বেকারত্ব
কবিতা,  জাহাঙ্গীর পানু,  সাহিত্য

বেকারত্ব, বনের পশু, ধূসর স্মৃতি

বেকারত্ব
জাহাঙ্গীর পানু

 

বেকারত্বের অভিশাপ নিয়ে হেঁটে চলছে ফুটপাত ধরে
দমকা হাওয়ায় উড়ে উস্কো খুস্ক মাথার চুল
লোকাল বাসের ভাড়া মিটিয়ে চলছে হেটে
দিতে হবে মৌখিক পরীক্ষা
অনেকদিন ধরে শুধু ইন্টারভিউ দিয়ে চলেছে
গ্রামের অজপাড়াগাঁয়ের বেকার ছেলেটি
কিন্তু সরকারি চাকুরীতো দূরের কথা
কোনো বেসরকারি চাকুরীও ভাগ্যে জোটে না।

শরীরের ঘামে অনার্স প্রথম বর্ষে
বাবার কিনে দেয়া হাত ঘড়িটা
কেমন যেনো কালচে হয়ে গেছে।
অনেকদিন হলো একজোড়া নতুন জুতা
কেনা হয় না;
একপাশে ক্ষয়ে গেছে, দ্রুত হাঁটতে গেলে
অনেক অসুবিধা হয়।

বাড়িতে অসুস্থ বাবা অধীর আগ্রহে
অপেক্ষায় থাকে ছেলের ভালো একটা চাকুরী হবে,
ছোট বোনের বিয়ের বয়স হয়েছে
মা বলেছে, ভালো একটা ছেলে দেখে বিয়ে দিতে হবে।
এভাবে আর কতদিন, কতকাল ঘুরতে হবে-
চাকুরী নামক সোনার হরিণের পিছনে!
এভাবে সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে;
উদ্ভ্রান্ত পথিকের মতো দিকবিদিক জ্ঞানশূন্য
ঘুরে বেড়ায় সে।

আরও পড়ুন কবি জাহাঙ্গীর পানুর কবিতা-
শ্বাশত বাণী
বেকারত্ব

 

বনের পশু

বনে যাদের ছোট কুটির একলা অবেলা
সবুজ বনের শ্যামল ছায়া দেয় যে মনে দোলা।
বনভূমির মাঝে তাদের গোল পাতারই ঘর
বৃষ্টি ঝরা গোধূলিতে আলো হয় যে পর।

রাত দুপুরে হিংস্র পশুর ভয় যে থাকে মনে
মৌয়ালিরা সংগোপনে যায় যে মধুবনে।
জোনাকিরা মিষ্টি আলো মিটমিটিয়ে জ্বলে
টিয়াপাখি আপন মনে যায় যে কথা বলে।

ঝোপ-ঝাড়ে ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক শোনা যায়
আড়াল থেকে বনবিড়াল সেদিক পানে চায়।
বন্য হাতির ভালোবাসা পাশে তাদের রয়
হরিণীর চঞ্চলতায় মন হারিয়ে যায়।

ঘরের কোণে চুপটি বসে খরগোশের ছানা
বানর শুধু লাফিয়ে বেড়ায় বসতে নাকি মানা।
বাঘ মামা হালুম ডেকে ভয় দেখাতে চায়
সিংহ মামার গর্জনতে সব পশু ভয় পায়।

ধূসর স্মৃতি

অস্পৃশ্যের স্পৃহা আমাকে তাড়িত করে
আত্মভোলা মন দিগবিদিক ছুটে বেড়ায়
বিষন্ন বাতাসে, ভগ্ন হৃদয়ে
মহুয়ার গন্ধে মাতাল, নেশাগ্রস্থ
হলদে ডানা মেলা পাখির মতো দূর আকাশ পানে
অথবা নীল প্রজাপতির মতো ফুরফুর করে ঘুরে বেড়ায়
ভ্রমরের গুণগুণিয়ে গানে নিজেকে জানার পরিচয়ে
রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষার প্রতিটি মুহূর্ত

কল্পনার জগতকে নিয়ে যায় ভিন্ন ধাঁচে, ভিন্ন আবেগে।
আমার চলার প্রতিটি কণ্টকাকীর্ণ পদক্ষেপ

আমারই দিকে ফিরে আসে শূন্যে ছুড়া পাথরের মতো
অবেলায় ভেসে আসে বিরহী সুর

কোন এক দৈন্য ভরা কুঁড়ে ঘর হতে
সময়ের ফোড়নে একীভূত হবে কি খণ্ডিত হৃদয়?
দখিনা মৃদু হাওয়ায় আসবে
বাংলা যুক্ত বর্ণের মত একীভূত হয়ে গেছে আমার হাসি আর কান্না
অতীতের সুখময় স্মৃতিগুলো বর্তমানে বড্ডই বেমানান লাগে
ঝাপসা চোখে ধূসর স্মৃতি গোধূলির ছায়ার মতো দেখায়।

আরও পড়ুন কবিতা-

লাল সূর্যটা নাও

সন্ধ্যা নামার আগে

কেশবতী প্রিয়ংগনা

 

ঘুরে আসুন আমাদের সুজানগর-এর অফিসিয়াল ফেসবুক ও  ইউটিউব চ্যানেলে

বেকারত্ব

Facebook Comments Box

কবি জাহাঙ্গীর পানু—এক নিরন্তর পথিক, যাঁর কলম চলে জীবনের বিভিন্ন বাঁকে। তাঁর লেখালেখির কোনো নির্দিষ্ট সীমানা নেই; সময়, প্রাসঙ্গিকতা এবং অন্তরের আকর্ষণই তাঁকে পথ দেখায়। তিনি শব্দের মাঝেই খুঁজে নেন জীবনের গভীরতাকে, যেখানে প্রতিফলিত হয় তাঁর অনুভূতির মগ্নজগৎ। তাঁর সৃষ্টিকর্মে গ্রামীণ জীবনের স্নিগ্ধতা, প্রকৃতির মমতা, আর মানুষের অন্তর্লীন আবেগ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। কখনো তাঁর রচনায় দেখা মেলে গ্রামবাংলার উর্বর মাটির টান, কখনোবা সংস্কৃতির রঙিন বৈচিত্র্য। প্রতিটি লেখায় তিনি সময়ের চিহ্ন ধরে জীবনের মায়াজাল বুনে চলেন। তিনি নিয়মিত লিখছেন ‘আমাদের সুজানগর’ ওয়েব ম্যাগাজিনে, যেখানে তাঁর লেখাগুলোর মাধ্যমে পাঠক খুঁজে পান নতুন এক ভাবনার দিগন্ত। তাঁর প্রথম প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ “বিষণ্ণতার নীল চাদর” এক অনন্য সংকলন, যেখানে বিষণ্ণতার নীল ছায়ায় ঢাকা জীবনের নানা রূপ, অনুভূতি আর প্রতিফলন মূর্ত হয়ে উঠেছে। ১৯৭৭ খ্রিষ্টাব্দে পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার মানিকহাট ইউনিয়নের উলাট গ্রামে জন্ম নেওয়া কবি জাহাঙ্গীর পানু প্রকৃতির স্নেহছায়ায় বেড়ে ওঠা এক সৃষ্টিশীল কবি। তাঁর লেখায় আজও মেলে সেই মাটির গন্ধ আর শেকড়ের টান।

error: Content is protected !!