-
চোখের আলোয় দেখেছিলেম (২য় পর্ব)
চোখের আলোয় দেখেছিলেম (২য় পর্ব) এ কে আজাদ দুলাল শুক্রবার। আজ ছুটির দিন। প্রয়োজনীয় কাজ সেরে বসে চাকরির গাইড পড়ছে জামি। এমন সময় গৃহকর্তী তার ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে হাজির। প্রমোদ গুনলো জামী; কোনো অভিযোগ নিয়ে এলেন না-কি। সরাসরি প্রশ্ন, — কোনো অসুবিধা হচ্ছে কি? জামী স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে বলল, — না, তেমন কিছু না। — না বলতে তো হবে না। আমার ধারণা হচ্ছে। আপনার অসুবিধার কথা ভেবেই বলছি। এতে আপনার সুবিধা বেশি আমার একটু বাড়তি কাজ। — বেশ, বলুন। আপনার প্রস্তাব কি ভেবে দেখা যেতে পারে। — আমাদের সাথে পেইনগেস্ট হিসেবে খেতে পারেন। সকালের নাস্তা এবং দু’বেলা ভাত। আমরা…
-
চোখের আলোয় দেখেছিলেম (১ম পর্ব)
চোখের আলোয় দেখেছিলেম (১ম পর্ব) এ কে আজাদ দুলাল শ্রাবণের শেষ বিকেল। রোদের তীব্রতা তখনো কমেনি। বাংলাদেশ ব্যাংক হতে বের হয়ে সোজা হাঁটা শুরু করে দিয়েছে মোহাম্মদ জামী। উদ্দেশ্য ভালো ছোট এক রুমের বাসা। কিন্তু সে যে ব্যাচেলার! তাকে কে ভাড়া দিবে? মিষ্টি ভাইয়ের আদেশ- মেসে থেকে চাকরির স্বপ্ন না দেখাই ভালো। জামীর ছোট চাচির বড় বোনের ছেলে মিষ্টি। ভালো নাম জারিফ জাহিদ। মিষ্টি চেহারা এবং মুখখানা হাসি ভরা; তাই সবাই মিষ্টি বলে ডাকে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারি পরিচালক পদে চাকরিরত। অমায়িক ব্যবহার। কত বছর আগের কথা। সবেমাত্র ছোট চাচার বিয়ে হয়েছে। ছোট চাচির সাথে তার বড় বোনের বড় ছেলে…
-
নতুন সূর্যের অপেক্ষায় (শেষ পর্ব)
নতুন সূর্যের অপেক্ষায় (শেষ পর্ব) এ কে আজাদ দুলাল পর পর দু’বার মোবাইলে রিং বেজে চলেছে। কোথাও আবার কোন অঘটন ঘটলো কিনা। বাজে সময় যাচ্ছে। মোবাইল হাতে নিতেই চোখে পড়ে তার বাবার নম্বর। মনের ভেতরে কেমন যেন একটা ভয়ের ঢেউ খেলে গেল। তার মা ব্লাড প্রেশার রোগী। – বাবা, সব ঠিক আছে তো? – আমরা সবাই ভালো আছি খোকা। একটা বিপদে পড়ে এত সকালে তোকে বিরক্ত করছি। – বাবা, এমন করে বলছো কেন? কি হয়েছে খুলে বলো। – আনোয়ার কে তো চিনিস? – বারে চিনবো না, তোমার শিক্ষকতা জীবনের সেরা একজন ছাত্র। তাকে নিয়ে গর্ব করো। বল কি হয়েছে?…
-
নতুন সূর্যের অপেক্ষায় (২য় পর্ব)
নতুন সূর্যের অপেক্ষায় (২য় পর্ব) এ কে আজাদ দুলাল শীতের সকালটা একটু দেরিতে শুরু হয়েছে। সামনে মাঠ ভরা কুয়াশা। কুয়াশা ভেদ করে ধোঁয়া বের হচ্ছে। হায়াত কাজীর ঘুম একটু দেরিতেই ভাঙলো। তার ধারণা চাষার বাচ্চা দুটো ভোর না হতেই আঙিনায় এসে দাঁড়িয়ে থাকবে। হাতমুখ ধুয়ে নাস্তা-কফি খেতে খেতে প্রায় সাড়ে আটটা বেজে গেলো; তখনো রহিম তার ছেলেকে নিয়ে হাজির হয়নি। প্রায় পনের মিনিট পর খবর এলো রহিম সরদার তার ছেলেকে নিয়ে এসেছে। হায়াত কাজী অঙ্ক কষেই রেখেছে, এদের সাথে একটু মিষ্টি সুরে কথা বললে কাজ হাসিল হবে। তাই বেশ খুশি খুশি মেজাজ। দাদার আমলের বৈঠকখানায় গিয়ে বসলো। রহিম এবং…
-
নতুন সূর্যের অপেক্ষায় (১ম পর্ব)
নতুন সূর্যের অপেক্ষায় (১ম পর্ব) এ কে আজাদ দুলাল শীতের বিকেল। একটা দামী পাজেরা গাড়ি এসে থামলো কাজী বাড়ির আঙ্গিনায়। কাজী বাড়ির সামনে দিয়ে ডিস্ট্রিক বোর্ডের পুরাতন রাস্তাটা বাজারের দিকে আঁকাবাঁকা হয়ে চলে গিয়েছে। রাস্তার উত্তর পাশে কাজীদের সেই আমলের পাকা দালান ওয়ালা একতলায় বেশ কটা রুম বিশিষ্ট একটা পুরাতন বাড়ি। এটাই তাদের জমিদারী আর আভিজাত্যের উত্তরসূরী। বাড়িটি বয়স কত কেউ তা অনুমান করে বলতে পারে না। গ্রামের সবচেয়ে বায়োজ্যেষ্ঠ প্রবীণ রহমত শেখের ভাষ্যানুযায়ী, বাড়িটির বয়স একশত বছরের উপরে। দুই পুরুষ পর্যন্ত এ বাড়িতে বসবাস করার পর পরবর্তী পুরুষ শহরবাসী। কাজী একারামুল্লাহ এই বাড়ির প্রতিষ্ঠাতা। তার নামানুসারে সবাই কাজী…
-
রক্তে জ্বলে একাত্তর (শেষ পর্ব)
রক্তে জ্বলে একাত্তর (শেষ পর্ব) এ কে আজাদ দুলাল হঠাৎ রাশেদ এসে ঢুকে দেখে, তার মা একজন অপরিচিত লোকের সাথে কথা বলছে। ইতোপূর্বে এ ধরনের লোককে এ এলাকায় কখনো নজরে পড়েনি। তার মা-র চোখে চোখ পড়তেই বলল, ── তোমাদের সভার কাজ শুরু করো। এই ভদ্র লোকের সাথে কথা বলে আসছি। একটু সময় লাগবে। রাশেদ কোন কথা না বাড়িয়ে বের হয়ে গেল। পঁত্রিশ বছর পর রাশেদার জীবনে কি ঘটেছিল, সে সব ঘটনা মাহি সুলতানের জানা ছিলো না। দীর্ঘ দশ বছর বিদেশে কাটিয়ে দেশে ফিরে গার্মেন্টস ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে। সময়ের সাথে সাথে ভুলে যায় অতীতের অনেক ঘটনা। একজন মানুষের জীবনে তো…
-
রক্তে জ্বলে একাত্তর (৫ম পর্ব)
রক্তে জ্বলে একাত্তর (৫ম পর্ব) এ কে আজাদ দুলাল রাত নয়টার মধ্যে ভোট গণনা শেষ। সবগুলো নির্বাচনী কেন্দ্রের ভোট যোগফলে রাশেদ বেসরকারি ভাবে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছে। তৃতীয় স্থানে অবস্থান সরকারি দলের প্রার্থী শমসের সুলতান ওরফে শমু সুলতান। স্থানীয় নেতাদের কোন্দলের ফসল। এমপি সাহেব রাশেদকে নীরব সমর্থন দিয়েছেন। রাশেদের পরিবারের সঙ্গে এমপি সাহেবের বাবার ঘনিষ্ট সম্পর্ক ছিলো, এখনো আছে। তাঁরা আজ কেউ জীবিত নেই। কিন্তু রেখে গেছেন সুসন্তান। আগামীকাল নতুন একটা সুর্য উঠবে, নতুন আলো নিয়ে। আর নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান নতুন পথ দেখাবে, এই ইউনিয়নের তরুণ সমাজকে। সকাল নয়টার মধ্যেই রহিম মাস্টার তার স্কুলের উদ্দেশে বের হলেন। তার স্কুল ভোট কেন্দ্র…
-
রক্তে জ্বলে একাত্তর (৪র্থ পর্ব)
রক্তে জ্বলে একাত্তর (৪র্থ পর্ব) এ কে আজাদ দুলাল রাত আস্তে আস্তে গভীরে তলিয়ে যাচ্ছে আর দুই চেয়ারম্যান প্রার্থী ভোটের শেষ অংক হিসেব কষে চলেছে। খান্দানি সুলতান পরিবার চায় ক্ষমতাসীনদের কাঁধে ভর দিয়ে আবার সমাজে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে। আর অন্য দিকে একজন শিক্ষিত যুবক চায় একজন সৎ নিবেদিত এ প্রজন্মের প্রতিনিধি হয়ে দেশের সঠিক নেতৃত্ব দিতে। মাথায় শত চিন্তা নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে রাশেদ। ভোরে উঠতে হবে। আগামীকালের ভোটযুদ্ধে তাকে জিতে হবে, তবে নির্বাচনের মাধ্যমে। ভোট কারচুপি কাউকে করতে দেয়া হবে না। সকাল ৮টা হতে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ চলবে। সব কেন্দ্রে সাহসী নির্লোভ পুলিং এজেন্ট দেয়া হয়েছে।…
-
রক্তে জ্বলে একাত্তর (৩য় পর্ব)
রক্তে জ্বলে একাত্তর (৩য় পর্ব) এ কে আজাদ দুলাল গ্রামের বয়স্ক ছামাদ শেখ এসে শামসুর চায়ের দোকানের সামনে দাঁড়ায়। কেটলির পানি টগবগ করে ফুঁটছে আর ফুঁটুন্ত পানি বাষ্প হয়ে কেটলির নল দিয়ে বের হয়ে, সামনে বসা বাবুল সরদারের মুখে লাগছে। বাবুল সরদারের মনের ভেতরে কেমন যেন তাপ অনুভব করছে। এটা কিসের অনভূতি বুঝে উঠতে পারছে না। ভাবছে আজকের সকালটা কেমন যাবে। ছামাদ শেখ চারদিকে তাকিয়ে বাবুল সরদারের পাশে গিয়ে বসলো। যদিও বাবুল সরদার বয়সে বেশ ছোট। কিন্তু ছেলেটা সব খবর রাখে। ─ বাবুল, বড় সুলতানের মেজ ছেলে নাকি বাড়ি আয়ছে? ─ হ। হুনচি। তাকে তো কোনদিন চামড়ার চোহে দেহিনি।…
-
রক্তে জ্বলে একাত্তর (২য় পর্ব)
রক্তে জ্বলে একাত্তর (২য় পর্ব) এ কে আজাদ দুলাল নির্বাচনী হাওয়ায় মুখরিত এলাকা। নমিনেশন পেয়েছে সরকারি দলের পক্ষে শমসের সুলতান। এ নিয়ে হাওয়ায় ভাসছে নানান গুজব। কেউ বলছে বিশ লক্ষ, আবার কেউ এক ডাকে পঞ্চাশ পর্যন্ত। এ যেন কোরবানি ঈদের গরুর মূল্য। তবে এটা ঠিক টাকার পরিমাণ যাই হোক, শমসের সুলতান মোটা অর্থ খরচ করেছে, তো বটেই। তা না হলে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান সৈয়দ রাশেদ হাসান; সুদর্শন,মার্জিত এবং সুশিক্ষিত; উপজেলা পর্যায়ে সরকারি দলের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক; তাকে নমিনেশন হতে বঞ্চিত করলো। এছাড়াও তিনি একটা বেসরকারি কলেজের শিক্ষক। স্বামী-স্ত্রী দুজনই শিক্ষক। এলাকায় শিক্ষিত পরিবার বলে খ্যাত। বিসিএস পরীক্ষা কৃতকার্য হয়েও,…