে যায় এ কবির ভাবনায় লক্ষ্মী পেঁচা শিমুলের ডালে বসে অবিরাম ডেকে যায়। কার্তিক মাস আর ধানের ছড়া হৃদয়ের গহন কোণে, কেবলি দিয়ে যায় নাড়া। ধানসিঁড়ি নদী আর হিজল তমালের বন রূপমুগ্ধ কবির মনে সদা, করে গেছে বিচরণ। বাংলার নদী মাঠ ভাঁট ফুলের বর্ণিল সুষমায় ঘুরে ফিরে আসে দেখি তাহার কবিতায়। চায়নি এ…
-
আজকাল, কামালপুর, কৃতি ব্যক্তিবর্গ, গবেষক, জনপ্রতিনিধি, বিজ্ঞানী, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাবিদ, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, সাহিত্য, সুজানগর উপজেলা, হাটখালি
‘আমাদের সুজানগর’ সংকলন গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠিত
পাবনার সুজানগরে ‘আমাদের সুজানগর’ সাহিত্য সংকলন গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার (২০ অক্টোবর) বিকালে উপজেলার কামালপুর উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ চত্বরে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন কৃষি বিজ্ঞানী ড. মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীনের সভাপতিত্বে, শিক্ষক শরিফুল ইসলাম ও আফরোজা খাতুনের সঞ্চালনায় মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন পাবনা ২ আসনের সংসদ সদস্য আহমেদ ফিরোজ কবির। ‘আমাদের সুজানগর’ সংগঠন কর্তৃক আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটির উপাচার্য ড. আ ফ ম মফিজুল ইসলাম; উপজেলা চেয়ারম্যান শাহীনুজ্জামান শাহীন এবং সংগঠনের উপদেষ্টা ও কথাসাহিত্যিক এ কে আজাদ দুলাল; উপদেষ্টা, কবি ও কথাশিল্পী মোহাম্মদ সেলিমুজ্জামান; উপদেষ্টা ও সাতবাড়িয়া ডিগ্রি…
-
আলতা বানু (১ম পর্ব)
আলতা বানু (১ম পর্ব) শাহানাজ মিজান ১৯৬৫ সাল, তখন আমার বয়স প্রায় সতের। কয়েক বছর আগেই বাংলা লেখাপড়ার পাট চুকে গিয়েছিল। পঞ্চম শ্রেণি পযর্ন্ত পড়ার পর আমার আব্বা বাড়িতে একজন হুজুর রেখে দিয়েছিলেন;আরবি পড়ানোর জন্য। লেখাপড়ায় একেবারেই খারাপ ছিলাম না। তাই খুব তাড়াতাড়িই কোরআন এবং নামাজ পড়া শিখে গেলাম। আব্বা বলতেন, মেয়েদের এত বেশি বাংলা লেখাপড়া করার দরকার নাই। মেয়েরা ঘরে থাকবে; পর্দার মধ্যে।তবে বাংলা বই পড়তে আমার খুব ভালো লাগত, ছোটো ভাইদের বই নিয়ে গল্প পড়তাম। আমার বাপ-চাচারা ছিলেন তিন ভাই। আব্বা ছিলেন সবার বড়ো। তার রক্ত চক্ষুকে উপেক্ষা করে কোনো কথা বলার সাহস কারো ছিল না। তিন ভাইয়ের…
-
জীবন বোধ, চিলেকোঠা
জীবন বোধ পূর্ণিমা হক গভীর নিশীথে তন্দ্ৰাহত নয়নে নেই ঘুম– জানালার ফাঁকে দেখি নিঃশব্দ আকাশ জোছনার কোলে শীতের শিশির কাঁঠালের ডালে পাখির ডাকাডাকি শিউলির ঘ্রাণে জীবনের ঘ্রাণ, আমিও চেয়ে থাকি অপলক চোখে বাইরের আকাশে। তন্দ্ৰাহত নয়নে নেই ঘুম নির্জন মাঠে, আমার মনের জীর্ণ কুটিরে জোছনার আলোরা খেলে শান্ত বাতাসে। মনের আকাশে শিশির ঝরিয়ে রোদেরা হাসে সকালের মেঠোফুলে। তোমায় পেয়েছিলাম একদিন সবুজ ক্ষেতের মাঝে, রূপালি বিকেলে গোধূলি বিভায়, কৃষ্ণচূড়ার তলে। আমার প্রতীক্ষায় হয়তো আজো দাঁড়িয়ে তুমি এই অবেলায়– বিশ্বাসের বোধোদয়ে। তবে কি আজো আমাদের অব্যক্ত ভালোবাসা পথ চলে ছায়াঘন তরুর পথে হাতে হাত রেখে? এখনো ক শুনি হৃদয়ে কান পেতে জোছনার…
-
চোখের আলোয় দেখেছিলেম (শেষ পর্ব)
চোখের আলোয় দেখেছিলেম (শেষ পর্ব) এ কে আজাদ দুলাল বাড়িওয়ালি খালাম্মা কোনো কথা না বলে শুধু চোখের পানি ফেলে, ছেলে রাজনকে নিয়ে রুম হতে বের হয়ে আসে। জামী কিছু সময় চুপচাপ থেকে খাবার খেতে বসে। তার মনে আজ খুব আনন্দ। একটা পরিবারকে ধ্বংসের কিনারা হতে রক্ষা করতে পেরেছে। যাকে সাহায্য করছে আজ পর্যন্ত তার দেখা মেলেনি। সে কি ভাবছে। আসলে কি মেয়েটির প্রতি করুণা না-কি এই অসহায় পরিবারকে ধ্বংসের হাত রক্ষার মন-মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে এসেছে। হয়ত সময় একদিন বলে দিবে। তবে না দেখে তো কারও প্রেমে পড়া যায় না। এমন কি তার কোনো প্রশংসা শুনেনি। এখন পর্যন্ত তাকে নিয়ে…
-
নীলপদ্ম, নতুন সূর্যের ভোর
নীলপদ্ম জিন্নাত আরা রোজী আমি শ্রাবণ হয়ে তোমার কাছে এসেছিলাম একগুচ্ছ কদম খোঁপায় গুঁজে বৃষ্টিতে ভিজব বলে সাদা শাড়ি অঙ্গে জড়িয়ে। কৃষ্ণচূড়ার মতো লাল রঙে আঁকা ছিল আমার অধর চোখে লেপ্টে কাজল এঁকেছিলাম, শুধু তুমি দেখবে বলে, শুধু তুমি। একটু আদর, একটু অভিমানের ছোঁয়া নিতে ভালোবেসে নতুন নামে ডাকবে বলে অপেক্ষায় ছিল এ কাতর হৃদয়, কিন্তু তোমার হৃদয় মন্দিরে ভালোবাসার সঞ্চার হলো না। আমার রূপমাধুরীতে সেই দিন আসমান জমিন জেগে উঠেছিল; কিন্তু তোমার প্রেমময় বক্ষ জাগেনি, কারণ তুমি মুখোশ পরা দেশের মানুষ। তোমাকে না পেলে জীবন্ত লাশ হব না, বরং বৃষ্টিভেজা বেলীফুলের মতো সৌরভ ছড়াব। জলজ্যোৎস্নার ছবি হয়ে আসব ভাঙা…
-
চোখের আলোয় দেখেছিলেম (৫ম পর্ব)
চোখের আলোয় দেখেছিলেম (৫ম পর্ব) এ কে আজাদ দুলাল জামী এখন চাকুরিতে যোগদানের বিষয় নিয়ে ভাবছে না। হাতে বেশ সময় আছে। একবার যোগদান করলে সময় দিতে পারবে না। কিন্তু যার জন্য এত ভাবনা সে কি আদৌ নিয়োগপত্র পেয়েছে। চুপিসারে সব কাজ সম্পন্ন করেছে। কিন্তু যদি নিয়োগপত্র পেয়ে থাকে তার মতো বেশ কিছু ডকুমেন্টস তেরি করতে হবে। যেমন পুলিশ তদন্ত সংক্রান্ত; তবে অন্যান্য কাগজ হয়তো অফিস থেকে সাহায্য পেয়ে যাবে। তিন দিন অতিবাহিত হতে চলেছে। তিন তলায় আগের মতো ভূতুরে বাড়ির মতোই আছে। রাজন নিয়মিত জামীর কাছে পড়ে যাচ্ছে তবে প্রয়োজনীয় কথা ছাড়া বাড়তি কোনো কথা বলে না। দুপুরে খাবার…
-
মনে করি ভুলে যাব
মনে করি ভুলে যাব পথিক জামান সেই কবে হতে মনে করি ভুলে যাব তোমাকে কিন্তু কখনোই তা হয়ে ওঠেনি। যতবার চেষ্টা করেছি পরাজিত হয়েছি ততবারই। জানি না তোমার কোন শক্তি কাজ করে ভিতরে আমার। ওই যে রক্তিম মুখ ঘন কালো কেশ আর ডাগর ডাগর দু’টি চোখ সবই তো অতি প্রিয় আমার। তারপর কোনো এক পড়ন্ত বিকেলের কথা, বাঁধা ঘাটে বসে জলে রেখে পা সে ছিল অসম্ভব এক মুহূর্ত, ভুলিনি তা। তারপর জলে নেমে স্নান, কিছু সময়ের জন্য ভুলে গেলে সব- যৌবনের উন্মত্ততায়। ভেসে গেল লৌকিকতা, অবশ্য তা স্বল্প সময়ের জন্য। ভেজা শরীরে সাদা কাপড় জড়িয়ে ছিল অপূর্ব এক লোভনীয় মমতায়।…