দূরবর্তী তুমি একাত্তর
দূরবর্তী তুমি একাত্তর
তোমাকে এখন আর ছুঁতেই পারি না একাত্তর
আমার নাগাল থেকে ক্রমাগত দূরবর্তী তুমি
শপথের পাঠ ভুলে আজ আমি হয়েছি পাতক
লজ্জায় অতি সংকুচিত
কত আর উচ্চতায় যেতে পারি আমি?
বামনের হাত আমার
পারে না স্পন্দিত-স্পর্শ করতে বিপুল অবয়ব তোমার
কেবলই ফিরে আসি ব্যর্থতার গ্লানিতে ভেসে ভেসে,
আমার অস্তিত্বের সাথে প্রাণময় বাঁধা আছো তুমি সেই কবে থেকে
তোমার মুক্তিলগ্নে অগ্নিঝরা রণাঙ্গন হতে,
তখন স্থির প্রতিজ্ঞায় প্রত্যেয়ী কথা ছিলো
স্বাধীনতা-স্বাদ আদিগন্ত প্রতিঘরে পৌঁছে দেবো
সোনার বাংলার প্রশান্ত সৌরভ সহাস্য বিলাবো চৌদিকে,
ধানের মৌ মৌ ঘ্রানে জুড়াবে কিষাণের প্রাণ
সৌভাগ্যের অমল হাসি উৎকীর্ণ হবে শ্রমিকের ঠোঁটে
মেহনতি মানুষের দুঃখরাত কেটে নাচবে সকাল
অনুপম সাজাবো তোমায় অনন্ত বৈভবে
সুকান্তি অপ্সরা করে দেখাবো বিস্বময়,
তোমার বিজয় গৌরবে
অন্তহীন অহংকারে ভাসবো সুখের বন্যায়,
কথা ছিলো
তোমার দুইখানি পায়ে পরাবো সোনার খারু
সুডৌল কোমরে বিছা
জোড়া জোড়া কারুময় চুরি আর বাহারী বাজুবন্দ জড়াবো দুই হাতে
দুলবে নোলক নাকে, নকশা করা হাঁসুলি গলায়
ঝোলাবো ঝুমকা কানে, সিথিপাটি বিছাবো যতনে
খোঁপায় সোনালী কাঁটায় অপরূপ সাজাবো সোনার বাংলা আমার,
অথচ অক্ষম আমি কিছুই পারিনি
হীন-কর্ম দ্বন্দ-সংঘাতে অপচয়ে চলে গেছে দিন, বছর বছর,
একাত্তরের রণাঙ্গনের জলন্ত শুদ্ধতায়
যে পুতমন্ত্র দিয়েছিলে তুমি রক্তের অক্ষরে লিখে
সে বারতা বিস্তৃত হয়ে বারংবার করেছি বঞ্চিত তোমায়
যে স্বপ্নকথা হিরন্ময় পংতিগাঁথা ছিলো বুকের পাঁজরে
বেমালুম সেইসব ভুলে সহস্র বিচ্যুতির মাঝে
বহুধা ভগ্নাংশে হয়েছি সঙ্কীর্ণ,
স্বার্থের নিগড়ে পড়ে খণ্ডিত হয়েছি আমি প্রহরে প্রহরে
তোমার কনকোজ্জ্বল রাজপথ ছাড়ি অন্ধগলিতে হাতড়েছি পথ
বিস্তীর্ণ শ্যামল প্রান্তর অবহেলে
অতিছোট অধিক্ষেত্র নিয়ে নিঃসার করেছি সংগ্রাম,
ক্ষুদ্র হতে হতে আমি
তোমার বিশাল বক্ষ হতে অসহায় পরেছি গড়ায়ে,
এখন কেবলই আসামী আমি কাঠগড়ায় তোমার
নতজানু যতবার যেতে চাই নিকট সান্নিধ্যে
নিরুপায় বিস্মিত চোখে দেখি
তোমার পদপ্রান্ত ছাড়া চিতল বক্ষ, প্রশস্ত ললাট
কিছুই পারি না ছুঁতে,
হায়, অতি ক্ষুদ্র হয়ে গেছি আমি, আমরা এখন,
প্রিয় একাত্তর আমার তুমি যোজন যোজন দূরবর্তী এখন।
আরও পড়ুন কবিতা-
সাবাশ বাংলাদশ
তিলোত্তমা বাংলাদেশ
লিপিকার আমিই তোমার
ঘুরে আসুন আমাদের অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেল ও ফেসবুক পেইজে
দূরবর্তী তুমি একাত্তর