• পরাজিত-নাবিক
    গল্প,  রাতুল হাসান জয় (গল্প),  সাহিত্য

    পরাজিত নাবিক

    পরাজিত নাবিক রাতুল হাসান জয়   বিকেলের রোদে কদম গাছের ছায়া পড়েছে পানিতে। বাতাসের ধাক্কায় মৃদ্যু ঢেউ খেলছে পুকুরের পানি। একটা বড় কাতল মাছ হা করে ভেসে উঠছে কিছুক্ষণ পরপর। এরপর গপাগপ পানি গিলে ডুবে যাচ্ছে অতলে। যেভাবে ভাগ্য আমার জীবন গিলে ডুবে গেছে সময়ের পেটে। কদম গাছের ডালে বসা মাছরাঙাটা এরই মাঝে বেশ কয়েকবার হামলে পরেছে পানিতে। কি দেখে হামলে পরছে ঠাহর করতে পারছি না। একবারও তার ঠোঁটে মাছ চোখে পরেনি। আমারই মতো ব্যর্থ। পঁয়তাল্লিশ বছরেও সফলতার মুখ দেখলাম না। চাকরিতে ব্যর্থ। ব্যবসাতেও গাঁট জমাতে পারিনি। চেষ্টার কমতি রাখিনি। চেষ্টায় চেষ্টায় সন্তানদের জীবন এনে দাঁড় করিয়েছি খাঁদের কিনারে। দেনার…

  • ভাঙ-গড়ার-টান
    গল্প,  রাতুল হাসান জয় (গল্প),  সাহিত্য

    ভাঙা গড়ার টান

    ভাঙা গড়ার টান রাতুল হাসান জয়   মোষের দলের মতো তেড়ে আসছে কালো মেঘ। বাতাসে কেঁপে কেঁপে উঠছে টিনের চাল। বারান্দার রেলিংয়ে খুব কায়দা করে বসে আছে একটা শালিক। অপেক্ষায় আছে তার সঙ্গীর। মানুষ তার সঙ্গীকে দেওয়া কথা রাখেনা। ওয়াদা ভুলে যায়। পশুপাখিরা তার ব্যতিক্রম। মিতু এসে পাশে বসলো। এই মানুষটা আশেপাশে থাকলে ভরসা পাই। পাশের ঘরে আলোচনার প্রায় সবটাই কানে আসছে স্পষ্ট৷ হয়তো শুনিয়েই বলতে চাইছে। মিতু শাড়ির আঁচল টেনে চশমাটা মুছতে মুছতে বললো ‘ওসব ভেবো না তো। ওরা ছোট মানুষ। বুঝে কম।’ কথাটা আমায় সাবলীল ভাবে বললেও ভিতরে ভিতরে মরে যাচ্ছিলো ছেলে বউদের এমন কঠিন কথায়। টের পেলাম…

  • কবর
    গল্প,  রাতুল হাসান জয় (গল্প),  সাহিত্য

    কবর

    কবর রাতুল হাসান জয়   উদ্দেশ্যেহীন হাঁটছি। কোথাও যাবার জায়গা নেই। অপার্থিব জোছনা ঢেউ খেলছে চারপাশে। দেখতে ইচ্ছে করছে না। কিছু মানুষকে প্রকৃতি তার রূপে মুগ্ধ করতে পারে না। এই কিছু মানুষের একজন আমি। ঝুম বৃষ্টি, গাছে ঝুলছে বাদল দিনের প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় সব ধরনের কদম ফুল। সন্ধ্যার আকাশে পিচ ঢালা পথের ঠিক ওপরে গাছের ফাঁকে উঁকি দেওয়া অপার্থিব জোছনা; কোন কিছুই আমায় টানতে পারেনি কখনো। জন্ম থেকেই এমন নাকি ধীরে ধীরে ভালো না লাগা তৈরি হয়েছিলো আমার জানা নেই। তবে ল্যাম্পপোস্টের নীচে দাঁড়ালে নয়নতারার মতো ছায়া পরে। সেটা দেখতে ভালো লাগে। যাদুর শহর ঢাকার আসল যাদু কেবল রাতেই দেখা…

  • কবিতা,  গল্প,  রাতুল হাসান জয় (গল্প),  সাহিত্য

    জীবনের উপহাস (শেষ পর্ব)

    জীবনের উপহাস (শেষ পর্ব) রাতুল হাসান জয়    আজ কেন যেন এতদিন পর চিঠিটা পড়ে ভেতরে ভেতরে এক রকম মরে যাচ্ছি। বুকের ভেতরটা ভিজে উঠছে একদম। আমার হাত কাঁপছে। হাতে থাকা চিঠিটার ওপর কখন যে চোখ বেয়ে কিছু হাহাকার গড়িয়ে পড়ে ভিজে গেছে চিঠিটা, টেরই পাইনি। চাকরির বাজারের এই দূর্মূল্যের দিনে একটা বেসরকারি চাকরি জুটেছিল। কোম্পানির দূর্নীতির ফলে লসের খাতায় নাম লিখিয়ে কোম্পানি ছাটাই করে আমার কতো অনেক চাকুরের। এরপর সহজে চাকরি জোটে না। সরকারি চাকরি তো অমাবস্যার চাঁদ। বাধ্য হয়েই টিউশনি করাচ্ছি একটা, মেয়েটার নাম আয়েশা। সামনেই ইন্টার পরিক্ষা তার… আর্শির মাস্টারদা আজ হঠাৎই চিঠির উত্তর লিখতে বসেছিলো। লিখেছিলো…

  • গল্প,  রাতুল হাসান জয় (গল্প),  সাহিত্য

    জীবনের উপহাস (১ম পর্ব)

    জীবনের উপহাস (১ম পর্ব) রাতুল হাসান জয়   পড়ার টেবিলে বসে রাজ্যের মন খারাপ নিয়ে আমায় জিজ্ঞেস করলো আর্শি। ~ মাস্টারদা আপনি বাবাকে বলেছেন আর পড়াতে আসবেন না। কেন? কোন কথার উত্তর না দিয়ে বইটা বের করে চূড়ান্ত হিসাব করতে দিলাম। সে চুপচাপ বসে রইলো। তার হাত কাঁপছে। বুকের ভিতর অনেক না বলা কথা জমে আছে যার জন্য, তার সামনে থেকেও বলতে না পারলে এমন হাত পা কাঁপে। আর্শি চোখের জল লুকাচ্ছে। নাক টানছে বারবার। সে জানে আজকেই শেষ আজকের পর আর দেখা হবে না কখনো। ~ মাস্টারদা আমায় নিয়ে পালাবেন? যেমন রাখবেন তেমন থাকবো শুধু পাশে রাখবেন আজীবন। ~…

  • সময়ের-পাঁচফোড়ন
    গল্প,  রাতুল হাসান জয় (গল্প),  সাহিত্য

    সময়ের পাচঁফোড়ন

    সময়ের পাচঁফোড়ন রাতুল হাসান জয় ঘুটঘুটে অন্ধকার। কিন্তু অন্ধকারেও আয়েরা দুটো চোখ দেখতে পাচ্ছে স্পষ্ট। শক্ত করে সে দু চোখের মালিক তার চুল আর গলা চেপে ধরেছে। আয়েরা চিৎকার করতে চাইছে, কিন্তু চিৎকারের চেষ্টা এখানে ধোপে টিকবে না। ভয় যেন তার কন্ঠ শীতল করে দিয়েছে। ভয়ংকর দু চোখের এক আগন্তুক এ ভয়ের কারণ। চোখের সামনে চিৎকার করে কান্নার কারণ থাকলেও আয়েরা যেন নিথর এক বোবা চরিত্র হয়ে দরজার সাথে লেপ্টে আছে। ষোলশহর স্টেশন, রাত সাড়ে আটটা। রাস্তার পাশে ফেলে রাখা পিলারের স্তুপে বসে আছে দুজন। কিছুক্ষণ আগেই হর্ণ দিয়ে চবি’র উদ্দেশ্যে রওয়ানা করেছে শাটল ট্রেন। স্টেশন প্রায় ফাঁকা হয়ে এসেছে।…

  • পাথরে-ফুল
    গল্প,  রাতুল হাসান জয় (গল্প),  সাহিত্য

    পাথরে ফুল

    পাথরে ফুল রাতুন হাসান জয়   – বুঝলেন মতিন মিয়া মধ্যবিত্তের স্বপ্ন হলো আপনার ওই থালায় রাখা বায়েম মাছের মতো। হাতের নিচেই আছে অথচ খালি হাতে ধরে রাখতে পারছেন না। ছাই লাগিয়ে ধরে রাখতে পারছেন। আপনি কি বুঝতে পারছেন ছাইয়ের ব্যাপার টা? – জ্বী পারছি। টাকা। – টাকার অভাবেই আলোর মুখ দেখছে না স্বপ্ন। কাঁটাতারে হঠাৎ আটকে যাওয়া টুকরো কাপড়ের মতো অবস্থায় আছি। ঝড়ো হাওয়ায় উড়ে যাবো যাবো করেও থেকে যাচ্ছি। – আপনার কঠিন কথা বুঝতে কষ্ট হয় সবুজ ভাই। তবে অবস্থা বুঝতে পারি। মাছ দেবো? – দেন, এক কেজি। মতিন মিয়ার কাছ থেকে বায়েম মাছ নিয়ে বাসার দিকে হাঁটা…

error: Content is protected !!