উলাট-সিদ্দিকীয়া-ফাযিল-মাদ্রাসা
উলাট,  মাদ্রাসা,  মানিকহাট,  শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

উলাট সিদ্দিকীয়া ফাজিল মাদ্রাসা

উলাট সিদ্দিকীয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসা পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার অন্যতম সুপ্রাচীন ইসলামী বিদ্যাপীঠ। ১৯১৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এই মাদ্রাসা পাবনা জেলার শুরুর দিকের প্রতিষ্ঠিত একটি বিদ্যানিকেতন।

এক নজরে উলাট সিদ্দিকিয়া ফাযিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসা:
• ধরন            :   আধা-সরকারি
• স্থাপিত         :   ১৯১৫
• অধ্যক্ষ        :   মোঃ মতিউর রহমান (ভারপ্রাপ্ত)
• শিক্ষার্থী        :   ৫০০+
• ঠিকানা         :   গ্রাম-উলাট, উপজেলা-সুজানগর, জেলা-পাবনা
• ভাষা             :   বাংলা, আরবি ও ইংরেজি
• ক্রীড়া            :   ফুটবল, ক্রিকেট, ভলিবল

অবস্থান: পাবনার সুজানগর উপজেলার মানিকহাট ইউনিয়নের উলাট গ্রামে উলাট সিদ্দিকীয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসাটি ঢাকা পাবনা মহাসড়কের চিনাখড়া বাস স্টেশন হতে ৮ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং সুজানগর উপজেলা সদর হতে ১২ কিলোমিটার পূর্বে গাজনার বিলের দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত।

প্রতিষ্ঠাকালীন ইতিহাস: পাবনা জেলার মধ্যে সর্বপ্রথম প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসার নাম উলাট সিদ্দিকীয়া ফাজিল ডিগ্রী মাদ্রাসা। ১৯১২ সালে প্রথমে মক্তব আকারে উলাট মাদ্রাসার গোড়াপত্তন হয়। উলাট গ্রামের হাজী তমিজউদদীন ও বদিউজ্জামান প্রথমে মাদ্রাসার জন্য জমি দান করেন। তাদেরই পরিচিত খালইভাড়ার মহর আলী প্রাং ও আব্দুস সাত্তার প্রাং এর বাঁশ ঝাড়ের বাঁশ এবং তেবিলা গ্রামের হাজী আছির উদ্দিনের জমির ছোন দিয়ে মাদ্রাসার জন্য একটি ঘর বানানো হয়।পরবর্তীতে ১৯১৫ সালে মাদ্রাসাটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন ভারতের ফুরফুরা শরীফের বড় পীর হযরত মাওঃ আবু বকর সিদ্দিক (রহঃ)। তাঁরই নাম অনুসারে মাদ্রাসাটির নামকরণ করা হয় উলাট সিদ্দিকীয়া এবতেদায়ী মাদ্রাসা।

মাওলানা-ইসহাক-মিয়া
মাওলানা ইসহাক মিয়া, সাবেক অধ্যক্ষ। সবচেয়ে সফল অধ্যক্ষ, ৩৭ বছর সুপার ও অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেছেন

পরিচালনা কমিটি: এতদঞ্চলের মানুষের ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা-দীক্ষা ও আত্ম উন্নয়নের সুতিকাগার হিসেবে পরিচিত উলাট মাদ্রাসা। আশেপাশের বিভিন্ন গ্রামের গণ্যমান্য মুরব্বিদের দ্বারা প্রথমেই একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সম্মানিত সদস্যবৃন্দ হলেন উলাটে গ্রামের হাজী তমিজ উদদীন, ওলি মোল্লা, আবেদ আলী মোল্লা,  তেলেম মৃধা,  ইরাদ সেখ ও গোড়ান সেখ। মানিকহাটের নিফাজ উদ্দিন মিয়া,  বোনকোলার নওজেস আলী মিয়া, খয়রান গ্রামের ইয়াদ আলী খান,  হাজী ময়েজ উদ্দিন বিশ্বাস ও মহির উদ্দিন তালুকদার, রাইপুরের হাজী মোহাম্মদ আলী (সাবেক সাংসদ মকবুল হোসেন সন্টুর দাদা),  তেবিলার হাজী আছির উদ্দিন এবং খালইভাড়ার মহর আলী প্রামানিক ও আব্দুস সাত্তার প্রামানিক। মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক ছিলেন যশোর জেলার মাওলানা আব্দুল মালেক।

শিক্ষা বোর্ডের অনুমোদন: মাদ্রাসাটির দাখিল অনুমোদন হয় ১৯৪২ সালে, তখন মাদ্রাসাটির নাম হয় উলাট সিদ্দিকীয়া সিনিয়র মাদ্রাসা। এবং প্রধানের পদবি হয় সুপারিন্টেন্ডেন্ট বা সুপার। আলিম অনুমোদন হয় ১৯৭৬ সালে এবং প্রধানের পদবি হয় অধ্যক্ষ। ১৯৯২ সালে ফাজিল অনুমোদন পায়। এবং তখন মাদ্রাসাটির নামকরন উলাট সিদ্দিকীয়া ফাজিল (ডিগ্রী) মাদ্রাসা।  মাদ্রাসাটি বর্তমানে আলিম পর্যন্ত বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড ঢাকা এবং ফাযিল শ্রেণি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়ার অধীনে পরিচালিত। অত্র মাদ্রাসার অধীনে একট কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কম্পিউটার ভকেশনাল ইনস্টিটিউট ২০০৪ সাল থেকে পরিচালিত হচ্ছে।

অবকাঠামো: উলাট গ্রামের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত এ মাদ্রাসাটি প্রায় তিন একর জমির উপর নিজস্ব ক্যাম্পাস রয়েছে। তিনটি দ্বিতলা ও একটি একতলা বিশিষ্ট ভবন ও একটি চারতলা ভবন নির্মাণাধীন। বর্তমানে শিক্ষক কর্মচারীর পদের সংখ্যা ৩৪ জন।

উলাট সিদ্দিকীয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসা
       উলাট সিদ্দিকীয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসা মাঠ

সহশিক্ষা কর্মসূচী:
• বাংলাদেশ স্কাউট
• বাৎসরিক শিক্ষা সফর
• বাৎসরিক সাংস্কৃতিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা

পোশাক পরিচ্ছেদ:পোশাক পরিচ্ছেদ:
ছাত্র: সাদা পাজামা, গাড় সবুজ (পেস্ট কালার) পাঞ্জাবী, সাদা টুপি এবং সাদা জুতা-মোজা।
• ছাত্রী: সাদা পাজামা, গাড় সবুজ (পেস্ট কালার) ফ্রক, সাদা স্কার্ফ এবং সাদা জুতা-মোজা

আরও পড়ুন তালুকদার বাড়ি জামে মসজিদ

বাৎসরিক উৎসব: এই মাদ্রাসা প্রাঙ্গনে প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই প্রতি বছর ইসলামী জালছা ও ইছালে ছওয়াবের আয়োজন করা হয় যা এ অঞ্চলের মানুষের কাছে উলাটের জালছা হিসেবে বহুল পরিচিত। জালসা উপলক্ষে আশেপাশের কয়েকটি গ্রামের মানুষের মধ্যে উৎসব আমেজ বিরাজ করতো। তৎকালীন সময়ে এত বড় জালছা এ অঞ্চলে আর কোথাও হতো না। দেশের বিভিন্ন জেলা হতে ধর্মপ্রাণ মানুষ এই জালছা শুনতে আসতো এবং মৃত পিতা-মাতা ও আত্মীয় স্বজনের রুহের মাগফিরাত কামনা করে মুক্ত হস্তে দান করতো।

নিম্নে বিভিন্ন সময়ে মাদ্রাসার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধানগণের নামের তালিকা:

অবদান: ভারতের ফুরফুরা ও মেদিনীপুরের পীর সাহেবদের দোয়া ও আশীর্বাদপুষ্ট যে বিদ্যাপীঠটি ১৯১৫ সালে ইসলাম ধর্ম শিক্ষার আলোকবর্তিকা হাতে নিয়ে পথচলা শুরু করেছিলো, তা এখন এক মহীরুহ। উলাট ও পার্শ্ববর্তী বোনকোলা, খয়রান ও মানিকহাট গ্রামের শিক্ষা, সংস্কৃতি ও সভ্যতা সূতিকাগার হিসেবে পরিচিত। বিশেষ করে উলাট ও আশেপাশের কয়েকটি গ্রামের নারী শিক্ষার প্রসারে বিরাট ভুমিকা পালন করে আসছে। যা পরবর্তীতে এতদঞ্চলে রত্নগর্ভ মাতা সৃষ্টিতে বিশেষ ভুমিকা রাখছে।
এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি আমাদের দিয়েছে দেশের খ্যাতনামা আলেম, বুজর্গ, ইসলামের দ্বায়ী, শিক্ষাবিদ, সমাজকর্মী ও রাজনৈতিক সেবক। যারা আজ গ্রাম, অঞ্চল, শহর ও দেশ দেশান্তরে ছড়িয়ে পরে দেশ, সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনার গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করছে।

লেখক:
মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন পানু
এজেন্ট ও ইনচার্জ
ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড
চিনাখড়া এজেন্ট শাখা,  সুজানগর, পাবনা।

তথ্যসূত্র:
শখের তরী থেকে উলাট সাইদ ফুটবল ক্লাবের ক্রমবিকাশ শীর্ষক স্মরণিকা। ক্লাবের ক্রমবিকাশ শীর্ষক স্মরণিকা।

ঘুরে আসুন আমাদের অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেলফেসবুক পেইজে
Facebook Comments Box

প্রকৌশলী মো. আলতাব হোসেন, সাহিত্য সংস্কৃতি বিকাশ এবং সমাজ উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে নিবেদিত অলাভজনক ও অরাজনৈতিক সংগঠন ‘আমাদের সুজানগর’-এর প্রতিষ্ঠাতা এবং সাধারণ সম্পাদক। তিনি ‘আমাদের সুজানগর’ সাহিত্য সংকলনের সম্পাদক এবং ‘আমাদের সুজানগর’ ওয়েব ম্যাগাজিনের সম্পাদক ও প্রকাশক। এছাড়া ‘অন্তরের কথা’ লাইভ অনুষ্ঠানের সার্বিক তত্ত্বাবধায়ক তিনি। সুজানগর উপজেলার ইতিহাস, ঐতিহ্য, সাহিত্য, শিক্ষা, মুক্তিযুদ্ধ, কৃতি ব্যক্তিবর্গ ইত্যাদি বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করতে ভালোবাসেন। বিএসসি ইন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পন্ন করে বর্তমানে একটি স্বনামধন্য ওয়াশিং প্লান্টের রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্ট সেকশনে কর্মরত আছেন। তিনি ১৯৯২ সালের ১৫ জুন, পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার অন্তর্গত হাটখালি ইউনিয়নের সাগতা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

error: Content is protected !!