-
তিনি একজন মহিলা মুক্তিযোদ্ধা (৪র্থ পর্ব)
তিনি একজন মহিলা মুক্তিযোদ্ধা (৪র্থ পর্ব) খলিফা আশরাফ ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ। কাল রাত্রে ঢাকায় হাজার হাজার নিরস্ত্র নিরীহ বাঙ্গালীকে হত্যা করলো বর্বর পাকিস্তানি বাহিনী। নৃশংস হত্যাকান্ড। রাস্তা-ঘাট, অলি-গলি, ঘরে-বাইরে সর্বত্র লাশের স্তুপ। পুড়িয়ে দেয়া হলো ঘর-বাড়ি, দোকান-পাট, অফিস-আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ঢাকা নগরী ভাগাড়ে পরিণত হলো। জীবন বাঁচাতে সব কিছু ফেলে ঊর্ধ্বশ্বাসে মানুষ পালাতে শুরু করলো। কেউ পারলো, আবার কেউবা পালাতে গিয়ে বেঘোরে প্রাণ দিলো। ২৬ মার্চে হাজি সাহেব দোকানও খোলেননি, বাইরেও বের হননি। বংশাল মেইন রোডের সাথেই তিন তলা বিশাল বাড়ি তাঁর। দোকানের ম্যানেজারও তাঁর বাড়িতেই ছিলেন। কিন্তু কেউই বাঁচতে পারেনি। কসাই পাকসেনারা নির্মমভাবে হত্যা করেছিলো পুরো পরিবারকে।…
-
রক্তে জ্বলে একাত্তর (শেষ পর্ব)
রক্তে জ্বলে একাত্তর (শেষ পর্ব) এ কে আজাদ দুলাল হঠাৎ রাশেদ এসে ঢুকে দেখে, তার মা একজন অপরিচিত লোকের সাথে কথা বলছে। ইতোপূর্বে এ ধরনের লোককে এ এলাকায় কখনো নজরে পড়েনি। তার মা-র চোখে চোখ পড়তেই বলল, ── তোমাদের সভার কাজ শুরু করো। এই ভদ্র লোকের সাথে কথা বলে আসছি। একটু সময় লাগবে। রাশেদ কোন কথা না বাড়িয়ে বের হয়ে গেল। পঁত্রিশ বছর পর রাশেদার জীবনে কি ঘটেছিল, সে সব ঘটনা মাহি সুলতানের জানা ছিলো না। দীর্ঘ দশ বছর বিদেশে কাটিয়ে দেশে ফিরে গার্মেন্টস ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে। সময়ের সাথে সাথে ভুলে যায় অতীতের অনেক ঘটনা। একজন মানুষের জীবনে তো…
-
তিনি একজন মহিলা মুক্তিযোদ্ধা (৩য় পর্ব)
তিনি একজন মহিলা মুক্তিযোদ্ধা (৩য় পর্ব) খলিফা আশরাফ একদিন রাতে মধুকে তাঁর ঘরে ডেকে নিয়ে হাজি সাহেব বললেন, “ওই মধু তুই তো বহুতদিন আমার এইহানে কাম করছস। তর মেলা ট্যাকা জইমা গ্যাছে। আমারও বয়স হইচে। কহন কি হয়া যায় কয়া তো যায় না। আমি দেনা রাইখ্যা মরবার পারুম না। তর ট্যাকা তুই হিসাব কইরা লইয়া ল।” মধু কোন কথা না বলে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে। লোকটাকে সে বাবার মতো শ্রদ্ধা করে। এই মানুষটা কখনো মধুকে কর্মচারীর মতো দেখেননি। সন্তান স্নেহেই আগলে রেখেছেন। বিশাল বাড়িতে তাঁর অন্য দুই ছেলের মতো মধুর জন্যেও আলাদা একটা রুম দেয়া হয়েছে। এক সময়ের নিরাশ্রয়…
-
রক্তে জ্বলে একাত্তর (৫ম পর্ব)
রক্তে জ্বলে একাত্তর (৫ম পর্ব) এ কে আজাদ দুলাল রাত নয়টার মধ্যে ভোট গণনা শেষ। সবগুলো নির্বাচনী কেন্দ্রের ভোট যোগফলে রাশেদ বেসরকারি ভাবে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছে। তৃতীয় স্থানে অবস্থান সরকারি দলের প্রার্থী শমসের সুলতান ওরফে শমু সুলতান। স্থানীয় নেতাদের কোন্দলের ফসল। এমপি সাহেব রাশেদকে নীরব সমর্থন দিয়েছেন। রাশেদের পরিবারের সঙ্গে এমপি সাহেবের বাবার ঘনিষ্ট সম্পর্ক ছিলো, এখনো আছে। তাঁরা আজ কেউ জীবিত নেই। কিন্তু রেখে গেছেন সুসন্তান। আগামীকাল নতুন একটা সুর্য উঠবে, নতুন আলো নিয়ে। আর নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান নতুন পথ দেখাবে, এই ইউনিয়নের তরুণ সমাজকে। সকাল নয়টার মধ্যেই রহিম মাস্টার তার স্কুলের উদ্দেশে বের হলেন। তার স্কুল ভোট কেন্দ্র…
-
তিনি একজন মহিলা মুক্তিযোদ্ধা (২য় পর্ব)
তিনি একজন মহিলা মুক্তিযোদ্ধা (২য় পর্ব) খলিফা আশরাফ গরিব মুদি দোকানদার সহ-মুক্তিযোদ্ধা শফি সাহেব, তাঁর ঘরের বারান্দায় থাকতে দিয়েছেন বীর মহিলা মুক্তিযোদ্ধাকে। বাঁশের চাটাই দিয়ে চার পাশটা ঘিরে দিয়ে একটা ঘরের মতো করা হয়েছে। সেখানেই থাকেন তিনি। কোন ভাড়া দিতে হয় না। শুধু তিন বেলা খাবারের জন্যে প্রতি মাসে যা পারেন দেনতিনি। তাও ধরাবাঁধা কিছু নেই। কোন মাসে একেবারেই দিতে পারেন না। আবার কোন মাসে হয়তো প্রয়োজনে মুক্তিযোদ্ধা ভাতার পুরোটাই দিয়ে দেন। এ নিয়ে আশ্রয়দাতার কোন অনুযোগ বা চাহিদা নেই। একজন অসহায় সহ-মুক্তিযোদ্ধাকে যে তিনি সহযোগিতা করতে পারছেন, সেটাই বড় কথা তার কাছে। বরং সবিনয়ে তিনি বলেছেন, “আপা, আমি…
-
রক্তে জ্বলে একাত্তর (৪র্থ পর্ব)
রক্তে জ্বলে একাত্তর (৪র্থ পর্ব) এ কে আজাদ দুলাল রাত আস্তে আস্তে গভীরে তলিয়ে যাচ্ছে আর দুই চেয়ারম্যান প্রার্থী ভোটের শেষ অংক হিসেব কষে চলেছে। খান্দানি সুলতান পরিবার চায় ক্ষমতাসীনদের কাঁধে ভর দিয়ে আবার সমাজে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে। আর অন্য দিকে একজন শিক্ষিত যুবক চায় একজন সৎ নিবেদিত এ প্রজন্মের প্রতিনিধি হয়ে দেশের সঠিক নেতৃত্ব দিতে। মাথায় শত চিন্তা নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে রাশেদ। ভোরে উঠতে হবে। আগামীকালের ভোটযুদ্ধে তাকে জিতে হবে, তবে নির্বাচনের মাধ্যমে। ভোট কারচুপি কাউকে করতে দেয়া হবে না। সকাল ৮টা হতে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ চলবে। সব কেন্দ্রে সাহসী নির্লোভ পুলিং এজেন্ট দেয়া হয়েছে।…
-
তিনি একজন মহিলা মুক্তিযোদ্ধা (১ম পর্ব)
তিনি একজন মহিলা মুক্তিযোদ্ধা (১ম পর্ব) খলিফা আশরাফ বাসে করে মিরপুর যাচ্ছি। প্রচণ্ড ভিড়। সিট ছাড়াও গাদাগাদি করে দাঁড়িয়ে আছে অনেক যাত্রী। কয়েকজন মহিলা যাত্রীও রড ধরে দাঁড়িয়ে আছেন। এমনিতেই তিল ধারনের জায়গা নেই, তারপর আরও যাত্রী তুলতে “মিরপুর-১১/১২, মিরপুর-১১/১২” করে চেঁচাচ্ছে হেল্পার। গরমে অতিষ্ঠ কয়েকজন যাত্রী ক্ষেপে উঠলো, “ঐ মিয়া যাত্রী কি তোমার মাথায় লইবা?” কয়েকজন তো রেগে খুব বিশ্রী ভাষায় গাল দিলো হেল্পারকে। কিন্তু হেল্পার ছেলেটা খুবই বেহায়া টাইপের। ওইসব নোংরা গালটাল গায়ে না মেখে দাঁত কেলিয়ে হাসছে সে। আবার গদগদ বিনয় দেখিয়ে বলছে, “রাগ কইরেন না সাব। একটু পিছায়া খাড়ান, কম কইরা আরও ১০ জন লওন…
-
রক্তে জ্বলে একাত্তর (৩য় পর্ব)
রক্তে জ্বলে একাত্তর (৩য় পর্ব) এ কে আজাদ দুলাল গ্রামের বয়স্ক ছামাদ শেখ এসে শামসুর চায়ের দোকানের সামনে দাঁড়ায়। কেটলির পানি টগবগ করে ফুঁটছে আর ফুঁটুন্ত পানি বাষ্প হয়ে কেটলির নল দিয়ে বের হয়ে, সামনে বসা বাবুল সরদারের মুখে লাগছে। বাবুল সরদারের মনের ভেতরে কেমন যেন তাপ অনুভব করছে। এটা কিসের অনভূতি বুঝে উঠতে পারছে না। ভাবছে আজকের সকালটা কেমন যাবে। ছামাদ শেখ চারদিকে তাকিয়ে বাবুল সরদারের পাশে গিয়ে বসলো। যদিও বাবুল সরদার বয়সে বেশ ছোট। কিন্তু ছেলেটা সব খবর রাখে। ─ বাবুল, বড় সুলতানের মেজ ছেলে নাকি বাড়ি আয়ছে? ─ হ। হুনচি। তাকে তো কোনদিন চামড়ার চোহে দেহিনি।…
-
রক্তে জ্বলে একাত্তর (২য় পর্ব)
রক্তে জ্বলে একাত্তর (২য় পর্ব) এ কে আজাদ দুলাল নির্বাচনী হাওয়ায় মুখরিত এলাকা। নমিনেশন পেয়েছে সরকারি দলের পক্ষে শমসের সুলতান। এ নিয়ে হাওয়ায় ভাসছে নানান গুজব। কেউ বলছে বিশ লক্ষ, আবার কেউ এক ডাকে পঞ্চাশ পর্যন্ত। এ যেন কোরবানি ঈদের গরুর মূল্য। তবে এটা ঠিক টাকার পরিমাণ যাই হোক, শমসের সুলতান মোটা অর্থ খরচ করেছে, তো বটেই। তা না হলে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান সৈয়দ রাশেদ হাসান; সুদর্শন,মার্জিত এবং সুশিক্ষিত; উপজেলা পর্যায়ে সরকারি দলের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক; তাকে নমিনেশন হতে বঞ্চিত করলো। এছাড়াও তিনি একটা বেসরকারি কলেজের শিক্ষক। স্বামী-স্ত্রী দুজনই শিক্ষক। এলাকায় শিক্ষিত পরিবার বলে খ্যাত। বিসিএস পরীক্ষা কৃতকার্য হয়েও,…
-
সে আমার কেউ না
সে আমার কেউ না শফিক নহোর ক. সুমনাকে চুমু দেবার পর, ও আমাকে শয়তান, জানোয়ার, তোর সঙ্গে কোনদিন কথা বলবো না বলে তিরস্কার করতে লাগলো। কথা শেষ না হতেই ওর চোখে জোয়ার ভাটার মত পানি বইতে শুরু করল। একটু ঢং স্বভাবে ওর শরীর ঘেঁসে দাঁড়িয়ে, আহ্লাদ করে ওর ওড়না দিয়ে চোখের জল মুছিয়ে দিতেই তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠলো। তখন বুঝতে পারলাম। সুমনাকে বোঝাতে গেলে বোকা হয়ে যাবো। তার চেয়ে এই মুহূর্তে আমি কোন কথা না বাড়িয়ে সদর দরজা দিয়ে বের হয়ে যাই। বের হতেই মৌ আমাকে দাঁড়াতে বললো। আমি বিদ্যুৎ গতিতে নজর এড়াতে চেষ্টা করলাম। সুমনা এই ক’দিনে আমাকে কল…