• পুতুল
    গল্প,  শফিক নহোর (গল্প),  সাহিত্য

    পুতুল

    পুতুল শফিক নহোর একবার প্রিয় মুখখানি দেখার জন্য হাজারটা মিথ্যে অজুহাতে বাড়ি থেকে বের হতাম; সময়ে-অসময়ে। তখন আমি সদ্যকৃত যৌবনপ্রাপ্ত উত্তাপিত তরুণ। অনেক কিছুই পাবার সাধ স্ফুরিত হতো মনের গহীনে, তবুও নিজেকে আড়াল করে রেখেছি; নিজের স্বত্বাকে বিশুদ্ধ রাখতে। সবাই ঘুমিয়ে পড়বার পর, বাড়ি থেকে বের হয়ে চলে যেতাম বন্ধুদের সঙ্গে ভিসিআর দেখার জন্য। বাড়ির অদূরে পুতুলদের বাড়ি। মনের ভেতর সবসময় আনচান করত এই বুঝি পুতুল আসছে। নায়ক-নায়িকাদের জীবন সম্পর্কে জানার খুব আগ্রহ ছিল আমার; সেই কিশোর বয়স থেকেই।  দুই বা দেড়খান সিনেমা দেখানোর পর, আর দেখতে দিত না। হাজারটা অজুহাতে ফিরেয়ে দিত সবাইকে। কোনো কোনো  দিন ঘাড় ত্যাড়ার মতো…

  • শরতের-মেঘ-শেষ-পর্ব
    গল্প,  শাহানাজ মিজান,  সাহিত্য

    শরতের মেঘ (শেষ পর্ব)

    শরতের মেঘ (শেষ পর্ব) শাহানাজ মিজান অনলের বাবা চশমা ঠিক করে চোখে পরতে পরতে সুদীপকে প্রশ্ন করলেন, — সে ঠিক কী বলতে চাইছে? সুদীপ বাধ্য হয়েই বলতে শুরু করল, — অনল, তুমি হয়তো জানো না, আমি তোমার সুদীপা বউদির ছোটো ভাই। বিশ্বাস করো, শুভ্রা কখনো তোমার ভালোবাসার সাথে বেইমানি করেনি। আর তোমাকেও ইচ্ছাকৃত দোষারোপ করেনি। আজ থেকে চার মাস আগে, হঠাৎ শুভ্রা অসুস্থ হয়ে গেলে, হাসপাতালে নেওয়ার পর আমরা জানতে পারি, শুভ্রা ব্লাড ক্যানসারে আক্রান্ত, লাস্ট স্টেজ। ডাক্তার তার সময় বেধে দিলেন, সে এই পৃথিবীতে মাত্র ছয় মাসের অতিথি। তখন থেকেই শুভ্রা তোমার জীবন থেকে সরে যাওয়ার জন্য তোমাকে মিথ্যে…

  • শরতের-মেঘ-১ম-পর্ব
    গল্প,  শাহানাজ মিজান,  সাহিত্য

    শরতের মেঘ (১ম পর্ব)

    শরতের মেঘ (১ম পর্ব) শাহানাজ মিজান দু’চোখের পাতা এমনি এমনিই বন্ধ করে ছিলাম কিছুক্ষণ। ভাবলাম, ঘুম আসবে কিন্তু ওরাও পালিয়েছে। হয়তো চিরদিনের জন্য আসবে বলে ছুটি নিয়েছে আজ। জানালা খুলে আকাশের দিকে তাকালাম, ঝিরিঝিরি বাতাসে সমস্ত শরীর শিরশির করে উঠল একবার। সীমাহীন আকাশের এক চিলতে জায়গা জুড়ে বসে থাকা চাঁদটাকে বড়ো খুশি খুশি মনে হচ্ছে, সে ঝিকিমিকি জোৎস্নার ফুল ফুটিয়ে তারাদের নিয়ে খুশিতে মেতে উঠেছে। শরতের থোকা থোকা সাদা মেঘমালা, চাঁদের খুশিকে হিংসে করছে বোধহয়। সেও মুচকি মুচকি হেসে, নীলাভ পাখা মেলে উড়ে উড়ে চলে যাচ্ছে দূর-বহুদূর। চোখের সীমানায় যতদূর দেখা যায়, আমি ততদূর চেয়ে চেয়ে দেখলাম শুধু। কি যেন…

  • অন্তর্দাহ
    গল্প,  রাতুল হাসান জয় (গল্প),  সাহিত্য

    অন্তর্দাহ

    অন্তর্দাহ রাতুল হাসান জয় মরুভূমিতে একা হাঁটছি। যেদিকে তাকাই মনে হচ্ছে বিভীষিকাময় অন্ধকার, পা ফেলতেই মনে হয় আমি গভীর সমুদ্রে তলিয়ে যাচ্ছি। একটু এগিয়ে যেতেই পা ভিজে যাচ্ছে রক্তে।  নিচে তাকাতেই দেখি মুহূর্তে দৃশ্যপট বদলে গেল। মরুভূমি ছাপিয়ে সমুদ্রের মাঝে বসে আছি একাকী  ডিঙি নৌকায়। হাতের কাছে না আছে কোনো লাঠি, না বৈঠা। স্রোতে ভাসছে নৌকা, দুলছি আমিও। কিছু বুঝে ওঠার আগেই শুরু হলো দমকা বাতাস। সমুদ্রের বুক ঠেলে উঠে এল তুফান। মরুর বুক থেকে সমুদ্রের বুকে কীভাবে এলাম! তা ভাবার আগেই হঠাৎ উলটে গেল নৌকা। আমি ডুবে যাচ্ছি! দম বন্ধ হয়ে আসছে। দুচোখ আর হাত খুঁজছে নূন্যতম বাঁচার আশা।…

  • প্রথম-প্রভাত
    গল্প,  শফিক নহোর (গল্প),  সাহিত্য

    প্রথম প্রভাত

     প্রথম প্রভাত শফিক নহোর   ডিসেম্বর মাসে স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষা হয়ে গেছে। এখন ছুটি। ছেলে মেয়েরা বায়না ধরেছে, এবার ফয়েজ লেক দেখতে যাবে। চট্টগ্রাম খুব সুন্দর শহর, নানুপুরের মন্দির দেখবে। বড় দিনের অনুষ্ঠান শেষ করে, বাবার বাড়িতে তিন চারদিন থেকে, নববর্ষের বিশেষ দিনে লিটনকে অবাক করার মতো পরিকল্পনা চলছে রীতার মনে। ফয়েজ লেকের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যে কোন মানব হৃদয়ে প্রেমের নৈসিক সৌন্দর্য অবলোকন করতে পারবে। স্বচ্ছ পানির ভেতর দিয়ে আকাশের নীল রোদন মায়ায় বিকেলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আরও একধাপ বাড়িয়ে দেয়, পাখির কিচিরমিচির শব্দ, জলে ভেসে বেড়ানো পানকৌড়ি। এদের আলিঙ্গনে তখন মনে হয় আমার সবকিছু থাকতেও লিটনের সংসারে সুখ খুঁজে পেলাম…

  • সাদা-মেঘের-তুলো-১ম-পর্ব
    গল্প,  শাহানাজ মিজান,  সাহিত্য

    সাদা মেঘের তুলো (১ম পর্ব)

    সাদা মেঘের তুলো (১ম পর্ব) শাহানাজ মিজান   বৃষ্টির দিনে কোনো কাজ যদি না থাকতো, কতই না ভালো হতো। গ্রামের বাড়িতে টিনের ঘরের চালের উপর ঝমঝম বৃষ্টির; রিমঝিম রিমঝিম শব্দ শুনতে দারুণ লাগে। মনে হয়, প্রেয়সী যেন আলতা রাঙা পায়ে নূপুর পরে ছন্দে ছন্দে আনন্দে নৃত্য করছে। আর সে নৃত্য দেখতে দেখতে ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে যেতে মন চায়। অলসতা এসে ভর করে সমস্ত শরীরে,মনে। বিছানাও যেন আপন করে, আদরে জড়িয়ে রাখে। শহরের মানুষ প্রকৃতির এই রোমাঞ্চকর স্বর্গীয় অনুভূতি থেকে বঞ্চিত, তবে বৃষ্টি বিলাসী মন যার, সে সব জায়গাতেই প্রকৃতির রোমাঞ্চ খুজে পায়। বৃষ্টির আজ অভিমানের পালা চলছে, অঝোরে কেদেঁই যাচ্ছে,…

  • শেকড়ের-সন্ধানে-শেষ-পর্ব
    গল্প,  সাহিত্য

    শিকড়ের সন্ধানে (শেষ পর্ব)

    শিকড়ের সন্ধানে (শেষ পর্ব) তাহমিনা খাতুন (সত্য ঘটনা অবলম্বনে)   উচ্চ শিক্ষিতা নাবিলা। রাজধানীর একটি স্বনামধন্য স্কুলের শিক্ষিকা। সাত বছর ও পাঁচ বছর বয়সী দুটি শিশু পুত্রের মা। স্বচ্ছল স্বামী এবং দুটি শিশু পুত্র নিয়ে সুখের সংসার। কিন্তু অনেক দিন ধরেই একটি কন্যার মা হওয়ার খুব শখ নাবিলার। গর্ভধারণ করলো মেয়ের আশায়! অল্প দিনের মধ্যেই ডাক্তারের মুখে শুনল সুখবরটি! তার গর্ভের শিশুটি তার বহু কাঙ্খিত মেয়ে! খুশীতে, আনন্দে আত্মহারা নাবিলা। সুখের ডানায়, খুশীর জোয়ারে প্রজাপতির ছন্দে উড়তে শুরু করলো তার দিনগুলি। দেখতে দেখতে প্রসবের দিন এসে গেল। সুস্থ, স্বাস্থ্যবান কন্যার মা হল নাবিলা। বর্ষাকালে, শ্রাবণের এক অঝোর বর্ষণমুখর রাতে জন্ম…

  • কপিশ-নয়ন-শেষ-পর্ব
    আবু জাফর খান (গল্প),  গল্প,  সাহিত্য

    কপিশ নয়ন (শেষ পর্ব)

    কপিশ নয়ন (শেষ পর্ব) আবু জাফর খান   ছয়. মধ্যরাত। কে যেন আব্দুর রহিত ব্যাপারীর সদর দরজায় কড়া নাড়ে। একবার দুবার নয়, অনবরত। ব্যাপারীর তন্দ্রামতো এসেছিল। সে উঠে বসে। রাগে বিরক্তিতে তার হাত-পা কাঁপছে। ভয়ও পেয়েছে। তার শত্রুর অভাব নেই। চারপাশে বৈরিতা। শত্রুসংকুল পরিবেশে তার বাস। সুহৃদ বলে কেউ নেই। আগে তবু আড়ালে আবডালে চলত। ইদানিং অনেকটা প্রকাশ্যেই চলে। “কে? কে কড়া নাড়ে?” রহিত ব্যাপারীর গলা কেঁপে যায়। “মামা আমি। আমি শাওন। দরজা খুলুন। প্রায় ত্রিশ কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে এসেছি। দাঁড়িয়ে থাকতে পারছি না। একটু তাড়াতাড়ি করুন।” শাওন গলা চড়িয়ে বলে। “এত রাতে আমাকে উদ্ধার করতে এসেছে! যতসব অপদার্থের…

  • বেলীফুলের-ঘ্রাণ-১ম-পর্ব
    গল্প,  শফিক নহোর (গল্প),  সাহিত্য

    বেলীফুলের ঘ্রাণ (১ম পর্ব)

    বেলীফুলের ঘ্রাণ (১ম পর্ব) শফিক নহোর   ১. পারুল গ্রামের মেয়ে। বেলিফুলের মতো সাদা চেহারা, চোখ দুটি মায়া ভর্তি। কথা বললে মনে হয় কথার সঙ্গে রসগোল্লার রস বেরিয়ে আসে। ঠোঁটের কিনারে ক্ষয়ে যাওয়া চাঁদের ঝিলিকের মতো মিহি আবেগি ঢঙ লেগে থাকে সর্বক্ষণ। লেখাপড়ায় গাঁয়ের মধ্যে সেরা। স্কুলের মাস্টাররা স্নেহ করে খুব, এক নামে তাকে সবাই চেনে জানে ভালো ছাত্রী হিসাবে। পারুল স্বপ্ন দেখত ডাক্তার হওয়ার। সেই স্বপ্ন একটা সময় অধরা রয়ে যায়। তার মা মারা যাওয়ার পর। মায়ের মৃত্যুতে পারুল যেন ভিন্ন গ্রহের বাসিন্দা বনে যায়। উদাস একটা ভাব চেহারার ভেতর। বেলে মাছের মতো জাবর কাটতে থাকে সারাক্ষণ। বাড়িতে বেশিদিন…

  • কপিশ-নয়ন-৩য়-পর্ব
    আবু জাফর খান (গল্প),  গল্প,  সাহিত্য

    কপিশ নয়ন (৩য় পর্ব)

    কপিশ নয়ন (৩য় পর্ব) আবু জাফর খান   পাঁচ. রুদ্র শাওনের মন ভীষণই খারাপ। সে দিনের পর দিন উপোস করে কাটিয়েছে, তবুও এত মন খারাপ হয়নি। বছর ঘুরে এল মজু মামার খোঁজ নেই। সে চরকির মতো ঘুরে ঘুরে তাঁকে খুঁজেছে। পায়নি। শাওনের মেজাজ সপ্তমে চড়তে থাকে। সে রোষে ফুঁসতে ফুঁসতে হাটে। ক্রুদ্ধ শাওনের সমস্ত কোপ আব্দুর রহিত ব্যাপারীর ওপর। সে আর একবারই স্বার্থপর লোকটির মুখোমুখি হবে। থলির বিড়াল বের করে জনসমক্ষে লোকটিকে উদোম করে দেবে। ব্যাটা লেবাসধারী কঞ্জুস। শাওনকে চেনো না তুমি। মজহাব চৌধুরীকে বাড়িতে দেখেই আব্দুর রহিত ব্যাপারীর রক্ত ফুঁসে ওঠে। এই শালা আবার কোত্থেকে উদয় হলো! নিশ্চয়ই মাগি…

error: Content is protected !!