-
নিঃশব্দে নীড়ে ফেরা ।। ১০ম পর্ব ।। ধারাবাহিক উপন্যাস ।। এ কে আজাদ দুলাল
নিঃশব্দে নীড়ে ফেরা ।। ১০ম পর্ব এ কে আজাদ দুলাল ক্লান্ত মন ও শরীরে অল্প সময়ের মধ্যে ঘুমিয়ে যায় দু’জন। মাঝ রাতে স্বপ্ন দেখে হঠাৎ ঘুম ভেঙে যায় রাকার। মনিকাকে ডেকে তোলে। মনিকা ভয় পেয়ে যায়। ঘুম ভাঙতেই দেখে রাকা তার বিছানায় বসে আছে। মুখখানি কেমন যেন ফ্যাকাসে দেখাচ্ছে। কাছে গিয়ে জানতে চায় খারাপ কোনো স্বপ্ন দেখেছে কি-না। রাকা কিছু সময় চুপ থেকে স্বপ্নের ঘটনা খুলে বলে। আজ রাতে সেই মহিলাকে স্বপ্নে দেখেছে। পরনে আগের মতো হালকা সবুজ জমিনে খয়েরি রঙের পাড়ের শাড়ি এবং গায়ে খয়েরি রঙের ব্লাউজ। আজকে তার আচরণ ভিন্ন। আজ রাকাকে বুকে টেনে নিয়ে জড়িয়ে ধরে। রাকা…
-
মাঝি // কবিতা // জাহাঙ্গীর পানু
মাঝি জাহাঙ্গীর পানু মাঝি, তুমি আমাকে পার করে দাও। যেভাবে ছোটোবেলায় নানা বাড়িতে যাবার পথে তুমি আমাকে পার করে দিতে। তুমি আমাকে পার করে দাও- এই অনাচার, দুর্নীতি, দুর্বৃত্তায়ণ আর মাদকাসক্ত সমাজের দূর্বিসহ জীবন থেকে, অথবা তুমি আমাদের সমাজ থেকে অবিচার অনাচার আর দুর্নীতিকেই পার করে দাও। পার করে দিয়ে আমাদের সমাজকে মাদকমুক্ত করো আর হৃদয়কে করো কলুষমুক্ত। তুমি কত পার করে দিয়েছ চলমান পথিককে কাস্তে হাতে কৃষক, দিনমজুর, বাঁক কাঁধের ফেরিওয়ালা। যেভাবে তুমি পার করতে অফিসের কেরানি, তহশিলদার, পিয়ন, হাতে লাঠি আর মুখে বাঁশি রাখা চৌকিদার আর বাইকসহ স্কুলের মাস্টার মশাইকে। মাথায় বোঝা আর হাতে ভারী ব্যাগ বহনকারী হাটুরেকে।…
-
নিঃশব্দে নীড়ে ফেরা ।। ৯ম পর্ব ।। ধারাবাহিক উপন্যাস
নিঃশব্দে নীড়ে ফেরা ।। ৯ম পর্ব এ কে আজাদ দুলাল আজকের বিকেলেটা অন্য রকম। বাড়িটির পশ্চিমে পাকা রাস্তা, তারপর সবুজ ঘন বড়ো বড়ো গাছের সমারোহ। দারুণ লাগছে রাকার। বিকেলের সূর্যটা লাল রঙে রঞ্জিত হয়ে সবুজ ঘন গাছের মধ্যে লুকোচুরি খেলছে। আর মাস্টার বাড়ির পরিবারের সদস্য এবং আগত অতিথি বিশেষ করে রাকার মনের ভেতরে চলছে অজানা স্নায়ুযুদ্ধ। এ যুদ্ধ হয়তো একটা ভাঙা সম্পর্ক নতুন বন্ধনে আবদ্ধ হবে। রাকার মনে প্রশ্ন সে কী সঠিক জায়গায় পা দিয়েছে না-কি আবার অজানা পথে পা বাড়াতে হবে। কিন্তু ভদ্রলোকের চেহারার সাথে বাবার চেহারায় অনেকটাই মিল। যদি তাই হয়, তাহলে এদের মধ্যে কী এমন ঘটেছিল, এতকাল…
-
মুক্ত ভূমিতে কয়েকদিন // ভ্রমণকাহিনি // তাহমিনা খাতুন
মুক্ত ভূমিতে কয়েকদিন তাহমিনা খাতুন থাইল্যান্ড বা শ্যামদেশ। ভ্রমণ-পিপাসুদের জন্য এক স্বর্গরাজ্য! এ দেশের প্রকৃতি বৈচিত্র্যময়। পাহাড়, দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত, সমতল ভূমি এবং বন-জঙ্গলে ঘেরা থাইল্যান্ড। এক সময়ে এ দেশকে পূর্বের ‘ভেনিস’ বলা হতো। অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পৃথিবীর মানুষকে হাতছানি দিয়ে ডাকে। এছাড়া ভালো চিকিৎসা নিতেও বহু মানুষ থাইল্যান্ড যাওয়াকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে। অনেক বছর আগে, একটি সেমিনারে অংশ নিতে কয়েকদিনের জন্য থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংকক যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল। তখন থাইল্যান্ডের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও প্রকৃতি সম্পর্কে জেনেছিলাম। উড়াল সড়কের শহর ব্যাংকক। বিমানবন্দর থেকে শুরু করে মূল শহর পর্যন্ত দীর্ঘ পথ উড়াল সড়কের উপর দিয়েই যেতে হয়। তারপরও বেশ যানযটের ধকল সামলাতে…
-
নিঃশব্দে নীড়ে ফেরা ।। ৮ম পর্ব ।। ধারাবাহিক উপন্যাস ।। এ কে আজাদ দুলাল
নিঃশব্দে নীড়ে ফেরা ।। ৮ম পর্ব এ কে আজাদ দুলাল পরবর্তী স্টেশনে নামতে হবে। রেল স্টেশনটি ছোটো হলেও অনেক পুরাতন। ব্রিটিশ শাসক তাদের সুবিধামতো রেল স্টেশন, পুলিশ ফাঁড়ি নির্মাণ করেছিল। আমাদের বংশপরম্পরা তা ভোগ করে আসছি; অন্তত এই দুটো জায়গায় তাদের স্মরণ করা যায়। স্টেশনটি সে রকম জাঁকজমকপূর্ণ নয়। ব্রিটিশ আমলের জীর্ণশীর্ণ দুটো ভবন দাঁড়িয়ে আছে অতীত স্বাক্ষী হয়ে। পাঁচ মিনিটের মধ্যে ট্রেনটি স্টেশনে থামবে। যাত্রীরা নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তাদের সংখ্যা বেশি নয়। পাঁচ মিনিটের বেশি অপেক্ষা করবে না তাই যাত্রীদের বেশ তাড়াহুড়া। ট্রেন থামতেই লালজামা পরিহিত একজন কুলি এসে মনিকার সামনে দাঁড়ায়। সে যাত্রীদের চেহারা দেখে বুঝতে পেরেছে এই…
-
বই চোর // শেষ পর্ব // ছোটোগল্প // সাইফুর রহমান
বই চোর // শেষ পর্ব সাইফুর রহমান ইন্দ্রের দিকে হাত বাড়িয়ে বলল, — একটা সিগারেট দে। অনেকক্ষণ হলো সিগারেট ফুঁকা হয়নি। নিকোটিনের প্রচণ্ড অভাব বোধ করছে শরীর। সিগারেটের কৌটাটি এগিয়ে দিতে দিতে ইন্দ্রনাথ সুনীলকে উদ্দেশ করে বলল, — বেশ জম্পেস ধরনের একটি বই সংগ্রহশালার সন্ধান পেয়েছি জানিস। সুনীল সিগারেট জ্বালানো বন্ধ রেখে কৌতূহলী কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল, — বলিস কী, কোথায়? — মুর্শিদাবাদের আজিমগঞ্জে। পরিত্যক্ত বনেদি জমিদারের এক প্রাসাদে। বাড়িটি নিয়ে অবশ্য ওয়ারিশদের মধ্যে মামলা-মোকদ্দমা চলছে দীর্ঘকাল ধরে। কিন্তু সেই বাড়ির পাহারাদারের সঙ্গে আলাপ হয়েছে আমার। দারোয়ানটির নাম লজপত সিং। জাতিতে রাজপুত। ওর পূর্বপুরুষ অনেককাল আগে চলে এসেছে বাংলায়। আমি কয়েক…
-
নিঃশব্দে নীড়ে ফেরা ।। ৭ম পর্ব ।। ধারাবাহিক উপন্যাস ।। এ কে আজাদ দুলাল
নিঃশব্দে নীড়ে ফেরা ।। ৭ম পর্ব এ কে আজাদ দুলাল আরও ঘণ্টা দুই লাগবে স্টেশন পোঁছাতে। গাড়ি যে গতিতে চলছে তাই মনে হলো মনিকার। এত সময় ধরে রাকা তার পৈতৃক ইতিহাস বলল। কিন্তু কেন ফুলঝুড়িতে যাচ্ছে তা জানা হলো না। আবার ডা. মাসুদ সেভাবে কিছু ভেঙে বলেননি। — আচ্ছা রাকা, তুমি যে আমার সঙ্গে ফুলঝুড়িতে যাচ্ছো, কিন্তু কেন? — মনিকাদি, এই ফুলঝুড়ির নামটা তোমার মুখে এই প্রথম শুনতে পেলাম। মাসুদ ভাই এ ব্যাপারে সব জানেন। তবে তোমাকে আরও একটা মজার কাহিনি বলব। — ইদানিং পর পর বেশ ক’টা রাতে একটা স্বপ্ন দেখে যাচ্ছি। সচেতন, অচেতন বা অবচেতনে; তাকে কখনো মনের…
-
আতু // ছোটোগল্প // শাহানাজ মিজান
আতু • শাহানাজ মিজান বাড়ি থেকে অফিস বেশ দূরে, প্রতিদিন গ্রামের কাঁচা রাস্তায় তিন মাইল পথ হেঁটে এসে তবেই গাড়ি ধরতে হয়। আর আতুও প্রতিদিন একজন সচেতন অভিভাবকের মতো আমাকে গাড়িতে উঠিয়ে দিয়ে তারপর বাড়িতে ফিরে যায়। বারণ করলেও শোনে না, ধমক দিলে অসহায় চোখে আমার দিকে এমনভাবে তাকায়; মায়া লাগে, তখন আর কিছুই বলতে পারি না। কিছুদিন আগেও, ও আমাকে এগিয়ে দিয়ে একা একা বাড়িতে ফেরার পথে ভিন গাঁয়ের একদল হিংস্র কুকুর ওর উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। আঁচর আর কামড়ের যন্ত্রণায়, দশ-বারো দিন খুব অসুস্থ ছিল। অফিস থেকে ফেরার সময় হলে ও ঠিক সময়ে বড়ো গাছটার নিচে বসে অপেক্ষা করে।…
-
নিঃশব্দে নীড়ে ফেরা ।। ৬ষ্ঠ পর্ব ।। ধারাবাহিক উপন্যাস ।। এ কে আজাদ দুলাল
নিঃশব্দে নীড়ে ফেরা ।। ৬ষ্ঠ পর্ব এ কে আজাদ দুলাল রাজশাহী কলেজে ইন্টারমিডিয়েট পড়ার সময় বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র নাজিমকে পেয়েছিল রুমমেট হিসেবে। মেধাবী ছাত্র ছিলেন। ডাক্তারী পড়া তার দৃঢ় ইচ্ছে। হয়েছিল ডাক্তার। ঢাকা মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালে কর্মরত। আর রাকিব আহমেদ ভর্তি হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতিতে। নাজিম ডাক্তারী পড়া শেষ হওয়ার আগেই এক বছর জুনিয়র হবু ডাক্তারকে প্রেম করে বিয়ে করে। এই দম্পতি একমাত্র তার ভরসা। দেরি না করে ছুটে যায় বন্ধু দম্পতির কাছে। বিস্তারিত খুলে বলে। এও বলে ওপরে উঠতে হলে এ যুগে বড়ো কারো সাহায্য প্রয়োজন। মেয়ের পরিবারের সেই যোগ্যসম্পন্ন ব্যক্তি আছেন। বুদ্ধিমান ডা. নাজিমের বুঝতে বাকি রইল…
-
বই চোর // ১ম পর্ব // ছোটোগল্প // সাইফুর রহমান
বই চোর // ১ম পর্ব সাইফুর রহমান সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ যেখানে শেষ হয়েছে, তার থেকে ঈষৎ আগে শ্যাওড়া গাছসদৃশ একটি পাকুড় বৃক্ষের সন্ধান পাওয়া যায়। বনসাই আকৃতির এই গাছটি সেখানে দাঁড়িয়ে আছে সম্ভবত বেশ কিছুকাল ধরে। পাকুড়গাছের ছায়ার নিচে সস্তা টিন দিয়ে ছাওয়া ঘুপচির মতো যে চায়ের দোকানটি আছে, সেখানেই দুপুর ১২টা নাগাদ অপেক্ষা করার কথা ছিল সুনীলের। দুপুরের দিকে চায়ের দোকানটি অপেক্ষাকৃত নির্জন থাকে। ডিমের কুসুমের মতো সূর্যটা পশ্চিমে হেলে পড়লে পাকুড়গাছটির সুশীতল ছায়া পড়ে চায়ের চালাঘরে। তখন সেখানে মানুষের জমায়েত হয়। কোলাহল বাড়ে। চায়ের এই দোকানটি অবশ্য এ অঞ্চলটিতে মোহনমিয়ার চায়ের দোকান নামে পরিচিত। সুনীল ১২টার আগেই সেখানে এসে…