-
বাংলা ভাষার দুর্দশা
বাংলা ভাষার দুর্দশা তাহমিনা খাতুন দুখিনী বাংলা কাঁদে, কাঁদে আমার মায়ের ভাষা যেদিকেই চাই, দেখি শুধু হায় তাহার দুর্দশা! ভাষার মান রাখিবে বলিয়া, বাংলার সন্তান পিচ ঢালা পথে ঢালিয়া দিল, আপন প্রিয় প্রাণ, “রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাই” গর্জিল দৃপ্ত শপথে তপ্ত শোণিত ঢালিয়া দিল, কঠিন সে রাজপথে। বিদেশি প্রভুর রক্ত চক্ষু, উপেক্ষিয়া অনায়াসে রফিক, শফিক, বরকত সেদিন, রক্ত গাঙেতে ভাসে, যে ভাষার তরে জীবন সঁপিল শফিউর, জব্বার, সে ভাষার তরে কারও কারও আজ, ঘৃণা ভরা অন্তর। বাংলা ভাষারে উপেক্ষিয়া চলে, বিদেশি ভাষার বন্দনা বুঝি না এ কোন আত্মগ্লানি, আত্মপ্রবঞ্চনা, ভিনদেশি ভাষা আসীন আজ,আত্ম অহমিকায় বাংলা ভুলিতে ব্যস্ত যেন, না…
-
একটি বহুল কাঙ্ক্ষিত আইনী সংশোধনী
একটি বহুল কাঙ্ক্ষিত আইনী সংশোধনী তাহমিনা খাতুন গত ৩ নভেম্বর ২০২২ জাতীয় সংসদে ১৮৭২ সালের সাক্ষ্য আইনের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ধারা অবলুপ্ত করে সংশোধনী আনা হয়েছে। সংশোধনীটি একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। সাক্ষ্য আইনের এই ধারাটি ধর্ষণের মত ভয়ংকর অপরাধের বিচার প্রাপ্তির ক্ষেত্রে অনেক নারীকেই নিরুৎসাহিত করতো। বৃটিশ ঔপনিবেশিক আমলে করা বিদ্যমান আইনটি ছিল নারীর প্রতি চরম অবমাননাকর। কারণ এই আইনের ১৫৫(৪) ধারায় বলা আছে, “কোন ব্যক্তি যখন ধর্ষণ কিংবা শ্লীলতা হানির চেষ্টার অভিযোগে অভিযুক্ত হন, তখন দেখানো যেতে পারে যে, অভিযোগকারী সাধারণভাবে দুশ্চরিত্রা।” বিদ্যমান আইনটি ছিল চরম মানবাধিকার বিরোধী, নারীর প্রতি অবমাননাকর এবং বৈষম্যমূলক। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫১ বছরেরও বেশী সময়…
-
শিকড়ের সন্ধানে (শেষ পর্ব)
শিকড়ের সন্ধানে (শেষ পর্ব) তাহমিনা খাতুন (সত্য ঘটনা অবলম্বনে) উচ্চ শিক্ষিতা নাবিলা। রাজধানীর একটি স্বনামধন্য স্কুলের শিক্ষিকা। সাত বছর ও পাঁচ বছর বয়সী দুটি শিশু পুত্রের মা। স্বচ্ছল স্বামী এবং দুটি শিশু পুত্র নিয়ে সুখের সংসার। কিন্তু অনেক দিন ধরেই একটি কন্যার মা হওয়ার খুব শখ নাবিলার। গর্ভধারণ করলো মেয়ের আশায়! অল্প দিনের মধ্যেই ডাক্তারের মুখে শুনল সুখবরটি! তার গর্ভের শিশুটি তার বহু কাঙ্খিত মেয়ে! খুশীতে, আনন্দে আত্মহারা নাবিলা। সুখের ডানায়, খুশীর জোয়ারে প্রজাপতির ছন্দে উড়তে শুরু করলো তার দিনগুলি। দেখতে দেখতে প্রসবের দিন এসে গেল। সুস্থ, স্বাস্থ্যবান কন্যার মা হল নাবিলা। বর্ষাকালে, শ্রাবণের এক অঝোর বর্ষণমুখর রাতে জন্ম…
-
শিকড়ের সন্ধানে (১ম পর্ব)
শিকড়ের সন্ধানে (১ম পর্ব) তাহমিনা খাতুন (একটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে) ──মা, আমার বাবা-মা কে? আমার বাড়ি কোথায়? আমাকে তোমরা কোথা থেকে এনেছ? কি আমার পরিচয়? জবাব দাও। জবাব আজ তোমাকে দিতেই হবে। বলতে বলতে কান্নায় ভেঙ্গে পরে বর্ষা। নাবিলা হতভম্ব! অবাক হয়ে চেয়ে থাকে বর্ষার কান্না ভরা মুখের দিকে! নাবিলার হতভম্ব চেহারা দেখে আরও জোরে চিৎকার করে ওঠে বর্ষা। ──কি হলো, কথা বলছো না কেন? জবাব দাও। জবাব চাই আমি। বর্ষার চিৎকারে যেন সম্বিৎ ফেরে নাবিলার। থত মত খেয়ে বলে, ──কি আবোল-তাবোল বলছিস তুই এসব? আমি তোর মা। তোর বাবাকে চিনতে পারছিস না! রানা, রোমান তোর ভাই। এতে তোর…
-
সমকালীন পাঠ প্রতিক্রিয়া
সমকালীন পাঠ প্রতিক্রিয়া তাহমিনা খাতুন ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২২ প্রথম আলো সহ বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি দৈনিকে প্রকাশিত ব্যতিক্রম ধর্মী একটি খবর অনেকেরই বিশেষ মনোযোগ আকর্ষণ করেছিল। খবরের শিরোনামটি ছিল এ রকম, ১০১টি প্রিয় বই দেনমোহরে বিয়ে করলেন নিখিল সান্ত্বনা। খবরটিতে উল্লেখ ছিল, ‘বিয়েতে দেনমোহর টাকা বা স্বর্নালংকার নয়, প্রেমিকা চেয়েছেন তার প্রিয় ১০১টি বই।’ প্রেমিক কবি নিখিল নওশাদ ও তার প্রেমিকা সান্ত্বনা খাতুনের ধরিয়ে দেওয়া ১০১টি বইয়ের মধ্যে ৭০টি বই সংগ্রহ করতে পেরেছেন! শুক্রবার সন্ধ্যায় সেই ১০টি বই নগদ হিসেবে এবং বাকি ৯১ টি বই বাকি হিসাবে দেনমোহর ধার্য করে বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে এই প্রেমিক যুগলের।’ এরই ধারাবাহিকতায় গত…
-
প্রথম শহর দেখা ও বিদেশ ভ্রমণ
প্রথম শহর দেখা ও বিদেশ ভ্রমণ তাহমিনা খাতুন শহর দেখা সম্ভবত দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময় পাবনা শহর দেখতে গিয়েছিলাম মেজ ভগ্নিপতি কাজী মর্তুজা মজিদের (মেজ দুলাভাই) এর সাথে। পেট্রোল চালিত লক্কড়-ঝক্কর বাসে চড়ে পাবনা শহর দেখতে গেলাম। এর আগে কোথাও বেড়াতে যাওয়া বলতে নিজের গ্রাম থেকে ৫/৬ কিলোমিটার দূরে মেজ বোনের শ্বশুর বাড়ি চরগোবিন্দপুর অথবা মাইল দুই/তিন দূরে বড় ভাইয়ের শ্বশুরবাড়ি সৈয়দপুর গ্রামে! আর সে ভ্রমণও ছিল মহিষের বা গরুর গাড়ি অথবা নৌকায় চড়ে। ষাটের দশকের মাঝামাঝি সময়ে ইঞ্জিন চালিত কোন যানবাহনে প্রথম ভ্রমণ করা! কাজেই বাসে চড়ে সেই প্রথম ভ্রমণ ছিল রীতিমত রোমাঞ্চকর! পাবনা শহরে ভ্রমণ করতে গিয়ে…
-
আমার নানি
আমার নানি ~তাহমিনা খাতুন ‘মিতব্যয়িতার’ শিক্ষা পেয়েছিলাম আমার নানির কাছ থেকে। আমার নানি মারা গেছেন আজ থেকে চল্লিশ বছর আগে। মারা যাওয়ার কিছুদিন আগে আমাদের বাড়িতে নানির একমাত্র সন্তান আমার মায়ের কাছে ছিলেন। সেই সময় একদিন নানিকে দেখলাম গোসলের পর নিজের পরনের বাসী ধুতি খানা বালতির অল্প পানিতে ধুয়ে নিচ্ছেন। নানি যতদিন বেঁচে ছিলেন আর সুস্থ ছিলেন সব সময় নিজের কাজ নিজেই করতেন।আমি নানির ধুতিটা ধুয়ে দিতে চাইলে তিনি কোনোভাবেই রাজি হলেন না। আমি নানিকে জিজ্ঞাসা করলাম, “নানি এতো অল্প পানি দিয়ে কাপড় ধুচ্ছ কেন?” নানি জবাব দিলেন, “আল্লাহ্ তায়ালার কাছে তো একদিন এই পানির জন্যও হিসাব দিতে হবে।”…
-
সংসার ও আইনজীবী জীবন
সংসার ও আইনজীবী জীবন তাহমিনা খাতুন স্বাধীনতা সংগ্রামের শুরুতেই আমাদের ঘর-বাড়ি জ্বালিয়ে আমাদেরকে সর্বস্বান্ত করেছিল পাকিস্তানি বাহিনী। পোড়া ভিটায় একখানা ছাপড়া তুলে কোন ক্রমে দিন গুজরান করছিলেন আমাদের পরিবারের সদস্যরা।আমাদের পরিবার ছিল মূলত কৃষিজীবী। পাক বাহিনীর অত্যাচারের ফলে কৃষি কাজে স্থিত হতে পারছিল না পরিবার। সংসারের একমাত্র উপার্জনকারী আমার তৃতীয় ভাই মরহুম খন্দকার আবুল খায়ের। আমি সহ চার ভাই-বোনের লেখাপড়ার খরচ, সংসারের খরচ যোগানো একজনের পক্ষে সম্ভব ছিল না। এ কারণে আমার বিদ্যোৎসাহী ভাই আমাকে বিয়ে দিতে বাধ্য হলেন। স্বাধীনতার পর পরই আমার বিয়ে হয়ে গেল। আমার সৌভাগ্য, আমার ভাইয়ের মতো আমার স্বামীও বিদ্যোৎসাহী ছিলেন। বিয়ের পর আমি ম্যাট্টিক…
-
শ্রদ্ধেয় শিক্ষকগণ
শ্রদ্ধেয় শিক্ষকগণ তাহমিনা খাতুন কিছুদিন আগে আমার স্কুল জীবনের প্রথম শিক্ষক জনাব নূরুল ইসলামের মৃত্যু সংবাদ পেলাম। প্রথম যেদিন আমার গ্রাম দ্বারিয়াপুরের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিশু শ্রেণিতে ক্লাস করতে গিয়েছিলাম, হয়তো বছর চারেক বয়স হবে, জনাব নুরুল ইসলাম আমাকে ডেকে কাছে বসিয়ে একটা ছড়া পড়ে শুনিয়েছিলেন। ছড়াটি এত বছর পরেও স্পষ্ট মনে আছে, এক যে ছিল ময়না, কত যে তার গয় না, আসমার কিছু দেয় না! আসমা আমার ডাক নাম। পরবর্তীতে শিক্ষক নূরুল ইসলাম সাহেব বৈবাহিক সূত্রে আমার ঘনিষ্ট আত্মীয় হয়েছিলেন। তিনি আমার আপন চাচাতো বোন লিলিকে বিয়ে করেছিলেন। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রায় সবার কথাই আমার মনে আছে! আমি যখন…
-
যেভাব আইনজীবী হলাম
যেভাব আইনজীবী হলাম তাহমিনা খাতুন ম্যাট্রিক পাশ করার চৌদ্দ বছর পর সিদ্বেশ্বরী ডিগ্রী কলেজে ভর্তি হলাম। আমার দুই মেয়ে তখন ঢাকার ভিকারুন্নেসা স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ছে। ছেলেকে নার্সারি ক্লাসে ভর্তি করেছি। ইন্টারমিডিয়েট পাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হলাম। যদিও আইন পড়ার কথা কখনও চিন্তা করি নাই। শিক্ষকতা করা ছিল জীবনের আকাঙ্ক্ষা। যেহেতু দীর্ঘ বিরতির পর লেখা-পড়া শুরু করেছি, সরকারি-বেসরকারি কোন ক্ষেত্রেই চাকুরি করার আমার সুযোগ নেই। সে কারণে কয়েক জনের পরামর্শে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হলাম এবং আইন পাশ করলাম। এরপর বার কাউন্সিল পরীক্ষা পাশ করে আইনজীবীর সনদ নিলাম এবং ঢাকা বার এ্যাসোসিয়েশনের সদস্য হলাম। আদালতে…