-
আলতা বানু (শেষ পর্ব)
আলতা বানু (শেষ পর্ব) শাহানাজ মিজান এক এক করে জীবন থেকে প্রিয়জনেরা সবাই হারিয়ে গেল। প্রচণ্ড ঝড়ে ডালপালা ভাঙা এক বিধ্বস্ত বট গাছ যেমন করে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকে, তেমন করে শুধু আমি দাঁড়িয়ে রইলাম। এত বড়ো শূন্য ঘরে একা একা কি করে থাকব আমি। সমাজপতিরা পরামর্শ করে আমাকে খোকনের ঘাড়ের বোঝা করে দিয়ে গেল। এখন থেকে আমার সমস্ত দায়িত্ব খোকনের। শরিফুলকে ওরা লেখাপড়া করতে ঢাকায় পাঠিয়ে দিল। আমি আরও একা হয়ে গেলাম। ওরা খাওয়ার সময় আমাকে ডাকে না। ওদের খাওয়া হয়ে গেলে আমার ঘরে খাবার দিয়ে যায়। ইদানীং নিজের প্রতি নিজেরই খুব রাগ হয়। কেন এত ক্ষিধে পায় আমার।…
-
আলতা বানু (৪র্থ পর্ব)
আলতা বানু (৪র্থ পর্ব) শাহানাজ মিজান ভোর থেকে উনার প্রচন্ড জ্বর, বড়ো বুবু উনার কাছে রইলেন; আমি রান্না করছি। ও বাড়ির কোবাদের মা এসে খবর দিল খোকন আর তার বউ ব্যাগ পেটরা নিয়ে বাড়ি থেকে চলে যাচ্ছে। পাড়ার লোকজনদের ডেকে তাদের কাছে বলেছে পোয়াতি বউটার উপর আমরা অত্যাচার করেছি। কখনও যদি তাদের আলাদা সংসার হয় তো ফিরে আসবে, নয়তো আসবে না। আমি শুধু শুনলাম, কিছু বললাম না। সাতদিন জ্বরে ভুগে উনি একটু সুস্থ হলেন কিন্তু শরীরটা বেশ দুর্বল। খোকন আর বউ বাড়িতে ফিরে এলে উনি খোকনকে ডেকে বললেন, — আজ থেকে তোমরা আলাদা খাবে। খোকন মাথা নিচু করে রইল ঠিকই,…
-
সাদা মেঘের তুলো (শেষ পর্ব)
সাদা মেঘের তুলো (শেষ পর্ব) শাহানাজ মিজান বন্ধু জামানের কাছে শুনেছিলাম নোড়া বিয়ে করেছে। একটা চিরকুটও পাঠিয়েছিলো, তাতেও বিয়ের কথাটাই লেখা আছে। আচ্ছা, নোড়া কি খুব সুখে আছে? ওর বর নিশ্চয়ই খুব ভালোবাসে ওকে। এতোদিনে হয়তো ওর বাচ্চা-কাচ্চাও হয়েছে। যাবো যাবো করতে করতে দ্বিধা দ্বন্দ্বে ভুগছিলাম। একদিন সমস্ত দ্বিধা কাটিয়ে, একবার শুধু চোখের দেখা দেখবো বলে, ওদের বাসায় গিয়েছিলাম কিন্তু দেখা হলো না। ওরা সে বাসা ছেড়ে দিয়েছে কিছুদিন আগেই। আচ্ছা, আমার কথা কি ওর একবারের জন্যেও মনে পরে না? আমি তো ঠিকানা বদলাইনি, যদি ভুল করেও একবার আসতো! বদলাইনি ফোন নম্বর, প্রতিক্ষায় থাকি, যদি সেই পরিচিত নাম্বার থেকে…
-
সাদা মেঘের তুলো (১ম পর্ব)
সাদা মেঘের তুলো (১ম পর্ব) শাহানাজ মিজান বৃষ্টির দিনে কোনো কাজ যদি না থাকতো, কতই না ভালো হতো। গ্রামের বাড়িতে টিনের ঘরের চালের উপর ঝমঝম বৃষ্টির; রিমঝিম রিমঝিম শব্দ শুনতে দারুণ লাগে। মনে হয়, প্রেয়সী যেন আলতা রাঙা পায়ে নূপুর পরে ছন্দে ছন্দে আনন্দে নৃত্য করছে। আর সে নৃত্য দেখতে দেখতে ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে যেতে মন চায়। অলসতা এসে ভর করে সমস্ত শরীরে,মনে। বিছানাও যেন আপন করে, আদরে জড়িয়ে রাখে। শহরের মানুষ প্রকৃতির এই রোমাঞ্চকর স্বর্গীয় অনুভূতি থেকে বঞ্চিত, তবে বৃষ্টি বিলাসী মন যার, সে সব জায়গাতেই প্রকৃতির রোমাঞ্চ খুজে পায়। বৃষ্টির আজ অভিমানের পালা চলছে, অঝোরে কেদেঁই যাচ্ছে,…
-
ঊর্মিমালা (শেষ পর্ব)
ঊর্মিমালা (শেষ পর্ব) শাহানাজ মিজান এবাদ আলী চলে যাওয়ার পর, কেমন যেন একটা ঘোরের মধ্যে ছিলাম। বেশ কিছুক্ষণ বসে থাকার পর মনে হলো, অনেক দিন বললে ভুল হয়, কয়েক বছর হলো নামাজ পড়িনি। ভালো করে অজু করে এশার নামাজে দাড়ালাম। নামাজরত অবস্থায় আপনা আপনিই চোখের পানিতে বুক ভেসে যাচ্ছে। জায়নামাজে বসে অনেকক্ষণ ধরে দোয়া পড়লাম। কেন জানি না জায়নামাজ থেকে আজ উঠতে ইচ্ছে করছে না। শুধু ঊর্মির কথা মনে হচ্ছে। ধনী বাবার আদরের দুলালী, আমার মতো চাল চুলোহীন একটা ছেলের সাথে তার বাবা বিয়ে দিয়ে দিলো। সে আমাকে এবং আমার অবস্থানকে চুপচাপ মেনে নিয়ে আমার সংসার করে যাচ্ছে। আমার…
-
ঊর্মিমালা (২য় পর্ব)
ঊর্মিমালা (২য় পর্ব) শাহানাজ মিজান কোনোরূপ আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই, আমার প্রতিবেশীদের মধ্যে দু-চারজন মুরুব্বি আর ওদের পক্ষের অল্প সংখ্যাক আত্মীয় স্বজনের উপস্থিতিতে আমাদের বিয়ে হলো। শিকদার সাহেব বললেন, বিয়ে উপলক্ষ্যে বড় অনুষ্ঠান হবে, আমাদের মাস্টার্স পড়া শেষ হলে। এত দিন যেন আমরা ভালোভাবে লেখাপড়া করি। আমার ভাঙা ঘরের পাট শোলার বেড়ার সাথে নতুন হলুদ শাড়ী, পেটিকোট, ব্লাউজ ছড়ানো। সকালে সূর্য ওঠার আগেই, ঊর্মির পিঠে ছড়িয়ে থাকা ভেজা চুল, তড়িঘড়ি করে করে আমার জন্য নাস্তা বানানো, বাড়িতে নতুনত্বের আলাদা একটা গন্ধ বাতাসে ভাসছে কিন্তু কোনোকিছুই আমার মনে কোন রকম দাগ কাটছে না। বরং, আমার সামনে ঊর্মিকে এমন ভাবে ঘুরতে দেখে, আমার…
-
ঊর্মিমালা (১ম পর্ব)
ঊর্মিমালা (১ম পর্ব) শাহানাজ মিজান শেষ সম্বল বলতে বাকী ছিলো শুধু এই পুরোনো আম গাছটা। আজ সেটাও বিক্রি করে দিলাম। এছাড়া আর কোনো উপায় ছিলো না। কিন্তু এরপর কি হবে, কি করবো, কিভাবে মায়ের চিকিৎসার খরচ যোগাড় করবো জানি না। আমার মা কিডনির মারাত্মক রোগে আক্রান্ত। ডাক্তার বলেছেন, যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব অপারেশন করাতে হবে। তা না হলে, মাকে আর বাঁচানো যাবে না। আমরা খুব গরীব। সহায় সম্পত্তি বলতে বাপ দাদার রেখে যাওয়া এই ভিটে বাড়ি, আর বাড়িতে দোচালা টিনের একটা ঘর। এছাড়া আর কিছুই নেই। বাড়িতে কয়েকটি পুরোনো ফলজ গাছ ছিলো, আম, কাঁঠাল, আর নারিকেল গাছ। এসব ফলমূল বিক্রি…
-
অধরা চাঁদ উপন্যাস রিভিউ
অধরা চাঁদ উপন্যাস রিভিউ শফিক নহোর মানব জীবন ফুলের মতো। তবুও সব ফুলের সৌরভ সবাই গ্রহণ করতে পারে না। জীবন সহজ হলেও অদৃশ্য কিছু কূটিল মানুষের জন্য, সেই জীবন বাস করার অযোগ্য হয়ে পরে। বিয়োগ বেদনায় কেউ কেউ স্বস্তি পায়। মানব জনম বড়ই বিচিত্র। নিজের পাশেই হয়তো অতি প্রিয় মানুষটি থাকে। অন্তর চক্ষু দিয়ে তাকে দেখা হয় না । জীবন ও জীবনবোধের গল্প নিয়েই তরুণ লেখিকা শাহানাজ মিজান সহজ সাবলীল ভাষায় তার দেখা জীবনকে কিছু শব্দ দিয়ে বুনেছেন এক বিচিত্র মানব জীবন। উপন্যাসে প্রধানত সমাজ জীবন প্রতিফলিত হয়েছে। সমাজের বিভিন্ন চিত্র তুলে ধরার পাশাপাশি সামাজিক সমস্যাসমূহও এতে প্রধান হয়ে…
-
প্রতীক্ষিত বৃষ্টি
প্রতীক্ষিত বৃষ্টি শাহানাজ মিজান আকাশে মেঘ জমতে শুরু করলে ময়ূরী যেমন পেখম মেলে নাচে, মিনুর মনটাও তেমন করে নেচে ওঠে। এক দৌড়ে ছাদে চলে যায়। মেঘকালো লম্বা চুলগুলো বাতাসে উড়তে থাকে। সেই সাথে শাড়ির আঁচল। মিনু আকাশের দিকে তাকিয়ে প্রাণ ভরে নিশ্বাস নেয়। এরপর নাচতে-নাচতে, গাইতে-গাইতে ফুলের টবগুলো এক সাথে করে। বৃষ্টিতে ভিজে, আবার সবকিছু ঠিকঠাক করে রেখে নিজের রুমে আসে। এটা ওর মা একদম পছন্দ করেন না। কিন্তু ওর বাবা মেয়ের এই আনন্দে, নিজে খুব আনন্দিত হন। তাঁদের দুই মেয়ের মধ্যে মিনু বড়। মিনুকে তিনি একটু বেশিই ভালোবাসেন। ছয়তলা বাড়িটা ওদের নিজেদের। মিনু ছাদে হাটতে খুব পছন্দ করে।…
-
বড় বাবা (শেষ পর্ব )
বড় বাবা (শেষ পর্ব ) শাহানাজ মিজান রিফাতের মা বললেন, __না ভাইজান। এই বাড়িতে বউ হয়ে আসা থেকে শুরু করে সন্তানদের বড় হয়ে ওঠা, ওদের ভালো-মন্দ সবকিছু আপনি দেখাশোনা করেছেন। তাই আমি মনে করি শুধু রিফাত নয়, এ বাড়ির সব ছেলে-মেয়েদের সমস্ত ব্যাপারে কথা বলার, তাদের জীবন সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়ার একমাত্র অধিকার আপনার। __না রিফাতের মা। তোমরা শুনলে না, মেঝ কি বলল? __(চোখের পানি মুছে জোরে নিঃশ্বাস নিয়ে) শুনেছি ভাইজান। আমি আমার স্বামীর হয়ে আপনার কাছে ক্ষমা চাইছি। __ভাইজান, কারো অজানা নাই যে আপনি এই সংসারের জন্য, সব ভাই-বোনদের জন্য কি করেছেন। কেউ যদি সেটা অস্বীকার করতে চায় সেটা…