-
এখানে স্নিগ্ধ সকাল
এখানে স্নিগ্ধ সকাল খলিফা আশরাফ লোকটার নাম শ্রী হরিদাস চন্দ্র হালদার। সবাই তাকে হারে হলদার বলেই ডাকে। তাতে সে কিছু মনে করে না। গরীবদের মনে করতে নেই, সবকিছু মেনে নিতে হয়। মৎস্য আহরণ বিক্রয়ই তার পেশা, জীবিকা নির্বাহের একমাত্র উপায়। খুব ছোট বেলায় বাবাকে হারিয়েছে, সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময় মা চলে গেলেন। ভিটেমাটি ছাড়া যে সামান্য জমি আছে, তাতে ২/৩ মাসের খোরাক হয়। তাতে বছর চলে না। বাধ্য হয়েই পৈতৃক মাছ বেচা পেশাতেই যুক্ত হতে হল তাকে। হরিদাস দীর্ঘাঙ্গ, পেটা শরীর। বেশ পৌরুষদীপ্ত। কিন্তু হাড়ভাঙ্গা খাটুনিতে এক সময়ের ফর্সা রং জলে ভিজে, বৃষ্টিতে পুড়ে এখন তামাটে, আগের ঔজ্বল্য আর…
-
শোকবার্তা, নগর সংস্করণ, আলোর বর্জ্যে মুদ্রিত সন্ধ্যা, বটগাছ নিরবে বাড়ে
শোকবার্তা রিঙকু অনিমিখ বিষাদের দ্বি-প্রহর; এ জাগতিক পূর্ণ সূর্য অর্জুনের দীক্ষা ভেঙে পূরণ করেছো ফাঁকি ভরেছো কলার ভাঁড়ার। ও আরাধ্যজন— স্বারাধনায় করেছো জয় তপ্ত সিংহাসন বাতাসের নম্রতা নিয়ে অনুকম্পা মেঘ পুজোর ভাষ্যে করে গুণকীর্তন—বজ্র-সংলাপে পরম আনুগত্যে, স্তুতিবাক্যে হাসে স্মিতা বিষাদ ছড়াও তুমি বিষাদের পিতা…. হেমন্তভোরে রৌদ্রের পায়ে পায়ে ঘাসের ডগায় মৃত্যুর মতো শোক জমা হয়; প্রতিটি ঘাসের চূড়ায় জ্বলে ওঠে একটি দুটি অসংখ্য চিতা বিষাদ ছড়াও তুমি বিষাদের পিতা….. আরও পড়ুন কবি রিঙকু অনিমিখের কবিতা- ত্রিমোহনী অপেক্ষা নগরসংস্করণ পোড়া মাংসের ঘ্রাণ জানিয়ে দিচ্ছে শ্মশানের নিকটতর খবর শহরের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ছে এ সংক্রান্ত গুঞ্জন তবু…
-
কপিশ নয়ন (১ম পর্ব)
কপিশ নয়ন (১ম পর্ব) আবু জাফর খান এক. আব্দুর রহিত ব্যাপারী দিঘির পুব পাড়ে দাঁড়িয়ে উত্তর পাড়ের একখণ্ড জমির দিকে লোলুপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। নানা প্রলোভন দেখিয়েও আজ অবধি মালিককে রাজি করাতে পারেনি। বিগত পঞ্চাশ বছর ধরে নানারূপ কুটিল ফাঁদ পেতেও জমিটি হাতানো সম্ভব হয়নি। সব রকম ফন্দি-ফিকির ব্যর্থ হয়েছে। রহিত ব্যাপারীর মনের কোমল জায়গায় কাঁটার মতো কী যেন খচ করে বেঁধে। ছিয়াত্তর ঊর্ধ্ব এই লোকটির লালসা সীমাহীন। এত করেও এত পেয়েও ভিখিরির মনটি রয়ে গেছে। তারই বা দোষ কী। এ যে পরম্পরাগত প্রবৃত্তি। আব্দুর রহিত ব্যাপারী বাবা কাপড়ের পুঁটলিতে টাকা বেঁধে মাল কেনাবেচার টুকটাক ব্যবসা করত। সেই দিয়ে ১৯৪৭…
-
ইউনিয়নসমূহ, গোপালপুর (ভায়না), চর মানিকদিr (ভায়না), চরচলনা, চরপাড়া, চরবিশ্বনাথপুর, চলনা, দূর্গাপুর (ভায়না), নারায়ণপুর (ভায়না), ভায়না, ভায়না (গ্রাম), ভায়না ইউনিয়নের ইতিহাস ও ঐতিহ্য, মঠপাড়া, মথুরাপুর (ভায়না), মানিকদির (ভায়না), লক্ষ্মীপুর, সাহাপুর, হেমরাজপুর
ভায়না ইউনিয়ন
ভায়না ইউনিয়ন ১। ইউনিয়ন পরিচিতি এক নজরে: ভায়না, পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার অন্তর্গত একটি ইউনিয়ন। ভায়না ইউনিয়ন পরিষদ ইতিপূর্বে সুজানগর ইউনিয়ন পরিষদের অন্তর্ভুক্ত ছিল। সুজানগর পৌরসভার কার্যক্রম ২০০৩ সালে শুরু হওয়ায় সুজানগর ইউনিয়নের বাকি অংশ নিয়ে ভায়না ইউনিয়ন পরিষদ গঠিত হয়েছে। ভায়না গ্রামের নাম অনুসারে ভায়না ইউনিয়ন পরিষদের নামকরণ করা হয়েছে। আয়তন : ১৯.৭৬৪ বর্গ কিলোমিটার জনসংখ্যা : মোট ২৫,৪০১ জন (পুরুষ-১৩,৪৭৮ জন এবং মহিলা-১১,৯২৩ জন) ঘনত্ব : ৭৫৭ জন (প্রতি বর্গ কি.মি.) ভোটার সংখ্যা : মোট ১১,৭৯৪ জন (পুরুষ ৬,০৯০ জন, মহিলা ৫,৭০৪ জন) গ্রাম : ১৯টি মৌজা : ১১টি কমিউনিটি ক্লিনিক : ৩টি আবাদী জমি : ১৫৬১…
-
আমাদের সুজানগর সংকলন রিভিউ
আমাদের সুজানগর সংকলন রিভিউ মোখলেছুর রহমান ‘আমাদের সুজানগর’ সাহিত্য সংকলন পড়ে শেষ করলাম। সুজানগর উপজেলার লেখকদের লেখা নিয়ে করা এই সংকলন ইতিহাস-ঐতিহ্য, শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি, গল্প, প্রবন্ধ, কল্পকাহিনী, কবিতা, ছড়া ইত্যাদির ধারক এবং বাহক। উপরিউক্ত বিষয়গুলো সংকলনটিকে বহুমাত্রিকতা দান করেছে। প্রতিষ্ঠিত প্রবীণ লেখক থেকে শুরু করে নবীন সকলের লেখার সংমিশ্রণ সংকলনটি সমৃদ্ধ হয়েছে। সংকলন: আমাদের সুজানগর সম্পাদক: মো. আলতাব হোসেন প্রচ্ছদ: মো. আলতাব হোসেন প্রকাশনী: দাঁড়িকমা মূল্য: ৩৫০.০০ টাকা পৃষ্ঠাঃ ১৮৮ সংকলনটি শুরু হয়েছে পাবনা-২ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্যর বাণী নিয়ে। তারপর সূচিপত্রের মাধ্যমে মূল লেখায় প্রবেশ। সুজানগরের নামকরণের ইতিহাস, আজিম চৌধুরীর বাড়ি নিয়ে ঐতিহাসিক তথ্য তুলে ধরে আলোকপাত করা হয়েছে…
-
জোছনা মাখা আলো (শেষ পর্ব)
জোছনা মাখা আলো (শেষ পর্ব) এ কে আজাদ দুলাল হক সাহেবের পিছনে পিছনে পশ্চিম দিকের দরজা দিয়ে ঢুকতেই চোখে পড়ে লম্বা বারান্দা। বারান্দায় ডান দিকে পর পর দুটো কামরা। তালা দেয়া। তারপর রান্না ঘর। রান্না ঘরের সামনে ডাইনিং। বাম দিক পুরোটা গ্রিল দিয়ে আটকানো। বেশ বড় উঠোন এবং তারপর বিভিন্ন জাতের ফলজ গাছ। আছে বিভিন্ন জাতের ফুল গাছ। এটা একটা সৌখিন রুচিশীল শিক্ষিত ভদ্রলোকের বাড়ি এতে কোন সন্দেহ নেই। দু’ভাই একে অপরের দিকে তাকায়। আলো বুঝতে পারছে, এ রকম পরিবেশ দেখে মনে খটকা লাগছে দু’ভাইয়ের মনে। —কি, বিশ্বাস হচ্ছে না গ্রামে এ রকম একটা বাড়ি থাকতে পারে? এটা আমার…
-
শিরোনামহীন, স্মৃতির পাতায়
শিরোনামহীন কে এম আশরাফুল ইসলাম (‘আমাদের সুজানগর’ সংকলন গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠান উপলক্ষে ) আমি নগন্য সমবেত গন্যমান্য যোগ্যদের আগমনে, সবাই অনন্য অযোগ্য আমি এই বিকশিত কাননে। করি বিচরণ পুলকিত মম আনন উপজেলার যত ফুল, করিতে চয়ন আসিয়াছি হেথায় নামিক আশরাফুল! ভালো লাগে তাই লিখে লিখে যাই বরেণ্য বরণীয় সুধী, তোমাতেই হারাই সেখানেই পাই সবাই পরাণের দরদি! কেউ হাসে কেউ পিপাসে মূল্যায়নের তুলাদণ্ডে, কেউ ভালোবাসে নব রূপায়নের অযাচিত রিমান্ডে! এই ভাষা বিন্যাস ঘাসফুলের চাষ শিশিরে মুক্তোর দানা, এলোকেশী নিবাস তাণ্ডবে মাতাল দিয়েও হারায় ঠিকানা! খুঁজি আরবার দোলায়িত পারাবার মহাশূন্য অটবী, জোসনায় হাহাকার প্রেমাঞ্জলি মোর অলকাপুরী পৃথিবী! মরু মরীচিকা প্রত্যাশার…
-
ব্যবধান, অতীত ফিরে দাঁড়াও, হৈমন্তি ভালবাসা
ব্যবধান জহুরা আক্তার ইরা এক মাটিতেই জন্ম সবার এক আকাশ তলে বাস তবু কারো মনে খুশির জোয়ার কেউ ফেলে দীর্ঘশ্বাস। কেউ গড়ে তোলে অট্টালিকা কারো বাস কুঁড়ে ঘরে, বাস্তুহারা হয়ে কেউ কেউ ঘুরে ফেরে দ্বারে দ্বারে। কারো শরীরে বাহারী পোশাক কেউ দামী গাড়িতে ঘোরে যে গাড়ির চাকায় পিষ্ঠ হয়ে কত প্রাণ যে অকালে ঝরে। কারো ঘরে রাখা সুস্বাদু খাবার পোষা কুকুরের তরে আধা পোয়া পেটও পায়না খাবার কেউ অনাহারে ধুকে মরে। আসামিরা সবাই নয়কো পাপী তবু নির্মম বিচারের খেল পাপ করে কেউ পার পেয়ে যায় কেউ বিনা পাপে খাটে জেল। চাবুক ধরেছে রক্তপায়িরা অন্যেরা পিঠ পেতে বিস্ময় জাগে নিষ্ঠুর…
-
জোছনা মাখা আলো (৩য় পর্ব)
জোছনা মাখা আলো (৩য় পর্ব) এ কে আজাদ দুলাল —আরও দুঃখের কথা শুনবেন? —বাবার পরিচিত অনেকেই সেদিন বুকে আশা বেঁধে গিয়েছিলেন এই ভেবে, তাদেরই পরিচিত স্বজন ব্যক্তিবর্গ যাচাই-বাছাই বোর্ডে আছেন। এবার নাম তালিকাভুক্ত হবেই। অনেকে আবার আপসোস করে বললেন এত দিনে কেন নাম তালিকাভুক্ত হয়নি। কথা শুনলাম। বয়সে ছোট ছিলাম তো অতশত বুঝে উঠতে পারিনি। এখন বুঝি কিসে কি হয়। —বলেন কি? —ঠিকই তাই। পরে শুনেছিলাম ২০০৪ সালে যে তালিকা করা হয়েছিল তাতে বাবার নাম আছে তাই তার নাম বাদ পরেছে। বেশ কিছু দিন পর বুঝতে পারলাম এখানে অন্য খেলা ছিলো। —২০০৪ সালের তালিকা নিয়ে চেষ্টা করেননি? —করিনি আবার।…
-
পদ শব্দ মিলিয়ে যায়
পদ শব্দ মিলিয়ে যায় আবু জাফর খান আগে যেখানে ঘর ছিল শালবনের গা-ঘেঁষে এখনও সেখানেই আছে, বারান্দা ডিঙিয়ে উঠোন, উঠোনের পাশে পরাশ্রিত লতাগুল্ম, সটিগাছ, তারপর দখিনের মাঠ… হিম হাওয়া পাক খায় পুবে, পশ্চিমে। আগে যেখানে দৃষ্টি ছিল এখনও সেখানেই আছে, খুব ভোরের গোলাপি উষ্ণতা পার হয়ে ভাঁটফুল পথে শালবনের দিকে হেঁটে যাওয়া; এখন সময়ের পলেস্তরা খসে খসে হাঁটাপথ রুদ্ধ দৃষ্টিজুড়ে তেতো বিষণ্ণ সোপান। মেঘের আষাঢ়- শব্দ ভাঙে তেঁতুল পাতায়, চৌকাঠের ওপাশে অদৃশ্য কারও দীর্ঘশ্বাস দরজায় দাগ রেখে যায়, সে আমার মিয়ানো ঢেউ। ভিজে ওঠা মন খেয়ালি ভাবনাগুলি রাত্রিদিনের ঝুঁকে পড়া অন্বেষণ হারিয়ে যাওয়া ঘণ্টার ধ্বনি মন্দির আঙিনায় খুব ভোরের…