-
সুতা ছেঁড়া ঘুড়ি (৩য় পর্ব)
সুতা ছেঁড়া ঘুড়ি (৩য় পর্ব) তাহমিনা খাতুন চার. দুইদিন পর জয়নালকে নৌকা করেই গঞ্জে পরেশ ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেল শাহাবুদ্দিন। সকাল দুপুর গড়িয়ে গেল। জয়নালকে নিয়ে শাহাবুদ্দিন ফিরলো না। উৎকণ্ঠায় ঘরে পায়চারি করছে হালিমা। বিকালের দিকে দুইজন লোক ধরে ধরে অসুস্থ জয়নালকে শাহাবুদ্দিনের বাড়ি পৌঁছে দিয়ে গেল। শাহাবুদ্দিন কোথায় জানতে চাইলে কোনো জবাব না দিয়ে লোক দুজন বেরিয়ে গেল। জয়নালকে জিজ্ঞেস করলে সেও চুপ করে থাকল কিছুক্ষণ। তারপর হু হু করে কেঁদে উঠল সে। “তোমার ভাই আমার অনেক বড়ো সর্বনাশ করেছে। আমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে নিয়ে গেছে। আমি সামান্য কয়েকটা টাকা ধার নিয়েছিলাম তার কাছ…
-
লেখকের মুক্তিযুদ্ধ (১ম পর্ব)
লেখকের মুক্তিযুদ্ধ (১ম পর্ব) সাইফুর রহমান কাবার্ড থেকে কর্নফ্লেক্সের বাক্সটা বের করতে গিয়ে কবিরের মনে হলো এত বেলায় প্রাতঃরাশ না করে একেবারে দুপুরের খাবার খেয়ে নিলেই বোধ করি ভালো হতো। টানা সাত দিন একনাগাড়ে লাইব্রেরিতে কাটিয়ে কিছু একটা যে দাঁড় করানো গেছে; এটাই স্বস্তির বিষয়। প্রস্তাবনাটা প্রফেসর টার্নারকে সন্তুষ্ট করবে বলে আশা করা যায়। মণিবন্ধের ঘড়িটায় সময় দেখাচ্ছে প্রায় ১২টা। ফ্রিজ খুলে দেখা গেল কিছুই নেই ওতে। থাকবেই বা কী করে। দু’দিন হাঁড়ি চড়েনি। এটা-ওটা খেয়ে চলছে এ কদিন। পিএইচডির জন্য অভিসন্দর্ভটা লিখতে গিয়ে কালঘাম বেরিয়ে যাচ্ছে। যাকে বলে একেবারে ত্রাহি মধুসূদন অবস্থা। ছুটির দিনগুলোতে প্রতিনিয়তই ঘুম থেকে উঠতে দেরি…
-
কৃতি ব্যক্তিবর্গ, পৌরসভা, ভবানীপুর (পৌরসভা), মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধে সুজানগর, মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযোদ্ধাদের কথা
শহিদ ইব্রাহিম মোস্তফা কামাল দুলাল
শহিদ ইব্রাহিম মোস্তফা কামাল দুলাল ও সুজানগরের মুক্তিযুদ্ধ মো. মনসুর আলী ১৯৭১ সালে বাংলার আপামর জনসাধারণ দেশমাতৃকার মুক্তির লক্ষ্যে জীবন-পণ সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল এবং পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিল। মুক্তিপাগল বাঙালি সেদিন নিজ জীবনের চেয়ে মাতৃভূমির স্বাধীনতাকে অধিকতর মূল্যবান ভেবে কামান-ট্যাংক-মর্টার-মেশিনগানে সুসজ্জিত পাকিস্তানি দখলদার বাহিনী এবং তাদের এদেশীয় দোসরদেরকে দেশপ্রেমের অস্ত্র দিয়ে মোকাবেলা করে বাঙালির চির আরাধ্য স্বাধীনতার সূর্যকে ছিনিয়ে এনে বিশ্বের বুকে প্রথম বাঙালিদের একটি নিজস্ব স্বাধীন রাষ্ট্র ‘বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছিল। মুক্তির নেশায় বেসামাল ত্রিশ লক্ষ বাঙালির রক্ত-স্রোতে ভেসে স্বাধীনতার সোনালি সূর্যটি বাঙালির দুয়ারে এসেছিল। তাদেরই একজন আমাদের সুজানগর উপজেলার অকুতোভয় বীর মুক্তিযোদ্ধা শহিদ…
-
সুতা ছেঁড়া ঘুড়ি (২য় পর্ব)
সুতা ছেঁড়া ঘুড়ি (২য় পর্ব) তাহমিনা খাতুন দুই. নূরপুরের মধ্যপাড়া আর পাশের গ্রাম শিবপুরের সীমা নির্ধারণকারী হালটে দুপুরের পর দই ওয়ালার ডাক শোনা গেল। দই…দই…ভালো দই। দই ওয়ালার ডাক শুনে মধ্যপাড়ার সরফরাজ খন্দকারের বাড়ির ভিতর থেকে ছয়/সাত বছর বয়সের এক খোকা বেরিয়ে এল। বুদ্ধিদীপ্ত চেহারা। “এই দইওয়ালা, তোমার দইয়ের দাম কত?” “কেন খোকা, তুমি দই কিনবে?” “আমি দই কিনব? পয়সা পাব কোথায়? তোমার তো অনেকগুলো দইয়ের হাঁড়ি। আমাকে একটা হাঁড়ি দিয়ে দাও। আমি যখন বড়ো হব, তখন তোমার দইয়ের দাম শোধ করে দেব।” খোকার বুদ্ধিদীপ্ত কথায় দারুণ মজা পেল দইওয়ালা। বলল, “ঠিক আছে। তুমি যদি এক হাঁড়ি দই পুরোটা খেতে…
-
সুতা ছেঁড়া ঘুড়ি (১ম পর্ব)
সুতা ছেঁড়া ঘুড়ি (১ম পর্ব) তাহমিনা খাতুন এক. জৈষ্ঠ্যের মাঝামাঝি। আম, জাম ও লিচু গাছগুলো পাকা ফলের ভারে নুয়ে পড়েছে। বাগানের পূর্বদিকে ছোটো একটা বাড়ি। এ বাড়িতে জয়নাল মিয়ার বিধবা স্ত্রী হালিমা বেগম বহু বছর ধরে একা বসবাস করছেন। হালিমা বেগমের একমাত্র মেয়ে মোমিনাকে বিয়ে দিয়েছেন কয়েক মাইল দূরের গ্রাম নূরপুরে। সেও বেশ অনেক বছর হলো। মোমিনার ছেলে মেয়েরা প্রায়ই এসে তাদের নানির বাড়িতে থাকে। কয়েক দিন হলো মোমিনার দশ বছরের মেয়ে কলি, নানির বাড়িতে বেড়াতে এসেছে। নানির ঘরের বারান্দায় বসে পাশের বাগানের গাছ থেকে টুপটাপ আম পড়ার শব্দ শুনে কলি নানিকে বলল, “নানি, চল বাগানে যাই। বাঁটুলে গাছের আম…