শাহনাজ মিজান গল্প ও উপন্যাস লেখেন। প্রকাশিত উপন্যাস: অধরা চাঁদ; গল্পগ্রন্থ: আকাশে চাঁদের পালকি তিনি ১৯৮২ সালের ৩১ ডিসেম্বর, পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার অন্তর্গত দুলাই ইউনিয়নের চরদুলাই গ্রামে এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।

  • সাদা-মেঘের-তুলো-শেষ-পর্ব
    গল্প,  শাহানাজ মিজান,  সাহিত্য

    সাদা মেঘের তুলো (শেষ পর্ব)

    সাদা মেঘের তুলো (শেষ পর্ব) শাহানাজ মিজান   বন্ধু জামানের কাছে শুনেছিলাম নোড়া বিয়ে করেছে। একটা চিরকুটও পাঠিয়েছিলো, তাতেও বিয়ের কথাটাই লেখা আছে। আচ্ছা, নোড়া কি খুব সুখে আছে? ওর বর নিশ্চয়ই খুব ভালোবাসে ওকে। এতোদিনে হয়তো ওর বাচ্চা-কাচ্চাও হয়েছে। যাবো যাবো করতে করতে দ্বিধা দ্বন্দ্বে ভুগছিলাম। একদিন সমস্ত দ্বিধা কাটিয়ে, একবার শুধু চোখের দেখা দেখবো বলে, ওদের বাসায় গিয়েছিলাম কিন্তু দেখা হলো না। ওরা সে বাসা ছেড়ে দিয়েছে কিছুদিন আগেই। আচ্ছা, আমার কথা কি ওর একবারের জন্যেও মনে পরে না? আমি তো ঠিকানা বদলাইনি, যদি ভুল করেও একবার আসতো! বদলাইনি ফোন নম্বর, প্রতিক্ষায় থাকি, যদি সেই পরিচিত নাম্বার থেকে…

  • সাদা-মেঘের-তুলো-১ম-পর্ব
    গল্প,  শাহানাজ মিজান,  সাহিত্য

    সাদা মেঘের তুলো (১ম পর্ব)

    সাদা মেঘের তুলো (১ম পর্ব) শাহানাজ মিজান   বৃষ্টির দিনে কোনো কাজ যদি না থাকতো, কতই না ভালো হতো। গ্রামের বাড়িতে টিনের ঘরের চালের উপর ঝমঝম বৃষ্টির; রিমঝিম রিমঝিম শব্দ শুনতে দারুণ লাগে। মনে হয়, প্রেয়সী যেন আলতা রাঙা পায়ে নূপুর পরে ছন্দে ছন্দে আনন্দে নৃত্য করছে। আর সে নৃত্য দেখতে দেখতে ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে যেতে মন চায়। অলসতা এসে ভর করে সমস্ত শরীরে,মনে। বিছানাও যেন আপন করে, আদরে জড়িয়ে রাখে। শহরের মানুষ প্রকৃতির এই রোমাঞ্চকর স্বর্গীয় অনুভূতি থেকে বঞ্চিত, তবে বৃষ্টি বিলাসী মন যার, সে সব জায়গাতেই প্রকৃতির রোমাঞ্চ খুজে পায়। বৃষ্টির আজ অভিমানের পালা চলছে, অঝোরে কেদেঁই যাচ্ছে,…

  • ঊর্মিমালা-শেষ-পর্ব
    গল্প,  শাহানাজ মিজান,  সাহিত্য

    ঊর্মিমালা (শেষ পর্ব)

    ঊর্মিমালা (শেষ পর্ব) শাহানাজ মিজান   এবাদ আলী চলে যাওয়ার পর, কেমন যেন একটা ঘোরের মধ্যে ছিলাম। বেশ কিছুক্ষণ বসে থাকার পর মনে হলো, অনেক দিন বললে ভুল হয়, কয়েক বছর হলো নামাজ পড়িনি। ভালো করে অজু করে এশার নামাজে দাড়ালাম। নামাজরত অবস্থায় আপনা আপনিই চোখের পানিতে বুক ভেসে যাচ্ছে। জায়নামাজে বসে অনেকক্ষণ ধরে দোয়া পড়লাম। কেন জানি না জায়নামাজ থেকে আজ উঠতে ইচ্ছে করছে না। শুধু ঊর্মির কথা মনে হচ্ছে। ধনী বাবার আদরের দুলালী, আমার মতো চাল চুলোহীন একটা ছেলের সাথে তার বাবা বিয়ে দিয়ে দিলো। সে আমাকে এবং আমার অবস্থানকে চুপচাপ মেনে নিয়ে আমার সংসার করে যাচ্ছে। আমার…

  • ঊর্মিমালা-২য়-পর্ব
    গল্প,  শাহানাজ মিজান,  সাহিত্য

    ঊর্মিমালা (২য় পর্ব)

    ঊর্মিমালা (২য় পর্ব) শাহানাজ মিজান   কোনোরূপ আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই, আমার প্রতিবেশীদের মধ্যে দু-চারজন মুরুব্বি আর ওদের পক্ষের অল্প সংখ্যাক আত্মীয় স্বজনের উপস্থিতিতে আমাদের বিয়ে হলো। শিকদার সাহেব বললেন, বিয়ে উপলক্ষ্যে বড় অনুষ্ঠান হবে, আমাদের মাস্টার্স পড়া শেষ হলে। এত দিন যেন আমরা ভালোভাবে লেখাপড়া করি। আমার ভাঙা ঘরের পাট শোলার বেড়ার সাথে নতুন হলুদ শাড়ী, পেটিকোট, ব্লাউজ ছড়ানো। সকালে সূর্য ওঠার আগেই, ঊর্মির পিঠে ছড়িয়ে থাকা ভেজা চুল, তড়িঘড়ি করে করে আমার জন্য নাস্তা বানানো, বাড়িতে নতুনত্বের আলাদা একটা গন্ধ বাতাসে ভাসছে কিন্তু কোনোকিছুই আমার মনে কোন রকম দাগ কাটছে না। বরং, আমার সামনে ঊর্মিকে এমন ভাবে ঘুরতে দেখে, আমার…

  • ঊর্মিমালা-১ম-পর্ব; amadersujanagar.com
    গল্প,  শাহানাজ মিজান,  সাহিত্য

    ঊর্মিমালা (১ম পর্ব)

    ঊর্মিমালা (১ম পর্ব) শাহানাজ মিজান   শেষ সম্বল বলতে বাকী ছিলো শুধু এই পুরোনো আম গাছটা। আজ সেটাও বিক্রি করে দিলাম। এছাড়া আর কোনো উপায় ছিলো না। কিন্তু এরপর কি হবে, কি করবো, কিভাবে মায়ের চিকিৎসার খরচ যোগাড় করবো জানি না। আমার মা কিডনির মারাত্মক রোগে আক্রান্ত। ডাক্তার বলেছেন, যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব অপারেশন করাতে হবে। তা না হলে, মাকে আর বাঁচানো যাবে না। আমরা খুব গরীব। সহায় সম্পত্তি বলতে বাপ দাদার রেখে যাওয়া এই ভিটে বাড়ি, আর বাড়িতে দোচালা টিনের একটা ঘর। এছাড়া আর কিছুই নেই। বাড়িতে কয়েকটি পুরোনো ফলজ গাছ ছিলো, আম, কাঁঠাল, আর নারিকেল গাছ। এসব ফলমূল বিক্রি…

  • প্রতীক্ষিত-বৃষ্টি
    গল্প,  শাহানাজ মিজান,  সাহিত্য

    প্রতীক্ষিত বৃষ্টি

    প্রতীক্ষিত বৃষ্টি শাহানাজ মিজান   আকাশে মেঘ জমতে শুরু করলে ময়ূরী যেমন পেখম মেলে নাচে, মিনুর মনটাও তেমন করে নেচে ওঠে। এক দৌড়ে ছাদে চলে যায়। মেঘকালো লম্বা চুলগুলো বাতাসে উড়তে থাকে। সেই সাথে শাড়ির আঁচল। মিনু আকাশের দিকে তাকিয়ে প্রাণ ভরে নিশ্বাস নেয়। এরপর নাচতে-নাচতে, গাইতে-গাইতে ফুলের টবগুলো এক সাথে করে। বৃষ্টিতে ভিজে, আবার সবকিছু ঠিকঠাক করে রেখে নিজের রুমে আসে। এটা ওর মা একদম পছন্দ করেন না। কিন্তু ওর বাবা মেয়ের এই আনন্দে, নিজে খুব আনন্দিত হন। তাঁদের দুই মেয়ের মধ্যে মিনু বড়। মিনুকে তিনি একটু বেশিই ভালোবাসেন। ছয়তলা বাড়িটা ওদের নিজেদের। মিনু ছাদে হাটতে খুব পছন্দ করে।…

  • বড়-বাবা-শেষ-পর্ব
    শাহানাজ মিজান,  সাহিত্য

    বড় বাবা (শেষ পর্ব )

    বড় বাবা (শেষ পর্ব ) শাহানাজ মিজান   রিফাতের মা বললেন, __না ভাইজান। এই বাড়িতে বউ হয়ে আসা থেকে শুরু করে সন্তানদের বড় হয়ে ওঠা, ওদের ভালো-মন্দ সবকিছু আপনি দেখাশোনা করেছেন। তাই আমি মনে করি শুধু রিফাত নয়, এ বাড়ির সব ছেলে-মেয়েদের সমস্ত ব‍্যাপারে কথা বলার, তাদের জীবন সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়ার একমাত্র অধিকার আপনার। __না রিফাতের মা। তোমরা শুনলে না, মেঝ কি বলল? __(চোখের পানি মুছে জোরে নিঃশ্বাস নিয়ে) শুনেছি ভাইজান। আমি আমার স্বামীর হয়ে আপনার কাছে ক্ষমা চাইছি। __ভাইজান, কারো অজানা নাই যে আপনি এই সংসারের জন‍্য, সব ভাই-বোনদের জন‍্য কি করেছেন। কেউ যদি সেটা অস্বীকার করতে চায় সেটা…

  • বড়-বাবা-৩য়-পর্ব
    গল্প,  শাহানাজ মিজান,  সাহিত্য

    বড় বাবা (৩য় পর্ব)

    বড় বাবা (৩য় পর্ব) শাহানাজ মিজান   অলিদ থতমত খেয়ে বললো , __না, মানে তোর বাবা যে রাগি মানুষ, আমি তো খুব ভয় পাই। আর তুইও তো এখনো দিপাকে কিছু বলিসনি। তাই বলছিলাম আর কি… __হুম দিপাকে কালই বলবো। ছাত্রছাত্রীরা একে একে সবাই বের হয়ে যাওয়ার পরে, দিপা বই খাতা গোছাচ্ছিলো। এ সময় রিফাত এসে বললো, __দিপা তোমার সাথে আমার কিছু কথা ছিলো। দিপা মাথা নিচু করে, সবকিছু গোছাতে গোছাতেই বললো, __আমি জানি আপনি কি বলবেন। কিন্তু….. দিপাকে থামিয়ে দিয়ে রিফাত বললো, __প্লিজ, দিপা। কথা বলার আগেই, কথার মাঝখানে কিন্তু বসিয়ে দিও না। __কি করবো বলুন? কিন্তু যে বসাতেই হবে…

  • বড়-বাবা-২য়-পর্ব
    গল্প,  শাহানাজ মিজান,  সাহিত্য

    বড় বাবা (২য় পর্ব)

    বড় বাবা (২য় পর্ব) শাহানাজ মিজান   পড়ন্ত বিকেল, রিফাত একটার পর একটা সিগারেট খেয়েই যাচ্ছে। আর ওর মনে হচ্ছে ঐ ধোয়ার মধ্যে দিয়ে হেটে হেটে আসছে দিপা। রিফাতের চোখ দুটো ফুলে লাল হয়ে আছে। মনে পড়ছে, এই তো সেদিনের কথা। রিফাত গ্রামের হাইস্কুলে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করলো। প্রিয় বন্ধু অলিদই পরামর্শ দিলো, বাড়ির বাহিরে একটা ঘর তুলে, সেখানে কোচিং সেন্টার খুলতে। এখন সব শিক্ষকেরাই এভাবে কোচিং সেন্টার খুলে ছেলে-মেয়েদের পড়ান। তাতে শিক্ষকদের সময় বাঁচে আর ছেলেমেয়েদের ও সুবিধা হয়। বিশেষ করে যেসব পরিবারের, ছেলে-মেয়েদের জন্য একা একজন শিক্ষক বাড়িতে রেখে পড়ানোর সার্মথ‍্য নেই। তাদের জন‍্য তো খুবই ভালো সুবিধা…

  • বড়-বাবা-১ম-পর্ব
    গল্প,  শাহানাজ মিজান,  সাহিত্য

    বড় বাবা (১ম পর্ব)

    বড় বাবা ( ১ম পর্ব) শাহানাজ মিজান   আকাশে প্রচণ্ড মেঘ জমেছে। সন্ধ্যা নেমে আসছে। রিফাত দোকানে এলো। তাড়াতাড়ি কয়েক প্যাকেট সিগারেট নিয়ে চলে যেতে উদ্যত হলে, দোকানদার চাচা বললেন, __বাবা রিফাত! তোমার কি এই কাম সাজে? কি মানুষ তুমি আর কি করছো? সব তো ঠিকই অয়া যাবি। এতো পাগলামি করো না বাবা। রিফাত সিগারেট ধরিয়ে একগাল ধোঁয়া ছেড়ে, দোকানদার চাচার দিকে একবার তাকালো। তারপর কোনো কথা না বলেই চলে গেল। রিফাত আগে দিনে দুটো সিগারেট খেত। ভার্সিটিতে লেখাপড়া করার সময় বন্ধুদের পাল্লায় পরে সিগারেট খাওয়া শিখেছিলো। শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর ভেবেছিল, আর কখনো সিগারেট খাবে না। আর যাই…

error: Content is protected !!