-
পুরাতন বটবৃক্ষ
পুরাতন বটবৃক্ষ শফিক নহোর বড়খাঁপুরের মানুষজন কী বিচিত্র ধরনের! কেউ কেউ বলে, তারা নাকি চুলার ভেতরে ঠ্যাঙ দিয়ে ভাত রান্না করে। অবাক হবার কথা, আমি নিজেও অবাক হলাম! বিষয়টি খুব সহজে নিতে পারিনি প্রথমে। এটাও কি সম্ভব! কী করে মানুষ এমন করতে পারে। কোন আত্মীয়-স্বজন বাড়িতে আসলে, না খাইয়ে দুপুর পর্যন্ত রাখবে। সকালবেলা নদীর ধার দিয়ে হাঁটছি; আশেপাশের লোকজন খোলা মাঠে প্রকৃতির কাজ সেরেছে, চরম দুর্গন্ধ আসতে লাগল মৃদু বাতাসের সঙ্গে। নাকে হাত চেপে দ্রুত স্থান ত্যাগ করতে বাধ্য হলাম। গ্রামের মানুষগুলোর সহজ-সরল সমীকরণ, খেয়ে পড়ে কোনো মত দিন পাড় করতে পারলেই বেঁচে যায়। কে কাকে নিয়ে এত ভাবে…
-
চোখে দেখা নীলকণ্ঠ (শেষ পর্ব)
চোখে দেখা নীলকণ্ঠ (শেষ পর্ব) শফিক নহোর খ. সেলিনা চরিত্রের মানুষটি আমার পাশের বাড়ির। স্বামী সংসার নিয়ে তিনি এখন ঢাকার শহরে থাকেন। রংপুর শহরে তিনি প্রথম যখন বাড়ি করেন; বাবা যে খাটে ঘুমাতো তা নিয়ে যেতে সেলিনা ভাবি যে পরিমাণ কূট কৌশল প্রয়োগ করেছিলেন! আমেরিকা ইরাকে যুদ্ধ করবোর সময় প্রেসিডেন্ট বুশ এমন কূট কৌশল অবলম্বন করেছিল না। বাবা মনে মনে ভীষণ কষ্ট পেয়েছিল। কিন্তু কারো কাছে কখনো মন খুলে কিছু বলেনি। অন্য ছেলের বউ যদি কিছু বলে। বাবা শুধু সন্তানের সুখের জন্য ব্যস্ত ছিল। বউমার কূট কৌশলে পরিবারের সবার কাছে নিজেকে সে এমন একজন খারাপ মানুষ হিসেবে বহিঃপ্রকাশ করেছে;…
-
চোখে দেখা নীলকণ্ঠ (১ম পর্ব)
চোখে দেখা নীলকণ্ঠ (১ম পর্ব) শফিক নহোর ক. আজ থেকে প্রায় সাতাশ-আটাশ বছর আগের ঘটনা। ফাগুনের এক সকালে স্কুলে যাওয়ার পথে দেখলাম, পাঁচজন মানুষ বাঁশের সঙ্গে বেঁধে একটি মরা গরু নিয়ে যাচ্ছে। তা দেখে গফুর ভাইকে প্রশ্ন করলাম। কথা প্রসঙ্গে বিভিন্ন কথা বলল। জানতে পারলাম, ফকির বাড়ির গাভিন গাই মরে গেছে, তা বাড়ির পাশের হালটের দক্ষিণ দিকে চেয়ারম্যানর বাড়ি যাওয়ার পথে যে জঙ্গল সেখানে ফেলে দিতে নিয়ে যাচ্ছে। আমি স্কুল থেকে ফেরার পথে দেখি আকাশ থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে শকুন নেমে পড়ছে। মরা গরু নখ দিয়ে ছিঁড়ে খেতে দেখে আমি অদ্ভুত ভাবে দাঁড়িয়ে রইলাম। শকুন দেখার জন্য আশপাশের গ্রামের লোকজনের…
-
বিষফুল (শেষ পর্ব)
বিষফুল (শেষ পর্ব) শফিক নহোর মুরাদকে যখন সে এত অবিশ্বাস করে, তাকে ডির্ভোস দিয়ে অন্য কোনো ছেলেকে বিয়ে করতে পারত। সোনিয়া তা করেনি কেন? এ প্রশ্নের জবাব মুরাদ জানে না। মুরাদ কি করত, কেন করত? তার সমস্ত জবাব দিতে হত সোনিয়ার নিকট। এটা ছিল মুরাদের সবচেয়ে অপছন্দের বিষয়। এখন তো তাকে এসব প্রশ্নের জবাব দিতে বাধ্য নয় মুরাদ। সে আলাদা থাকছে। তাদের সন্তানকে দেশেরে বাইরে রেখে পড়াশোনা করাতে হচ্ছে। এমন পরিবেশে বাচ্চা মানুষ হবে না ভেবে আগেই পাঠিয়ে দিয়েছিল। এই পরিবেশে থাকলে যা দেখবে তাই শিখবে। তখন বাচ্চাকে দোষ দিলে হবে না। এদিকে সংসার ঝুলে আছে বেগুন গাছে। নিজের দেশে…
-
বিষফুল (১ম পর্ব)
বিষফুল (১ম পর্ব) শফিক নহোর সকালে ঘুম থেকে উঠা নিয়ে শুরু হল সোনিয়ার সঙ্গে বাকবিতণ্ডা। এমন করতে করতে একটা সময় সোনিয়া-মুরাদ দম্পতির ভেতর শুরু হয় জিদ। মুরাদ ঘুম থেকে খাটের উপর উঠে বসল। তারপর পা বাড়িয়ে বারান্দায় গিয়ে একটু দাঁড়িয়ে রইল। ভোরের প্রকৃতির প্রতি তার এক ধরনের নেশা কাজ করে। দাঁড়িয়ে ব্রাশ করতে করতে ওয়াশ রুমে ঢুকে পড়ল। বের হয়ে এসে দেখল, সোনিয়া ঘুমিয়ে আছে। বেড ট্রি তো দূরের কথা সকালের নাশতা পর্যন্ত তৈরি করেনি। এভাবে এক বছর চলতে থাকল। মুরাদ এক প্রকার হাল ছেড়ে দিয়েছিল। নিজের স্ত্রী সন্দেহ করে কেন? এই প্রশ্নটি মুরাদ তার স্ত্রীকে করেছিল। কিন্তু তার…
-
অন্তর্জাল ও মৃত্যু
অন্তর্জাল ও মৃত্যু শফিক নহোর প্রচণ্ড রোদ। মা একাই রন্ধনশালায় কাঠ,গাছের শুকনো পাতা, মাচায় তুলে রাখছে যেন বর্ষা মৌসুমে রান্না করতে অসুবিধা না হয়। আমি এ বছর এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে বাড়ি ফিরে এলাম। আমার বড়ভাই আমার ক্লাসমেট। যদিও আমার এক বছরের বড়। নায়ক আলমগীর ওর খুব প্রিয়। আমাকে বলেছে, সিনেমা দেখে বাড়ি আসবে বন্ধুদের সঙ্গে। মা আমাকে একা দেখেই প্রশ্ন করল, ──ঝন্টু কোথায়? ──মা, ঝন্টু পরে আসবে। আমি একাই চলে এসেছি কাঁথা-কাপড় নিয়ে। মা, শাড়ির আঁচল দিয়ে আমার মুখের ঘাম মুছে দিয়ে বলল, __পড়ের বাড়িতে লজিং থেকে তো একেবারে শুকাইয়া গেছিস। শিগগীর হাত-পা ধুয়ে ঘরে আয়। ভাত খাবি। মায়ের…
-
খোয়াড়
খোয়াড় শফিক নহোর পড়ন্ত বিকেলবেলা বাড়ি থেকে ফুটবল খেলার জন্য বের হচ্ছি। ঠিক সে সময় আকস্মিকভাবে আব্বা আমাকে পিছন থেকে ডাক দিয়ে বলল, ──খোকা, দেখত আমাদের ক্ষেতের আইলে কারো ছাগল বাঁধা আছে কি-না? মানুষের হায়া দিন দিন উঠে যাচ্ছে। আমি বাড়ি থেকে চুন্নি বিড়ালের মত বের হলাম, স্কুল মাঠে ফুটবল খেলতে যাবার জন্য। জমির আইল পাড় হয়ে মনের সুখে রহিম রূপবানের গান ধরলাম। গ্রামের মানুষের তেমন কোন কাজকর্ম নেই, সারাদিন একজনের কথা অন্য জনের কাছে নিন্দা করা ছাড়া। হিন্দু পাড়ায় জমজমাট আড্ডা চলছে। নুদাই সরকারের বউকে ছোট্ট বেলায় বারান্দায় শুয়ায়ে রেখেছিল। তাকে শিয়াল কামড় দিয়ে নিয়ে গিয়েছিল পাশের জঙ্গলে।…
-
অতিথি আসন
অতিথি আসন শফিক নহোর রাইপুর বাসস্ট্যান্ডে আমি দাঁড়িয়ে আছি গাড়ির অপেক্ষায়। চোখের পলকে একটি গাড়ি এসে দাঁড়ালো। পা সামনে বাড়িয়ে দিলাম। তখন একটি অটোরিকশা এসে আমার পথ বাঁধাগ্রস্ত করল। গাড়িটি আর একটু সামনে এগিয়ে গেল। আমি হাত উচিয়ে হেলপারকে ইশারা করলাম। গাড়ি থেমে গেল। গাড়িতে উঠে একটি অষ্টাদশী মেয়ের চোখে আমার চোখ আটকে গেল। নির্লজ্জ বেহায়ার মতো আমি আবারও তার চোখের দিকে তাকালাম। অবশ্য মেয়েটি তার দৃষ্টি ফিরিয়ে নিয়েছিল। মেয়েটির মুখোমুখি ছিটে আমি বসে রইলাম। একটু মাথা উঁচু করে তাকালে সোজাসুজি দৃষ্টি চলে যায় মেয়েটির বক্ষে। গাড়ি দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। আমি মেয়েটার পায়ের দিকে একবার তাকিয়ে দেখলাম এবং…
-
অচেনা
অচেনা শফিক নহোর নীলার সঙ্গে আমার পরিচয় প্রায় তিন মাস। ওর শিশু সুলভ আচরণ আমাকে খুব কাছে টানে কারণে-অকারণে। ও আমাকে ফোন দেয়। আমিও মাঝে মধ্যে ওকে ফোন করি। আমার আর নীলার মধ্যে ভালো বন্ধুত্ব সম্পর্ক গড়ে ওঠে অল্প ক’দিনে। আমি অনেক বার বলেছি, তোমার ফেসবুক আইডি আমাকে দাও। ফেসবুকে আমরা কথা বলি। নীলা আমাকে বলেছে, তার ফেসবুক আইডি নেই। আমি একটা ফেসবুক আইডি তৈরি করে দিতে চেয়েছি; সে আমাকে বলল, ভালো একটা ফোন কিনে নেই তার পর দিও। হঠাৎ করে নীলার ফোন নম্বর বন্ধ। আমি আর নীলার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারিনি। আমি রাজবাড়ি হয়ে গোয়ালন্দ ঘাট পার হয়ে…
-
তৃতীয় সাক্ষী
তৃতীয় সাক্ষী শফিক নহোর মেয়েটি ভর্তি হবার পর থেকে আমাকে নানাভাবে ইশারায় ইঙ্গিত দিয়ে কিছু একটা বলতে চাইত, মেয়েদের প্রতি আমার এক ধরনের ঘৃণা কাজ করে, আমি যখন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ি ঠিক তখন থেকেই। মেয়ে মানুষ খুব সহজে- বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারে। এদের চরিত্র ঠিক পানির মতো যখন যে পাত্রে রাখা যাবে ঠিক সেই আকার ধারণ করবে। ভালবাসা, সহানুভূতি এরা কাজে লাগিয়ে নিজেদের স্বার্থ হাসিল হলে বাকবাকুম তালে নাচে বেহায়ার মতো। কে মরলো কে আঘাত পেল, কে মানসিক ভাবে ভেঙে পড়ল তাতে কী যায় আসে। অনেক কিছু না ভেবেই মেয়েরা-প্রতারণা করে। এদের মায়া মমতা যেমন বেশি পুরুষের তুলনায়, ধোঁকা দেবার…