-
বিড়ম্বনা
বিড়ম্বনা ফজলুল হক এক সময় ভালোলাগা আর অভিমান নিয়ে লিখতাম লোকে বলতো প্রেমে পড়েছে বোধহয়, তারপর বিরহ নিয়ে লেখা অনেকে ফিসফিস করে ছেঁকা খাইছে কবি। ঘুষ-দুর্নীতি নিয়ে লিখলাম কেউ বলে সাহস কতো বেটার! রাজনীতি নিয়ে লিখতেই স্বজনেরা বললো জীবনের মায়া নেই? তারপর প্রকৃতি নিয়ে লেখা মাচানে বসা অলস লোকগুলো উৎসুক নয়নে চেয়ে বলে পাগলে পাইছে নিশ্চয়। ভ্যাবাচ্যাকায় কিছুদিন লেখা বন্ধ হলো, এক গোধূলিতে পথের বাঁকে হঠাৎ এক কবিতা প্রেমির দেখা সে বললো,কবি কলম বন্ধ কেনো? নির্বাক দৃষ্টিতে তার চোখে চেয়ে সমুদ্রের উন্মাদনা দেখতে পেলাম; অতঃপর যা হওয়ার তাই হলো! মস্ত বড় এক কবিতার পাণ্ডুলিপি সামনে এসে দাঁড়িয়ে গেলো! নাম…
-
অমরত্ব
অমরত্ব ফজলুল হক আমি বিচলিত যেমনটা হয় আঁধারে হারালে জোছনা কথা; শ্রাবণ কি তোমায় দেয়নি আভাস? গভীর নিমগ্নতায় সন্ধ্যাকে রাতের গভীরে নিমন্ত্রণ করেছি- পৌরাণিক অরণ্যের পাণ্ডব গুহায় মুখোমুখি হতে চাই দুজনে। যতো ঘৃণা আছে উগরে দিও তাচ্ছিল্যের ইঙ্গিতে সজোরে খুলে দিও অভিযোগোর সবকটি খিড়কি, ভুলেও জানতে চেয়ো না নিছক অভিমানের কথা আমি শোনাবো রোদনের গল্প। পূতপবিত্র অর্ঘ্যজলের ঘটি নেই কোনো মালি হাতে তুলে দেয়নি কোনোদিন দুটো সতেজ বা বাসি ফুল নামমাত্র মূল্যে কিনে আনবো সে সাহস হয়নি কখনো, আমি হতদরিদ্র প্রেমিক আছে প্রার্থনার একজোড়া বিনয়ী হাত,চোখে জল টলমল। বিত্তবৈভব তুচ্ছ সবই তুচ্ছ নেশার শরাব- পাশে পাবার নিবিড় ভরসায় স্রষ্টার…
-
কারও পথের দূরত্বে
কারও পথের দূরত্বে ফজলুল হক পুরোনো গলি নিষিদ্ধ প্রহরের প্রতিধ্বনি ধ্রুপদী প্রেম ও নিটোল ভালোবাসার নিঃশ্বাসে বিরহের গন্ধ, শেওলাবৃত নেই আর চলাচলের পথটি। চারিদিকে চেনা চেনা ঘ্রাণ প্রেমিকা বাতাসে ভেসে আসে সুখ-আনন্দের গুঞ্জন, যে রকম ঘ্রাণে ঠোঁটে জলমেখে প্রথম চোখ তুলে দেখেছিলাম তোমাকে। বদলে গেছে অবয়ব জীবনের চারিধার ব্যর্থ প্রণয়ের আগুনে পুড়ে গেছে গোপন ইচ্ছেরা, নিজেকে বদলাতে পারিনি এতোটুকুও কালান্তরে বদলে গেছো তুমি। কী লিখবো কবিতায়? নেই কোনো নতুন কথা, না আছে জীবন-সঙ্গীতের হিল্লোলিত সুর-ছন্দ, উত্তাল নদী হয়ে ভেঙেছো হৃদয়ের সবুজ পাড়। প্রেম-বিরহি মেঘ কষ্ট-বৃষ্টিতে এখনও ভিজে যায় পোড়া দু’টো চোখ, আজও পথিক-প্রহরে ফুলেরা শোনায় করুণ আর্তনাদ!…
-
স্বপ্নহীন
স্বপ্নহীন ফজলুল হক নিভে যাওয়ার অভিলাষে কেনো মিথ্যে প্রদীপ জ্বালো, সরে আসার ফাঁদ পেতে কেনোইবা অলীক গল্পের পাণ্ডুলিপি লিখো? এ কেমন মিছে অভিনয়! জীবনের ভাষাগুলো পরিষ্কার দুর্লভ স্মৃতির মতো, বিষণ্নতায় ছেয়ে গেছে ভালোবাসার অনুরঁজন, স্বপ্নের রশি টেনে ক্লান্তপ্রায় ফেলে আসা দীঘল সময়। ঘুমহীন ঘুমচোখ স্বপ্নহীন রাত স্মৃতির বাসর ভেঙে ডুবে গেলো অভিমানী নীল চাঁদ, কে কখন শূন্যতায় ডুবে যায় নেই যেনো কারো তার দায়ভার। এ আঁধার যদি কেটে যায় রুপালি আলোর আলিঙ্গনে, সবুজ ঘাস ভিজবে আবার হেমন্তের শিশিরজলে। তুমিও তো শিশিরজল যাকে খুশি ভিজিয়ে দাও রবি’র জেগে ওঠার আগেই অতঃপর আচানক নিজেকে গুটিয়ে ফেলো শামুকের…
-
তৃষিত নয়নের ভাষা
তৃষিত নয়নের ভাষা ফজলুল হক অনুচ্চারিত শব্দের নিঃশব্দে ফিরে আসি বারবার অব্যক্ত থেকে গেলো জীবনের কথাগুলো। বন্ধুর পথ ভেবে হয়নি জানতে চাওয়া, অভেদ্য আঁধার ভেঙে কিছু ক্ষতি মেনে নিয়ে পারো কি-না অনিগড়িত জীবনের সাথী হতে, যেমনটি হলে প্রাতঃস্নানে পরিশুদ্ধ হয়ে মুখোমুখি হওয়া যায় দুজনে পূজোর আসনে। আকাশের নীল ছায়ায় সদ্যস্নাতার মতো অপেক্ষায় দেখেছি সেদিন বৃষ্টিস্নাত বিকেলে, সৌন্দর্যের দেবী যেনো তোমাকেই প্রণাম করছিল। গভীর অরণ্যের মতো ঘন কালো কেশের মৌ মৌ গন্ধ আজও বাতাসে ভেসে ভেসে আসে, হরিণী চোখের ব্যাকুলতা বাসনা জড়ানো ওষ্ঠের অকৃপণ হাসি আমার দরিদ্র ইচ্ছেকে কিছু প্রশ্ন করে গেছে। ওষ্ঠ ছোঁয়া অমৃত জলে ক্লান্ত পিপাসার আহ্বানের মতো…
-
বিনিদ্র দীপের মতো
বিনিদ্র দীপের মতো ফজলুল হক সন্ধ্যা আঁচল বিছিয়েছে দিগন্তজুড়ে মুঠো মুঠো অন্ধকারে ডুবে গেছে সবুজ প্রান্তর, এর মানে এই না অপেক্ষা শেষে আর কখনো ফুটবে না আলো। শূন্যতার মলিন পথে নূপুরের প্রমিত ধ্বনি উত্তরের প্রসণ্ন বাতাসে মনের আঙিনায় মনোহর দুলছে মেঘমালা কেশ। চিত্তে জেগে থাকে আশার ক্ষীণ আলো- শেষ দেখা মুখখানি চকিত নয়নের একান্ত সঙ্গী। হাসনাহেনার গন্ধমাখা দিনগুলো পিছু টানে, সুষম ভাবনার অমৃত ঘ্রাণে কে যেনো আমাকে আচ্ছন্ন করে। জগৎ-সংসারের মোহ ক্রমাগত অস্তগামী- চোখের ডগায় চেনা নদীর যুবতী ঢেউ নিজেকে ভেঙেছি বারবার। বোবা সূর্যের উন্মাদনা বিচলিত তিয়াসী মাটি, চোখের কোণায় অবুঝ জলাবদ্ধতা ! …
-
অশ্রুতে ভিজিয়ে রেখো
অশ্রুতে ভিজিয়ে রেখো ফজলুল হক ভাঙনের মাঝেও যে জীবনের মানে খোঁজে অহর্নিশ তাকে আগুনে পোড়ার ভয় দেখিয়ে লাভ নেই কোনো। সেতো ক্লান্তিহীন জ্বলে, মাঝেমধ্যে জমানো কষ্টের এলোমেলো পাথর উৎক্ষেপণ অথবা গলিত লাভার আদলে নিরব অশ্রুপাত; এ সব তো অহরহ ঘটছে, কেউ তো লিখে রাখে না তার বেহিসেবী হিসেব। নিশিদিন জ্বলতে জ্বলতে একদিন হঠাৎ অনাড়ম্বর থেমে যায় আর্তনাদ , স্তিমিত হয়ে আসে অস্তগামী জীবন-সূর্যের লেলিহান শিখা চারিদিকে পড়ে থাকে জমাটবাঁধা ব্যথার স্তুপ। অস্তগামী সূর্যের অন্তীম নিঃশ্বাসের মতো একদিন আমিও কারো অলক্ষে শিতল ঘুমে লুটিয়ে পড়বো হারিয়ে যাবো ঘন অন্ধকারে, অবশেষে নিবর্তন হবে যন্ত্রণার প্রান্তিক ধাপ। অতঃপর কিছুদিন গেলে স্মৃতিরা সবুজ…
-
প্রগাঢ় বৈরিতা
প্রগাঢ় বৈরিতা ফজলুল হক নিঃশব্দসঞ্চারীর মতো চলে গেলো আর একটি পূর্ণিমা রাত কী এমন সখ্য তোমার নিরবতার সাথে? যেনো শীতমাখা অলস রাতের শেষ প্রহরের নিমগ্নতা; জোছনা এসে দাঁড়ায়নি আমার অভিমানী কার্ণিশে আমিও খুঁজিনি ফেরারি চাঁদমুখ রাতের আকাশে। ফেরার ছাড়পত্র হাতে থমকে দাঁড়িয়ে কিশোরী নদীর ভুল পাড়ে, লোনা অভিশাপে ছেঁড়া পাল দিশাহীন মাঝি-মাল্লা। ঝরা ফুলের মতো কিছু টুকরো খবরের বাসি গন্ধ অগোচরে বিলীন হলো কালের উঠোনে; যুবতী নদীর মোহনার বাঁকে নোঙর ফেলেছে বণিক সওদাগর সওদার হাতবদল চলছে হরদম। প্রস্ফুটিত যে মুখের অবয়বে লেখা ছিলো জীবন দর্শন নিরবতার মলাট খুলে বুঝিয়ে দিলে কৃত্রিমতার প্রগাঢ় প্রণয় তোমার। এ এক ভিন্ন আকাশ তলে…
-
কারও পথের দূরত্বে
কারও পথের দূরত্বে ফজলুল হক পুরোনো গলিনিষিদ্ধ প্রহরের প্রতিধ্বনিধ্রুপদী প্রেম ও নিটোল ভালোবাসার নিঃশ্বাসে বিরহের গন্ধ,শেওলাবৃত নেই আর পারাপারের ঘাটটি।চারিদিকে চেনা চেনা ঘ্রাণপ্রেমিকা বাতাসে ভেসে আসে সুখ-আনন্দের গুঞ্জন,যে রকম ঘ্রাণে ঠোঁটে জলমেখেপ্রথম চোখ তুলে দেখেছিলাম তোমাকে।বদলে গেছে অবয়ব জীবনের চারিধারব্যর্থ প্রণয়ের আগুনে পুড়ে গেছে গোপন ইচ্ছেরা,নিজেকে বদলাতে পারিনি এতোটুকুওকালান্তরে বদলে গেছো তুমি। কী লিখবো কবিতায়?নেই কোনো নতুন কথা,না আছেজীবন-সঙ্গীতের হিল্লোলিত সুর-ছন্দ,উত্তাল নদী হয়ে ভেঙেছো হৃদয়ের সবুজ পাড়।প্রেম-বিরহি মেঘকষ্ট-বৃষ্টিতে এখনও ভিজে যায় পোড়া দু’টো চোখ,আজও পথিক-প্রহরে ফুলেরা শোনায় করুণ আর্তনাদ!কাকে যে শোনাবো ব্যথাময় জীবন-উপাখ্যান!রাতের নির্জনতা কে?সেতো ক্লান্ত মুক্তির প্রসব ব্যথায়। প্রেমিকা মন তোমারবেশতো আছো জীবন-দিঘির পাড়ে,প্রেম-স্পর্শ খোঁজো প্রতিদিনপ্রেমিক-শরীরের…
-
প্রণয়
প্রণয় ফজলুল হক স্টেশন পাড়ায় হৈচৈগাড়ি এসে দাঁড়ালো প্লাটফর্মে;আমিও উদ্যতপুরাতন গৃহকোণ ভেঙে নতুনের পথে…পশ্চাতে থেকে গেলো অমিমাংসিত অনেক কারণ।দেখা হলোওঠা-নামার ব্যস্ত সময়ে,ওছিলো রবীন্দ্রনাথের মহামায়ার মতো কাঁচা সোনার প্রতিমাতুল্য,শরতের রোদের মতো দীপ্ত ও নীরব;কিছুটা বদলেছে আজ বিষাদিত স্মৃতির আঁচড়ে,তবুও লাবণ্য-প্রভা ছেয়ে আছে যেনো ভাঙা চাঁদের শরীরের মতো-এখনো কাছে পাবার মৌন কোলাহলনড়ে ওঠে মনের ভুবন।হাসির আড়ালে লুকালো দীর্ঘশ্বাসচোখের কোণে জড়োসড়ো প্রত্যাশার ভাঙাভাঙা ছবি,যেনো নিভু নিভু প্রদীপের পাণ্ডবর্ণ ছায়া।রুপে নেই দারিদ্রের ছাপদুচোখে এঁকেছে ধূসর বসন্ত-কাজল!শিরদাঁড়ায় বেড়ে ওঠা অবাধ্য বিরহ ব্যথায়কখনো কি পড়বে না মনে প্রণয়ের দিনগুলোকৃষ্ণচূড়া পথেজোছনার অভাবী আলোয়?ট্রেন ছেড়ে দিলো….ফেরারি নদীর জলে যোগ হলো একফোঁটা জল। ঘুরে আসুন আমাদের ফেসবুক…