-
নিঃশব্দে নীড়ে ফেরা ।। ১০ম পর্ব ।। ধারাবাহিক উপন্যাস ।। এ কে আজাদ দুলাল
নিঃশব্দে নীড়ে ফেরা ।। ১০ম পর্ব এ কে আজাদ দুলাল ক্লান্ত মন ও শরীরে অল্প সময়ের মধ্যে ঘুমিয়ে যায় দু’জন। মাঝ রাতে স্বপ্ন দেখে হঠাৎ ঘুম ভেঙে যায় রাকার। মনিকাকে ডেকে তোলে। মনিকা ভয় পেয়ে যায়। ঘুম ভাঙতেই দেখে রাকা তার বিছানায় বসে আছে। মুখখানি কেমন যেন ফ্যাকাসে দেখাচ্ছে। কাছে গিয়ে জানতে চায় খারাপ কোনো স্বপ্ন দেখেছে কি-না। রাকা কিছু সময় চুপ থেকে স্বপ্নের ঘটনা খুলে বলে। আজ রাতে সেই মহিলাকে স্বপ্নে দেখেছে। পরনে আগের মতো হালকা সবুজ জমিনে খয়েরি রঙের পাড়ের শাড়ি এবং গায়ে খয়েরি রঙের ব্লাউজ। আজকে তার আচরণ ভিন্ন। আজ রাকাকে বুকে টেনে নিয়ে জড়িয়ে ধরে। রাকা…
-
নিঃশব্দে নীড়ে ফেরা ।। ৯ম পর্ব ।। ধারাবাহিক উপন্যাস
নিঃশব্দে নীড়ে ফেরা ।। ৯ম পর্ব এ কে আজাদ দুলাল আজকের বিকেলেটা অন্য রকম। বাড়িটির পশ্চিমে পাকা রাস্তা, তারপর সবুজ ঘন বড়ো বড়ো গাছের সমারোহ। দারুণ লাগছে রাকার। বিকেলের সূর্যটা লাল রঙে রঞ্জিত হয়ে সবুজ ঘন গাছের মধ্যে লুকোচুরি খেলছে। আর মাস্টার বাড়ির পরিবারের সদস্য এবং আগত অতিথি বিশেষ করে রাকার মনের ভেতরে চলছে অজানা স্নায়ুযুদ্ধ। এ যুদ্ধ হয়তো একটা ভাঙা সম্পর্ক নতুন বন্ধনে আবদ্ধ হবে। রাকার মনে প্রশ্ন সে কী সঠিক জায়গায় পা দিয়েছে না-কি আবার অজানা পথে পা বাড়াতে হবে। কিন্তু ভদ্রলোকের চেহারার সাথে বাবার চেহারায় অনেকটাই মিল। যদি তাই হয়, তাহলে এদের মধ্যে কী এমন ঘটেছিল, এতকাল…
-
নিঃশব্দে নীড়ে ফেরা ।। ৮ম পর্ব ।। ধারাবাহিক উপন্যাস ।। এ কে আজাদ দুলাল
নিঃশব্দে নীড়ে ফেরা ।। ৮ম পর্ব এ কে আজাদ দুলাল পরবর্তী স্টেশনে নামতে হবে। রেল স্টেশনটি ছোটো হলেও অনেক পুরাতন। ব্রিটিশ শাসক তাদের সুবিধামতো রেল স্টেশন, পুলিশ ফাঁড়ি নির্মাণ করেছিল। আমাদের বংশপরম্পরা তা ভোগ করে আসছি; অন্তত এই দুটো জায়গায় তাদের স্মরণ করা যায়। স্টেশনটি সে রকম জাঁকজমকপূর্ণ নয়। ব্রিটিশ আমলের জীর্ণশীর্ণ দুটো ভবন দাঁড়িয়ে আছে অতীত স্বাক্ষী হয়ে। পাঁচ মিনিটের মধ্যে ট্রেনটি স্টেশনে থামবে। যাত্রীরা নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তাদের সংখ্যা বেশি নয়। পাঁচ মিনিটের বেশি অপেক্ষা করবে না তাই যাত্রীদের বেশ তাড়াহুড়া। ট্রেন থামতেই লালজামা পরিহিত একজন কুলি এসে মনিকার সামনে দাঁড়ায়। সে যাত্রীদের চেহারা দেখে বুঝতে পেরেছে এই…
-
নিঃশব্দে নীড়ে ফেরা ।। ৭ম পর্ব ।। ধারাবাহিক উপন্যাস ।। এ কে আজাদ দুলাল
নিঃশব্দে নীড়ে ফেরা ।। ৭ম পর্ব এ কে আজাদ দুলাল আরও ঘণ্টা দুই লাগবে স্টেশন পোঁছাতে। গাড়ি যে গতিতে চলছে তাই মনে হলো মনিকার। এত সময় ধরে রাকা তার পৈতৃক ইতিহাস বলল। কিন্তু কেন ফুলঝুড়িতে যাচ্ছে তা জানা হলো না। আবার ডা. মাসুদ সেভাবে কিছু ভেঙে বলেননি। — আচ্ছা রাকা, তুমি যে আমার সঙ্গে ফুলঝুড়িতে যাচ্ছো, কিন্তু কেন? — মনিকাদি, এই ফুলঝুড়ির নামটা তোমার মুখে এই প্রথম শুনতে পেলাম। মাসুদ ভাই এ ব্যাপারে সব জানেন। তবে তোমাকে আরও একটা মজার কাহিনি বলব। — ইদানিং পর পর বেশ ক’টা রাতে একটা স্বপ্ন দেখে যাচ্ছি। সচেতন, অচেতন বা অবচেতনে; তাকে কখনো মনের…
-
নিঃশব্দে নীড়ে ফেরা ।। ৬ষ্ঠ পর্ব ।। ধারাবাহিক উপন্যাস ।। এ কে আজাদ দুলাল
নিঃশব্দে নীড়ে ফেরা ।। ৬ষ্ঠ পর্ব এ কে আজাদ দুলাল রাজশাহী কলেজে ইন্টারমিডিয়েট পড়ার সময় বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র নাজিমকে পেয়েছিল রুমমেট হিসেবে। মেধাবী ছাত্র ছিলেন। ডাক্তারী পড়া তার দৃঢ় ইচ্ছে। হয়েছিল ডাক্তার। ঢাকা মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালে কর্মরত। আর রাকিব আহমেদ ভর্তি হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতিতে। নাজিম ডাক্তারী পড়া শেষ হওয়ার আগেই এক বছর জুনিয়র হবু ডাক্তারকে প্রেম করে বিয়ে করে। এই দম্পতি একমাত্র তার ভরসা। দেরি না করে ছুটে যায় বন্ধু দম্পতির কাছে। বিস্তারিত খুলে বলে। এও বলে ওপরে উঠতে হলে এ যুগে বড়ো কারো সাহায্য প্রয়োজন। মেয়ের পরিবারের সেই যোগ্যসম্পন্ন ব্যক্তি আছেন। বুদ্ধিমান ডা. নাজিমের বুঝতে বাকি রইল…
-
নিঃশব্দে নীড়ে ফেরা ।। ৫ম পর্ব ।। ধারাবাহিক উপন্যাস ।। এ কে আজাদ দুলাল
নিঃশব্দে নীড়ে ফেরা ।। ৫ম পর্ব এ কে আজাদ দুলাল প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে জমে উঠেছে রাজনৈতিক আন্দোলন। শেখ মুজিব সারা বাংলাদেশ চষে বেড়াচ্ছেন। জেল হতে ছাড়া পাচ্ছেন আবার জেলে ঢুকছেন। বাংলার ছাত্রসমাজ আন্দোলনে যোগ দিয়েছে। এর মধ্যে আমলা তৈরি হওয়ার জন্য প্রশিক্ষণে রাকিব আহমেদ পাড়ি জমায় রাওয়ালপিন্ডিতে। যেখানে চৌকস আমলা তৈরি হয়ে থাকে। মন এবং মানসিকতায় জন্ম দেয় এক উচ্চতর জীবনযাপনের। আর হয়ে উঠে প্রশাসক। যাওয়ার আগে বাবা-মা এবং ভাই-বোনের সাথে দেখা করে যায় রাকিব আহমেদ সিএসপি। প্রায় এক বছর পর প্রশিক্ষণ শেষ করে ঢাকায় পোস্টিং হয় রাকিব আহমেদের। বাপের তৈরি জীর্ণকুঠিরে মাত্র দুটো রাত কাটিয়েছিল সে।…
-
নিঃশব্দে নীড়ে ফেরা ।। ৪র্থ পর্ব ।। ধারাবাহিক উপন্যাস ।। এ কে আজাদ দুলাল
নিঃশব্দে নীড়ে ফেরা ।। ৪র্থ পর্ব এ কে আজাদ দুলাল রাকার দাদা ছিলেন একজন কৃষক পরিবারের সন্তান। মাত্র তিন বছর বয়সে মাকে হারিয়ে এতিম হয়ে যান শিশু আলা উদ্দিন। সবাই আলা বলে ডাকত। শিশু আলাকে কোলে তুলে নেন তার বাবার খালাতো বোন। আলার বাবার বয়স কম তাই পুনরায় দ্বিতীয়বার বিয়ে করে সংসারী হয়েছিল। বাবার সংসার হতে আস্তে আস্তে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ফুফার অবস্থা সে রকম ভালো নয়। ফুফাতো ভাইদের সাথে ভর্তি হয় মক্তবে। তখনকার দিনে প্রাইমারি স্কুলের সংখ্যা ছিল নগন্য। গ্রামেই মক্তব। সেখানে আরবি, বাংলা এবং ইংরেজি শিক্ষা দেওয়া হতো। ফুফাতো ভাইদের চেয়ে আলা ছাত্র হিসেবে মেধাবী ছিলেন। ফুফার নেক…
-
নিঃশব্দে নীড়ে ফেরা ।। ৩য় পর্ব।। ধারাবাহিক উপন্যাস ।। এ কে আজাদ দুলাল
নিঃশব্দে নীড়ে ফেরা ।। ৩য় পর্ব এ কে আজাদ দুলাল মনিকা চাকমা রাঙামাটি পাহাড়ি এলাকার এক নিম্নবিত্ত পরিবারের মেয়ে। দু’ভাই বোনের সংসার তাদের বাবা-মায়ের। মনিকা বড়ো। পরিবারের মোট চার জন সদস্য আর আছে একটা গোরু-ছাগল এবং সব সময়ের সাথি বিশ্বস্ত টমি নামের কুকুর। বাবা মাইল তিনেক দূরে একটা কারখানার শ্রমিক। সেই সকালে কারখানায় যেত আর ফিরত রাত করে। রাতে খাবারের পর ঘুমিয়ে পড়ত, দেখা হতো না বাবার সাথে। সকালে ঘুম ভাঙার আগেই বাবা কাজে চলে যেত। সারাদিন মন খারাপ করে টমি আর দুটো বোবা জন্তু নিয়ে তাদের দিন কেটে যেত। শুধু সাপ্তাহিক একদিন ছুটি ছিল; তাদের আনন্দের পরিপূর্ণ দিন। সারাদিন…
-
নিঃশব্দে নীড়ে ফেরা ।। ২য় পর্ব।। ধারাবাহিক উপন্যাস ।। এ কে আজাদ দুলাল
নিঃশব্দে নীড়ে ফেরা ।। ২য় পর্ব এ কে আজাদ দুলাল মেয়েকে বিদায় দিয়ে ঘরে ঢোকেন রাকিব আহমেদ। এর আগে এভাবে কখন একাকী ঢাকার রাইরে যায়নি রাকা। একটা অশান্তি বয়ে বেড়াচ্ছে মনের ভেতরে। মনে মনে মেয়ের মঙ্গল কামনা করেন। পনের মিনিটের মধ্যে রেলস্টেশনে পোঁছে যায় রাকা। সকালে যানজট কম থাকে। বারিধারা হতে রেল স্টেশন বেশি দূরে নয়। গাড়ি হতে নেমেই দেখা হয়ে যায় মনিকার সাথে। একজন কুলি আগেই ঠিক করে অপেক্ষা করছিল মনিকা। কুলি তাদের লাগেজ মাথায় আর হাতে নিয়ে আগে হাঁটতে থাকে। তারা দুজন পিছনে হাঁটছে। রেল স্টেশন রাকার কাছে অদ্ভুত লাগছে। বিভিন্ন ধরনের মানুষের আনাগোনা। অপরিষ্কার, অপরিচ্ছন্ন এবং অস্বাস্থ্যকর…
-
নিঃশব্দে নীড়ে ফেরা ।। ১ম পর্ব।। ধারাবাহিক উপন্যাস ।। এ কে আজাদ দুলাল
নিঃশব্দে নীড়ে ফেরা ।। ১ম পর্ব এ কে আজাদ দুলাল প্রবল আপত্তির মুখে শেষ পর্যন্ত বাবার কথা রাখতে হলো রাকার। এককালের জাঁদরেল সিএসপি কর্মকর্তা রাকিব আহমেদ রাকার বাবা। চলনে, কথাবারতায় ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী। বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে রের্কড নম্বর পেয়ে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকারী তিনি। কিছু দিন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছিলেন। শিক্ষকতা জীবনে বৈচিত্র্য আনতে পারেননি এই তুখোড় মেধারী রাকিব আহমেদ। স্বপ্নের জাল বঙ্গোপসাগরের ধুঁ ধুঁ দৃষ্টির বাইরে। সিনিয়র বড়ো ভাইদের সরকারি চাকরিতে প্রশাসনিক ক্ষমতার কথা শুনে নিজের ভেতরে নতুন স্বপ্ন জেগে ওঠে। তার চাই উপরে ওঠা আর ক্ষমতা। বলতে গেলে এই বয়সে তাকে ক্ষমতার মোহ পেয়ে বসেছিল। সারা পাকিস্তানে সুপিরিয়র সার্ভিস প্রতিযোগিতা…