-
সোনালী (শেষ পর্ব)
সোনালী (শেষ পর্ব) এ কে আজাদ দুলাল শুধুই ভাবছি এই সমাজের একজন নাগরিক হয়ে সমাজের কোন খবরই আমরা রাখি না। কত অসহায় মানুষ অভাবে-অনটনে অসামাজিক কাছে লিপ্ত হচ্ছে। আবার জীবনও হারাচ্ছে। হিজড়ে হয়ে জন্মগ্রহণ করার অপরাধে পরিবার তথা সমাজ তাকে ত্যাগ করছে। জীবনে নেমে এসেছে অন্ধকার। এ কি রকম সমাজে বসবাস করছি আমরা। অথচ আমরা নাকি সভ্য মানবজাতি। এই যে সোনালীদের প্রতি আমার বা আমাদের সমাজের অনেকেই নিচু মনোভাব। কবে শেষ হবে? -সোনালী, আপনার জীবনের করুণ কাহিনী আমাকে কেন বললেন? -আমার মনে হয়েছে, আজ এমন একজন মানুষ পেয়েছি, জীবনের কথাগুলো বলে যাই। সময় তো শেষ হয়ে যাচ্ছে। -মানে? প্রশ্ন…
-
সোনালী (৫ম পর্ব)
সোনালী (৫ম পর্ব) এ কে আজাদ দুলাল মাঘের শীত। রাত বারোটার পর ভদ্র লোকেরা বাড়ীর বাইরে বের হয় না। কিন্তু যারা নিশাচর আর জাঁকজমক জীবনে অভ্যস্ত তারা ছুটে যায় দামী কোন বুনিয়াদী বাড়ীর ড্রয়িং রুমে। তাদের জন্য অপেক্ষায় থাকে মোক্ষীরানী। সেই মাঘের রাতে কনকন শীতে সোনালী হাতে তুলে দেয়া হলো একটি সাধারণ ভ্যানিটিব্যাগ। সেই ব্যাগে ছিল মোটা অংকের মাদকদ্রব্য যা আমার পক্ষে জানার কথা নয়। কারণ ভ্যানিটিব্যাগটি বিশেষ কায়দা বন্ধ করে দেয়া হতো। এবার আমি সাধারণ যাত্রী। কোনো গার্মেন্টস ফ্যাক্টরীতে কাজ শেষে বাড়ী ফিরছি। সাধারণ বাসে চড়তে হবে। সেইভাবে আজকের পোশাক পরিধান করেছি। কোথায় নামব তা গাড়ীতে উঠার সময়…
-
সোনালী (৪র্থ পর্ব)
সোনালী (৪র্থ পর্ব) এ কে আজাদ দুলাল অনেক দিন কেটে গেছে হিজড়া পরিবারের সাথে। সুখ-দুঃখ মিলে একাকার হয়ে গেছে। বয়স বিশ পার হয়ে গেছে কখন, জানি না। কিন্তু একটা জিনিস মনের ভেতর উপলব্ধি হতো। শরীরে যৌন আকাঙ্খা বলে কিছু আছে। কিন্তু প্রকাশ করা মানেই সবার কাছে উপহাসের পাত্র হওয়া। মনের ভেতর তুষের অনল জ্বলে আবার ধপ করে নিভে যেতো। দিন বেশ কেটে যাচ্ছিল। হঠাৎ একদিন রাতে আঁধারে পাঁচ হাজার টাকায় বিক্রি হয়ে গেলাম নিষিদ্ধ পল্লীতে। এখানেও তাকে নিয়ে হিজড়াদের সর্দারনী ছলচাতুরী করতে ছাড়ে নি। এবার নিকৃষ্টতম নরকে স্থান হলো আমার। মৃত্যুর পর পাপীষ্ঠ লোকদের নরকে জায়গা হবে শুনেছি। সে…
-
সোনালী (৩য় পর্ব)
সোনালী (৩য় পর্ব) এ কে আজাদ দুলাল সোনালী কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো। কি বলে শান্ত্বনা দেব বুঝে উঠতে পারছি না। আবার চোখ মুছে বললো। -মুহুর্তের মধ্যে উঠে দাঁড়িয়ে আমার মুখের ওপর একগাল থুথু দিয়ে বলে গেল। -কি বলে গেল? জানতে চাইলাম। -স্যার, আমি নাকি হিজড়া। কথাটা শুনে আমার মাথায় যেন বাজ পরলো। -শুধু এখানেই শেষ নয়। শাসিয়ে গেল, মাকে বললে সকালে সারা গ্রামে প্রচার করে দিবে সোনালী হিজড়া। -বলেন কি? আরও পড়ুন গল্প কাঠগোলাপ ও প্রেম ঠিক তাই। কিন্তু সকালে যাওয়ার আগে মাকে সব বলে গিয়েছিল। আর সে দিন হতে আমার কপাল ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেল। পৃথিবী আমার কাছে অচেনা…
-
সোনালী (২য় পর্ব)
সোনালী (২য় পর্ব) এ কে আজাদ দুলাল মেয়েটির নাম সোনালী। সে পদ্মা নদীর দক্ষিণ পাড়ের মেয়ে। বিশ-ত্রিশ খানা বাড়ী নিয়ে ছোট গ্রাম। পদ্মার ভাঙ্গনে ঝড়-বৃষ্টি আর নিত্যদিনের দূর্যোগ মাথায় নিয়ে জীবন যাপন করে এই পদ্মাপাড়ের গরীব অসহায় মানুষগুলো। এলাকার অবস্থাসম্পন্ন কৃষকের বাড়ীতে এই দরিদ্র পুরুষ-মহিলারা কাজ করে। এটাই তাদের একমাত্র জীবিকা। মাঝে-মধ্যে যৎসামন্য সরকারি ত্রাণ পেয়ে থাকে। অতি কষ্টে দিন অতিবাহিত করে এই পদ্মাপাড়ের লোকজন। আর সোনালী সেই অতি দরিদ্র পরিবারের মেয়ে। তিন বোন-ভাই নিয়ে তাদের অভাবী সংসার। বাবা আর বড় ভাই অন্যের বাড়ীতে কাজ করে। মা সংসারের যাবতীয় কাজকর্ম করে। সোনালী পাড়ার সমবয়সী ছেলে-মেয়েদের নিয়ে সারাদিন হইহুল্লা করে…
-
সোনালী (১ম পর্ব)
সোনালী (১ম পর্ব) এ কে আজাদ দুলাল সকালের নাস্তা শেষ করে ভাবছি কি করা যায়। আজকের কাগজে সে রকম কোন গুরুত্বপূর্ণ খবর বা প্রবন্ধ ছাপা হয়নি যে তা পড়ে সকালটা কাটানো যায়। হঠাৎ মনে পরে গেল গত ঈদে দুটো ফুলপ্যান্ট বকশিস পেয়েছিলাম। কিন্তু তা ব্যবহার করার সুযোগ হয়ে উঠে নি। দুটো কারণে তা ব্যবহার করার সুযোগ হয়নি। প্রথম প্রধান কারণ কোভিড-১৯ আর অন্য কারণ প্যান্ট দুটো লম্বা। এখন অতটা কড়াকড়ি নেই। বাইরে সবাই যাচ্ছে, ঘুরে বেড়াচ্ছে। লোকজন আর ঘরের চার দেয়ালে বসে নেই। বাধা বয়স্ক লোকজনকে নিয়ে। তবে সকাল-বিকালে হাঁটাহাঁটিতে নিষেধ নেই। শরীরটাকে সতেজ রাখতে হবে এবং বিনা টাকায়…