-
একশত ছিদ্রযুক্ত জামা (শেষ পর্ব)
একশত ছিদ্রযুক্ত জামা (শেষ পর্ব) সাইফুর রহমান চিনেখরা ব্রিজ থেকে আনুমানিক বিশ-বাইশ গজ দূরে কিছুটা ঝোপঝাড় ও জঙ্গল গোছের একটি জায়গা বেছে নিয়ে, সেখানে লম্বা আড়াআড়িভাবে বড় একটি বাঙ্কার খনন করা হলো। এন্তার ও ফেকের দুজনেই পেশায় কামিন। মাটি কাটা তাদের নিত্যদিনের অভ্যেস বলে খুব দ্রুতই বাঙ্কারটি খোঁড়া হয়ে গেল। তবে রেজেকসহ অন্যরাও হাত লাগাল সমানতালে। বাঙ্কারটি খনন করা হলো গলাসমান করে, যাতে মাথাটি ঈষৎ উঁচু করে যুদ্ধ করা যায়। ১৫ তারিখের আগেই সম্পূর্ণ প্রস্তুতি সম্পন্ন করা গেল। ঢাকা থেকে ডিনামাইট ও প্রয়োজনীয় রসদগুলো সময়মতো চলে এসেছে ক্যাম্পে। এখন শুধু এখানকার কিছু প্রস্তুতি। ১৪ তারিখ ভোর রাতে লোহার ব্রিজটার…
-
মরিচপোড়া (শেষ পর্ব)
মরিচপোড়া (শেষ পর্ব) সাইফুর রহমান পরদিন সকাল দশটা নাগাদ ময়েজ শেখের বাড়িতে তুলকালাম কাণ্ড। ভূত- তাড়ানি দেখতে জমায়েত হয়েছে প্রায় শ-খানেক লোক। ময়েজ শেখ যে ঘরটায় থাকেন সেই ঘরের বারান্দার চাল ঘেঁষে বিশাল এক নারিকেল গাছ আকাশ ছুঁয়েছে। সেই গাছের সঙ্গে পিছমোড়া করে বাঁধা মিতুজা। একটু দূরে শীতল পাটির উপর জায়নামাজ বিছিয়ে বসেছেন হেকমত কবিরাজ । তার সামনে টুকিটাকি কিছু জিনিসপত্র-একটা বড় কাঁচের বোতল, সরিষার তেল, ধুতরাপাতা, ঝাঁটা, গামছা, ধূপ ও তিনটা রক্তরঙা লম্বা লম্বা শুকনা মরিচ। ছোট একটা মালসায় ধরানো হয়েছে আগুন। জায়নামাজে বসে বিড়বিড় করে দোয়া-দরুদ পড়তে লাগলেন হেকমত কবিরাজ। উপস্থিত মানুষজনদের উদ্দেশ করে তিনি বললেন- আপনাদের…
-
মরিচপোড়া (২য় পর্ব)
মরিচপোড়া (২য় পর্ব) সাইফুর রহমান সন্ধ্যার পরপরই তোমার মা বসলেন ইলিশ মাছ ভাজতে। মাছের সে কী সুগন্ধ। মনে হয় আধমাইল দূর থেকেও সেই মাছের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছিল। মাছ তো নয় যেন ননির চাপ কেটে ভাজা হচ্ছে কড়াইয়ে। ইলিশ মাছের গন্ধে ভুরভুর করতে লাগল চারপাশ। সমস্ত বাড়ি ক্রমশ হয়ে উঠল ইলিশময়। তোমার মা নিজেকে আর কিছুতেই ধরে রাখতে পারলেন না। এক টুকরো, দু টুকরো করে এক সময় সম্পূর্ণ মাছটিই খেয়ে ফেললেন। কাঁসার বড় থালাটিতে পড়ে রইল শুধু ল্যাজ আর ছোট ছোট দু-এক টুকরো মাছ। হঠাৎ তোমার মায়ের খেয়াল হলো, সর্বনাশ হয়ে গেছে। কোন ফাঁকে তিনি মাছগুলো সব খেয়ে নিয়েছেন বুঝতেও…
-
মরিচপোড়া (১ম পর্ব)
মরিচপোড়া (১ম পর্ব) সাইফুর রহমান আমি যখন বাড়িটির সামনে এসে দাঁড়ালাম, সূর্য তখন মধ্য গগন থেকে অল্প একটু হেলে পড়েছে পশ্চিমে। চারদিকে ঝাঁ ঝাঁ সোনা গলানো রোদ। আমিও এসেছি বহু পথ অতিক্রম করে। কত হবে? হাজার লক্ষ ক্রোশ। মাপজোক নেই। আমি কিছুটা ক্লান্ত ও পরিশ্রান্ত। যদিও রোগ, শোক, জরা আমাকে তেমন একটা ছুঁতে পারে না; তারপরও এই নশ্বর পৃথিবীর সবকিছু যেহেতু একদিন ধ্বংস হয়ে যাবে, আমিই বা অবিনশ্বর থাকি কী করে। আমি যখন গৃহটিতে প্রবেশ করলাম মিতুজা তখন ঘরের ডুয়া লেপাপোছায় ব্যস্ত। বালতিতে মাটি ও গোবরের মিশ্রণ তৈরি করে সেগুলো দিয়ে লেপাপোছার কাজটি করছিল সে। গৃহের মূল ফটকে এসে…
-
পক্ষিরাজের ডানা (শেষ পর্ব)
পক্ষিরাজের ডানা (শেষ পর্ব) সাইফুর রহমান রাত নামার সঙ্গে সঙ্গে জ্বর উঠলো জানে আলমের শরীরে। রাত যত গভীর হতে লাগলো, জ্বরও ততটাই প্রকট আকার ধারণ করতে লাগলো। সকাল বেলা দেখা গেল জ্বরের প্রকোপে জানে আলম সজ্ঞাহীন হয়ে পড়ে আছে বিছানায়। মাজেদ শেখ ছেলের শরীরে হাত দিয়ে দেখলেন ভয়ানক তাপে শরীর যেন একেবারে পুড়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে যেন এই উত্তাপে খৈ, মুড়ি ভেজে নেওয়া যায় অনায়াসে। পাশ থেকে জুলেখা বিবি মাজেদ শেখকে উদ্দেশ্য করে আর্তনাদ করে বললেন, _দাঁড়ায়া দাঁড়ায়া তামশা না দেইখে টপ কইরে ডাক্তার ডাইকে নিয়ে আসেন। জ্বরে ছেলেডার সারা শরীর পুইড়ে যাচ্ছে। মাজেদ শেখ ছুটলেন ডাক্তারের খোঁজে। হাতেম…
-
পক্ষিরাজের ডানা (৩য় পর্ব)
পক্ষিরাজের ডানা (৩য় পর্ব) সাইফুর রহমান পরীক্ষা শেষ হয়ে যাওয়ার বেশ কয়েকদিন পর যথারীতি রেজাল্ট বেরুলো। প্রাপ্ত ফলাফলে দেখা গেল জানে আলম শুধুমাত্র বাংলা ছাড়া আর সবগুলো বিষয়েই ফেল করেছে। স্কুলের হেড মাষ্টার আবুল কাশেম জানে আলমের বাবা মাজেদ শেখকে স্কুলে ডেকে পাঠালেন। তাকে উদ্দেশ্য করে ক্ষুদ্ধ কণ্ঠে বললেন, __ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার দিকে নজর দিতে পারো না তো ওদের স্কুলে পাঠাও কেন মাজেদ মিয়া। ক্ষেত খামারে কাজে লাগালেও তো এর চেয়ে বেশি লাভবান হতে। কথাগুলো যে প্রধান শিক্ষক বিদ্রুপাত্মক সুরে বলছেন মাজেদ শেখের সেটাও সম্ভবত মাথায় ঢোকে না। __ঠিকই কয়ছেন মাষ্টার সাব। আমিও তাই ভাবতিছি ওক আমি মাটেই লাগা দেবো।…
-
পক্ষিরাজের ডানা (২য় পর্ব)
পক্ষিরাজের ডানা (২য় পর্ব) সাইফুর রহমান পূর্ব-দক্ষিণ কোণে কুচকুচে কালো মেঘ। ভাবে মনে হচ্ছে বড় ধরনের ঝড় আসবে শীঘ্রই। এক পাল সাদা বক পূর্ব দিক থেকে উড়ে যায় পশ্চিমে। পূর্বদিকের কোন অঞ্চলে হয়তো ইতোমধ্যে ঝড় শুরু হয়ে গেছে। আর সেজন্য পাখ-পাখিরা দল বেঁধে সব পালিয়ে যাচ্ছে নিরাপদ কোনো আশ্রয়ে। আসন্ন বিপদের আঁচ পেয়ে গরুগুলোকে নিয়ে জানে আলম বাড়ির পথে পা চালায় দ্রুত। জানে আলম তার গরুগুলোকে উঠোনের শেষ প্রান্তে খড়ের গাদার পাশে বাঁশের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে দেয় শক্ত করে। বাড়ির ভেতর থেকে জানে আলমের বাবা মাজেদ শেখ চিৎকার করে ওঠে “তোর কি কোন জ্ঞান কাণ্ড নেইরে আলম, গরু গুলেক…
-
পক্ষিরাজের ডানা (১ম পর্ব)
পক্ষিরাজের ডানা (১ম পর্ব) সাইফুর রহমান চৈত্র মাস প্রায় শেষের দিকে। সুজানগরের গাজনার বিলের বিস্তীর্ণ নাবাল অঞ্চল এ সময়টাতে সাহারা মরুভূমির মত শুষ্ক ও উষ্ণ। অথচ ভরা বর্ষায় এই গাজনা বিলের প্রমত্ত উত্তাল ঢেউ ও জলরাশি দেখে কেউ হয়তো বিশ্বাসই করতে চাইবে না যে, গ্রীষ্মে এই বিলের কী এক করুণ পরণতি দৃশ্যমান হয়। যদিও চৈত্র-বৈশাখের খরতাপে অনেক প্রান্তিক কৃষক গভীর নলকূপ গেঁড়ে বোরো ধান জন্মানোর জন্যে সেচ ব্যবস্থাটি চালু রাখেন। কিন্তু তারপরও পেঁয়াজ ও অন্যান্য রবি শষ্যের জমিগুলো বেশিরভাগই বিরান, আবাদহীন ও পরিত্যাক্ত হয়ে পড়ে থাকে বর্ষা নামার পূর্ব পর্যন্ত। তবে এটা দেখে আশান্বিত হতে হয় যে বিরান এই…
-
সম্রাট জাহাঙ্গীরের স্বর্ণমুদ্রা (শেষ পর্ব)
সম্রাট জাহাঙ্গীরের স্বর্ণমুদ্রা (শেষ পর্ব) সাইফুর রহমান জনবহুল এই ঢাকা শহরটিতে নিতাইয়ের আসা হয় বছরে কদাচিৎ। দূষিত বায়ু কিংবা পিঁপড়ার মতো ভিড় সমৃদ্ধ এই শহরটিতে দু’একবেলা যাপন করতেই হাঁপিয়ে ওঠে। মনটি তার ছটফট করতে থাকে কখন তিনি ফিরে যাবে গ্রামে। অনেক গলিঘুঁজি হাতড়ে পূর্ব শাহজাহানপুরে তেষট্টি নম্বর বাড়িটি অবশেষে খুঁজে পেল নিতাই। কড়া নাড়তেই পাতলা ছিপছিপে গড়নের মাঝ বয়সী একজন লোক দরজা খুলে নিতাইকে জিজ্ঞেস করল- -কাকে চাই? -স্যার কি আছেন নাহি ভিতরে? -আপনি কি আবু শামস স্যারের কাছে এসেছেন? -জী, উনাক কন, পাবনার গোলাম রসুল সাহেব আমাক পাঠায়ছেন। একটা জরুরী বিষয়ে উনার সাতে কতা কইবের চাই। লোকটি দরজাটা…
-
সম্রাট জাহাঙ্গীরের স্বর্ণমুদ্রা (৫ম পর্ব)
সম্রাট জাহাঙ্গীরের স্বর্ণমুদ্রা (৫ম পর্ব) সাইফুর রহমান একটু আগেও সূর্যটা ছিল মাঝ আকাশে। হঠাৎ পুঞ্জ পুঞ্জ মেঘ এসে ঢেকে দিল সেটাকে। ঠিক সেভাবে সব দুঃখ-কষ্টগুলো জমা হতে লাগল গোলাপের মনে। কী করবে সে এখন? মাথা কুণ্ডয়ন ছাড়া আর কি উপায়? এতগুলো টাকা বেহাত হয়ে গেল উপস্থিত জোচ্চুরি ও প্রতারণায়। প্যান্টের ডান পকেটে হাত ঢুকাল সে, দুই তিন হাজারের মতো টাকা ছিল পকেটে, সেগুলোরও কোনো হদিস মিলল না। শুধু সস্তা দামের মোবাইলটি খুঁজে পাওয়া গেল বাম পকেটে। গতকালই তার বউ জুলেখা ও দুই কন্যা জুঁই, চামেলীর সঙ্গে কথা হয়েছে মোবাইলে। ছোট মেয়ে চামেলী কত আহ্লাদ করে তাকে বলছিল- বাবা আমার…