-
যৌবন এখন, দেখে নিও তুমি
যৌবন এখন পূর্ণিমা হক বড়ো হয়ে গেছি আমি শৈশবের স্মৃতিগুলো কেঁদে ফিরছে আহত যৌবনকে দেখে। জীবনকে উপহার দিয়েছে যৌবন বিষময় একটা নীলাভ পার্সে, জীবনের সব অস্থিরতাগুলো এখন আমি পার্সে ভরেছি, সেটা আমার চলার সঙ্গী। বড়ো হয়ে গেছি আমি এখন যৌবন আমার কাছে জ্বলন্ত সিগারেট জীবনের ছাই, নোংরা এ্যাস্ট্রে। শৈশবের স্মৃতিগুলো তাই কেঁদে ফিরছে যৌবন এখন আমার তারুণ্যের উচ্ছৃঙ্খলতা মনের নানান জটিলতা বিষিয়ে ওঠা নিরস প্রাণ। বড়ো হয়ে গেছি আমি- যৌবন এখন আমার কাছে ভালোলাগা-ভালোবাসার ক্রমাগত দ্বন্দ্ব বিষাদের জীবন্তিকা খাম খেয়ালির বর্ধিত বছর পাওয়া না পাওয়ার বেদনার সাগরে উলঙ্গ স্মৃতিগুলোর অবাধ সাঁতার। আমার শৈশবের সবুজ মেঠোপথে যৌবন ফেলেছে বিষাক্ত কাঁটা, আমার…
-
জীবন বোধ, চিলেকোঠা
জীবন বোধ পূর্ণিমা হক গভীর নিশীথে তন্দ্ৰাহত নয়নে নেই ঘুম– জানালার ফাঁকে দেখি নিঃশব্দ আকাশ জোছনার কোলে শীতের শিশির কাঁঠালের ডালে পাখির ডাকাডাকি শিউলির ঘ্রাণে জীবনের ঘ্রাণ, আমিও চেয়ে থাকি অপলক চোখে বাইরের আকাশে। তন্দ্ৰাহত নয়নে নেই ঘুম নির্জন মাঠে, আমার মনের জীর্ণ কুটিরে জোছনার আলোরা খেলে শান্ত বাতাসে। মনের আকাশে শিশির ঝরিয়ে রোদেরা হাসে সকালের মেঠোফুলে। তোমায় পেয়েছিলাম একদিন সবুজ ক্ষেতের মাঝে, রূপালি বিকেলে গোধূলি বিভায়, কৃষ্ণচূড়ার তলে। আমার প্রতীক্ষায় হয়তো আজো দাঁড়িয়ে তুমি এই অবেলায়– বিশ্বাসের বোধোদয়ে। তবে কি আজো আমাদের অব্যক্ত ভালোবাসা পথ চলে ছায়াঘন তরুর পথে হাতে হাত রেখে? এখনো ক শুনি হৃদয়ে কান পেতে জোছনার…
-
আত্মতৃপ্তি, ভালোবাসা ভুল নয়, সাময়িক হতাশা শেষে
আত্মতৃপ্তি পূর্ণিমা হক ধরেছি হাত তোমার দিনের দ্যুতি, রাতের তারায় ভালো থাকার আশায়। পার হয়ে এসেছি কতো পথ অন্ধকার বিষাদের কষ্টের- নির্ভরতার আশে। কতো যে কেটেছে রাত নির্ঘুম নয়নের বিদগ্ধতায় যোজন যোজন পথের সীমানা পেরিয়ে শ্রান্ত দেহ-মনে ধরেছি হাত তোমার। শুদ্ধ শিকলে অটুট আপনে বেঁধেছো আমায় জলসা ঘরে তোমার আলিঙ্গনে। তোমার প্রেরণায় চলেছি আজও ভ্রান্তিবিদ্ধ এ আবাসে আপন করে, ভালো রেখেছো বলে – আত্মতৃপ্ত হয়েছে বিবেক পাওয়ার পরিসীমায় আপন আত্মার ভুবনে। আরও পড়ুন কবি পূর্ণিমা হকের কবিতা- হৃদয়পটে সন্ধ্যা অনুভবে ভালোবাসা ভুল নয় তোমায় পেয়েছিলাম বর্ষার এক ভোরে দেখেছিলাম বর্ষার বারিধারায় অস্পষ্ট করে শরতের মেঘে ঢাকা চাঁদ যেমন,…
-
অন্তরালে, ছোটোবেলার মতো, পুনশ্চ প্রশ্ন করেছি
অন্তরালে পূর্ণিমা হক কোথায় দেখেছি তারে আবছা আঁধারে মনে না পড়ে চেতনে মননে, সেই অবয়ব জেগে ওঠে মানসপটে অতীতের অলৌকিকতায়। কোথায় দেখেছি তারে নয়নের নদীতট নিসর্গের নিরন্তর স্রোতে খুঁজে ফিরি হৃদয়-ক্যানভাসে। সেই মুখ, চকিত নয়ন কল্পনা কিংবা বাস্তবতায় অর্ধবৃত্তাকারে মন-মোহনার সৈকতে আছড়ে পড়ে বারে বারে। কোথায় দেখেছি তারে সুনশান গাঁয়ের মাঠে, বটবৃক্ষের ছায়ায়, প্রকৃতির নির্জনতায় চেনাজানা অনুভূতির অন্তরালে মনে না পড়ে। কোথায় দেখেছি তারে নেইকো স্মরণে, ভুলেই তো যাই সে সব কথা যখন ছিলো সত্তাজুড়ে চেনা-জানা অনুভূতির অন্তরালে। আরও পড়ুন পূর্ণিমা হকের কবিতা- ভালোবাসি তোমায় হৃদয়পটে সন্ধ্যা ছো্বেটোলার মতো সেই যে ছোটোবেলায় বাড়ির পাশের কাদাজলে মাছ ধরতে গিয়েছিলাম,…
-
ভালোবাসি তোমায়, অনুভবে, একলা দাঁড়িয়ে আমি
ভালোবাসি তোমায় পূর্ণিমা হক এখনো ভালোবাসি তোমায় ঠিক আগের মতো, কতো যে বেসেছি ভালো অব্যক্ত ভালোলাগায় বুনেছি কামিনীর মালা দেহাত্মপ্রত্যয়ে। এখনো হৃদয়ে শুনি তোমার ভালোবাসার স্পন্দন, এখনো বৃষ্টিভেজা জোছনা রাতে শিহরণে সিক্ত হয় এ মন। বনবীথির শীতল ছায়ায় হাতে রাখা হাত সান্ধ্যক্ষণে হৃদয়ের না বলা কথা ঝরেছিলো পুলকের অশ্রুধারায়। এখনো ভালোবাসি তোমায় গন্ধে বিভোর হাসনাহেনার মতো নির্জনতার একান্ত ক্ষণে মন হারানোর মতো। এখনো ভালোবাসি তোমায় অবিরত, অবিচল- ঠিক আগের মতো। আরও পড়ুন পূর্ণিমা হকের কবিতা- অষ্টাদশী মন অথচ মানুষ সম্পর্ক অনুভবে শ্রাবণের বৃষ্টিধারায় ভিজবো বলে শাল মহুয়ার বনে হেঁটেছি কতো, কচি কচি পাতার ফাঁকে থোকা থোকা ফুলের গুচ্ছে…
-
সন্ধ্যা, পথের বাঁকে, দূরত্বের ছায়াপথে
সন্ধ্যা পূর্ণিমা হক আমার ঘরের পাশে সজনে গাছে যখন সন্ধ্যা নামে শীতের শিশিরে, বিহঙ্গরা নীড় খোঁজে। সন্ধ্যা শেষে রাত আসে বিস্মৃতির ব্যথা জমে মনে হৃদয়ের অতল জমিনে। কতদিন দেখি না তোমায় সতৃষ্ণ নয়নে! বিদায়ের বুকে নিয়েছ ঠাঁই মাটির মমতা ছেড়ে- অনন্তলোকে। সান্ত্বনার মেঘেরা আনে আঁধারে আষাঢ় আমার হৃদয়ে- অস্বস্থির দাবানলে পুড়ে অঙ্গারিত হৃদয়। কোথায় হারিয়ে গেল আকাশি মন সাদা-কালো হতাশার হিমে নীল নীল কষ্টের বিষে! আমার ঘরের পাশে সজনে গাছে রাত শেষে ভোর হয় পাখির কুজনে। সাদা সাদা ফুলেরা হাসে স্নিগ্ধ বাতাসে প্রশান্তির হাওয়া লাগে আকাশি মনে, অতঃপর দিবসের শেষে যখন সন্ধ্যা নামে অতল জমিন যায় ভরে হতাশার হিমে।…
-
হৃদয়পটে, আসবো ফিরে, দহন দাবানল
হৃদয়পটে পূর্ণিমা হক এখানে আকাশ নীল জমিনের বিস্তৃত সুবিশাল পরিসরে নির্জনতায়, নিঃশব্দে সাড়ে তিন হাত মাটির হৃদয়ে ঠিকানা হয়েছে তোমার। তোমার রেখে যাওয়া আনন্দ বেদনাগুলো করে বাস অবিচ্ছেদ্য আত্মীয়ের মতো- আমার হৃদয় পিঞ্জরে। ঋতু যায় ঋতু আসে জীবন শুধু যেতে পারে না ফেরার দেশে। তুমি তো নিসর্গের মতো- আপন আত্মার বিচ্ছেদে হয়েছো বিলীন, হাত রেখেছি আমি তোমার নিথর দেহে, শীতল কপালে- শেষ স্পর্শের অনুভূতিটুকু নিয়ে আমিও হয়েছি বিলীন। তবুও ব্যথার নীল বেয়ে জ্বলে ওঠে অন্য এক সুখ। পূর্ণিমার চাঁদ, স্নিগ্ধ হাওয়া, পাখির কলতান আকাশের নীলে তোমার বসতি যেনো নতুন দিনের মতো পুবাকাশে নতুন জীবন। তোমার প্রেরণাগুলো ঘাসফুল হয়ে রয়…
-
সম্পর্ক, আমার জন্য নয়
সম্পর্ক পূর্ণিমা হক বাবা বেঁচে থাকতে আমাদের সম্পর্কগুলো ছিল বৃষ্টিস্নাত পুঁইডাঁটার মতো লকলকে সবুজ প্রাণময়, বাবা সযত্নে মাচানে ছড়িয়ে দিতেন সম্পর্কের সবুজ ডালপালাগুলো, একসময় সেগুলো ছড়াতো বাড়ির উঠোন জুড়ে। বাবা ছিলেন সফল মায়া চাষি মাঙ্গলিক আয়োজনে দিনরাত সাজাতেন সম্পর্কের সাতরং, শেখাতেন ভালোবাসার নিবিড়তায় মানুষ হয়ে ওঠার স্বাবলম্বীতা। দুধসাদা পায়রার দল এসে যখন আমাদের মাচানে পুচ্ছ দুলিয়ে বাকম বাকম স্বরে ডেকে উঠতো সম্পর্কের মুখগুলো ভরে যেতো ভালোবাসার অব্যক্ত জলছাপে; আলোক জোছনার মতো সবুজ মায়ার ঘরে নেমে আসতো সাদা সুখের শুভ্রতা ঠিক বুঝে নিতাম সম্পর্কটা এমনই হয়, হতে হয়। বাবাহীন সম্পর্কের মাচান জুড়ে আজ প্রাণহীন পুঁইডাঁটা উঠোন জুড়ে শুকনো পাতার রিক্ততা…
-
অষ্টাদশী মন, মল্লিক বাড়ির চাঁদ
অষ্টাদশী মন পূর্ণিমা হক কুড়ি বছর আগের অষ্টাদশী আমি চোখে কাজল এঁকে, মুখে তিব্বত স্নো মেখে বেণী দোলাতে দোলাতে শ্যামলীদির বাগানে যেতাম। বাগানের বকুল, বেলী, কামিনী, হাসনাহেনার মন মাতানো সৌরভ আমায় আচ্ছন্ন করত, মন চাইতো রঙিন প্রজাপতি হয়ে উড়ে বেড়াই ফুলে ফুলে আকাশের নীলে; ভালোবাসার পংক্তি সাজাতে সাজাতে কখন যেনো পাড়াগাঁয়ের নদী হয়ে যেতাম শান্ত জলে সাঁতার কাটতো ইচ্ছের শাদা শাদা পাতিহাঁস, পানকৌড়ির মতো চুপচুপ ডুব দিতো সত্তার অজানা অনুভূতি; কখনো বা হয়ে যেতাম ফুল পাতার মায়াময় অরণ্য। মনের গোপন গহীনে আজও অষ্টাদশী আমি আর শ্যামলীদির সুবাসিত বাগান। ইদানীং সৌখিন সুখগুলো ঝুলবারান্দায় ফুটতে দেখি কাগজের ফুলের মতো গন্ধহীন,অনুভূতিহীন। নাগরিক…
-
ফেরা হয় যদি আবার, ভেতরবাড়ির মাঠ, অথচ মানুষ
ফেরা হয় যদি আবার পূর্ণিমা হক ফেরা হয় যদি ছেলেবেলায় আবার ঘাসফুল হয়ে রবো বুনোলতার ছায়; মাথার উপরে শরতের চাঁদ হিল্লোলিত সারাক্ষণ নিঃশঙ্ক হাওয়ায় ভেজা রাত, পত্রপুটে রেখে দেবো মায়ার শরাব। ফেরা হয় যদি আবার ধুলোমাখা মলিন বসনে- কুড়াবো বকুল,পলাশ, শিমুল কোচাভরা পাকা পাকা কুল, রাঙাবো আলতা পায়ে, পরে নেব কলাপাতা নূপুর। ফেরা হয় যদি পেছনের তামাটে জীবন ভুলে কাটবো সাঁতার শাপলাফোটা বিলে স্মৃতিকুড়ানী হবো, ঘুরে ঘুরে চেনা প্রান্তরে গাইবো দুঃখ ভোলানিয়া গান কোকিলের মধুক্ষরা স্বরে। ফেরা হয় যদি আবার নিস্তব্ধ রাতের প্রার্থনায় স্রষ্টার কাছে মিনতি রেখে মৃত্যুপুরীর রোজনামচা থেকে কেটে নেবো বাবার নাম! নির্ভার হাতটি ধরে হেঁটে হেঁটে…