• মে-দিবসের-গান
    কবিতা,  তাহমিনা খাতুন,  সাহিত্য

    মে দিবসের গান

    মে দিবসের গান তাহমিনা খাতুন   পয়লা মে দিনটি ঘুরে আসে বার বার দিনটি যে সব দুখী মানুষের, সাহসী হয়ে ওঠার। যুগ যুগ ধরে কঠিন আঁধারে, জীবন হতো যে পার সয়ে যেত শুধু, শত অন্যায় আর যত অবিচার। মানুষ তো নয় শ্রমিক যেন, ভারবাহী কোনো প্রাণী জনম হতে জনমে টানিত অপমান আর গ্লানি। কল-কারখানার শ্রমিক মজুর সারা দিনমান খাটে তবুও তাদের ক্ষুধার অন্ন, অনেক কষ্টে জোটে। অন্ন নাই বস্ত্র নাই, নাইকো চিকিৎসা ধুঁকে ধুঁকে মরে তাদের শিশুরা, এমনই দুর্দশা। সারাটি দিনের খাটুনির পরে, যবে আসে ঘরে ফিরে ভাঙ্গা ছাউনিতে বৃষ্টির জল, ঘরটি ভাসিয়ে ছাড়ে। নাইকো শিক্ষা, নাইকো দীক্ষা, নাই আনন্দ…

  • ঈদুল-ফিতর
    কবিতা,  তাহমিনা খাতুন,  সাহিত্য

    ঈদুল ফিতর

    ঈদুল ফিতর তাহমিনা খাতুন   সাঁঝের আকাশে এক ফালি চাঁদ উঠেছে ফের হেসে ছুটিছে সবাই দেখিতে তাহারে, বড়ই ভালোবেসে। নিত্য দিন একই চাঁদ ওঠে, একই আকাশ কোলে সবার অলক্ষে ডুবে যায় ফের, মন কি সদাই দোলে? ঈদের খুশী এনেছে সে বহিয়া, বিশ্ব মুসলিম তরে আকাশ বাতাস তার বারতা জানায়, মহা আড়ম্বরেক। সাগর নদী সে কথা জানায়, ছলাৎ ছলাৎ গানে পাখ-পাখালি জানায় সে খুশী, তাদের কলতানে। হরেক রঙের পোশাক পরিবে খোকা খুকুর দল ফিরনী পোলাও পায়েস খাবে, হবে তারা উচ্ছ্বল। কিশোরী তরুনী মেহেদীর রঙে, রাঙাবে হস্ত খানি খুশী আনন্দ আর উচ্ছ্বলতায়, ভাসিবে তাহারা জান। আতর গোলাপ খুশবু ছড়াবে, সারাটি দুনিয়া জুড়ে…

  • নবতান
    কবিতা,  তাহমিনা খাতুন,  সাহিত্য

    নবতান

    নবতান তাহমিনা খাতুন   একটি বছর পার করে আবার এসেছে বৈশাখ, চারদিকেতে বাজছে বুঝি তাই, আনন্দেরই শাঁখ। ঢোল বাজে, সানাই বাজে, বাজে মোহন বাঁশি সেই সঙ্গে আরো বাজে, সবার হাতের কাঁসি। বছরের আজ প্রথম ক্ষণে, এই কামনা করি, শান্তি বারি ঝরে পড়ুক, সারা ভুবন ভরি। বছরের সব পঙ্কিলতা ধুয়ে মুছে যাক অমিয় ধারা দিয়ে আবার, জগতকে ভরাক। আসুক নেমে ধরনীতে, সোনালী এক ভোর, ঘরে ঘরে বাঁধুক সবাই ভালবাসার ডোর। দূর করে দিক আবর্জনা, দূর হোক সব পাঁক, পাহাড়, নদী, বন-বনানী জীবন ফিরে পাক। কালবোশেখীর রুদ্র রোষে অশান্তি হোক দূর, মধুর মায়ায় সবার জীবন করুক সে ভরপুর। জগতে আজ হয় যেন…

  • নীল-রক্ত
    কবিতা,  তাহমিনা খাতুন,  সাহিত্য

    নীল রক্ত

    নীল রক্ত তাহমিনা খাতুন   শ্বেত বর্ণ মানব, রক্তের রং নাকি তার নীল আজব কথা শুনে হাসে বুঝি বিশ্ব নিখিল। রক্তের রং সেকি হয় কভু নীল? শরীর চিড়িয়া দেখাক তবে, উন্মাদ বালখিল। নির্মম আর নিষ্ঠুরতায় যাদের ছিল না কোন জুড়ি, জগত জুড়িয়া আজও কি তারাই ঘোরাবে শক্তির ঘুড়ি? বাদামী, পীত, কাল মানুষেরা ছিল তাদের ক্রীতদাস, তাদেরে দমিতে জগত জুড়িয়া সাদারা চালাতো ত্রাস। ফন্দি ফিকিরে দখল করিল কতশত জনপদ, সব সম্পদ লুটে নিয়ে গেল শ্বেত রঙা হার্মাদ। নীল রক্তের দাবী করে তারা ভাবে নিজেদেরে শ্রেষ্ঠ, তাদের আজব ভাবনাখানি যে ছিল একেবারে ভ্রষ্ট। নীল রক্তের দাবীদার যারা তাদের ইতিহাস বলে, দয়া মায়া…

  • কবিতা,  তাহমিনা খাতুন,  সাহিত্য

    প্রশ্ন নারী দিবসে

    প্রশ্ন নারী দিবসে তাহমিনা খাতুন নারী, সে নাকি মায়ের জাতি তবে সে কেন নিগ্রহ হতে, পায় না অব্যাহতি? পুত্র, সে জনম লভিল মায়ের উদরে পায় কি সে মা, যোগ্য মান কঠিন এ ভূধরে? কন্যা, সে একদা জ্যান্ত  যাইতো আঁধার কবরে নয় তো মরিতো নুনের বিষে, জানে তা জগৎ জুড়ে। নারীরে বানায় দেবী, গড়ে তারে দশভূজা রুপে! ষষ্ঠ উপাচারে পূজা দেয়, তারে পুষ্প আর ধুপে। দেবী মায়ের পূজা দেয় যবে, মঙ্গল প্রদীপ জ্বেলে, শুভ কাজে কেন পতি হারা নারী, দূরে যায় অবহেলে? সেদিন তো নয় অনেক দূরের সময়, পতির আয়ু হলে শেষ জলন্ত চিতায় জীবন্ত নারী, পুড়ে হতো নিঃশেষ! পঞ্চ ব্যঞ্জনে…

  • বাংলা-ভাষার-দুর্দশা
    কবিতা,  তাহমিনা খাতুন,  সাহিত্য

    বাংলা ভাষার দুর্দশা

    বাংলা ভাষার দুর্দশা  তাহমিনা খাতুন   দুখিনী বাংলা কাঁদে, কাঁদে আমার মায়ের ভাষা যেদিকেই চাই, দেখি শুধু হায় তাহার দুর্দশা! ভাষার মান রাখিবে বলিয়া, বাংলার সন্তান পিচ ঢালা পথে ঢালিয়া দিল, আপন  প্রিয় প্রাণ, “রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাই” গর্জিল দৃপ্ত শপথে তপ্ত শোণিত ঢালিয়া দিল, কঠিন সে রাজপথে। বিদেশি প্রভুর রক্ত চক্ষু, উপেক্ষিয়া অনায়াসে রফিক, শফিক, বরকত সেদিন, রক্ত গাঙেতে ভাসে, যে ভাষার তরে জীবন সঁপিল শফিউর, জব্বার, সে ভাষার তরে কারও কারও আজ, ঘৃণা ভরা অন্তর। বাংলা ভাষারে উপেক্ষিয়া চলে, বিদেশি ভাষার বন্দনা বুঝি না এ কোন আত্মগ্লানি, আত্মপ্রবঞ্চনা, ভিনদেশি ভাষা আসীন আজ,আত্ম অহমিকায় বাংলা ভুলিতে ব্যস্ত যেন, না…

  • সীমানা-বিহীন-পৃথিবী
    কবিতা,  তাহমিনা খাতুন,  সাহিত্য

    সীমানা বিহীন পৃথিবী

    সীমানা বিহীন পৃথিবী তাহমিনা খাতুন   বিধাতা যবে গড়িল বসুধা সীমানা নাহি দিয়া, অবাধ আকাশ সীমা নাহি মানে, ভরায় সকল হিয়া! ভোরের সূর্য ছড়ায় উত্তাপ, সকল প্রাণীর তরে আকাশের চাঁদ মধুর কিরণ বিলায় যে অকাতরে! সাগর ছুটিছে, জগত জুড়িয়া, হইয়া আপন হারা, নদীও যে তাই সাগরে মিলায় বিলাইয়া আপন ধারা। সবারে ঢাকিতে স্নেহের চাদরে উঁকি দেয় হিমাচল, তারে আশ্রয়ি ঝর্ণা ধারা ছুটিতেছে অবিরল! সবুজ বনানী সীমা নাহি মানে, নাহি মানে মানচিত্র, সবারেই সে ছায়া দিয়ে যাবে খুঁজিবে না কোন গোত্র! পুষ্প বিলায় রুপের রাশি না মানিয়া দেশ-কাল পাখি যে সদাই শুনাইছে গীত বাধা হীন উচ্ছ্বল! মানুষই টানিল সীমা রেখা উন্মুক্ত…

  • স্বাধীনতা-দিবস
    কবিতা,  তাহমিনা খাতুন,  সাহিত্য

    স্বাধীনতা দিবস, স্বাধীনতা

    স্বাধীনতা দিবস তাহমিনা খাতুন   ছাব্বিশ মার্চ স্বাধীনতা দিবস আজ, বাংলার মানুষ দিনটি উদযাপিবে কত শত আয়োজন! উদযাপিতে দিনটি আজিকার, পড়িবে তাহাদের মনে? একাত্তরের ছাব্বিশ মার্চ প্রথম স্বাধীনতা দিবস শ্যামল বাংলা দেখিয়াছিল শাসকের সন্ত্রাস। সন্ত্রাসী শাসকের বাস ছিল, পশ্চিম পাকিস্তানে, জানিও তাহারা ছিল, শত শত মাইল দূরের অবস্থানে। আজব এক দেশ ছিল সেই পাকিস্তান জন্মের শুরুও তাহার আছিল বড়ই বেমানান। ছিল নাকো কোনই মিল ভাষা অথবা সংস্কৃতির, শোষণের তরে তাহাদের ছিল শুধুই ফন্দি ফিকির। লুঠেরার দল লুটিতে লাগিল বাংলার সম্পদ, অভূক্ত রাখিয়া, শিক্ষা না দিয়া, আমাদেরে তারা রাখিল পশ্চাৎপদ। সাতই মার্চের বজ্রকণ্ঠ দিল স্বাধীনতার ডাক, সে ডাক শুনিয়া বাংলার মানুষ,…

  • কাল-রাত্রির-খাম
    কবিতা,  তাহমিনা খাতুন,  সাহিত্য

    কাল রাত্রির খাম

    কাল রাত্রির খাম তাহমিনা খাতুন   পঁচিশ মার্চ! এক কাল রাত্রির নাম, যে রাতে পাক সেনা দিল হানা পোড়ালো সহস্র ধাম! প্রথম মুক্তির ডাকটি আসিল কাল রাত্রির খামে, মুক্তি পাগল জনতা দিল সাড়া সে ডাকে অনেক রক্ত ঘামে। অসুরের দল ঝাঁপাইয়া পড়িল সর্বশক্তি নিয়ে, দানবের উদ্বাহু সে নৃত্য দেখিল বিশ্ব সবিস্ময়ে! মেশিন গান আর ট্যাঙ্ক নামিল, দমাইতে নিরস্ত্র জনতারে, আরও কত শত অস্ত্র নামিল বধিতে মানুষ অকাতরে। সারাটি দিনের ক্লান্তি নাশিতে ঘুমিয়ে ছিল যারা, চির নিদ্রায় তাদেরে শায়িত করিল পাকসেনা, হল যারা দিশেহারা। লেলিহান শিখা জ্বালাইয়া দিল পোড়াইতে অবোধ শিশু, দয়া মায়াহীন অমানুষের কাছে হারিল হিংস্র পশু। মেশিন গানের গুলিতে…

  • দুর্বিনীত-পুত্রগণের-প্রতি
    কবিতা,  তাহমিনা খাতুন,  সাহিত্য

    দুর্বিনীত পুত্রগণের প্রতি

    দুর্বিনীত পুত্রগণের প্রতি তাহমিনা খাতুন   হে পুত্রগণ! পৃথিবীর বলদর্পী পুত্রগণ হিংস্র, নিষ্ঠুর, অহমিকায় অন্ধ পুত্রগণ। অমিত বিক্রমে, দাম্ভিক পদভারে কাঁপাও মেদিনী জলে, স্থলে, অন্তরীক্ষে তোমার অবাধ, সদর্প বিচরণ, পুরুষ তুমি, আপন শক্তিমত্ততায় বিভোর ধরনীর বুকে কেহ নাই সমকক্ষ তোমার। কর তুমি তাই যাহা সাধ জাগে কেহ নাহি পারে নিবারিতে তোমায়, হে পুত্রগণ! কেহ নাহি জগতের পরে দমিতে তোমায় ক্ষমতা তোমার অসীম, প্রদর্শিছ তাহা অবিরাম জগত দেখিছে তোমার উল্লম্ফন, প্রতিক্ষণে, প্রতিটি প্রহরে। ধরনীর বুকে হেরিতে তোমার বিক্রম দর্শক বানায়েছ নিজ মাতায়, যাহার জঠরে লভেছিলে ঠাঁই নয়টি মাসের তরে যাহার উদরে লভি আশ্রয়, বাড়িয়াছ দিনে দিনে শোনিত নিঙাড়ি গড়িয়াছ আপন অবয়ব…

error: Content is protected !!