-
স্বপ্ন গোধূলি (১ম পর্ব)
স্বপ্ন গোধূলি (১ম পর্ব) আবু জাফর খান এক. মহিলা ওয়ার্ডের প্রায় অন্ধকার কক্ষের দেয়াল ঘেঁষে পায়ের আঙ্গুলের ওপর ভর দিয়ে ঘুলঘুলিতে চোখ রেখে আকাশ দেখার বৃথা চেষ্টা করছে মেয়েটি। কতকাল সে ভোরের আকাশ দেখেনি। আজ কি মেঘ করেছে? এত অন্ধকার কেন? মাঝে মাঝে মেঘের মৃদুগম্ভীর ডাক কানে আসছে যেন। এটি কোন মাস মেয়েটি কিছুতেই মনে করতে পারে না। শুধু মনে পড়ে, কৈশোরে প্রত্যুষে প্রাতঃকৃত্য সেরে খিড়কি দ্বার খুলে পায়ে পায়ে গাঁয়ের মেঠোপথের কিনারে গিয়ে দাঁড়িয়ে তন্ময় হয়ে পূবাকাশের দিকে তাকিয়ে থাকত সে। ভোরের মোলায়েম বাতাসে গা জুড়িয়ে যেত। পূবের ফিকে লাল আকাশ ক্রমশ রক্তবর্ণ হয়ে উঠত এবং অতঃপর আরক্ত…
-
নতজানু যুবক, মরুমন
নতজানু যুবক আবু জাফর খান পাখির প্রার্থনায় নতজানু যুবক অবশেষে জেনেছে মানুষ একা! ক্রন্দিত সূর্যাস্তে তাই ডাহুক হয়ে যায় যুবকের প্রাণ; যূপকাষ্ঠে জ্বলন্ত অগ্নির পাশে দাঁড়িয়ে একদিন তিমিরের বেদিতে নিশিকন্যার রোদণ শোনে! ফিরে যায় বিবর্ণ ঘাসের ঘরে ভূমধ্য শস্য মাড়িয়ে মৃত্যু-আঁধারের ভেতর দিয়ে! যুবকের ভাঙাবুক জানে পৃথিবীর বুকজোড়া যে ফাটল, সে পথে রাত্রির ক্রন্দনধ্বনি পেরিয়ে আলো আসবে! সে আলো দুঃখের কাছে ফিরে যাবে ফের সাদা মেঘের সম্মুখে। কেননা যুবক যখন বলতে প্রস্তুত, তার কাছে দেবার মতো প্রেম আর নেই কিছুই! বহুকাল ধরে সে তরঙ্গের অনেক নিচে নেমে গিয়ে বুঝেছে, কেউই আসলে আজন্ম প্রেমিক কিংবা প্রণয়িনী নয়! যুবক তাই ক্ষয়া…
-
প্রেমের প্রয়াণ
প্রেমের প্রয়াণ আবু জাফর খান রমণীর কোঁচড় ছিড়ে প্রেম পড়ে গেলে রাতের ঘুমপাখির ডানার শব্দ শোনা হয় না আর। প্রথম যেদিন আঙুল খেলেছিল দ্বিপর্ণ গাছের বোঁটায় ডালপালা মেলেছিল কিছুকাল পাখিদের ওড়াউড়ি ছিল পাতায় পাতায় রহস্যের আলো এসে পড়েছিল। এখন সুনসান! কিছুদিন, প্রথম কয়েকটা দিন শুধু অন্ধকার থেকে আরও অন্ধকারে পথ ঘুরে যেত; মনে হতো, এই আলোর অন্ধকারে জলের শরীর ঘেঁষে পদ্ম ফুটবে, বৃষ্টিভেজা দু-একটি পাতা এসে পড়বে নৌকোর মাস্তুলে। এখন মেঘ কাঁদে! মেঘেরা কেঁদে যায় অসুখের শোকে গনগনে লৌহরঙের সূর্যোদয় নিয়ে আমি এখন ব্যস্ত থাকি পায়ের তলার মাটি মূলত সরে গেছে যাক সরে, শূন্যে ভাসব। দেবালয় এখন শ্মশান! আমার…
-
স্বপ্নবাড়ি
স্বপ্নবাড়ি আবু জাফর খান শূন্যতার নিজস্ব একটি বিষাদ আছে ঢেউ ভাঙা একাকী মাঝির নৌকোর পাটাতনে… সে বিষাদ বেজে যায়; পাখি ও বিষণ্নতায় মিল পাই মিল দেখি জল ও মুকুরে শুধু তুমি আর আমি মেলাতে পারিনি কিছুই। আমরা জল-পাথরের বিপরীত সুরে বাজি আমাদের দিনরাত্রির কথার শস্যাঙ্গনে… না তুমি আছ না আমি; আমাদের ব্যথার শিষদাগে ডুবে আছে বিপণি পৃথিবীর সমূহ বিতান। আমি যখন খুব ভোরে অর্চার্ডে হাঁটি সেই সময় ঠাকুরমা সুর করে পুথি পাঠ করেন; আমার মনে হয়, একটা পয়ারের সরণি বেয়ে পৌঁছে যাচ্ছি দূরে, কৃত্তিবাসের গ্রামে; আসলে জীবনানন্দের বাড়ির পথ আরও আরও দীর্ঘ। আমি আঙিনার বাম হাতে দিই পুরনো কিছু…
-
আবু জাফর খান
আবু জাফর খান পেশায় একজন চিকিৎসক। ভাবনায় কবি, কথাশিল্পী ও সংগঠক। তাঁর পুরো নাম কে এম আবু জাফর। বিসিএস (স্বাস্থ্য) ক্যাডারের কর্মকর্তা হিসেবে বর্তমানে তিনি পাবনা জেনারেল হাসপাতালের সহকারি পরিচালক পদে কর্মরত আছেন। লেখক হিসেবে আবু জাফর খান এর বিশেষত্ব, তিনি নিবিড় অন্তর অনুভবে প্রত্যহ ঘটে চলা নানান ঘটনা, জীবনের গতি প্রকৃতি, বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি, ব্যক্তিক দহনের সামষ্টিক যন্ত্রণা তুলে আনেন নান্দনিক উপলব্ধির নিপুণ উপস্থাপনায়। তাঁর লেখায় ধ্বনিত হয় বিবেক কথনের অকৃত্রিম প্রতিভাষা। তিনি তাঁর লেখায় প্রতিধ্বনিত করেন নন্দনতাত্ত্বিকতায় জীবন বোধের সমকালীন বাস্তবতা। জন্ম: কবি ও কথাশিল্পী আবু জাফর খান ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দের ৩১শে জানুয়ারি পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার অন্তর্গত আহম্মদপুর ইউনিয়নের…