-
জোছনা মাখা আলো (১ম পর্ব)
জোছনা মাখা আলো (১ম পর্ব) এ কে আজাদ দুলাল হেমন্ত কাল চলছে। বর্ষা-শরৎ শেষ হলেও হেমন্তে বর্ষায় প্লাবিত ডুবে যাওয়া খাল-বিল এখনো পানিতে থৈ থৈ। গ্রামের নিচু জায়গা নরম কাঁদায় তুলতুলে মাটি। কেমন যেন একটা মিষ্টি গন্ধ শামিমের নাকে এসে ঢোকে । গন্ধটা খারাপ লাগছে না শামিমের। এমন গ্রাম বাংলা পৃথিবীর অন্য কোথাও আছে কিনা সন্দেহ। “আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি” জাতীয় সংগীতের লাইনটি মনের ভেতরে বেজে ওঠে। এই তো মাস ছয় হলো এমপিও ভুক্ত কলেজে পদার্থ বিজ্ঞানে প্রভাষক পদে যোগদান করেছে। হাতের নাগালেই কলেজ। মায়ের ইচ্ছে তাকে বাড়িতে থাকতে হবে। আর বাবার ইচ্ছে ছোট ভাই তামিম একজন…
-
কৃতি ব্যক্তিবর্গ, গবেষক, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মুরারীপুর, লেখক পরিচিতি, শিক্ষাবিদ, সাগরকান্দি, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, সাহিত্য
অধ্যাপক মুহম্মদ মনসুরউদ্দীন (৪র্থ পর্ব)
অধ্যাপক মুহম্মদ মনসুরউদ্দীন (৪র্থ পর্ব) ব্যক্তিত্ব: লোকসাহিত্যবিশারদ মুহম্মদ মনসুরউদ্দীন সারাজীবন সাধারণ মানুষের সঙ্গে যেমন থেকেছেন নিজের জীবন যাপনেও ছিলেন সাধারণ। সরল নিরহঙ্কারী, নির্লোভ এই সাধক মানুষটিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একবার কোনো একটা সরকারি দায়িত্ব দিতে চেয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, “আমি তো ক্ষমতার কাছাকাছি থাকা মানুষ না।’ তিনি ক্ষমতা চাননি কোনো দিন। আজীবন সাধনা করেছেন। জীবদ্দশায় একটা ফোকলোর ইনস্টিটিউট করার চেষ্টা চালিয়েছিলেন। ঘুরেছেন দেশে বিদেশে। জুতা পরতে এবং ইংরেজি পড়তে বলতেন তিনি। যদিও আপাদমস্তক ছিলেন একজন গৃহী বাউল।” “বিশ্বমানব হবি যদি কায়মনে বাঙালি হ’-গুরুসদয় দত্ত।হাতের কাছে হয় না খবর, কী দেখতে যাও দিল্লি-লাহোর।” লালন সাঁই এসবের উল্টো ভাসান কি ছিলেন…
-
গ্রন্থ ও গ্রন্থাগার
গ্রন্থ ও গ্রন্থাগার খ ম আব্দুল আউয়াল এমন একদিন ছিল যখন এই পৃথিবীতে মানুষ ছিল না। মানুষ যখন সৃষ্টি হলো, তখন থেকেই শুরু হলো এই পৃথিবীতে মানুষের বেঁচে থাকার সংগ্রাম। কষ্ট ছাড়া, শ্রম ছাড়া প্রকৃতির কাছ থেকে মানুষের বেঁচে থাকার কোনো উপকরণই পাওয়া যায়নি। আদিম কালে মানুষ ছিলো অসহায়। আত্মরক্ষার তাগিদে, বেঁচে থাকার সংগ্রামে সংঘবদ্ধভাবে বসবাস করতে করতেই মানুষ সমাজ সৃষ্টি করে। পৃথিবীতে মানুষ সংঘবদ্ধভাবে বসবাস করতে শিখেছে আত্মরক্ষার তাগিদে। বেঁচে থাকার সংগ্রামে জয়ী হয়েছে মানুষ সমাজ সৃষ্টি করে। নৃবি জ্ঞানীদের মতে মানব সভ্যতার সূচনা হয়েছে সমাজ সংগঠনের মধ্য দিয়ে। প্রকৃতির বৈরিতার সাথে একক সংগ্রামে মানুষের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়।…
-
প্রথম শহর দেখা ও বিদেশ ভ্রমণ
প্রথম শহর দেখা ও বিদেশ ভ্রমণ তাহমিনা খাতুন শহর দেখা সম্ভবত দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময় পাবনা শহর দেখতে গিয়েছিলাম মেজ ভগ্নিপতি কাজী মর্তুজা মজিদের (মেজ দুলাভাই) এর সাথে। পেট্রোল চালিত লক্কড়-ঝক্কর বাসে চড়ে পাবনা শহর দেখতে গেলাম। এর আগে কোথাও বেড়াতে যাওয়া বলতে নিজের গ্রাম থেকে ৫/৬ কিলোমিটার দূরে মেজ বোনের শ্বশুর বাড়ি চরগোবিন্দপুর অথবা মাইল দুই/তিন দূরে বড় ভাইয়ের শ্বশুরবাড়ি সৈয়দপুর গ্রামে! আর সে ভ্রমণও ছিল মহিষের বা গরুর গাড়ি অথবা নৌকায় চড়ে। ষাটের দশকের মাঝামাঝি সময়ে ইঞ্জিন চালিত কোন যানবাহনে প্রথম ভ্রমণ করা! কাজেই বাসে চড়ে সেই প্রথম ভ্রমণ ছিল রীতিমত রোমাঞ্চকর! পাবনা শহরে ভ্রমণ করতে গিয়ে…
-
মরিচপোড়া (শেষ পর্ব)
মরিচপোড়া (শেষ পর্ব) সাইফুর রহমান পরদিন সকাল দশটা নাগাদ ময়েজ শেখের বাড়িতে তুলকালাম কাণ্ড। ভূত- তাড়ানি দেখতে জমায়েত হয়েছে প্রায় শ-খানেক লোক। ময়েজ শেখ যে ঘরটায় থাকেন সেই ঘরের বারান্দার চাল ঘেঁষে বিশাল এক নারিকেল গাছ আকাশ ছুঁয়েছে। সেই গাছের সঙ্গে পিছমোড়া করে বাঁধা মিতুজা। একটু দূরে শীতল পাটির উপর জায়নামাজ বিছিয়ে বসেছেন হেকমত কবিরাজ । তার সামনে টুকিটাকি কিছু জিনিসপত্র-একটা বড় কাঁচের বোতল, সরিষার তেল, ধুতরাপাতা, ঝাঁটা, গামছা, ধূপ ও তিনটা রক্তরঙা লম্বা লম্বা শুকনা মরিচ। ছোট একটা মালসায় ধরানো হয়েছে আগুন। জায়নামাজে বসে বিড়বিড় করে দোয়া-দরুদ পড়তে লাগলেন হেকমত কবিরাজ। উপস্থিত মানুষজনদের উদ্দেশ করে তিনি বললেন- আপনাদের…
-
একজন মুক্তিযোদ্ধার কষ্ট, ভুল, আত্ম বেদনা
একজন মুক্তিযোদ্ধার কষ্ট (বীর মুক্তিযোদ্ধা খলিফা আশরাফকে উৎসর্গকৃত) আজিজুল কায়সার মুক্তিযোদ্ধাদের স্বপ্ন পূরণ হয়নি। ভাঙার স্বপ্নে নগ্ন উল্লাসে যেনো মেতে উঠেছে সকলেই। মুক্তিযোদ্ধাদের অশ্রু নয়নে নদী। ৭৫ এর নৃশংসতায় অকৃতজ্ঞ জাতি, নির্বাক দেখেছে সকলেই। মুক্তিযোদ্ধারা সেদিনই স্তব্ধ হয়ে গেছে। জেল হত্যার ধৃষ্টতায় ধূর্ত শেয়াল, চেয়ে দেখেছে সকলেই। মুক্তিযোদ্ধাদের বন্দুক ছিলো বারুদ হীন। হঠাৎ উদিত কালো চশমার দৌরাত্ম, দেখেছে পৃথিবীর সকলেই। মুক্তিযোদ্ধারা ছিলো নিরস্ত্র দেহে নিথর। জাতি ধ্বংসে বুদ্ধিজীবীর নৃশংস ইতিবৃত্ত অপলক দেখেছে সকলেই। মুক্তিযোদ্ধারা সেদিন পরাজিত হয়েছে। হাতে পতাকা দেশদ্রোহীর অট্রহাসি , দেখেছে জন্মভূমির সকলেই। ভুল ভুলে সব দিন পার, করে গেছি একাকার, মাটিতে পড়েনি পা, দিয়ে গেছি…
-
পেতনি
পেতনি শফিক নহোর বউরে আমি কালটি বলে ডাকতাম, এ ডাকটি ছিল তার কাছে বিষের মতো। নাম ধরে ডাকার সঙ্গে সঙ্গে মুখটা এমন কালো হয়ে যেত, মনে হতো অমাবস্যার অন্ধকার রাত নেমে এসেছে আকাশ থেকে। তার মুখের রঙ পরিবর্তন হয়ে যেত সহজে। সাত সকালে ভূতের মুখ দেখে ঘুম ভাঙলে কী সেদিন ভাল যায়? কপাল পোড়া হলে যা হয়, ঠিক আমারও তাই। তবে ও হাসলে দাঁতগুলো খুব চকচক করত। ওকে কখনো আদর করতে ইচ্ছে হয়নি, ভালবাসতে ইচ্ছে হয়নি, কখনো আপন করে কাছে পেতে ইচ্ছে হয়নি, ভাত খাবার কথা বলতে ইচ্ছে হয়নি, ভালো কাপড় কিনে দিতেও কখনো ইচ্ছে হয়নি। কেন ইচ্ছে হয়নি-…
-
আমার গ্রাম, বাবা, নারী
আমার গ্রাম দিলরুবা করিম গ্রামখানি আমার সবুজ শ্যামলে ঘেরা পাশে বয়ে গেছে গাজনার বিলের ধারা। এখানে স্নিগ্ধ সকালে মৌসুমি ফুল ফোটে। শরতের আকাশে কাশফুলের ছায়া লুটে। হেমন্তের মাঠে সোনালি ফসলে কৃষকের ক্লান্ত মুখে ফুটে হাসি। আমার গ্রামের মাটিতে আমার প্রাণ আমি এই মাটিতেই খুঁজি নব জীবনের সন্ধান। এই গ্রামের মানুষেরা সবে মুক্ত উদার মনে হৃদয়ে তাদের জাগে আগামী দিনের আশা। এই গ্রামের এই মাটিতেই আমার প্রাণ,মধুর আমার ভাষা এই গ্রামেই আমার বাবা-মায়ের অন্তিম ডাক আসে, সেই ডাকাতে সাড়া দিয়ে নির্ভাবনায় ঘুমিয়ে তারা আছে। এই গ্রামেই আমি হারিয়ে যেতে চাই আমার কান্না হাসির অস্তিত্বের মাঝে। বাবা বাবা, তোমায় খুঁজি…
-
মরিচপোড়া (২য় পর্ব)
মরিচপোড়া (২য় পর্ব) সাইফুর রহমান সন্ধ্যার পরপরই তোমার মা বসলেন ইলিশ মাছ ভাজতে। মাছের সে কী সুগন্ধ। মনে হয় আধমাইল দূর থেকেও সেই মাছের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছিল। মাছ তো নয় যেন ননির চাপ কেটে ভাজা হচ্ছে কড়াইয়ে। ইলিশ মাছের গন্ধে ভুরভুর করতে লাগল চারপাশ। সমস্ত বাড়ি ক্রমশ হয়ে উঠল ইলিশময়। তোমার মা নিজেকে আর কিছুতেই ধরে রাখতে পারলেন না। এক টুকরো, দু টুকরো করে এক সময় সম্পূর্ণ মাছটিই খেয়ে ফেললেন। কাঁসার বড় থালাটিতে পড়ে রইল শুধু ল্যাজ আর ছোট ছোট দু-এক টুকরো মাছ। হঠাৎ তোমার মায়ের খেয়াল হলো, সর্বনাশ হয়ে গেছে। কোন ফাঁকে তিনি মাছগুলো সব খেয়ে নিয়েছেন বুঝতেও…
-
কৃতি ব্যক্তিবর্গ, গবেষক, গোপালপুর (ভায়না), বিজ্ঞানী, ভায়না, লেখক পরিচিতি, শিক্ষকবৃন্দ, শিক্ষাবিদ, সমাজসেবক, সাহিত্য
অধ্যাপক মোহাম্মদ আব্দুল জব্বার (৫ম পর্ব)
অধ্যাপক মোহাম্মদ আব্দুল জব্বার (৫ম পর্ব) ~ মোহাম্মদ আব্দুল মতিন কর্মময় জীবন: কর্মময় জীবনের শুরুতেই তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগে ১৯৪১ থেকে ১৯৪৩ সাল পর্যন্ত শিক্ষকতায় আত্মনিয়োগ করেন। এরপর যোগদান করেন চট্টগ্রাম কলেজে, পরবর্তীতে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে অংক শাস্ত্রেও শিক্ষক হিসাবে যোগদান করেন। দেশ বিভাগের পর ১৯৪৭ সালে তিনি রাজশাহী কলেজে গণিত বিভাগের প্রধান পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। কিন্তু পরের বছরেই ১৯৪৮ সালে তিনি তৎকালীন ঢাকার আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের (বর্তমান বুয়েট) গণিত বিভাগে যোগদান করেন। বুয়েটে তিনি দীর্ঘ কর্মময় জীবন অতিবাহিত করেন। গণিত বিভাগের প্রধান হিসাবে ছিলেন একটানা প্রায় পনের বছর। ১৯৬২ সালে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত হবার পর তিনি নিযুক্ত…