• একাত্তরের-অগ্নিঝরা-দিনগুলি
    আত্মজীবনী,  আহম্মদপুর,  দ্বারিয়াপুর,  মুক্তিযুদ্ধ,  মুক্তিযুদ্ধে সুজানগর,  লেখক পরিচিতি,  সাহিত্য,  সৈয়দপুর (আহম্মদপুর)

    একাত্তরের অগ্নিঝরা দিনগুলি 

    একাত্তরের অগ্নিঝরা দিনগুলি  তাহমিনা খাতুন   ১৯৭০ সালে অনুষ্ঠিত হয় পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচন। সে নির্বাচনে  জাতীয় পরিষদের ১৬৯ টি আসনের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবর রহমানের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ ১৬৭ টি আসনে জয়লাভ করে। পক্ষান্তরে পশ্চিম পাকিস্তানে জুলফিকার আলী ভুট্টোর নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান পিপলস্ পার্টি ৮১টি আসনে জয়লাভ করে। পাকিস্তানের সামরিক শাসক ইয়াহিয়া খান, ৩ মার্চ ১৯৭১ ঢাকায় জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহ্বান করেন। পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ আনন্দে উৎফুল্ল। সবার আশা এতদিনে বাঙ্গালীর হাতে পাকিস্তানের শাসন ক্ষমতা আসার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। কিন্তু বাঙ্গালীর স্বপ্ন ভঙ্গ হতে দেরি হলো না। পাকিস্তানের সামরিক জান্তা ইয়াহিয়া খান ১৯৭০ সালের নির্বাচনের গণ রায়কে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ…

  • ভাই-বোনদের-কথা
    আত্মজীবনী,  লেখক পরিচিতি,  সাহিত্য

    ভাই-বোনদের কথা

    ভাই-বোনদের কথা তাহমিনা খাতুন   আমারা মোট এগারো ভাই-বোন। আমাদের সবার বড় ভাই মরহুম খন্দকার আবু তাহের। আমাদের বড় ভাইকে আমরা ‘মিয়াভাই’ বলে সম্বোধন করতাম। মিয়া ভাই বয়সে আমার চেয়ে অনেক বড় ছিলেন। তিনি ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী। গ্রাম থেকে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে, মিয়া ভাই আমাদের গ্রাম থেকে বেশ কয়েক মাইল দূরে ধোবাখোলা করোরেশন উচ্চ বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হন, আমার জন্মেরও আগে! মাত্র ৫ম শ্রেণি থেকে ষষ্ঠ শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হওয়া এক বালক নিজ পরিবার ছেড়ে দূর গ্রামের অপরিচিত এক পরিবারে ‘লজিং’ বা ‘জায়গীর’ থেকে লেখা-পড়া চালিয়ে গেলেন। লজিং বা ‘জায়গীর থাকার’ ধারণাটা হয়তো এখন অনেকেরই অপরিচিত। বৃটিশ ভারতের শেষের…

  • আমার-মা
    আত্মজীবনী,  আহম্মদপুর,  দ্বারিয়াপুর,  লেখক পরিচিতি,  সাহিত্য

    আমার মা

    আমার মা তাহমিনা খাতুন   আমার মায়ের তুলনা একমাত্র আমার মা নিজেই। নিজের মা বলে বলছি না। প্রত্যেকের মা প্রত্যেকের কাছে প্রিয়। কিন্তু কিছু অসাধারণ বৈশিষ্ট ছিল আমার মায়ের। মাকে নিরক্ষরই বলা যায়। কিন্ত নিজের সন্তানদের শিক্ষার ব্যাপারে মা ছিলেন সদা সতর্ক প্রহরী! সময় মত পড়তে বসলাম কিনা, ঠিক মতো স্কুলে গেলাম কিনা, পরীক্ষার ফলাফল কেমন করছি-প্রতিটি ব্যাপারে মায়ের ছিল তীক্ষ্ণ দৃষ্টি। এছাড়া দেশ বিদেশের বিভিন্ন খবরাখবর নিয়ে মায়ের ছিল অপরিসীম আগ্রহ। আমার ছোট বেলায় আমাদের ঘনিষ্ঠ আত্মীয় গৃহিণীদের দেখেছি ঘরকন্না ছাড়া তাঁদের মধ্যে দেশের বা বহির্বিশ্বের ঘটনা জানার ব্যাপারে বিন্দুমাত্র আগ্রহ ছিল না। আমার মা যেটুকু রিডিং পড়তে পারতেন…

  • আমার-বাবা
    আত্মজীবনী,  আহম্মদপুর,  দ্বারিয়াপুর,  লেখক পরিচিতি,  সাহিত্য

    আমার বাবা

    আমার বাবা তাহমিনা খাতুন   আমার বাবা মরহুম খন্দকার আবুল কাসেম। আমার বাবার শিশুকালটি শুরু হয়েছিল নিতান্তই দুঃখের মধ্য দিয়ে! অত্যন্ত অল্প বয়সে আমার আব্বা তাঁর ছোট দুই ভাই বোনসহ পিতৃ-মাতৃহীন হন। এতিম তিন শিশু তাঁদের নানী এবং খালাদের স্নেহ-মমতায় লালিত পালিত হন। আমার বাবার কাছে শুনেছি ওনার নানী খালারা আরবী এবং ফারসী শিক্ষায় শিক্ষিত ছিলেন। আব্বা তাঁর নানী খালাদের নিকট আরবী এবং ফারসী ভাষায় শিক্ষাগ্রহণ করেছিলেন, তবে আব্বার বাংলা ভাষাতেও চমৎকার দখল ছিল। তাঁর বাংলা হাতের লেখা এবং ভাষাশৈলী ছিল অত্যন্ত গোছালো এবং পরিপক্ক। আব্বার সুনিপুণ হস্তাক্ষর এবং ভাষাশৈলী ছিল যে কোন উচ্চ শিক্ষিত মানুষকে চমৎকৃত করার মতো। আব্বার…

  • আমাদের-আত্রাই-নদী
    আত্মজীবনী,  আহম্মদপুর,  দ্বারিয়াপুর,  লেখক পরিচিতি,  সাহিত্য

    আমাদের আত্রাই নদী

    আমাদের আত্রাই নদী তাহমিনা খাতুন   দ্বাড়িয়াপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশ দিয়েই বয়ে গেছে আত্রাই নদী। আমাদের ছেলেবেলায় দেখতাম বর্ষাকালে নদীটি কানায় কানায় পানিতে ভরে যেত। অনেক সময় যখন বেশ বড় বন্যা হত, নদীর কূল ছাপিয়ে হাইওয়ের উপর দিয়েও স্রোত বয়ে যেত। প্রাথমিক বিদ্যালয়টিও বেশ কিছু দিনের জন্য বর্ষাকালীন ছুটিতে যেতে বাধ্য হত। কারণ বিদ্যালয়ের ঘরটিতেও বন্যার পানি ঢুকে পড়ত। বর্ষাকালে আত্রাই যখন পানিতে ভরে যেত, তখন কিছু লোক এক ধরনের জাল দিয়ে (যাকে স্থানীয় ভাষায় বলা হত ‘খরা’) ট্যাংরা, পুঁটি, খলশে, ছোট আকারের শোল, বোয়াল, নলা, মৃগেল, টাকিসহ আরও অনেক ধরনের সুস্বাদু মাছ  ধরতেন। আমাদের পাড়ার বাসিন্দারা সহ অনেকেই বর্ষার…

  • ঘুরে-এলাম-পর্তুগ্রাল-শেষ-পর্ব
    তাহমিনা খাতুন (ভ্রমণকাহিনি),  ভ্রমণকাহিনি,  সাহিত্য

    ঘুরে এলাম পর্তুগাল (শেষ পর্ব)

    ঘুরে এলাম পর্তুগাল (শেষ পর্ব) তাহমিনা খাতুন   রাজী রাতেই আমাদের নিয়ে গেল আটলান্টিকের পাড়ে, যেখান থেকে পর্তুগীজ নাবিক ভাস্কো-দা-গামা তাঁর সমুদ্র যাত্রা শুরু করেছিলেন।ভাস্কো-দা-গামা ১৪৯৭-১৪৯৯ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে ইউরোপ মহাদেশ থেকে এশিয়া মহাদেশে পৌঁছার জল পথ আবিষ্কার করেন। এ কাহিনী ইতিহাস পাঠে আগ্রহী পাঠক মাত্রেরই কম-বেশী জানা। এই জলপথ আবিষ্কার আটলান্টিক মহাসাগরের সাথে ভারত মহাসাগরের জলপথকে যুক্ত করে। ভাস্কো-ডা-গামা কর্তৃক এই জলপথ আবিষ্কার পৃথিবীর ইতিহাসে এক বিশাল ঘটনা! এই আবিষ্কার সমুদ্রপথে বহুজাতিক সংস্কৃতি, ব্যবসা-বাণিজ্য এবং বৈশ্বিক সাম্রাজ্যবাদের পথ খুলে দেয়। শুধু তাই নয়, এর মাধ্যমে পর্তুগীজদের আফ্রিকা থেকে শুরু করে এশিয়া পর্যন্ত দীর্ঘস্থায়ী ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্য সৃষ্টিতে সাহায্য করে লিসবনের যে…

  • ঘুরে-এলাম-পর্তুগ্রাল-১ম-পর্ব
    তাহমিনা খাতুন (ভ্রমণকাহিনি),  ভ্রমণকাহিনি,  সাহিত্য

    ঘুরে এলাম পর্তুগাল (১ম পর্ব)

    ঘুরে এলাম পর্তুগাল (১ম পর্ব) তাহমিনা খাতুন   আমার মত অনেকেরই হয়তো প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ার সময়ই পর্তুগীজ জল দস্যুদের কথা জানা থাকবে। ইতিহাসে আগ্রহীদের জানা আছে, আরাকানের মগ আর পর্তুগীজ জল দস্যু মিলে এক সময়ে বাংলার উপকূলীয় অঞ্চলের জনজীবনে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল। বাংলায় ‘হার্মাদ’ শব্দটির সঙ্গেও আমরা অনেকেই পরিচিত। পর্তুগীজ শব্দ ‘আর্মাডা’ থেকেই ’হার্মাদ’ শব্দটির উৎপত্তি। ‘আর্মাডা’ ছিল ১৩০টি জাহাজের সমন্বয়ে গঠিত স্পেনের এক বিশাল নৌ বাহিনী। ১৫৮৮ খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ডের রানী ১ম এলিজাবেথকে ক্ষমতাচ্যুত করার উদ্দেশ্যে বর্তমান পর্তুগালের রাজধানী লিসবন থেকে এই জাহাজ যাত্রা শুরু করেছিল- এটাও ইতিহাসের বিষয়। এই মগ আর পর্তুগীজ জলদস্যুদের অত্যাচারের কাহিনী বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায়…

  • সীমানা-বিহীন-পৃথিবী
    কবিতা,  তাহমিনা খাতুন,  সাহিত্য

    সীমানা বিহীন পৃথিবী

    সীমানা বিহীন পৃথিবী তাহমিনা খাতুন   বিধাতা যবে গড়িল বসুধা সীমানা নাহি দিয়া, অবাধ আকাশ সীমা নাহি মানে, ভরায় সকল হিয়া! ভোরের সূর্য ছড়ায় উত্তাপ, সকল প্রাণীর তরে আকাশের চাঁদ মধুর কিরণ বিলায় যে অকাতরে! সাগর ছুটিছে, জগত জুড়িয়া, হইয়া আপন হারা, নদীও যে তাই সাগরে মিলায় বিলাইয়া আপন ধারা। সবারে ঢাকিতে স্নেহের চাদরে উঁকি দেয় হিমাচল, তারে আশ্রয়ি ঝর্ণা ধারা ছুটিতেছে অবিরল! সবুজ বনানী সীমা নাহি মানে, নাহি মানে মানচিত্র, সবারেই সে ছায়া দিয়ে যাবে খুঁজিবে না কোন গোত্র! পুষ্প বিলায় রুপের রাশি না মানিয়া দেশ-কাল পাখি যে সদাই শুনাইছে গীত বাধা হীন উচ্ছ্বল! মানুষই টানিল সীমা রেখা উন্মুক্ত…

  • স্বাধীনতা-দিবস
    কবিতা,  তাহমিনা খাতুন,  সাহিত্য

    স্বাধীনতা দিবস, স্বাধীনতা

    স্বাধীনতা দিবস তাহমিনা খাতুন   ছাব্বিশ মার্চ স্বাধীনতা দিবস আজ, বাংলার মানুষ দিনটি উদযাপিবে কত শত আয়োজন! উদযাপিতে দিনটি আজিকার, পড়িবে তাহাদের মনে? একাত্তরের ছাব্বিশ মার্চ প্রথম স্বাধীনতা দিবস শ্যামল বাংলা দেখিয়াছিল শাসকের সন্ত্রাস। সন্ত্রাসী শাসকের বাস ছিল, পশ্চিম পাকিস্তানে, জানিও তাহারা ছিল, শত শত মাইল দূরের অবস্থানে। আজব এক দেশ ছিল সেই পাকিস্তান জন্মের শুরুও তাহার আছিল বড়ই বেমানান। ছিল নাকো কোনই মিল ভাষা অথবা সংস্কৃতির, শোষণের তরে তাহাদের ছিল শুধুই ফন্দি ফিকির। লুঠেরার দল লুটিতে লাগিল বাংলার সম্পদ, অভূক্ত রাখিয়া, শিক্ষা না দিয়া, আমাদেরে তারা রাখিল পশ্চাৎপদ। সাতই মার্চের বজ্রকণ্ঠ দিল স্বাধীনতার ডাক, সে ডাক শুনিয়া বাংলার মানুষ,…

  • কাল-রাত্রির-খাম
    কবিতা,  তাহমিনা খাতুন,  সাহিত্য

    কাল রাত্রির খাম

    কাল রাত্রির খাম তাহমিনা খাতুন   পঁচিশ মার্চ! এক কাল রাত্রির নাম, যে রাতে পাক সেনা দিল হানা পোড়ালো সহস্র ধাম! প্রথম মুক্তির ডাকটি আসিল কাল রাত্রির খামে, মুক্তি পাগল জনতা দিল সাড়া সে ডাকে অনেক রক্ত ঘামে। অসুরের দল ঝাঁপাইয়া পড়িল সর্বশক্তি নিয়ে, দানবের উদ্বাহু সে নৃত্য দেখিল বিশ্ব সবিস্ময়ে! মেশিন গান আর ট্যাঙ্ক নামিল, দমাইতে নিরস্ত্র জনতারে, আরও কত শত অস্ত্র নামিল বধিতে মানুষ অকাতরে। সারাটি দিনের ক্লান্তি নাশিতে ঘুমিয়ে ছিল যারা, চির নিদ্রায় তাদেরে শায়িত করিল পাকসেনা, হল যারা দিশেহারা। লেলিহান শিখা জ্বালাইয়া দিল পোড়াইতে অবোধ শিশু, দয়া মায়াহীন অমানুষের কাছে হারিল হিংস্র পশু। মেশিন গানের গুলিতে…

error: Content is protected !!