-
অভিমান ।। শেষ পর্ব ।। ছোটোগল্প ।। আলতাব হোসেন
অভিমান ।। শেষ পর্ব আলতাব হোসেন ২. মার মুখটা কেমন যেন বদলে যাচ্ছে দিনকে দিন। আগের মতো আর কথা বলেন না। বাড়ি গেলে সকালে রুটি বানিয়ে রেখে দেন, কিন্তু ডাকেন না। টেবিলে বসে থাকেন, মুখ গম্ভীর করে। আমি বুঝি, কিছু একটা পুড়ে যাচ্ছে ভেতরে ভেতরে। একদিন সন্ধ্যাবেলা বারান্দায় বসে ছিলাম, পায়ের কাছে বিছানো শীতলপাটি। মা এসে চুপ করে বসলেন পাশে। তারপর হঠাৎ বললেন— “তোর আব্বা থাকলে বুঝত, মা কেমন করে ভিতরে ভিতরে একা হয়ে যায়।” আমি কোনো উত্তর দিই না। চুপ করে বসে থাকি। মা আবার বললেন, “তুই ছোটো ছিলি তখন। তোর আব্বার মৃত্যুর পর কত নিদ্রাহীন রাত কাটিয়েছি। তোর…
-
অভিমান ।। ১ম পর্ব ।। ছোটোগল্প ।। আলতাব হোসেন
অভিমান ।। ১ম পর্ব আলতাব হোসেন রোজ সকালে উঠেই মা রুটি বানিয়ে দেন, সঙ্গে ডিমভাজি। ছোটোবেলা থেকে এই অভ্যেস। এখন আমি চব্বিশের তরুণ, তবুও সকালে ঘুম ভাঙে মায়ের রুটি-গন্ধে। মনে হয়, ঘড়িটা থেমে থাকুক, আমি যেন আজও সেই স্কুলপড়ুয়া ছেলেটাই থাকি। কিন্তু সময় তো থেমে থাকে না। আমাদের বাড়িটা পাবনার সুজানগর উপজেলার এক প্রান্তে। চারপাশে মাঠঘেরা, শীতে ধোঁয়াটে কুয়াশা, আর বরষায় কাঁদামাখা কাঁচা রাস্তা। বাবা মারা গেছেন চার বছর আগে। হঠাৎ এক বিকেলে হার্ট অ্যাটাক, হাসপাতালে নেওয়ার আগেই সব শেষ। বাবা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। আমরা চার ভাইবো— আমি সবার বড়ো, তারপর ছোটো দুই বোন। বাবার মৃত্যুর পর সংসারের…
-
শূন্যতা ।। ছোটোগল্প ।। শফিক নহোর
শূন্যতা শফিক নহোর সীমান্তের মনে আজও গেঁথে আছে সেই প্রথম দেখা—এক অস্থির মেঘবৃষ্টির দুপুরে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার দিনে। সুতি, এক দৃষ্টিতে আকর্ষণ করবার মতো মেয়ে, তার চোখে ছিল উদ্বেগের ছাপ। নতুন ক্যাম্পাস, চারপাশের বিশৃঙ্খলা—সব মিলিয়ে একটু বিভ্রান্তই লাগছিল তাকে। ঠিক তখনই সীমান্ত পাশে গিয়ে দাঁড়াল। “তুমি নতুন?” সুতি অবাক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকাল। মাথা নাড়িয়ে বলল, “হ্যাঁ, হলে ভর্তি হব, কিন্তু কীভাবে কী করতে হবে বুঝতে পারছি না।” সীমান্ত হেসে বলল, “চলো, আমি দেখিয়ে দিচ্ছি।” সেদিন থেকেই বন্ধুত্বের শুরু। সীমান্ত আর সুতি দিনে দিনে একে অপরের ছায়া হয়ে উঠল। সীমান্ত পড়াশোনার পাশাপাশি ছোটোখাটো কাজ করত, আর সেখান থেকেই কিছু টাকা…
-
নিঃশব্দে নীড়ে ফেরা ।। ১০ম পর্ব ।। ধারাবাহিক উপন্যাস ।। এ কে আজাদ দুলাল
নিঃশব্দে নীড়ে ফেরা ।। ১০ম পর্ব এ কে আজাদ দুলাল ক্লান্ত মন ও শরীরে অল্প সময়ের মধ্যে ঘুমিয়ে যায় দু’জন। মাঝ রাতে স্বপ্ন দেখে হঠাৎ ঘুম ভেঙে যায় রাকার। মনিকাকে ডেকে তোলে। মনিকা ভয় পেয়ে যায়। ঘুম ভাঙতেই দেখে রাকা তার বিছানায় বসে আছে। মুখখানি কেমন যেন ফ্যাকাসে দেখাচ্ছে। কাছে গিয়ে জানতে চায় খারাপ কোনো স্বপ্ন দেখেছে কি-না। রাকা কিছু সময় চুপ থেকে স্বপ্নের ঘটনা খুলে বলে। আজ রাতে সেই মহিলাকে স্বপ্নে দেখেছে। পরনে আগের মতো হালকা সবুজ জমিনে খয়েরি রঙের পাড়ের শাড়ি এবং গায়ে খয়েরি রঙের ব্লাউজ। আজকে তার আচরণ ভিন্ন। আজ রাকাকে বুকে টেনে নিয়ে জড়িয়ে ধরে। রাকা…
-
মাঝি // কবিতা // জাহাঙ্গীর পানু
মাঝি জাহাঙ্গীর পানু মাঝি, তুমি আমাকে পার করে দাও। যেভাবে ছোটোবেলায় নানা বাড়িতে যাবার পথে তুমি আমাকে পার করে দিতে। তুমি আমাকে পার করে দাও- এই অনাচার, দুর্নীতি, দুর্বৃত্তায়ণ আর মাদকাসক্ত সমাজের দূর্বিসহ জীবন থেকে, অথবা তুমি আমাদের সমাজ থেকে অবিচার অনাচার আর দুর্নীতিকেই পার করে দাও। পার করে দিয়ে আমাদের সমাজকে মাদকমুক্ত করো আর হৃদয়কে করো কলুষমুক্ত। তুমি কত পার করে দিয়েছ চলমান পথিককে কাস্তে হাতে কৃষক, দিনমজুর, বাঁক কাঁধের ফেরিওয়ালা। যেভাবে তুমি পার করতে অফিসের কেরানি, তহশিলদার, পিয়ন, হাতে লাঠি আর মুখে বাঁশি রাখা চৌকিদার আর বাইকসহ স্কুলের মাস্টার মশাইকে। মাথায় বোঝা আর হাতে ভারী ব্যাগ বহনকারী হাটুরেকে।…
-
নিঃশব্দে নীড়ে ফেরা ।। ৯ম পর্ব ।। ধারাবাহিক উপন্যাস
নিঃশব্দে নীড়ে ফেরা ।। ৯ম পর্ব এ কে আজাদ দুলাল আজকের বিকেলেটা অন্য রকম। বাড়িটির পশ্চিমে পাকা রাস্তা, তারপর সবুজ ঘন বড়ো বড়ো গাছের সমারোহ। দারুণ লাগছে রাকার। বিকেলের সূর্যটা লাল রঙে রঞ্জিত হয়ে সবুজ ঘন গাছের মধ্যে লুকোচুরি খেলছে। আর মাস্টার বাড়ির পরিবারের সদস্য এবং আগত অতিথি বিশেষ করে রাকার মনের ভেতরে চলছে অজানা স্নায়ুযুদ্ধ। এ যুদ্ধ হয়তো একটা ভাঙা সম্পর্ক নতুন বন্ধনে আবদ্ধ হবে। রাকার মনে প্রশ্ন সে কী সঠিক জায়গায় পা দিয়েছে না-কি আবার অজানা পথে পা বাড়াতে হবে। কিন্তু ভদ্রলোকের চেহারার সাথে বাবার চেহারায় অনেকটাই মিল। যদি তাই হয়, তাহলে এদের মধ্যে কী এমন ঘটেছিল, এতকাল…
-
মুক্ত ভূমিতে কয়েকদিন // ভ্রমণকাহিনি // তাহমিনা খাতুন
মুক্ত ভূমিতে কয়েকদিন তাহমিনা খাতুন থাইল্যান্ড বা শ্যামদেশ। ভ্রমণ-পিপাসুদের জন্য এক স্বর্গরাজ্য! এ দেশের প্রকৃতি বৈচিত্র্যময়। পাহাড়, দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত, সমতল ভূমি এবং বন-জঙ্গলে ঘেরা থাইল্যান্ড। এক সময়ে এ দেশকে পূর্বের ‘ভেনিস’ বলা হতো। অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পৃথিবীর মানুষকে হাতছানি দিয়ে ডাকে। এছাড়া ভালো চিকিৎসা নিতেও বহু মানুষ থাইল্যান্ড যাওয়াকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে। অনেক বছর আগে, একটি সেমিনারে অংশ নিতে কয়েকদিনের জন্য থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংকক যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল। তখন থাইল্যান্ডের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও প্রকৃতি সম্পর্কে জেনেছিলাম। উড়াল সড়কের শহর ব্যাংকক। বিমানবন্দর থেকে শুরু করে মূল শহর পর্যন্ত দীর্ঘ পথ উড়াল সড়কের উপর দিয়েই যেতে হয়। তারপরও বেশ যানযটের ধকল সামলাতে…
-
নিঃশব্দে নীড়ে ফেরা ।। ৮ম পর্ব ।। ধারাবাহিক উপন্যাস ।। এ কে আজাদ দুলাল
নিঃশব্দে নীড়ে ফেরা ।। ৮ম পর্ব এ কে আজাদ দুলাল পরবর্তী স্টেশনে নামতে হবে। রেল স্টেশনটি ছোটো হলেও অনেক পুরাতন। ব্রিটিশ শাসক তাদের সুবিধামতো রেল স্টেশন, পুলিশ ফাঁড়ি নির্মাণ করেছিল। আমাদের বংশপরম্পরা তা ভোগ করে আসছি; অন্তত এই দুটো জায়গায় তাদের স্মরণ করা যায়। স্টেশনটি সে রকম জাঁকজমকপূর্ণ নয়। ব্রিটিশ আমলের জীর্ণশীর্ণ দুটো ভবন দাঁড়িয়ে আছে অতীত স্বাক্ষী হয়ে। পাঁচ মিনিটের মধ্যে ট্রেনটি স্টেশনে থামবে। যাত্রীরা নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তাদের সংখ্যা বেশি নয়। পাঁচ মিনিটের বেশি অপেক্ষা করবে না তাই যাত্রীদের বেশ তাড়াহুড়া। ট্রেন থামতেই লালজামা পরিহিত একজন কুলি এসে মনিকার সামনে দাঁড়ায়। সে যাত্রীদের চেহারা দেখে বুঝতে পেরেছে এই…
-
বই চোর // শেষ পর্ব // ছোটোগল্প // সাইফুর রহমান
বই চোর // শেষ পর্ব সাইফুর রহমান ইন্দ্রের দিকে হাত বাড়িয়ে বলল, — একটা সিগারেট দে। অনেকক্ষণ হলো সিগারেট ফুঁকা হয়নি। নিকোটিনের প্রচণ্ড অভাব বোধ করছে শরীর। সিগারেটের কৌটাটি এগিয়ে দিতে দিতে ইন্দ্রনাথ সুনীলকে উদ্দেশ করে বলল, — বেশ জম্পেস ধরনের একটি বই সংগ্রহশালার সন্ধান পেয়েছি জানিস। সুনীল সিগারেট জ্বালানো বন্ধ রেখে কৌতূহলী কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল, — বলিস কী, কোথায়? — মুর্শিদাবাদের আজিমগঞ্জে। পরিত্যক্ত বনেদি জমিদারের এক প্রাসাদে। বাড়িটি নিয়ে অবশ্য ওয়ারিশদের মধ্যে মামলা-মোকদ্দমা চলছে দীর্ঘকাল ধরে। কিন্তু সেই বাড়ির পাহারাদারের সঙ্গে আলাপ হয়েছে আমার। দারোয়ানটির নাম লজপত সিং। জাতিতে রাজপুত। ওর পূর্বপুরুষ অনেককাল আগে চলে এসেছে বাংলায়। আমি কয়েক…
-
নিঃশব্দে নীড়ে ফেরা ।। ৭ম পর্ব ।। ধারাবাহিক উপন্যাস ।। এ কে আজাদ দুলাল
নিঃশব্দে নীড়ে ফেরা ।। ৭ম পর্ব এ কে আজাদ দুলাল আরও ঘণ্টা দুই লাগবে স্টেশন পোঁছাতে। গাড়ি যে গতিতে চলছে তাই মনে হলো মনিকার। এত সময় ধরে রাকা তার পৈতৃক ইতিহাস বলল। কিন্তু কেন ফুলঝুড়িতে যাচ্ছে তা জানা হলো না। আবার ডা. মাসুদ সেভাবে কিছু ভেঙে বলেননি। — আচ্ছা রাকা, তুমি যে আমার সঙ্গে ফুলঝুড়িতে যাচ্ছো, কিন্তু কেন? — মনিকাদি, এই ফুলঝুড়ির নামটা তোমার মুখে এই প্রথম শুনতে পেলাম। মাসুদ ভাই এ ব্যাপারে সব জানেন। তবে তোমাকে আরও একটা মজার কাহিনি বলব। — ইদানিং পর পর বেশ ক’টা রাতে একটা স্বপ্ন দেখে যাচ্ছি। সচেতন, অচেতন বা অবচেতনে; তাকে কখনো মনের…