-
এখন এখানে আমি, স্বদেশ
এখন এখানে আমি বিমল কুণ্ডু আমাকে আমি চিনতে পারি যখন প্রচণ্ড যন্ত্রণায় জর্জরিত হই। আমাকে আমি বুঝতে পারি যখন প্রিয়জন আমাকে কষ্ট দেয় আমাকে আমি জানতে পারি যখন গভীর রাতে ঘুম ভেঙে যায় রাতের নিঃসিম আঁধার ভেদ করে আকাশের তারাগুলি চাদর বিছানো পটের মতন চোখের আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে জন্মের ইতিহাস বলে যায়। প্রকৃতির একটানা নিরবতায়, হঠাৎ পেঁচার ডাক অস্তিত্ব ঘোষণা করে আহত ডানায় আমাকে আমার অবস্থান স্মরণ করিয়ে দেয়। এখন এখানে আমি নিরুপায় পিতা একজন সৃষ্টির কষ্টের দায়বদ্ধ ঈশ্বর যেমন আমিও তেমন অবিরত যন্ত্রণার মাঝে খুঁজে ফিরি দুঃখের আঘাতে অতি প্রিয়জন আমার আমিত্ব জেগে ওঠে- প্রশ্ন করি কতখানি কতটুকু…
-
লিপিকার আমিই তোমার, ঘুরে দাঁড়াও ব্যাবিলন, অগ্নিশ্বর
লিপিকার আমিই তোমার বিমল কুণ্ডু তোমার কাছে ভালোবাসার প্রতিদান চাইনি সারাক্ষণ নিরাপত্তা নীরব প্রহরী তবু তুমি আমাকে ধন্য করেছ আমার আমিত্ব সুপ্ত নিশ্চিত আশ্রয় তোমার তৃপ্তির হাসি শুধুই সেদিকে চেয়ে; অথচ সে হাসিটুকু আমাকে দেবার কথা ছিল আমি তো চাইনি বিনিময়, আনন্দের সহবাস এই ঘর, ইরানি কার্পেট, বসরাই গোলাপগুচ্ছ সুমিষ্ট সুবাস—এসব কিছুই আমি চাইনি । তোমার আলিঙ্গনে প্রাণের আবিষ্কার, অফুরন্ত কথার পঙ্ক্তিমালা অজান্তেই হয়েছে রচিত মায়াময় সংসারের অন্তরালে একটি কবিতা কখনও দেখনি! ধন্য লিপিকার আমিই তোমার ঘুরে দাঁড়াও ব্যাবিলন এখানেই ছিল সেই সুমেরীয় হাজার পাঁচেক বর্ষ আগে চোখ বন্ধ করলেই সুমহান ঐতিহ্য-কঙ্কাল দেখি স্বপ্নিল নগরী—মানববাগান—জ্ঞানের বিকাশ হিংস্র দানবের নখের আঘাতে…
-
হাইয়া আলাল ফালাহ্ (শেষ পর্ব)
হাইয়া আলাল ফালাহ্ (শেষ পর্ব) বিমল কুণ্ডু একটি টেবিলের পিছনে পর পর চেয়ার সাজানো হয়েছে। মাঝের চেয়ারে যুবক আর তার সঙ্গীরা বসেছে দু’পাশে। যুবক উঠে দাঁড়িয়ে জনতাকে উদ্দেশ্য করে বললো, আমরা যে কাজ করতে এসেছি সেটাই আপনাদের বলবো। এই যে বিজলী আলো দেখছেন, এই আলো আমরা চর হাফেজিয়ার প্রতিটি ঘরে জ্বালাতে চাই। আপনাদের দুঃখ-কষ্ট দূর করে সবার মুখে হাসি ফুটাতে চাই। এই গ্রামে স্কুল হবে, হাসপাতাল হবে, মসজিদ হবে। আপনাদের সবার রুটি রুজির পথ করে দেয়া হবে। আপনারা নিজের পায়ে দাঁড়াবেন। বলেন, এসব চান কিনা? উপস্থিত জনতা একযোগে বলে ওঠলো, হ্যাঁ আমরা চাই । যুবক আবার বলতে শুরু করলো,…
-
হাইয়া আলাল ফালাহ্ (৪র্থ পর্ব)
হাইয়া আলাল ফালাহ্ (৪র্থ পর্ব) বিমল কুণ্ডু বন্যার পর আবার এল মহামারী। পর পর দু’টি ধকল কাটিয়ে যারা বেঁচে গেল গঞ্জ থেকে আসা সরকারের সামান্য রিলিফই তাদের ভরসা। এ অবস্থায় হুজুরের ফেলে যাওয়া খোঁড়া ছেলেকে খাওয়ায় কে? গ্রামের লোকেরা ধরাধরিতে অনিচ্ছা সত্ত্বেও আজিজ মাতুব্বর তাকে আশ্রয় দিল। মাতুব্বরের উঁচু করে তোলা ধানের গোলায় তখনও কিছু ধান আছে। রক্ষা পেয়েছে বীজধানও। বন্যার পলিপড়া নতুন মাটিতে ধান বুনলে খুব ভাল ফসল হবে। এ সুযোগ কাজে লাগায় আজিজ সরদার। গ্রামের দুর্বল মানুষেরা একবেলা পেটভাতায় দিনরাত খাটে মাতুব্বরদের ক্ষেতে। কিশোর রহমতকেও লাগানো হয় কামলার কাজে। তার মতই একরকম খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলতে থাকে চর…
-
হাইয়া আলাল ফালাহ্ (৩য় পর্ব)
হাইয়া আলাল ফালাহ্ (৩য় পর্ব) বিমল কুণ্ডু দিনের আলো ফুটে উঠেছে। রহিম সেখ নবীন হুজুরের সামনে হাত জোড় করে দাঁড়ায়। করুণ কণ্ঠে বলে, হুজুর নাস্তার কোন ব্যবস্থা নাই। গুনাগার বান্দারে মাফ কইরা দ্যান। এমন সময় মতি এক খুঁড়ি দুধ হুজুরের সামনে এনে রাখে। রহিমের মুখ উজ্জ্বল হয়। অতি ব্যস্ত হয়ে তাড়াতাড়ি বলে ওঠে, আল্লাহ মান রাখছে। হুজুর নেকবান্দা, দুধড়া খাইয়া লন। হুজুর শান্তকণ্ঠে জিজ্ঞেস করেন, এই গ্রামে খুব অভাব, তাই না? রহিম সেখ উত্তর দেয়- খুউব। হঠাৎ হুজুর উঠে দাঁড়িয়ে বলেন, চলেন, আপনাদের গ্রামটা একটু দেখে আসি। দুধড়া খাইয়া লন হুজুর। রহিম অনুরোধ জানায়। হুজুর জবাব দেন-না, এত অভুক্ত…
-
হাইয়া আলাল ফালাহ্ (২য় পর্ব)
হাইয়া আলাল ফালাহ্ (২য় পর্ব) বিমল কুণ্ডু রাতের ঝড়ে পুরো বসতির খড়ের ছাউনি উড়ে গেছে। না খেতে পাওয়া মানুষগুলোর ক্ষুদ্র সঞ্চয় চারিদিকে লণ্ডভণ্ড হয়ে পড়ে আছে। তারই শোকে কান্নার মাতম তুলেছে হাড় জিরজিরে মেয়ে মানুষের দল। পুরুষেরা শলা-পরামর্শ করছে আবার কি করে ঘরগুলি মেরামত করা যায়। নতুন করে আবার সংসার সাজাতে অনেক সময় লাগবে। কিন্তু ওরা পারবে। হর বছরই ওদের এগুলি পারতে হয়। পরামর্শ শেষে গ্রামের মাতুব্বর আজিজ সরদার হুকুম দিল, সবাই বাহার চরে যাইয়া কাশবন কাইটা আনো। ডহরে শালুক পাইলে খাওনের লিগে তাও আনবা। ঠিক এমন সময় কদম আলী আর লস্কর মাঝি কাঁধ থেকে আধামরা একটি মানুষের দেহ সেই…
-
হাইয়া আলাল ফালাহ্ (১ম পর্ব)
হাইয়া আলাল ফালাহ্ (১ম পর্ব) বিমল কুণ্ডু কমলাপুর স্টেশন থেকে রেল লাইন চলে গেছে দেওয়ানগঞ্জ ঘাট। এখান হতে নৌকায় একরাত-একদিনের পথ সানন্দবাড়ী। এটি প্রমত্তা যমুনা নদীর একটি চর। কোন অতীতে যমুনার বুকে এই চরটি জেগে উঠেছিল, কবেই বা এখানে জনবসতি গড়ে উঠলো, তার কোন সঠিক ইতিহাস নেই। সানন্দবাড়ী নামটি কিভাবে হলো তাও কেউ বলতে পারে না। তবে জনশ্রুতি আছে, বহু আগে সদানন্দ মালো নামে এক পাগল ছিল এই গ্রামে। তার নাম থেকেই সানন্দবাড়ী নামের উৎপত্তি। সদানন্দ কোন কাজ করতো না। কাউকে কোন বিরক্তও করতো না। কাশবনে তার একটি আস্তানা ছিল। সেখানেই সারাদিন ঘুমিয়ে কাটাতো। রাতভর পায়চারী করে বেড়াতো চরময়।…
-
বিমল কুণ্ডু
বিমল কুণ্ডু একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম নির্বাচিত বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। কবি, সাহিত্যিক ও গবেষক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছেন তিনি। জন্ম: বিমল কুণ্ডু ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দের ১৩ই সেপ্টেম্বর পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার অন্তর্গত মানিকহাট ইউনিয়নের রাইপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পারিবারিক জীবন: পিতা স্বর্গীয় জগবন্ধু ও মা অনিলা কুণ্ডুর সাত সন্তানের কনিষ্ঠ সন্তান তিনি। স্ত্রী গৃহলক্ষ্মী। ব্যক্তিজীবনে দুই পুত্রের জনক। শিক্ষা জীবন: বিমল কুণ্ডু গ্রামের স্কুল থেকে প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন। সাতবাড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৬৪ খ্রিষ্টাব্দে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। রাজবাড়ী সরকারি কলেজ থেকে ১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দে এইচএসসি এবং ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দে স্নাতক সম্পন্ন করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়…