-
ইতিহাস-ঐতিহ্যে দ্বারিয়াপুর
ইতিহাস-ঐতিহ্যে দ্বারিয়াপুর ~ আজিজুল কায়সার দ্বারিয়াপুর গ্রাম পরিচিতি : পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার অন্তর্গত আহাম্মদপুর ইউনিয়নে অবস্থিত দ্বারিয়াপুর গ্রাম। পুরো গ্রামটি রয়েছে ঢাকা-পাবনা মহাসড়কের দক্ষিণে গা ঘেঁষে। হযরত শাহ সুলতানের স্মৃতি বিজড়িত পূণ্যভূমি এই গ্রামের প্রাণকেন্দ্র হলো বাস স্ট্যান্ড, চৌরাস্তা মোড়। পাবনা থেকে দ্বারিয়াপুরে ঢুকতেই প্রথমে চোখে পড়বে মোবাইল নেটওয়ার্ক সেবা প্রদানকারী গ্রামীণ এবং রবি কম্পানির সুউচ্চ দুইটি টাওয়ার। একশত গজ সামনে ঈদগাহ ময়দান, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দ্বারিয়াপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও বিশাল খেলার মাঠ, ডান পাশে রয়েছে একটি মসজিদ। গ্রামের ইতিহাস ও নামকরণ : উত্তরে আত্রাই নদী, দক্ষিণে গাজনার বিল সহ এই অঞ্চল ছিল এক সময় যমুনা নদীর সাথে…
-
আত্মজীবনী, আহম্মদপুর, দ্বারিয়াপুর, মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধে সুজানগর, লেখক পরিচিতি, সাহিত্য, সৈয়দপুর (আহম্মদপুর)
একাত্তরের অগ্নিঝরা দিনগুলি
একাত্তরের অগ্নিঝরা দিনগুলি তাহমিনা খাতুন ১৯৭০ সালে অনুষ্ঠিত হয় পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচন। সে নির্বাচনে জাতীয় পরিষদের ১৬৯ টি আসনের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবর রহমানের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ ১৬৭ টি আসনে জয়লাভ করে। পক্ষান্তরে পশ্চিম পাকিস্তানে জুলফিকার আলী ভুট্টোর নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান পিপলস্ পার্টি ৮১টি আসনে জয়লাভ করে। পাকিস্তানের সামরিক শাসক ইয়াহিয়া খান, ৩ মার্চ ১৯৭১ ঢাকায় জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহ্বান করেন। পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ আনন্দে উৎফুল্ল। সবার আশা এতদিনে বাঙ্গালীর হাতে পাকিস্তানের শাসন ক্ষমতা আসার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। কিন্তু বাঙ্গালীর স্বপ্ন ভঙ্গ হতে দেরি হলো না। পাকিস্তানের সামরিক জান্তা ইয়াহিয়া খান ১৯৭০ সালের নির্বাচনের গণ রায়কে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ…
-
আমার শিক্ষাজীবন
আমার শিক্ষাজীবন তাহমিনা খাতুন আমি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের লেখাপড়া শেষ করলাম। পূর্বসূরী বড় বোনদের চেয়ে আলাদা নয় আমার গল্প! উচ্চশিক্ষার সুযোগের অভাব। প্রায় বছর খানেক কেটে গেল ঘরে বসেই। আমার তৃতীয় ভাই মরহুম খন্দকার আবুল খায়ের (বড় তিন ভাইয়ের মধ্যে কনিষ্ঠ হওয়ায় আমরা ছোট ভাই-বোনেরা তাঁকে ‘ছোট ভাই’ বলে সম্বোধন করতাম) যাঁর অবদান আমার জীবনে সবচেয়ে বেশী। শুধু আমার জীবনে নয়, আমার ছোট আরও তিন ভাই, বোনের জীবনেও ছোট ভাইয়ের অবদান অনস্বীকার্য! ছোট ভাই নিজে তখন ঢাকায় সামান্য বেতনে একটি চাকুরীর পাশাপাশি নৈশ কলেজে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করছিলেন। ছোট ভাই ছুটিতে বাড়ি এলেন। আমার কাছে জানতে চাইলেন কি করে সময়…
-
আমার মা
আমার মা তাহমিনা খাতুন আমার মায়ের তুলনা একমাত্র আমার মা নিজেই। নিজের মা বলে বলছি না। প্রত্যেকের মা প্রত্যেকের কাছে প্রিয়। কিন্তু কিছু অসাধারণ বৈশিষ্ট ছিল আমার মায়ের। মাকে নিরক্ষরই বলা যায়। কিন্ত নিজের সন্তানদের শিক্ষার ব্যাপারে মা ছিলেন সদা সতর্ক প্রহরী! সময় মত পড়তে বসলাম কিনা, ঠিক মতো স্কুলে গেলাম কিনা, পরীক্ষার ফলাফল কেমন করছি-প্রতিটি ব্যাপারে মায়ের ছিল তীক্ষ্ণ দৃষ্টি। এছাড়া দেশ বিদেশের বিভিন্ন খবরাখবর নিয়ে মায়ের ছিল অপরিসীম আগ্রহ। আমার ছোট বেলায় আমাদের ঘনিষ্ঠ আত্মীয় গৃহিণীদের দেখেছি ঘরকন্না ছাড়া তাঁদের মধ্যে দেশের বা বহির্বিশ্বের ঘটনা জানার ব্যাপারে বিন্দুমাত্র আগ্রহ ছিল না। আমার মা যেটুকু রিডিং পড়তে পারতেন…
-
আমার বাবা
আমার বাবা তাহমিনা খাতুন আমার বাবা মরহুম খন্দকার আবুল কাসেম। আমার বাবার শিশুকালটি শুরু হয়েছিল নিতান্তই দুঃখের মধ্য দিয়ে! অত্যন্ত অল্প বয়সে আমার আব্বা তাঁর ছোট দুই ভাই বোনসহ পিতৃ-মাতৃহীন হন। এতিম তিন শিশু তাঁদের নানী এবং খালাদের স্নেহ-মমতায় লালিত পালিত হন। আমার বাবার কাছে শুনেছি ওনার নানী খালারা আরবী এবং ফারসী শিক্ষায় শিক্ষিত ছিলেন। আব্বা তাঁর নানী খালাদের নিকট আরবী এবং ফারসী ভাষায় শিক্ষাগ্রহণ করেছিলেন, তবে আব্বার বাংলা ভাষাতেও চমৎকার দখল ছিল। তাঁর বাংলা হাতের লেখা এবং ভাষাশৈলী ছিল অত্যন্ত গোছালো এবং পরিপক্ক। আব্বার সুনিপুণ হস্তাক্ষর এবং ভাষাশৈলী ছিল যে কোন উচ্চ শিক্ষিত মানুষকে চমৎকৃত করার মতো। আব্বার…
-
আমাদের আত্রাই নদী
আমাদের আত্রাই নদী তাহমিনা খাতুন দ্বাড়িয়াপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশ দিয়েই বয়ে গেছে আত্রাই নদী। আমাদের ছেলেবেলায় দেখতাম বর্ষাকালে নদীটি কানায় কানায় পানিতে ভরে যেত। অনেক সময় যখন বেশ বড় বন্যা হত, নদীর কূল ছাপিয়ে হাইওয়ের উপর দিয়েও স্রোত বয়ে যেত। প্রাথমিক বিদ্যালয়টিও বেশ কিছু দিনের জন্য বর্ষাকালীন ছুটিতে যেতে বাধ্য হত। কারণ বিদ্যালয়ের ঘরটিতেও বন্যার পানি ঢুকে পড়ত। বর্ষাকালে আত্রাই যখন পানিতে ভরে যেত, তখন কিছু লোক এক ধরনের জাল দিয়ে (যাকে স্থানীয় ভাষায় বলা হত ‘খরা’) ট্যাংরা, পুঁটি, খলশে, ছোট আকারের শোল, বোয়াল, নলা, মৃগেল, টাকিসহ আরও অনেক ধরনের সুস্বাদু মাছ ধরতেন। আমাদের পাড়ার বাসিন্দারা সহ অনেকেই বর্ষার…
-
আমাদের দ্বারিয়াপুর গ্রাম
আমাদের দ্বারিয়াপুর গ্রাম তাহমিনা খাতুন পাবনা জেলার তৎকালীন সুজানগর থানার দ্বারিয়াপুর গ্রামে আমার জন্ম। পাবনা তখন দুই মহকুমা বিশিষ্ট বৃহত্তর জেলা। তৎকালীন পাকিস্তানের পূর্ব পাকিস্তান প্রদেশের সতেরটি জেলার মধ্যে দুই মহকুমা বিশিষ্ট একটি জেলা পাবনা। পাবনা সদর ও সিরাজগঞ্জ। মূল পাবনা জেলার সদর অংশে আমার জন্ম। আমাদের গ্রামটির অবস্থান পাবনা শহর থেকে পাবনা-রাজশাহী হাইওয়ের ছাব্বিশ মাইলের মাইল ফলকের সাথেই। শহরের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থার সুবিধার অভাবকে যদি প্রত্যন্ত গ্রাম বা অজপাড়া গাঁ হিসাবে মূল্যায়ন করতে চাই, তবে দ্বারিয়াপুরকে ‘প্রত্যন্ত গ্রাম’ বা ‘অজপাড়া গাঁ’ বলা যাবে না। আবার শিক্ষা ব্যবস্থা বা ব্যবসা-বাণিজ্যের সুবিধার দিক থেকে বিবেচনা করলে দ্বারিয়াপুরকে গণ্ডগ্রামও বলা যাবে…
-
আবু জাফর খান
আবু জাফর খান পেশায় একজন চিকিৎসক। ভাবনায় কবি, কথাশিল্পী ও সংগঠক। তাঁর পুরো নাম কে এম আবু জাফর। বিসিএস (স্বাস্থ্য) ক্যাডারের কর্মকর্তা হিসেবে বর্তমানে তিনি পাবনা জেনারেল হাসপাতালের সহকারি পরিচালক পদে কর্মরত আছেন। লেখক হিসেবে আবু জাফর খান এর বিশেষত্ব, তিনি নিবিড় অন্তর অনুভবে প্রত্যহ ঘটে চলা নানান ঘটনা, জীবনের গতি প্রকৃতি, বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি, ব্যক্তিক দহনের সামষ্টিক যন্ত্রণা তুলে আনেন নান্দনিক উপলব্ধির নিপুণ উপস্থাপনায়। তাঁর লেখায় ধ্বনিত হয় বিবেক কথনের অকৃত্রিম প্রতিভাষা। তিনি তাঁর লেখায় প্রতিধ্বনিত করেন নন্দনতাত্ত্বিকতায় জীবন বোধের সমকালীন বাস্তবতা। জন্ম: কবি ও কথাশিল্পী আবু জাফর খান ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দের ৩১শে জানুয়ারি পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার অন্তর্গত আহম্মদপুর ইউনিয়নের…
-
বোয়ালিয়া গ্রাম পরিচিতি
পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার আহম্মদপুর ইউনিয়নের অন্তর্গত একটি গ্রাম বোয়ালিয়া। উপজেলার অন্যতম স্বনির্ভর এবং কৃষি অর্থনৈতিক অঞ্চল এই গ্রাম। অবস্থান: বোয়ালিয়া গ্রামের পূর্বদিকে আহম্মদপুর গ্রাম, পশ্চিম দিকে বিল গাজনা, উত্তর দিকে সোনাতলা গ্রাম, দক্ষিণ দিকে আহম্মদপুর দক্ষিণচর গ্রাম অবস্থিত। গ্রামের ইতিহাস ও নামকরণ : বোয়ালিয়া গ্রামের ইতিহাস সম্পর্কে সুস্পষ্ট কোন তথ্য পাওয়া যায় না। তবে ধারণা করা হয় পদ্মা নদীর ভাঙ্গনের ফলে কিছু লোক এসে এখানে বসতি স্থাপন করে। অতীতে এখানকার খাল-বিলে প্রচুর বোয়াল মাছ পাওয়া যেত। দূর-দূরান্ত থেকে লোকেরা এখানে মাছ মারতে আসতো। এই ‘বোয়াল মাছ’-কে কেন্দ্র করেই স্থানটির নামকরণ হয় ‘বোয়ালিয়া’। আরো জানুন বোনকোলা গ্রাম পরিচিতি মতান্তরে, কোন…
-
রিঙকু অনিমিখ
রিঙকু অনিমিখ একজন কবি ও চারুশিল্পী হিসেবে সমধিক পরিচিত। জন্ম: রিঙকু অনিমিখ ১৯৮২ সালের ৫ এপ্রিল, পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার অন্তর্গত আহম্মদপুর ইউনিয়নের সৈয়দপুর গ্রামের মিয়াপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। এটি তাঁর পৈতৃক বাড়ি। পারিবারিক জীবন: পিতা মৃত সৈয়দ আব্দুস সাত্তার ও মাতা সৈয়দা রওশনারা সাত্তার। পিতা ছিলেন একজন সরকারি চাকরিজীবী এবং মা গৃহিণী। চার ভাইয়ের মধ্যে তিনি তৃতীয়। শিক্ষাজীবন: স্কুল কলেজ পাবনাতেই। বিশ্ববিদ্যালয় জীবন কেটেছে ঢাকায়। চারুকলায় ‘ড্রয়িং এন্ড পেইন্টিংয়ে স্নাতকোত্তর। কর্মজীবন: বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা চলাকালীন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্সসহ বিভিন্ন মিডিয়ায় চাকরির মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করেন। বছর তিনেক আগে একটি নিউজ মিডিয়ার প্রধান নির্বাহীর পদ থেকে ইস্তফা দেয়ার মধ্য দিয়ে চাকরি থেকে…