-
নিঃশব্দে নীড়ে ফেরা ।। শেষ পর্ব ।। ধারাবাহিক উপন্যাস ।। এ কে আজাদ দুলাল
নিঃশব্দে নীড়ে ফেরা ।। শেষ পর্ব এ কে আজাদ দুলাল রাশিদ নির্বাক। কী করবে এখন। কঠিন বাস্তবতার সম্মুখীন হতে হচ্ছে পঞ্চাশ বছর পর। আজ বাবা-মা বেঁচে থাকলে কী করতেন। বাবা-মায়ের অবর্তমানে মেজো ছেলে হয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিতে হচ্ছে। আমাদের ধর্মে সন্তান ত্যাজ্য করার কোনো বিধান নেই। তাই বাবা করতে পারেননি। আবার এটাও হতে পারে যতদোষ করুক সে তো ঔরসজাত প্রথম সন্তান। কিন্তু তাদের মধ্যে সম্পর্কে ছেদ পড়ে যায়। কিন্তু তার বড়ো ছেলের প্রাপ্ত সম্পদ হতে বঞ্চিত করে যাননি। তারাই ব্যবহৃত ঘরটি রেখেছেন যদি বড়ো ছেলের কোনো ওয়ারিশ দাবি করে। বড়ো ভাইয়ের ওয়ারিশ ঠিকই এসেছে, কিন্তু সে তো এখনো…
-
নিঃশব্দে নীড়ে ফেরা ।। ১২শ পর্ব ।। ধারাবাহিক উপন্যাস ।। এ কে আজাদ দুলাল
নিঃশব্দে নীড়ে ফেরা ।। ১২শ পর্ব এ কে আজাদ দুলাল বাড়ির অপর ঘরটি রাকাকে দেখানোর জন্য সবাই ঘরটির সামনে এসে দাঁড়ায়। রাকাকে পাশে ডাকা আরিফা। রাকা পাশে দাঁড়ায়। সে কিছু বুঝতে পারছে না তাকে কেন পাশে ডাকা হলো। ঘরটি অন্য সর ঘর হতে একদম আলাদা এবং পুরাতন। এ ঘরটি টিনের চালে তৈরি। আলিফা ঘরের চাবি রাকার হাতে দিয়ে বলল, — তালা খুলে তুমি প্রথমে ঘরের ভেতরে ঢুকবে। তারপর আমরা সবাই। আলিফার কথা শুনে সবাই অবাক হয়ে যায়। মনিকা মনে মনে নিশ্চিত এটাই রাকার পৈতৃক ভিটা। রাকাকে এরা প্রথম দর্শনে অনুভব করতে পেরেছে; এখন বিষয়টি নিশ্চিত করতে চায়। রাকা আলিফার কথা…
-
নিঃশব্দে নীড়ে ফেরা ।। ১১শ পর্ব ।। ধারাবাহিক উপন্যাস ।। এ কে আজাদ দুলাল
নিঃশব্দে নীড়ে ফেরা ।। ১১শ পর্ব এ কে আজাদ দুলাল ঘড়ির কাঁটায় বারোটা বাজে। মনিকা-রাকা দুজন পুকুর পাড়ে এসে দাঁড়ায়। গোসলের জন্য শানবাঁধানো ঘাট। শ্যাওলা পড়ে ঘাটের সিঁড়িগুলো সবুজ হয়ে গেছে। সম্ভবত এখন আর কেউ এটা ব্যবহার করে না। দুপুরের সূর্যের আলোতে পানি নীল রঙের পরিণত হয়েছে। দু’জন আস্তে আস্তে শেষ সিঁড়ির কাছে এসে দাঁড়ায়। — রাকা, বলত পানির রং কী? রাকা একটু গম্ভীর মুখে বলে, — পানির কোনো রং নেই। — তাহলে এই পুকুরের পানির রং নীল দেখাচ্ছে কেন? রাকা চুপ থেকে আকাশের দিকে তাকায়। তারপর হো হো হেসে বলে, — আমাকে বোকা বানানো সহজ নয়। আকাশের নীল রঙের…
-
নিঃশব্দে নীড়ে ফেরা ।। ১০ম পর্ব ।। ধারাবাহিক উপন্যাস ।। এ কে আজাদ দুলাল
নিঃশব্দে নীড়ে ফেরা ।। ১০ম পর্ব এ কে আজাদ দুলাল ক্লান্ত মন ও শরীরে অল্প সময়ের মধ্যে ঘুমিয়ে যায় দু’জন। মাঝ রাতে স্বপ্ন দেখে হঠাৎ ঘুম ভেঙে যায় রাকার। মনিকাকে ডেকে তোলে। মনিকা ভয় পেয়ে যায়। ঘুম ভাঙতেই দেখে রাকা তার বিছানায় বসে আছে। মুখখানি কেমন যেন ফ্যাকাসে দেখাচ্ছে। কাছে গিয়ে জানতে চায় খারাপ কোনো স্বপ্ন দেখেছে কি-না। রাকা কিছু সময় চুপ থেকে স্বপ্নের ঘটনা খুলে বলে। আজ রাতে সেই মহিলাকে স্বপ্নে দেখেছে। পরনে আগের মতো হালকা সবুজ জমিনে খয়েরি রঙের পাড়ের শাড়ি এবং গায়ে খয়েরি রঙের ব্লাউজ। আজকে তার আচরণ ভিন্ন। আজ রাকাকে বুকে টেনে নিয়ে জড়িয়ে ধরে। রাকা…
-
নিঃশব্দে নীড়ে ফেরা ।। ৯ম পর্ব ।। ধারাবাহিক উপন্যাস
নিঃশব্দে নীড়ে ফেরা ।। ৯ম পর্ব এ কে আজাদ দুলাল আজকের বিকেলেটা অন্য রকম। বাড়িটির পশ্চিমে পাকা রাস্তা, তারপর সবুজ ঘন বড়ো বড়ো গাছের সমারোহ। দারুণ লাগছে রাকার। বিকেলের সূর্যটা লাল রঙে রঞ্জিত হয়ে সবুজ ঘন গাছের মধ্যে লুকোচুরি খেলছে। আর মাস্টার বাড়ির পরিবারের সদস্য এবং আগত অতিথি বিশেষ করে রাকার মনের ভেতরে চলছে অজানা স্নায়ুযুদ্ধ। এ যুদ্ধ হয়তো একটা ভাঙা সম্পর্ক নতুন বন্ধনে আবদ্ধ হবে। রাকার মনে প্রশ্ন সে কী সঠিক জায়গায় পা দিয়েছে না-কি আবার অজানা পথে পা বাড়াতে হবে। কিন্তু ভদ্রলোকের চেহারার সাথে বাবার চেহারায় অনেকটাই মিল। যদি তাই হয়, তাহলে এদের মধ্যে কী এমন ঘটেছিল, এতকাল…
-
নিঃশব্দে নীড়ে ফেরা ।। ৮ম পর্ব ।। ধারাবাহিক উপন্যাস ।। এ কে আজাদ দুলাল
নিঃশব্দে নীড়ে ফেরা ।। ৮ম পর্ব এ কে আজাদ দুলাল পরবর্তী স্টেশনে নামতে হবে। রেল স্টেশনটি ছোটো হলেও অনেক পুরাতন। ব্রিটিশ শাসক তাদের সুবিধামতো রেল স্টেশন, পুলিশ ফাঁড়ি নির্মাণ করেছিল। আমাদের বংশপরম্পরা তা ভোগ করে আসছি; অন্তত এই দুটো জায়গায় তাদের স্মরণ করা যায়। স্টেশনটি সে রকম জাঁকজমকপূর্ণ নয়। ব্রিটিশ আমলের জীর্ণশীর্ণ দুটো ভবন দাঁড়িয়ে আছে অতীত স্বাক্ষী হয়ে। পাঁচ মিনিটের মধ্যে ট্রেনটি স্টেশনে থামবে। যাত্রীরা নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তাদের সংখ্যা বেশি নয়। পাঁচ মিনিটের বেশি অপেক্ষা করবে না তাই যাত্রীদের বেশ তাড়াহুড়া। ট্রেন থামতেই লালজামা পরিহিত একজন কুলি এসে মনিকার সামনে দাঁড়ায়। সে যাত্রীদের চেহারা দেখে বুঝতে পেরেছে এই…
-
নিঃশব্দে নীড়ে ফেরা ।। ৭ম পর্ব ।। ধারাবাহিক উপন্যাস ।। এ কে আজাদ দুলাল
নিঃশব্দে নীড়ে ফেরা ।। ৭ম পর্ব এ কে আজাদ দুলাল আরও ঘণ্টা দুই লাগবে স্টেশন পোঁছাতে। গাড়ি যে গতিতে চলছে তাই মনে হলো মনিকার। এত সময় ধরে রাকা তার পৈতৃক ইতিহাস বলল। কিন্তু কেন ফুলঝুড়িতে যাচ্ছে তা জানা হলো না। আবার ডা. মাসুদ সেভাবে কিছু ভেঙে বলেননি। — আচ্ছা রাকা, তুমি যে আমার সঙ্গে ফুলঝুড়িতে যাচ্ছো, কিন্তু কেন? — মনিকাদি, এই ফুলঝুড়ির নামটা তোমার মুখে এই প্রথম শুনতে পেলাম। মাসুদ ভাই এ ব্যাপারে সব জানেন। তবে তোমাকে আরও একটা মজার কাহিনি বলব। — ইদানিং পর পর বেশ ক’টা রাতে একটা স্বপ্ন দেখে যাচ্ছি। সচেতন, অচেতন বা অবচেতনে; তাকে কখনো মনের…
-
নিঃশব্দে নীড়ে ফেরা ।। ৬ষ্ঠ পর্ব ।। ধারাবাহিক উপন্যাস ।। এ কে আজাদ দুলাল
নিঃশব্দে নীড়ে ফেরা ।। ৬ষ্ঠ পর্ব এ কে আজাদ দুলাল রাজশাহী কলেজে ইন্টারমিডিয়েট পড়ার সময় বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র নাজিমকে পেয়েছিল রুমমেট হিসেবে। মেধাবী ছাত্র ছিলেন। ডাক্তারী পড়া তার দৃঢ় ইচ্ছে। হয়েছিল ডাক্তার। ঢাকা মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালে কর্মরত। আর রাকিব আহমেদ ভর্তি হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতিতে। নাজিম ডাক্তারী পড়া শেষ হওয়ার আগেই এক বছর জুনিয়র হবু ডাক্তারকে প্রেম করে বিয়ে করে। এই দম্পতি একমাত্র তার ভরসা। দেরি না করে ছুটে যায় বন্ধু দম্পতির কাছে। বিস্তারিত খুলে বলে। এও বলে ওপরে উঠতে হলে এ যুগে বড়ো কারো সাহায্য প্রয়োজন। মেয়ের পরিবারের সেই যোগ্যসম্পন্ন ব্যক্তি আছেন। বুদ্ধিমান ডা. নাজিমের বুঝতে বাকি রইল…
-
নিঃশব্দে নীড়ে ফেরা ।। ৫ম পর্ব ।। ধারাবাহিক উপন্যাস ।। এ কে আজাদ দুলাল
নিঃশব্দে নীড়ে ফেরা ।। ৫ম পর্ব এ কে আজাদ দুলাল প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে জমে উঠেছে রাজনৈতিক আন্দোলন। শেখ মুজিব সারা বাংলাদেশ চষে বেড়াচ্ছেন। জেল হতে ছাড়া পাচ্ছেন আবার জেলে ঢুকছেন। বাংলার ছাত্রসমাজ আন্দোলনে যোগ দিয়েছে। এর মধ্যে আমলা তৈরি হওয়ার জন্য প্রশিক্ষণে রাকিব আহমেদ পাড়ি জমায় রাওয়ালপিন্ডিতে। যেখানে চৌকস আমলা তৈরি হয়ে থাকে। মন এবং মানসিকতায় জন্ম দেয় এক উচ্চতর জীবনযাপনের। আর হয়ে উঠে প্রশাসক। যাওয়ার আগে বাবা-মা এবং ভাই-বোনের সাথে দেখা করে যায় রাকিব আহমেদ সিএসপি। প্রায় এক বছর পর প্রশিক্ষণ শেষ করে ঢাকায় পোস্টিং হয় রাকিব আহমেদের। বাপের তৈরি জীর্ণকুঠিরে মাত্র দুটো রাত কাটিয়েছিল সে।…
-
নিঃশব্দে নীড়ে ফেরা ।। ৪র্থ পর্ব ।। ধারাবাহিক উপন্যাস ।। এ কে আজাদ দুলাল
নিঃশব্দে নীড়ে ফেরা ।। ৪র্থ পর্ব এ কে আজাদ দুলাল রাকার দাদা ছিলেন একজন কৃষক পরিবারের সন্তান। মাত্র তিন বছর বয়সে মাকে হারিয়ে এতিম হয়ে যান শিশু আলা উদ্দিন। সবাই আলা বলে ডাকত। শিশু আলাকে কোলে তুলে নেন তার বাবার খালাতো বোন। আলার বাবার বয়স কম তাই পুনরায় দ্বিতীয়বার বিয়ে করে সংসারী হয়েছিল। বাবার সংসার হতে আস্তে আস্তে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ফুফার অবস্থা সে রকম ভালো নয়। ফুফাতো ভাইদের সাথে ভর্তি হয় মক্তবে। তখনকার দিনে প্রাইমারি স্কুলের সংখ্যা ছিল নগন্য। গ্রামেই মক্তব। সেখানে আরবি, বাংলা এবং ইংরেজি শিক্ষা দেওয়া হতো। ফুফাতো ভাইদের চেয়ে আলা ছাত্র হিসেবে মেধাবী ছিলেন। ফুফার নেক…