• বই-চোর-শেষ-পর্ব
    গল্প,  সাইফুর রহমান

    বই চোর // শেষ পর্ব // ছোটোগল্প // সাইফুর রহমান

    বই চোর // শেষ পর্ব সাইফুর রহমান  ইন্দ্রের দিকে হাত বাড়িয়ে বলল, — একটা সিগারেট দে। অনেকক্ষণ হলো সিগারেট ফুঁকা হয়নি। নিকোটিনের প্রচণ্ড অভাব বোধ করছে শরীর। সিগারেটের কৌটাটি এগিয়ে দিতে দিতে ইন্দ্রনাথ সুনীলকে উদ্দেশ করে বলল, — বেশ জম্পেস ধরনের একটি বই সংগ্রহশালার সন্ধান পেয়েছি জানিস। সুনীল সিগারেট জ্বালানো বন্ধ রেখে কৌতূহলী কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল, — বলিস কী, কোথায়? — মুর্শিদাবাদের আজিমগঞ্জে। পরিত্যক্ত বনেদি জমিদারের এক প্রাসাদে। বাড়িটি নিয়ে অবশ্য ওয়ারিশদের মধ্যে মামলা-মোকদ্দমা চলছে দীর্ঘকাল ধরে। কিন্তু সেই বাড়ির পাহারাদারের সঙ্গে আলাপ হয়েছে আমার। দারোয়ানটির নাম লজপত সিং। জাতিতে রাজপুত। ওর পূর্বপুরুষ অনেককাল আগে চলে এসেছে বাংলায়। আমি কয়েক…

  • আতু
    গল্প,  শাহানাজ মিজান

    আতু // ছোটোগল্প // শাহানাজ মিজান

    আতু  • শাহানাজ মিজান বাড়ি থেকে অফিস বেশ দূরে, প্রতিদিন গ্রামের কাঁচা রাস্তায় তিন মাইল পথ হেঁটে এসে তবেই গাড়ি ধরতে হয়। আর আতুও প্রতিদিন একজন সচেতন অভিভাবকের মতো আমাকে গাড়িতে উঠিয়ে দিয়ে তারপর বাড়িতে ফিরে যায়। বারণ করলেও শোনে না, ধমক দিলে অসহায় চোখে আমার দিকে এমনভাবে তাকায়; মায়া লাগে, তখন আর কিছুই বলতে পারি না। কিছুদিন আগেও, ও আমাকে এগিয়ে দিয়ে একা একা বাড়িতে ফেরার পথে ভিন গাঁয়ের একদল হিংস্র কুকুর ওর উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। আঁচর আর কামড়ের যন্ত্রণায়, দশ-বারো দিন খুব অসুস্থ ছিল। অফিস থেকে ফেরার সময় হলে ও ঠিক সময়ে বড়ো গাছটার নিচে বসে অপেক্ষা করে।…

  • বই-চোর-১ম-পর্ব
    গল্প,  সাইফুর রহমান

    বই চোর // ১ম পর্ব // ছোটোগল্প // সাইফুর রহমান

    বই চোর // ১ম পর্ব  সাইফুর রহমান সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ যেখানে শেষ হয়েছে, তার থেকে ঈষৎ আগে শ্যাওড়া গাছসদৃশ একটি পাকুড় বৃক্ষের সন্ধান পাওয়া যায়। বনসাই আকৃতির এই গাছটি সেখানে দাঁড়িয়ে আছে সম্ভবত বেশ কিছুকাল ধরে। পাকুড়গাছের ছায়ার নিচে সস্তা টিন দিয়ে ছাওয়া ঘুপচির মতো যে চায়ের দোকানটি আছে, সেখানেই দুপুর ১২টা নাগাদ অপেক্ষা করার কথা ছিল সুনীলের। দুপুরের দিকে চায়ের দোকানটি অপেক্ষাকৃত নির্জন থাকে। ডিমের কুসুমের মতো সূর্যটা পশ্চিমে হেলে পড়লে পাকুড়গাছটির সুশীতল ছায়া পড়ে চায়ের চালাঘরে। তখন সেখানে মানুষের জমায়েত হয়। কোলাহল বাড়ে। চায়ের এই দোকানটি অবশ্য এ অঞ্চলটিতে মোহনমিয়ার চায়ের দোকান নামে পরিচিত। সুনীল ১২টার আগেই সেখানে এসে…

  • কাছে-দূরে
    গল্প,  শফিক নহোর (গল্প)

    কাছে দূরে ।। ছোটোগল্প ।। শফিক নহোর

     কাছে দূরে শফিক নহোর   নীলার সঙ্গে আমার পরিচয় প্রায় তিন মাস। ওর শিশুসুলভ আচরণ আমাকে খুব কাছে টানে কারণে-অকারণে। ও আমাকে ফোন দেয়। আমিও মাঝেমধ্যে ওকে ফোন করি। আমার আর নীলার মধ্যে ভালো বন্ধুত্ব সম্পর্ক গড়ে ওঠে অল্প ক’দিনে। আমি অনেক বার বলেছি, তোমার ফেসবুক আইডি আমাকে দাও। ফেসবুকে আমরা কথা বলি। নীলা আমাকে বলেছে, তার ফেসবুক আইডি নেই। আমি একটা ফেসবুক আইডি তৈরি করে দিতে চেয়েছি; সে আমাকে বলল, ভালো একটা ফোন কিনে নেই তারপর দিও। হঠাৎ করে নীলার ফোন নম্বর বন্ধ। আমি আর নীলার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারিনি। আমি রাজবাড়ি হয়ে গোয়ালন্দ ঘাট পার হয়ে ঢাকা যাচ্ছি; খুব…

  • শেষ-অপেক্ষা
    আলতাব হোসেন,  গল্প,  সাহিত্য

    শেষ অপেক্ষা

    শেষ অপেক্ষা আলতাব হোসেন রাত গভীর থেকে গভীরতর হচ্ছে। নিস্তব্ধতা যেন সারা পৃথিবীকে গ্রাস করেছে। বিছানায় শুয়ে থাকা তাহিরার চোখে ঘুম নেই। মনের ভেতর এক অজানা অস্থিরতা তাকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। প্রতিটি শ্বাসে, প্রতিটি মুহূর্তে সে অনুভব করছে যেন কিছু একটা অপূর্ণ রয়ে গেছে, কিছু একটা বলার বাকি আছে। ঘরের আলো নিভিয়ে জানালার পাশে এসে দাঁড়ায় সে। বাইরে আকাশ কালো মেঘে আচ্ছন্ন, কোথাও কোথাও চাঁদের ক্ষীণ আলো দেখা যাচ্ছে। এই দৃশ্যের মতোই তার মনের ভেতরেও যেন কিছুটা আলো, কিছুটা অন্ধকার মিশে আছে—অন্ধকারে ঢেকে থাকা, তবু কোথাও এক ফালি আলোর আশা। জীবনের শেষ সময়ে এসে এসব ভাবা উচিত নয়, কিন্তু স্মৃতিরা তাকে…

  • পুতুল
    গল্প,  শফিক নহোর (গল্প),  সাহিত্য

    পুতুল

    পুতুল শফিক নহোর একবার প্রিয় মুখখানি দেখার জন্য হাজারটা মিথ্যে অজুহাতে বাড়ি থেকে বের হতাম; সময়ে-অসময়ে। তখন আমি সদ্যকৃত যৌবনপ্রাপ্ত উত্তাপিত তরুণ। অনেক কিছুই পাবার সাধ স্ফুরিত হতো মনের গহীনে, তবুও নিজেকে আড়াল করে রেখেছি; নিজের স্বত্বাকে বিশুদ্ধ রাখতে। সবাই ঘুমিয়ে পড়বার পর, বাড়ি থেকে বের হয়ে চলে যেতাম বন্ধুদের সঙ্গে ভিসিআর দেখার জন্য। বাড়ির অদূরে পুতুলদের বাড়ি। মনের ভেতর সবসময় আনচান করত এই বুঝি পুতুল আসছে। নায়ক-নায়িকাদের জীবন সম্পর্কে জানার খুব আগ্রহ ছিল আমার; সেই কিশোর বয়স থেকেই।  দুই বা দেড়খান সিনেমা দেখানোর পর, আর দেখতে দিত না। হাজারটা অজুহাতে ফিরেয়ে দিত সবাইকে। কোনো কোনো  দিন ঘাড় ত্যাড়ার মতো…

  • শরতের-মেঘ-শেষ-পর্ব
    গল্প,  শাহানাজ মিজান,  সাহিত্য

    শরতের মেঘ (শেষ পর্ব)

    শরতের মেঘ (শেষ পর্ব) শাহানাজ মিজান অনলের বাবা চশমা ঠিক করে চোখে পরতে পরতে সুদীপকে প্রশ্ন করলেন, — সে ঠিক কী বলতে চাইছে? সুদীপ বাধ্য হয়েই বলতে শুরু করল, — অনল, তুমি হয়তো জানো না, আমি তোমার সুদীপা বউদির ছোটো ভাই। বিশ্বাস করো, শুভ্রা কখনো তোমার ভালোবাসার সাথে বেইমানি করেনি। আর তোমাকেও ইচ্ছাকৃত দোষারোপ করেনি। আজ থেকে চার মাস আগে, হঠাৎ শুভ্রা অসুস্থ হয়ে গেলে, হাসপাতালে নেওয়ার পর আমরা জানতে পারি, শুভ্রা ব্লাড ক্যানসারে আক্রান্ত, লাস্ট স্টেজ। ডাক্তার তার সময় বেধে দিলেন, সে এই পৃথিবীতে মাত্র ছয় মাসের অতিথি। তখন থেকেই শুভ্রা তোমার জীবন থেকে সরে যাওয়ার জন্য তোমাকে মিথ্যে…

  • শরতের-মেঘ-১ম-পর্ব
    গল্প,  শাহানাজ মিজান,  সাহিত্য

    শরতের মেঘ (১ম পর্ব)

    শরতের মেঘ (১ম পর্ব) শাহানাজ মিজান দু’চোখের পাতা এমনি এমনিই বন্ধ করে ছিলাম কিছুক্ষণ। ভাবলাম, ঘুম আসবে কিন্তু ওরাও পালিয়েছে। হয়তো চিরদিনের জন্য আসবে বলে ছুটি নিয়েছে আজ। জানালা খুলে আকাশের দিকে তাকালাম, ঝিরিঝিরি বাতাসে সমস্ত শরীর শিরশির করে উঠল একবার। সীমাহীন আকাশের এক চিলতে জায়গা জুড়ে বসে থাকা চাঁদটাকে বড়ো খুশি খুশি মনে হচ্ছে, সে ঝিকিমিকি জোৎস্নার ফুল ফুটিয়ে তারাদের নিয়ে খুশিতে মেতে উঠেছে। শরতের থোকা থোকা সাদা মেঘমালা, চাঁদের খুশিকে হিংসে করছে বোধহয়। সেও মুচকি মুচকি হেসে, নীলাভ পাখা মেলে উড়ে উড়ে চলে যাচ্ছে দূর-বহুদূর। চোখের সীমানায় যতদূর দেখা যায়, আমি ততদূর চেয়ে চেয়ে দেখলাম শুধু। কি যেন…

  • উপেক্ষিত
    গল্প,  শফিক নহোর (গল্প),  সাহিত্য

    উপেক্ষিত

    উপেক্ষিত শফিক নহোর আমি মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়ে ঢাকায় চলে আসি, আমার চাচাতো ভাইয়ের সঙ্গে। তিন মাস ‘মৌসুমী গার্মেন্টস’-এ কর্মরত ছিলাম সহকারী অপারেটর হিসাবে। অনেক মেয়ে আমার সঙ্গে সস্তা প্রেমের আবদার করত, আমি এসব বুঝি না বলে এড়িয়ে যেতাম। কেউ-কেউ আমাকে একটু ভিন্ন নজরে দেখত। অনেক-ই সন্দেহ করত আমি তৃতীয় লিঙ্গের কেউ কি না, আমি প্রচণ্ড লজ্জা পেতাম। পরের মাসে আমার ফলাফল প্রকাশ হলো; আমি রাজশাহী বিভাগে ১১তম। সারা বাড়িতে আনন্দের ঢেউ। আবেগ আপ্লুত হই, আনন্দে চোখ ভিজে ওঠে। আমি আগামী দিনের স্বপ্নের বীজ বপন করি। কিন্তু তা থেকে যায় আমার কল্পনার ভিন্ন জগতে। তবুও স্বপ্ন দেখি। একদিন এ সমাজে মাথা…

  • শেষ-বিকেলের-ঝরা-ফুল-শেষ-পর্ব
    এ কে আজাদ দুলাল (গল্প),  গল্প,  সাহিত্য

    শেষ বিকেলের ঝরা ফুল (শেষ পর্ব)

    শেষ বিকেলের ঝরা ফুল (শেষ পর্ব) এ কে আজাদ দুলাল এত সময় ধরে ফাহির কাহিনি শুনে যাচ্ছিলেন। এবার মুখ খুললেন। – আচ্ছা, কী কারণে বিচ্ছেদ হলেন তা বললেন না? – যদি অনুমতি এবং সময় দেন তাহলে বলতে কোনো দ্বিধা করব না। – শুনব। বলুন। আজ অন্তত একজন মানুষ পেয়েছে তাকে তো বলা যাবে। যেসব কারণে সুজিতের সাথে ঘর করা হয়নি তার মধ্যে ছিল মাত্র উনিশ বছর বয়সে দৈহিক মিলন এবং সন্তান জন্ম না দেওয়া। এটাই তো জীবনের উদ্দেশ্য হতে পারে না। কিন্তু আমি কখনো চিন্তা করে দেখেনি যে আমি কোন পরিবাবে, কোন পরিবেশ জন্ম নিয়েছি। ভাবনাটা ছিল বিপরীত মেরুর। –…

error: Content is protected !!