-
তাঁতিবন্দ জমিদার বাড়ি
তাঁতিবন্দ জমিদার বাড়ি তাঁতিবন্দ জমিদার বাড়ি পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার অন্তর্গত তাঁতিবন্দ ইউনিয়নের তাঁতিবন্দ গ্রামে অবস্থিত এক ঐতিহাসিক জমিদার বাড়ি। উক্ত জমিদার বাড়িতে এই জমিদার বংশের তৈরি করা মঠ ‘বিজয় বাবুর মঠ’ নামে জনসাধারণের কাছে বেশ পরিচিত। উপেন্দ্রনারায়ণ এই জমিদার বংশ ও জমিদার বাড়ির প্রতিষ্ঠাতা হলেও মূলত জমিদার বিজয়গোবিন্দ চৌধুরী সময় জমিদার বাড়িতে বিশাল বিশাল সুন্দর কারুকার্যখচিত একাধিক অট্টালিকা তৈরি করা হয়। এছাড়াও তিনি কয়েকটি দিঘি ও দুইটি সুউচ্চ মঠ নির্মাণ করেন। তিনি প্রভাব-প্রতিপত্তিতে পাবনা জেলার মধ্যে অন্যতম ছিলেন। ভারতবর্ষের মধ্যে সিপাহী বিদ্রোহের (১৮৫৭ খ্রি.) সময় বিজয়গোবিন্দ বৃটিশ সরকারকে সহায়তা দিয়েছিলেন বলে রাধারমণ সাহার ‘পাবনা জেলার ইতিহাস’ গ্রন্থ থেকে জানা…
-
বিজয় গোবিন্দ চৌধুরীর বংশ পরিচয়
বিজয় গোবিন্দ চৌধুরীর বংশ পরিচয় পাবনার সুজানগর উপজেলায় দুইজন বড় জমিদারের দেখা মেলে। তার মধ্যে একজন তাঁতিবন্দের চৌধুরী জমিদার এবং অপরজন দুলাইয়ের জমিদার আজিম চৌধুরী। তাঁতিবন্দ চৌধুরী জমিদাররা শুধু সুজানগর উপজেলার মধ্যে নয়, পাবনা জেলার মধ্যে বিখ্যাত ছিলেন। এরা ছিলেন বারেন্দ্র শ্রোত্রীয় ব্রাহ্মণ; এদের পূর্ব উপাধি সান্যাল। এদের আদি নিবাস ছিল চাটমোহর উপজেলার বোঁথর গ্রামে। এ জমিদার বংশের পূর্বপুরুষ রাজবল্লভ চৌধুরী তার মায়ের সঙ্গে শৈশবে এসে তাঁতিবন্দের অদূরে চণ্ডীপুর গ্রামে এসে বসবাস শুরু করেন। পূর্বে তাঁতিবন্দে কুলিন ব্রাহ্মণ ছিল না। পরবর্তীতে উপেন্দ্রনারায়ণ ও তার বংশধরদের সময়ে কুলিন ব্রাহ্মণদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি দান করে তাদের সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করলে, তারা…
-
উপজেলার ইতিহাস, জমিদার, তাঁতিবন্দ (গ্রাম), তাঁতিবন্দ ইউনিয়নের ইতিহাস ও ঐতিহ্য, তাঁতিবন্ধ, সুজানগর উপজেলা
জমিদার বিজয় গোবিন্দ চৌধুরী
জমিদার বিজয় গোবিন্দ চৌধুরী বিজয় গোবিন্দ চৌধুরী ছিলেন ইতিহাসখ্যাত এক হিন্দু জমিদার ও প্রখ্যাত শিকারি। জন্ম: বিজয়গোবিন্দ চৌধুরী আনুমানিক ১৮২৪ সালে, পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার তাঁতিবন্দ ইউনিয়নের তাঁতিবন্দ গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত হিন্দু পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম গুরুগোবিন্দ চৌধুরী। তৎকালীন নাটোর কালেক্টরির সেরেস্তাদার উপেন্দ্রনারায়ণ চৌধুরী তাঁতিবন্দের জমিদার বংশের প্রতিষ্ঠাতা হলেও তার উত্তসূরী বিজয় গোবিন্দ চৌধুরীর শাসনামলেই তাঁতিবন্দসহ আশপাশের এলাকায় তাদের জমিদারিত্বের প্রভাব প্রতিপত্তি ছড়িয়ে পড়ে। জমিদারী: অত্যন্ত দক্ষ এবং প্রতিভাবান বিজয় গোবিন্দ চৌধুরী অতি অল্প সময়ে জমিদারিত্বের হাল ধরে তাঁতিবন্দসহ আশেপাশের এলাকায় হাজার হাজার বিঘা জমি ক্রয় করে তাঁর জমিদারিত্বের বিস্তৃতি এবং প্রসার ঘটান। মূলত বিজয় গোবিন্দ চৌধুরীর…
-
সাইদ মো. আহসান হাবিব
সাইদ মো. আহসান হাবিব : একজন বীর যোদ্ধার কথকতা ◊ কৃষ্ণ ভৌমিক মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী উত্তরাঞ্চলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জনসভায়, হালকা পাতলা ঝাকরা চুলের যে যুবকের বক্তৃতা জনতার মনে ঝড় তুলতো, তিনি আর কেউ নন ভাগ্যবিড়ম্বিত বীর মুক্তিযোদ্ধা আহসান হাবিব। পুরো নাম সাইদ মো. আহসান হাবিব। সাধারণ মানুষের কাছে পাগলা হাবিব বলেই বেশি সমাদৃত। তিনি নিজ যোগ্যতায় তৎকালীন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের নজর কাড়েন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব আহসান হাবিবকে অত্যন্ত আদরের সাথে বুকে টেনে নেন। ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দের ২৬শে ফেব্রুয়ারি নগরবাড়ি বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ উদবোধনীতে লাখো জনতার সমাবেশে, আহসান হাবিবের বক্তব্য শুনে আবেগ আপ্লুত বঙ্গবন্ধু তাকে হেলিকপ্টারে ঢাকার ধানমন্ডির ৩২ নম্বর…
-
মধুর স্মৃতি
মধুর স্মৃতি তাহমিনা খাতুন অল্প বয়সের স্মৃতি হয়তো মানুষ কখনো ভোলে না। তেমনি একটি স্মৃতি এখনও মনে পড়ে। আমার বড় ভাবী ও ওনার মায়ের টাইফয়েড বা ম্যালেরিয়া জাতীয় কোন জ্বর হয়েছিল। আমার ভাবী ছিলেন বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। ভাবীর বাবার একার পক্ষে দুই জন অসুস্থ মানুষকে সুশ্রুষা করা কঠিন হয়ে উঠেছিল। খবর পেয়ে মা ওনাদের সেবা করার জন্য আমাকে আর ছোট দুই ভাই-বোন বাসার আর তুষারকে নিয়ে ভাবীর বাবার বাড়ি সৈয়দপুর গেলেন। কয়েকদিন পর আব্বা আমাকে আনতে গেলেন। কয়দিনেই ভাবীর চাচাত বোনদের সাথে আমার বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছিল। আমি ফিরে আসার আগে আমার বন্ধুটি আমাকে ভালবেসে তার কিছু পুতুলের কাপড় আমাকে…
-
কৃতি ব্যক্তিবর্গ, গবেষক, গোপালপুর (ভায়না), পড়াশোনা, বই পর্যালোচনা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, বিজ্ঞানী, ভায়না, লেখক পরিচিতি, শিক্ষকবৃন্দ, শিক্ষাবিদ, সাহিত্য
অধ্যাপক মোহাম্মদ আব্দুল জব্বার (শেষ পর্ব)
অধ্যাপক মোহাম্মদ আব্দুল জব্বার (শেষ পর্ব) মোহাম্মদ আব্দুল মতিন প্রকাশনা (৩য় অংশ): ১০। বিশ্ব ও সৌরজগৎ (বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, ১৯৮৬ খ্রি.) বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য ড. আব্দুল মতিন পাটোয়ারী লিখেছেন (১৬ জুন, ১৯৮৬), “ড. রশীদ চেয়ারে অধিষ্ঠিত থাকাকালীন প্রফেসর আব্দুল জব্বার এই মূল্যবান গ্রন্থখানি রচনা করে ইপ্সিত উদ্দেশ্য সাধনে যে বহুলাংশে সফল হয়েছেন, তাতে কোন সন্দেহ নেই। এই গ্রন্থে বিধৃত হয়েছে পৃথিবীর তথা মহাবিশ্বের জন্মলগ্ন থেকে শুরু করে নানা ক্রমবিবর্তনের মাধ্যমে কি ভাবে বর্তমান রূপ পরিগ্রহ করেছে। সৌরজগতের সৃষ্টি রহস্য মানব জাতির কাছে এখনও বিরাট কৌতূহলের বিষয়। গণিত ও জোতির্বিজ্ঞানের গবেষকদের কাছে এই বই যেমন সহায়ক হবে তেমনি…
-
তৃষ্ণার পৃথিবী ছুঁয়ে
তৃষ্ণার পৃথিবী ছুঁয়ে আদ্যনাথ ঘোষের কবিতার সাহিত্য রস লতিফ জোয়ার্দার বয়স একটা সংখ্যা মাত্র। তারপরও পঞ্চাশ বছর বয়স প্রতিটি মানুষের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ। আর সেই বয়স যদি হয় একজন কবির বয়স, তবে তা সেই কবির কাছে বয়সটা যেমন গুরুত্বপূর্ণ। তার সংসারের কাছে, তাঁর সমাজের কাছে, তাঁর বন্ধুদের কাছে, পাঠকের কাছে ও আশেপাশের মানুষগুলোর কাছে সমান গুরুত্বপূর্ণ। আজ আমি যে কবির কথা বলছি। সেই কবি বাংলা সাহিত্যের কবি আদ্যনাথ ঘোষ। এক সময় এই কবির সাথে পরিচয় না থাকলেও কবির কবিতার সাথে পরিচয়ের সুযোগ হয়েছিলো আমার। প্রথম কবিতা পড়ে কেমন যেন ঘোরের মধ্যে ছিলাম দীর্ঘসময়। এমন সময় সাহিত্য সম্পাদক অচিন্ত্য চয়ন…
-
ড. রেবেকা বানু
ড. রেবেকা বানু অধ্যাপক (অবঃ), ফার্মাসিউটিক্যাল কেমিস্ট্রি বিভাগ, ফার্মেসী অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা। জন্ম: ড. রেবেকা বানু ১৯৫১ সালের ১৮ জুলাই, পিতার কর্মস্থল ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার অন্তর্গত কামারহাট গ্রাম তাঁর পৈতৃক নিবাস। পারিবারিক জীবন: পিতা বরেণ্য কথাসাহিত্যিক সরদার জয়েনউদদীন, মাতা মিসেস রাবেয়া খাতুন। ড. রেবেকা বানু তাঁদের জ্যেষ্ঠ সন্তান। তিনি ১৯৭৭ সালে ঢাকা কলেজের পদার্থ বিজ্ঞানের প্রভাষক ফজলুল করিমের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। ২০০৫ সালে সরকারি তিতুমীর কলেজের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান হিসেবে অধ্যাপক ফজলুল করিম সাঅবসর গ্রহণ করেন। তাঁদের দুই পুত্র সন্তান-মেজর রেজওয়ানুল করিম বর্তমানে যশোর ক্যান্টনমেন্টে আছেন ও ড. রেয়াতুল করিম, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের…
-
ছেলেবেলার ষড়ঋতু
ছেলেবেলার ষড়ঋতু তাহমিনা খাতুন চৈত্রের খর তাপের দাবদাহের পর বৈশাখ আসতো ভয়ঙ্করী রূপে। প্রায়ই কালবৈশাখী ঝড়ে গাছপালা উপরে, ঘর- বাড়ি ভেঙ্গে মানুষের দুর্দশার সীমা থাকত না। আর আমাদের চলতো কাঁচা আম কুড়ানোর ধুম। ঝড়ে গাছের ডাল ভেঙ্গে মাথায় পড়বে কিনা-তাতে কোন ভ্রুক্ষেপও করতাম না। আমি তখন খুবই ছোট। একদিন দুপুরের পর পরই আকাশের ঈষান কোন ঘন কাল মেঘে ছেয়ে গেল। আব্বা, মা সহ বেশীর ভাগ ভাই-বোন বাড়ির বড় চৌচালা ঘরটায় আশ্রয় নিয়েছিলাম। কেবল মাত্র মেজ ভাই অপেক্ষাকৃত ছোট ঘরটায় অবস্থান করছিলেন। প্রচন্ড বেগে ঝড় শুরু হল। আব্বা চিৎকার করে মেজভাইকে বড় ঘরটিতে চলে আসতে বললেন। মেজভাই দৌড়ে বড় ঘরটিতে…
-
একশত ছিদ্রযুক্ত জামা (৪র্থ পর্ব)
একশত ছিদ্রযুক্ত জামা (৪র্থ পর্ব) সাইফুর রহমান এবারের অপারেশন হবে বনকোলা নামক গ্রামে। সেখানে জনা পঞ্চাশেক মিলিটারির একটি ক্যাম্প গঠিত হয়েছে। যেকোনো মূল্যে সে ক্যাম্পটিকে গুঁড়িয়ে দিতে হবে। বনকোলা গ্রামটি একেবারে গাজনার বিলের তীর ঘেঁষে। সেই হিসেবে জলপথেই আক্রমণ সবচেয়ে সুবিধা ও নিরাপদ। তিনটি নৌকায় তোলা হলো মোট বিশ জন মুক্তিযোদ্ধা। দুটি ভাউলিয়া নৌকা ও একটি জেলে ডিঙি। ভাউলিয়া নৌকাটির পেছন থেকে অর্ধেক পর্যন্ত বাঁশের শক্ত চাতালের মতো ছই। সামনেরটুকু একেবারেই ফাঁকা। এতে করে বেশ সুবিধাই হয়। পাকসেনাদের নিয়োজিত অনুচরদের আর সন্দেহ থাকে না যে সেগুলোতে আসলে মুক্তিযোদ্ধারা লুকিয়ে আছে। ভাউলিয়া নৌকাটি ক্ষুদ্রাকার, অপ্রয়োজনীয় বাহুল্যবর্জিত ও হালকা। অপেক্ষাকৃত কম…