-
সম্রাট জাহাঙ্গীরের স্বর্ণমুদ্রা (শেষ পর্ব)
সম্রাট জাহাঙ্গীরের স্বর্ণমুদ্রা (শেষ পর্ব) সাইফুর রহমান জনবহুল এই ঢাকা শহরটিতে নিতাইয়ের আসা হয় বছরে কদাচিৎ। দূষিত বায়ু কিংবা পিঁপড়ার মতো ভিড় সমৃদ্ধ এই শহরটিতে দু’একবেলা যাপন করতেই হাঁপিয়ে ওঠে। মনটি তার ছটফট করতে থাকে কখন তিনি ফিরে যাবে গ্রামে। অনেক গলিঘুঁজি হাতড়ে পূর্ব শাহজাহানপুরে তেষট্টি নম্বর বাড়িটি অবশেষে খুঁজে পেল নিতাই। কড়া নাড়তেই পাতলা ছিপছিপে গড়নের মাঝ বয়সী একজন লোক দরজা খুলে নিতাইকে জিজ্ঞেস করল- -কাকে চাই? -স্যার কি আছেন নাহি ভিতরে? -আপনি কি আবু শামস স্যারের কাছে এসেছেন? -জী, উনাক কন, পাবনার গোলাম রসুল সাহেব আমাক পাঠায়ছেন। একটা জরুরী বিষয়ে উনার সাতে কতা কইবের চাই। লোকটি দরজাটা…
-
সম্রাট জাহাঙ্গীরের স্বর্ণমুদ্রা (৫ম পর্ব)
সম্রাট জাহাঙ্গীরের স্বর্ণমুদ্রা (৫ম পর্ব) সাইফুর রহমান একটু আগেও সূর্যটা ছিল মাঝ আকাশে। হঠাৎ পুঞ্জ পুঞ্জ মেঘ এসে ঢেকে দিল সেটাকে। ঠিক সেভাবে সব দুঃখ-কষ্টগুলো জমা হতে লাগল গোলাপের মনে। কী করবে সে এখন? মাথা কুণ্ডয়ন ছাড়া আর কি উপায়? এতগুলো টাকা বেহাত হয়ে গেল উপস্থিত জোচ্চুরি ও প্রতারণায়। প্যান্টের ডান পকেটে হাত ঢুকাল সে, দুই তিন হাজারের মতো টাকা ছিল পকেটে, সেগুলোরও কোনো হদিস মিলল না। শুধু সস্তা দামের মোবাইলটি খুঁজে পাওয়া গেল বাম পকেটে। গতকালই তার বউ জুলেখা ও দুই কন্যা জুঁই, চামেলীর সঙ্গে কথা হয়েছে মোবাইলে। ছোট মেয়ে চামেলী কত আহ্লাদ করে তাকে বলছিল- বাবা আমার…
-
সম্রাট জাহাঙ্গীরের স্বর্ণমুদ্রা (৪র্থ পর্ব)
সম্রাট জাহাঙ্গীরের স্বর্ণমুদ্রা (৪র্থ পর্ব) সাইফুর রহমান রাজ্যের জ্যাম ঠেলে গাবতলি থেকে পরীবাগ পৌছতে বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে এল। জাকির তালুকদারের দামি প্রাইভেটকার থেকে গোলাপ নেমে একটি বাড়ির সামনে এসে দাঁড়াল। প্রাসাদোপম বাড়িটি দেখে গোলাপের মনে হলো মানুষটি সত্যি বিশটি গরু কেনার মতো যোগ্য লোকই বটে। সিঁড়ি ভেঙে দোতলার কলিংবেলটি টিপতেই একজন অপরূপ সুন্দরী রমণী দরজাটি খুলে দিল। মেয়েটির চোখের প্রশ্নের উত্তরে জাকির তালুকদার বলল, ওহ, ইনি হলো গরুর ব্যাপারি। নাম গোলাপ, যার কাছ থেকে আজ এতগুলো গরু কেনা হল। গোলাপের দিকে তাকিয়ে জাকির তালুকদার মৃদু হেসে বলল, ইনি হলেন আমার স্ত্রী সাবিত্রী। সাবিত্রী…? এ আবার কি ধরনের নাম…
-
সম্রাট জাহাঙ্গীরের স্বর্ণমুদ্রা (৩য় পর্ব)
সম্রাট জাহাঙ্গীরের স্বর্ণমুদ্রা (৩য় পর্ব) সাইফুর রহমান আশ্বিনে গা করে শিন শিন। এই কথাটি সুজানগর তথা চরগোবিন্দপুর গ্রামে কে প্রথম রটিয়েছিল সেটি গোলাপের জানা নেই। তবে এটা যে সর্বৈব মিথ্যা একটি প্রবাদ সেটি সে আজ হারে হারে টের পাচ্ছে। আশ্বিনের দ্বিতীয় সপ্তাহেও দিনের প্রথম প্রহরে সূর্যের প্রখর উত্তাপে জীবন বেরিয়ে যাওয়ার জোগাড় হয়েছে গোলাপের। নিতাইয়ের গরুগুলো ঢাকার গাবতলির হাটে নিয়ে যাওয়ার জন্য দুটি ট্রাক ভাড়া করেছে সে। একেকটি ট্রাকে তোলা হয়েছে দশটি করে গরু। চারদিন বাদেই ঈদ-উল-আজহা। সে জন্য কোরবানির হাটও বসবে আগামীকাল থেকেই। গোলাপ বিচার বিবেচনা করে গরুগুলো নিয়ে একটু আগেই চলে এসেছে। যাতে বিক্রি বাটা সেরে আগেভাগেই…
-
সম্রাট জাহাঙ্গীরের স্বর্ণমুদ্রা (২য় পর্ব)
সম্রাট জাহাঙ্গীরের স্বর্ণমুদ্রা (২য় পর্ব) সাইফুর রহমান নিতাইকুন্ডের গরুর খামারটিকে সুজানগর উপজেলার স্থানীয় বাসিন্দারা একটি আদর্শ খামার হিসেবেই বিবেচনা করে। তাদের এই বিবেচনাটি আদতে মিথ্যা নয়। নিতাই দীর্ঘ দশ বছর ধরে সততা ও একাগ্রতা দিয়ে তিলে তিলে গড়ে তুলেছে তার এই খামারটি। বেশিরভাগ পশুর দেখভাল সে নিজেই করে। নিজ হাতে গরুর শরীর থেকে উকুন, আঠালি কিংবা সিঁদুর পোকা ও অন্যান্য পরজীবীগুলোকে অপসৃত করে। খামারের প্রতিটি গরুই অকৃত্রিম ও নির্ভেজাল। ব্যবসায়ী হিসেবে সে কখনও অসাধু পন্থা কিংবা প্রতারণার আশ্রয় নেয়নি। এটি মনে হলে মাঝে মাঝে তার বেশ গর্বই অনুভব হয়। সেই জন্য একজন সৎ খামারি হিসেবে সে অত্র অঞ্চলটিতে বিশেষ…
-
সম্রাট জাহাঙ্গীরের স্বর্ণমুদ্রা (১ম পর্ব)
সম্রাট জাহাঙ্গীরের স্বর্ণমুদ্রা (১ম পর্ব) সাইফুর রহমান সাইকেলের বাঁ হাতলটিতে কিছুতেই হাতের মুঠোটি স্বস্থানে রাখতে পারছে না নিতাই। পিছলে যাচ্ছে শুধু বারবার। ভাদ্র মাসের ভ্যাপসা গরমে হাত দুটো ঘেমে একেবারে প্যাঁচ প্যাঁচে অবস্থা। শুধু হাত হবে কেন? এমন প্রচণ্ড গরমে পুরো শরীরটিই যেন ঘেমে নেয়ে একেবারে একাকার, সে এক বিশ্রী অবস্থা। সাইকেল নামক এই শকটটি যদিও বা একটু জোরে চালানো যেত তবুও না হয় কথা ছিল। নিদেনপক্ষে গরমের হাত থেকে কিছুটা হলেও স্বস্তি পাওয়া যেত। কিন্তু সেই উপায়ই বা কোথায়? চরগোবিন্দপুর গ্রামের এই রাস্তাটি বড্ড দূর্গম ও এবড়ো-থেবড়ো। সাইকেলটি খুব সাবধানে ও ধীরে সুস্থে চালাতে হচ্ছে বলেই শরীরে গরমের…