মাঝি
কবিতা,  জাহাঙ্গীর পানু

মাঝি // কবিতা // জাহাঙ্গীর পানু

মাঝি

মাঝি, তুমি আমাকে পার করে দাও।
যেভাবে ছোটোবেলায় নানা বাড়িতে যাবার পথে
তুমি আমাকে পার করে দিতে।
তুমি আমাকে পার করে দাও-
এই অনাচার, দুর্নীতি, দুর্বৃত্তায়ণ আর মাদকাসক্ত
সমাজের দূর্বিসহ জীবন থেকে,
অথবা তুমি আমাদের সমাজ থেকে অবিচার
অনাচার আর দুর্নীতিকেই পার করে দাও।
পার করে দিয়ে আমাদের সমাজকে মাদকমুক্ত করো
আর হৃদয়কে করো কলুষমুক্ত।
তুমি কত পার করে দিয়েছ চলমান পথিককে
কাস্তে হাতে কৃষক, দিনমজুর, বাঁক কাঁধের ফেরিওয়ালা।
যেভাবে তুমি পার করতে অফিসের কেরানি,
তহশিলদার, পিয়ন, হাতে লাঠি আর মুখে বাঁশি রাখা চৌকিদার
আর বাইকসহ স্কুলের মাস্টার মশাইকে।
মাথায় বোঝা আর হাতে ভারী ব্যাগ বহনকারী হাটুরেকে।
ঝাঁকা মাথায় হরেকরকম নানার রঙের
খেলনা সামগ্রীর লীলাওয়ালাকে,
মাটির বাসনপত্র ভরা কুমারকে, গঞ্জ থেকে থানকাপড়ের
পট্টি নিয়ে ফেরা দর্জিকে।
সাপুড়ে, কাঁধে বসা বানরওয়ালাকে কিংবা
একতারা-দোতারা হাতে নিয়ে পথচলা কোনো লোকগানের শিল্পীকে।
কদাচিৎ দু’একটা মোটর বাইকওয়ালা কেতাদুরস্ত পথিককে।
কত নির্ভরতায় তুমি পার করে দিতে-
চশমার সাহায্যে লাঠি হাতে হাঁটা অতিশীপর বৃদ্ধ দাদুকে,
পুঁটলি হাতে বয়োবৃদ্ধ সর্বজননী বুড়িমাকে।
নতুন সংসার সাজানোর উদ্দেশ্যে এ গ্রাম থেকে ও গ্রামে যাওয়া
পালকিসহ কোনো বিয়ের বরযাত্রীদেরকে।
কিংবা স্বামীর পিছে পিছে হেঁটে আসা বাপের
বাড়ি ফেরত কোনো অশ্রুসিক্ত নববধুকে
তেমনি তুমি আমাকে পার করে দাও।
তুমি পার করে দাও সমাজের যত বঞ্চনা, লাঞ্চনা, গঞ্জনা
আর হতাশাবাদকে।
পার করো মানুষের অহংকার, অত্মম্ভরিত্ব হানাহানি আর অত্যাচারকে.
পরস্পরের হিংসা-বিদ্বেষকে,
সন্ত্রাস, দুর্নীতি আর নৈরাজ্যকে।
তুমি পার করলেই আমরা পাব সুখী, সমৃদ্ধ
এক শান্তিপূর্ণ সমাজ ব্যবস্থাকে।

সেপ্টেম্বর ২০, ২০২৫ খ্রি.

আরও পড়ুন কবিতা-  

একুশ তুমি

ভাষা শহিদ স্মরণে

কলকাকলি

 

ঘুরে আসুন আমাদের সুজানগর এর অফিসিয়াল ফেসবুক ও  ইউটিউব চ্যানেলে

Facebook Comments Box

কবি জাহাঙ্গীর পানু—এক নিরন্তর পথিক, যাঁর কলম চলে জীবনের বিভিন্ন বাঁকে। তাঁর লেখালেখির কোনো নির্দিষ্ট সীমানা নেই; সময়, প্রাসঙ্গিকতা এবং অন্তরের আকর্ষণই তাঁকে পথ দেখায়। তিনি শব্দের মাঝেই খুঁজে নেন জীবনের গভীরতাকে, যেখানে প্রতিফলিত হয় তাঁর অনুভূতির মগ্নজগৎ। তাঁর সৃষ্টিকর্মে গ্রামীণ জীবনের স্নিগ্ধতা, প্রকৃতির মমতা, আর মানুষের অন্তর্লীন আবেগ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। কখনো তাঁর রচনায় দেখা মেলে গ্রামবাংলার উর্বর মাটির টান, কখনোবা সংস্কৃতির রঙিন বৈচিত্র্য। প্রতিটি লেখায় তিনি সময়ের চিহ্ন ধরে জীবনের মায়াজাল বুনে চলেন। তিনি নিয়মিত লিখছেন ‘আমাদের সুজানগর’ ওয়েব ম্যাগাজিনে, যেখানে তাঁর লেখাগুলোর মাধ্যমে পাঠক খুঁজে পান নতুন এক ভাবনার দিগন্ত। তাঁর প্রথম প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ “বিষণ্ণতার নীল চাদর” এক অনন্য সংকলন, যেখানে বিষণ্ণতার নীল ছায়ায় ঢাকা জীবনের নানা রূপ, অনুভূতি আর প্রতিফলন মূর্ত হয়ে উঠেছে। ১৯৭৭ খ্রিষ্টাব্দে পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার মানিকহাট ইউনিয়নের উলাট গ্রামে জন্ম নেওয়া কবি জাহাঙ্গীর পানু প্রকৃতির স্নেহছায়ায় বেড়ে ওঠা এক সৃষ্টিশীল কবি। তাঁর লেখায় আজও মেলে সেই মাটির গন্ধ আর শেকড়ের টান।

error: Content is protected !!