নিশুতি রাতের সনদ, রাতের ভূচিত্র
নিশুতি রাতের সনদ
মধ্যরাতে মুখোশ পরা কজন লোক-
একটা ডেডবডি এনে বলল,
‘ডাক্তারবাবু, লিখে দিন মেয়েটা সুইসাইড করেছে’।
না লিখলে –
কাল খবরের কাগজের শিরোনাম হবেন,
‘আততায়ীর হাতে একজন চিকিৎসকের মৃত্যু’
লিখে দিন!
বিষাদ চোখে তাকালাম –
মৃত মেয়েটির দিকে,
জ্যোৎস্নায় ভরে গেল ঘর
ভেসে গেল বুক বানভাসা জলের তোড়ে,
আমার আকাশে কাজল মেঘ!
লিখে দিলাম,
যেভাবে লেখা হয় ভেজা শালিকের গল্প
যেভাবে লেখা হয় কাতর প্রেমের কবিতা
যেভাবে কফিনে পেরেক পুঁতি আমরা
যেভাবে দেয়ালে তৈরি করি ক্ষত,
যেভাবে নাজারেথের যিশুকে ক্রুশবিদ্ধ করব বলে-
তৈরি করি ইতিহাস,
যেভাবে অসমাপ্ত কবিতার সামনে দাঁড়িয়ে বিলাপ করেন কবি,
সেভাবে লিখে দিলাম একটা মৃত্যুর সনদ!
জানি আমি,
প্রতিটা হত্যাই এক একটা সুইসাইড
প্রতিটা সুইসাইড এক একটা খুন!
আমি তাই লিখে দিলাম –
‘ফুলেরা ঝরে যায় ঠিকই, পাপড়িও খসে পড়ে
সুবাস ছড়ায় তবুও’;
লিখে দিলাম,
‘এক একটা মৃত্যু মানে স্বপ্নের উড়ালযাত্রা
এক একটা মৃত্যু মানে সন্তাপের আগুন
এক একটা মৃত্যু মানে পত্রমোচী বৃক্ষের কান্না’।
আমি তাই লিখে দিলাম—
একটা প্রপঞ্চিত মৃত্যু সনদ
একটা আত্মবিনাশী ইতিহাস।
আরও পড়ুন আবু জাফর খানের কবিতা-
মরুমন
ব্যবধান
পদ শব্দ মিলিয়ে যায়
রাতের ভূচিত্র
অন্ধকার কাটা পড়ে –
বেপরোয়া ট্রেনের চাকায়,
যেমন দুরন্ত সঙ্গমে টুকরো হয়-
প্রিয় রমণীর সমূহ বাসনা,
আমরা ভালোবেসে ভালোবাসা-
এমনকি অঙ্কের পাঠও শিখিনি, না শিখেছি গাণিতিক হিসাব;
হিসাবে বড্ড কাঁচা বোকা পুরুষেরা
আমরা ধর্ষক হয়ে উঠি তমসিত রাতের অরণ্যে
কদর্য কন্দর আমাদের ঠিকানা;
কী করে বাজবে কৃষ্ণের বাঁশি!
কী করে ঘর হবে নন্দিন আবাস!
কিছু মানুষের ঘুমের শব্দ –
স্টেশনের চা-ওয়ালার নাম
ওপরে ঝোলানো ফ্যানের ব্লেডে-
কেটে টুকরো হয় স্থির অন্ধকারে,
তেমনই অনাদরে রমণীর প্রেম-অশনা ভেঙে খানখান
হয়ে যায় সঙ্গ-আকাঙ্ক্ষা!
পুরুষ,
আমি সেইসব কাচের গুঁড়ো, টুকরো হয়ে যাওয়া-
রতির বাসনা, খানখান আঁধারের কাতর মিনতি
রেখে দেবো বলে জেগে আছি স্টেশনের
অন্ধকার বিছানায়,
গৃহহীন জোনাকির মতো!
একটি নন্দিত মিলনের আকাঙ্ক্ষায়
অমি তাই সফুরার ঠিকানা বদলাই রাতের ভূচিত্রে।
আরও পড়ুন কবিতা-
অগ্নিশ্বর
প্রেমের পদ্য
তুমি যদি আমায় ভালোবাস
ঘুরে আসুন আমাদের অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেল ও ফেসবুক পেইজে
নিশুতি রাতের সনদ