-
রবি কবির জন্মদিনে শুভেচ্ছা
রবি কবির জন্মদিনে শুভেচ্ছা তাহমিনা খাতুন পঁচিশ বৈশাখ বিশ্বে হলো এক নতুন সূর্যোদয় সে রবির আলোয় উদ্ভাসিত সকল লোকালয়। জোড়াসাঁকোর ঠাকুর বাড়ি আলোকোজ্জল হলো সে আলোয় বুঝি জগৎ খানি হলো ঝলমলো। দিনে দিনে বাড়ল আলো, রঙিন হলো ধরনী নতুন মাঝি কলম বৈঠায়, বাইলো ভাবের তরণী। গল্প, কবিতা, নাটক, নভেল কিছুই রয়নি পিছে রবির হাতের যাদুর ছোঁয়ায়, মুগ্ধতা ছড়িয়েছে। কত কাব্য হলো লেখা নাই তো কোনো সীমা বিশ্ব পদক, যশ আর খ্যাতি রবির ঝুলিতে জমা। গান কবিতা পেল প্রাণ রবির হাতের ছোঁয়ায় রবির গানের সুরের যাদু, ছড়াল বিশ্বময়। রবির গানেই আশ্রয় নিই, হলে উদাসীন গান শেষ হলেও মনে বাজে নানা ছন্দের…
-
বোশেখ বন্দনা
বোশেখ বন্দনা তাহমিনা খাতুন চৈত্রের অগ্নিবান হলো সবে শেষ বোশেখ এলো যেন নিবারিতে সব ক্লেশ। চৈত্রের রোদ্দুরে মাঠ-ঘাট চৌচির কোথাও মেলে না দেখা শান্তির নীড়। জনশূন্য ফাঁকা নিস্তব্ধ চারিধার ভুলেছিল প্রাণীকূল শোনাতে কলস্বর। ঘুঘুর ক্লান্ত সুর ভরাত দুপুর মনের তারে বাজাতো শুধু বিষাদের সুর। বন-বনানী হয়েছিল কাতর পিপাসায় চাতকের মতো গুনছিল দিন বোশেখের প্রতীক্ষায়। চৈত্রের ভয়াল তাপে ওষ্ঠাগত সব প্রাণ রুদ্র কালবৈশাখী গাইল যেন নতুন দিনের গান। রুদ্র বোশেখের আজ হলো আগমন নতুন দিনের তরে জানাল আমন্ত্রণ। ঈশানকোণে শুনি মেঘের গুরু গুরু সোনালি দিনের বুঝি হলো আজ শুরু। দুরন্ত দূর্বার ঝড়ের হাওয়ায় পুরনো দিন সে তো উড়ে চলে যায়। উন্মাতাল…
-
একটি তর্জনী আর বজ্রকণ্ঠ
একটি তর্জনী আর বজ্রকণ্ঠ তাহমিনা খাতুন আজ হতে শতবর্ষ আগে জন্ম নিয়েছিল দেবদূত সম এক মানব এক দুখী জনপদে, সে জনপদের নাম বাংলা সহস্র বছরের পরাধীন জাতি। শোষণে, শাসনে তিলে তিলে হয়ে ছিল মৃতপ্রায় দরদী হৃদয় কেঁদে হয়েছিল আকুল, অসহায় জাতির দুর্দশায় তাই কঠিন শপথ নিয়েছিল সহস্র বছরের নিপীড়িত, বঞ্চিত, দুখী জনতার দুঃখ মোচনের। জগৎ দেখল একটি তর্জনী, কি অসীম শক্তিধর একটি ক্ষুদ্র তর্জনী! পৃথিবী শুনল একটি কণ্ঠের বজ্র নির্ঘোষ কি অপরিসীম বলে বলীয়ান! কি তেজদৃপ্ত সেই বজ্রকণ্ঠ! ঈশান কোণে জমে থাকা কালো মেঘ তা থেকে বিচ্ছুরিত হলো বিজলীর ঝলকানি, তীব্র ঝলকানির সে তড়িৎ শিখায় আলোকিত হলো বাংলার জনপদ উজ্জ্বল…
-
আট ফাল্গুন
আট ফাল্গুন তাহমিনা খাতুন ভিনদেশি প্রভু চেপে ধরেছিল বাংলার কণ্ঠনালি বাংলা ভুলে শিখতে হবে তাদের শেখানো বুলি! ‘মা’ বলে ডাকা চলবে না, আর দিল এই ফরমান উর্দু ভাষা শেখার তরে, হও বাঙালি আগুয়ান। ‘মানি না মানব না’ যতক্ষণ আছে প্রাণ। গর্জে উঠল বাংলার মানুষ ‘রুখবই রুখব’ মায়ের এ অপমান। ‘রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাই’ উঠল ধ্বনি সাগরের কূলে কূলে সে ধ্বনি ক্রমে ছড়িয়ে গেল সকল মর্মমূলে। গৃহকোণ ছাড়ি পথে নেমে এল বাংলার লাখো তরুণ তাদের দমাতে ঝলসে উঠল শাসকের সিসার আগুন। জীবন দিল রফিক-বরকত-জব্বার-শফিউর বাংলাভাষার সন্মান যেন তখনো খানিক দূর। জীবন দিল অহিউল্লা, আট বছরের শিশু মায়ের কোল খালি করে, সে…
-
হারানো ফাল্গুন
হারানো ফাল্গুন তাহমিনা খাতুন ফাল্গুন এসেছে আবার ফিরে শূন্য রিক্ত হাতে খুঁজে ফিরি ফাল্গুনী মায়া রুক্ষ অকরুণ খাঁ খাঁ প্রান্তরে। ফাল্গুন খুঁজে ফিরি জারুলের বনে, খুঁজে তো পাই না তা হারায়েছে জারুলের বন। সাথে নিয়ে গেছে স্নিগ্ধ মনোরম বেগুনির মায়া ফাগুনের আগুন খুঁজি কৃষ্ণচূড়ার বনে। কৃষ্ণচূড়ার বোন উধাও! সাথে হারায়েছে ফাগুনের আগুন রাধাচূড়া ফিরে গেছে, নয়ন জুড়ানো হলুদের আলপনা মুছে গেছে তাই। বৃক্ষহীন শাল বনে নাই পাতা ঝরার গান ফাল্গুনে শুনি না তাই কোকিলের ‘কুহুতান। বাঁশ বন উধাও, ঘাস ফড়িং পুচ্ছ নাচায় না আর বাঁশের কঞ্চির ডগায় ফাগুনের দিনে। ‘বউ কথা কও’ বুঝি ভুলেছে আহ্বান নিষ্ফল বেদনায় দোয়েল ফিঙে ভুলেছে…
-
রূপসী বাংলার কবি
রূপসী বাংলার কবি তাহমিনা খাতুন রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশ বাংলার ছবি এঁকে গেছো কত সহজ, অনায়াস! বিশালাক্ষী দিয়েছিল বর জনম লভেছিলে তাই, নীল বাংলার ধান আর ঘাসের ভিতর। নাটোরের বনলতা সেন পাখির বাসার মতো চোখ দেখে যার হয়েছিল কবি ভাবনা মগন। সোনালি ডানার চিল, সদা কেঁদে যায় এ কবির ভাবনায় লক্ষ্মী পেঁচা শিমুলের ডালে বসে অবিরাম ডেকে যায়। কার্তিক মাস আর ধানের ছড়া হৃদয়ের গহন কোণে, কেবলি দিয়ে যায় নাড়া। ধানসিঁড়ি নদী আর হিজল তমালের বন রূপমুগ্ধ কবির মনে সদা, করে গেছে বিচরণ। বাংলার নদী মাঠ ভাঁট ফুলের বর্ণিল সুষমায় ঘুরে ফিরে আসে দেখি তাহার কবিতায়। চায়নি এ…
-
ফেলানী
ফেলানী তাহমিনা খাতুন ফেলানী! সে এক ছোট বালিকার নাম পেটের ক্ষিধে নিয়ে কাঁদে অবিরাম। ঘরে তার আছে আরও ছোট ভাই বোন ক্ষুধায় তাদেরও বুঝি না থামে ক্রন্দন। পিতা তার জোটাতে না পারে ক্ষুধার আহার বাঁচার তরে সে যুদ্ধ তাই করে অনিবার। প্রাণান্ত পরিশ্রম সে করে দিন রাত সন্তানের মুখে তবু পারে না দিতে দুই মুঠো ভাত। ক্ষুধাতুর শিশুর কান্না সহিতে না পারে ফেলানীরে সাথে নিয়ে তাই দেশ ছাড়ে। সীমান্ত পাড়ি দিয়ে তবে, যাবে সে ভারত ভাবিল জুটিবে এবার দুটো ডালভাত। ক্ষিদের জ্বালা বড় জ্বালা না মানে দেশ কাল ক্ষুধার অন্নের লাগি বাড়ালো জঞ্জাল। ছোট্ট ফেলানীও ভাবিল বুঝি দুঃখ হবে…
-
আত্রাই নদী
আত্রাই নদী তাহমিনা খাতুন আত্রাই! ছোট্ট এক নদী ছোট্ট! তবু সে ছুটিতেছে বুঝি নিরবধি। ছোট্ট তার দুটি কূল এপার ওপার যায় দেখা তার না হয় কোন ভুল। কূল ঘেঁষে আছে তার ছোট ছোট গ্রাম। স্নেহে আর মমতায় ঘিরে রাখে অবিরাম। হয়তো বা ছিল কভু বিশাল জলধি কঠিন সময়ের সাথে হইয়াছে শীর্ণকায়া নদী। বড় বড় পানশি আর পাল তোলা নাও ছুটে যেত বহু দূরে কোন দূর গাঁও। গুন টেনে যেত নাও কোন সে দূরের পানে ভাটিয়ালি সুরের যাদু ভেসে আসত কানে। বিশাল জলধির চিহ্ন আজ নাহি খুঁজে পাই, ধুঁকিয়া বাঁচার আকুলতা তার দেখি যে সদাই। নিষ্প্রাণ স্রোত ধারা নিয়ে তবু…
-
কবি নজরুল
কবি নজরুল তাহমিনা খাতুন সাম্যের কবি তুমি, তাই গাহিয়াছ সদা সাম্যের গান তোমার গানেতে উঠিয়াছে বাজি, মানবতার জয়গান। ধর্ম, বর্ণ, স্থান, কাল, পাত্র অভেদ করি তুমি উড়ায়েছ বিজয় কেতন, আহা! অপরুপ মরি। বিদ্রোহী কবি তুমি তোমার লেখনী হয়েছে শাণিত, প্রনমি আপন ভূমি। দ্রোহের মন্ত্রে জাগিয়াছিলো, নিদ্রাতুর জাতি উৎসাহিলে তাদেরে পাড়ি দিতে, কঠিন ভয়াল রাতি। যেথা দেখিয়াছ অন্যায়, আর যেথায় অবিচার গর্জিয়া উঠেছে লেখনী তোমার, হইয়াছে ক্ষুরধার বিদ্রোহী তুমি, কবিতায় তব জ্বালালে অগ্নি শিখা বাংলা কাব্যের ভালে পরায়েছ, জলন্ত রাজটীকা। কি দুর্মর বাজি ধরিয়াছ তুমি, ভয় শূন্য চিতে ‘শৃঙ্খল ভাঙার’ গান শুনায়েছো, তোমার অভয় গীতে। ‘শিকল পরা’ পায়ে বেজেছিল, শিকল ভাঙ্গার…
-
কিশোর কবি
কিশোর কবি তাহমিনা খাতুন এক কিশোর, কিইবা বয়স এমন, মেতে থাকার কথা যার দূরন্তপনায় অথচ সে অবাক হয়, জন্মেই ক্ষুব্ধ স্বদেশ অবাক করে তাকে পৃথিবী অবাক তার কবিতার চরণে। বিশ্ব হতবাক, দেশলাইয়ের বারুদের মতো জ্বলে ওঠা এক কিশোর বিস্ময়ে চেয়ে রয় পরাধীন দেশ। লেখে সে কবিতা, সে কবিতা অন্তরে দোলা দেয় বিপ্লবী সুরে সে তো বুঝি কবিতা নয়, যেন স্ফুলিঙ্গ! দ্যুতি ছড়ায়, লাইনে লাইনে তার বিদ্রোহ, বিপ্লব তার ছত্রে ছত্রে! এ কোন ক্ষুদে বিদ্রোহী? এ যেন আর এক বিদ্রোহী নজরুলের অভ্যুদয়, পরাধীন ভারতের গগণ তলে সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশুর চিৎকারে, যে শুনতে পায় তীব্র প্রতিবাদ অন্যায় আর অসাম্যের বিরুদ্ধে, সে…