-
পরাজিত নাবিক
পরাজিত নাবিক রাতুল হাসান জয় বিকেলের রোদে কদম গাছের ছায়া পড়েছে পানিতে। বাতাসের ধাক্কায় মৃদ্যু ঢেউ খেলছে পুকুরের পানি। একটা বড় কাতল মাছ হা করে ভেসে উঠছে কিছুক্ষণ পরপর। এরপর গপাগপ পানি গিলে ডুবে যাচ্ছে অতলে। যেভাবে ভাগ্য আমার জীবন গিলে ডুবে গেছে সময়ের পেটে। কদম গাছের ডালে বসা মাছরাঙাটা এরই মাঝে বেশ কয়েকবার হামলে পরেছে পানিতে। কি দেখে হামলে পরছে ঠাহর করতে পারছি না। একবারও তার ঠোঁটে মাছ চোখে পরেনি। আমারই মতো ব্যর্থ। পঁয়তাল্লিশ বছরেও সফলতার মুখ দেখলাম না। চাকরিতে ব্যর্থ। ব্যবসাতেও গাঁট জমাতে পারিনি। চেষ্টার কমতি রাখিনি। চেষ্টায় চেষ্টায় সন্তানদের জীবন এনে দাঁড় করিয়েছি খাঁদের কিনারে। দেনার…
-
শরৎ
শরৎ রাতুল হাসান জয় ঋতুচক্রে পা মিলিয়েই শরৎ এসেছে ফিরে। শুভ্র মেঘের জালে আকাশ রেখেছে ঘিরে। মৃত্তিকায় নতুন ভ্রূণের ঘ্রাণে পদ্ম ফোটে কৃষাণির প্রাণে নতুন নতুন স্বপ্ন সাজে ছাউনি ভাঙ্গা নীড়ে। মিষ্টি মেয়ে শরৎ রানী, মিষ্টি যে তার মন। মিষ্টি সাজে রাঙে সে, তার সৌন্দর্য ভীষণ। শিউলি ফুলে কাব্য সাজে শেফালিতে শরৎ নাচে। মন ছুঁয়ে যায় প্রজাপতির দুষ্ট মিষ্টি নাচন। নীল এর বুকে মেঘ-বালিকার শান্ত ভেসে চলা কাশবনেতে সাদা শাড়ী, শিউলি ভরা ডালা। রাত্রি বেলা বকুল সুবাস শরতের প্রণয় আভাস। কাশবনেতে মন ডুবিয়ে কাব্যিক কথা বলা। শীতল হাওয়ায় বৃষ্টি হঠাৎ লাগে যে মধুর ভোরের শিশিরে মুক্ত ছড়ায় প্রথম রোদ্দুর।…
-
জীবনের উপহাস (শেষ পর্ব)
জীবনের উপহাস (শেষ পর্ব) রাতুল হাসান জয় আজ কেন যেন এতদিন পর চিঠিটা পড়ে ভেতরে ভেতরে এক রকম মরে যাচ্ছি। বুকের ভেতরটা ভিজে উঠছে একদম। আমার হাত কাঁপছে। হাতে থাকা চিঠিটার ওপর কখন যে চোখ বেয়ে কিছু হাহাকার গড়িয়ে পড়ে ভিজে গেছে চিঠিটা, টেরই পাইনি। চাকরির বাজারের এই দূর্মূল্যের দিনে একটা বেসরকারি চাকরি জুটেছিল। কোম্পানির দূর্নীতির ফলে লসের খাতায় নাম লিখিয়ে কোম্পানি ছাটাই করে আমার কতো অনেক চাকুরের। এরপর সহজে চাকরি জোটে না। সরকারি চাকরি তো অমাবস্যার চাঁদ। বাধ্য হয়েই টিউশনি করাচ্ছি একটা, মেয়েটার নাম আয়েশা। সামনেই ইন্টার পরিক্ষা তার… আর্শির মাস্টারদা আজ হঠাৎই চিঠির উত্তর লিখতে বসেছিলো। লিখেছিলো…
-
কাঁচা আমের যাদুর খেলা, মায়ের আদর, পুতুল বিয়ে
কাঁচা আমের যাদুর খেলা ~ রাতুল হাসান জয় একটা ছড়া লিখবো বলে কলম নিতেই হাতে, খোকন এসে কান্না ধরে করছে ব্যথা দাঁতে। ক’দিন হলো দাঁত নড়েছে নেয়না কিছু পাতে, নামতা পড়া আটকে আছে সাত এক্কে সাতে। কি করা যায় মস্ত বিপদ কান্না লাগে আঁতে, হঠাৎ করেই পড়লো মনে আম এনেছি রাতে। কাঁচা আমের যাদুর খেলা তুলে দিতেই মুখে ফোকলা দাঁতে বললো খোকন আমটা ভীষণ চুকে। মায়ের আদর দোলনা মাঝে কাগজ ফুল ঘূর্ণি ঘোড়া ঘুরছে বেশ, ঝুনঝুনিটা হাতের পাশে খোকার তবু নেই আয়েশ। দিদির কোলে যাচ্ছে না সে খাচ্ছে না তো দুধ পানি, দাদি এসেই গল্প বলে এক যে…
-
সময়ের পাচঁফোড়ন
সময়ের পাচঁফোড়ন রাতুল হাসান জয় ঘুটঘুটে অন্ধকার। কিন্তু অন্ধকারেও আয়েরা দুটো চোখ দেখতে পাচ্ছে স্পষ্ট। শক্ত করে সে দু চোখের মালিক তার চুল আর গলা চেপে ধরেছে। আয়েরা চিৎকার করতে চাইছে, কিন্তু চিৎকারের চেষ্টা এখানে ধোপে টিকবে না। ভয় যেন তার কন্ঠ শীতল করে দিয়েছে। ভয়ংকর দু চোখের এক আগন্তুক এ ভয়ের কারণ। চোখের সামনে চিৎকার করে কান্নার কারণ থাকলেও আয়েরা যেন নিথর এক বোবা চরিত্র হয়ে দরজার সাথে লেপ্টে আছে। ষোলশহর স্টেশন, রাত সাড়ে আটটা। রাস্তার পাশে ফেলে রাখা পিলারের স্তুপে বসে আছে দুজন। কিছুক্ষণ আগেই হর্ণ দিয়ে চবি’র উদ্দেশ্যে রওয়ানা করেছে শাটল ট্রেন। স্টেশন প্রায় ফাঁকা হয়ে এসেছে।…
-
পাথরে ফুল
পাথরে ফুল রাতুন হাসান জয় – বুঝলেন মতিন মিয়া মধ্যবিত্তের স্বপ্ন হলো আপনার ওই থালায় রাখা বায়েম মাছের মতো। হাতের নিচেই আছে অথচ খালি হাতে ধরে রাখতে পারছেন না। ছাই লাগিয়ে ধরে রাখতে পারছেন। আপনি কি বুঝতে পারছেন ছাইয়ের ব্যাপার টা? – জ্বী পারছি। টাকা। – টাকার অভাবেই আলোর মুখ দেখছে না স্বপ্ন। কাঁটাতারে হঠাৎ আটকে যাওয়া টুকরো কাপড়ের মতো অবস্থায় আছি। ঝড়ো হাওয়ায় উড়ে যাবো যাবো করেও থেকে যাচ্ছি। – আপনার কঠিন কথা বুঝতে কষ্ট হয় সবুজ ভাই। তবে অবস্থা বুঝতে পারি। মাছ দেবো? – দেন, এক কেজি। মতিন মিয়ার কাছ থেকে বায়েম মাছ নিয়ে বাসার দিকে হাঁটা…