আবদুল-গনি-হাজারী-১ম-পর্ব
নওয়াগ্রাম,  নাজিরগঞ্জ,  লেখক পরিচিতি,  সাহিত্য

আবদুল গনি হাজারী (১ম পর্ব)

আবদুল গনি হাজারী (১ম পর্ব)

 

পঞ্চাশ দশকে বাংলা সাহিত্যের একজন প্রচার বিমুখ কবির নাম আবদুল গনি হাজারী (১৯২১-১৯৭৬ খ্রি.)। তিনি ছিলেন একাধারে একজন কবি, সাংবাদিক ও সংবাদপত্রের দক্ষ সংগঠক। বহুমুখী প্রতিভার সমন্বয় ঘটেছিল তাঁর মধ্যে।  সংবাদপত্রের শিল্পোন্নয়নে তিনি ছিলেন নিবেদিত প্রাণ।  তিনি ছিলেন একজন সমাজ সচেতন কবি।

সাহিত্যে অবদানের জন্য তিনি ইউনেস্কো পুরস্কার ও বাংলা একাডেমি পুরস্কার এবং সাংবাদিকতায় অবদানের জন্য মরণোত্তর একুশে পদক লাভ করেন।

জন্ম: কবি ও সাংবাদিক আবদুল গনি হাজারী  ১৯২১ সালের ১২ জানুয়ারি, পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার অন্তর্গত নাজিরগঞ্জ ইউনিয়নের  নওয়াগ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে  জন্মগ্রহণ করেন। 

পারিবারিক জীবন:  আবদুল গনি হাজারীর পিতা ইজ্জত উল্লাহ হাজারী। চার ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন পঞ্চম। স্ত্রীর হাসনা বেগম। তাঁদের একমাত্র ছেলে এরশাদ গনি হাজারী। 

শিক্ষা জীবন: আবদুল গনি হাজারী কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৪৪ সালে দর্শনে  বিএ (সম্মান) ডিগ্রি লাভ করেন। পরে একই বিষয়ে এমএ শ্রেণীতে অধ্যয়ন করেন, কিন্তু তাঁর ডিগ্রি অর্জন হয়নি।

আরও পড়ুন সুজানগর উপজেলার প্রথম এম এ পাশ মাওলানা রইচ উদ্দিন

কর্ম জীবন: আবদুল গনি হাজারীর  কর্মজীবন শুরু হয় ১৯৪৭ সালে কলকাতা থেকে প্রকাশিত ‘সাপ্তাহিক আলোড়ন’ পত্রিকায় সাংবাদিকতার মাধ্যমে। তিনি এই পত্রিকার সম্পাদকেরও দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৪৭ সালে দেশবিভাগের পর তিনি ঢাকায় চলে আসেন এবং জুবলি প্রেসের সহকারী ম্যানেজার হিসেবে যোগদান করেন। পঞ্চাশের দশকের শুরুতে তিনি চন্দ্রবিন্দু, মুক্তি (বাংলা) এবং দ্য রিপাবলিক (ইংরেজি) পত্রিকা প্রকাশ করেন। পরে তিনি বিভিন্ন পদে দ্য পাকিস্তান অবজার্ভার, দৈনিক সংবাদ, পূর্বদেশ, চিত্রালী এবং ১৯৬৫ থেকে ১৯৬৮ সাল পর্যন্ত ‘পরিক্রমা’ পত্রিকায় কর্মরত ছিলেন।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের পর তিনি ১৯৭২ থেকে ১৯৭৩ সালে অবজার্ভার গ্রুপ অব পাবলিকেশন্সের প্রশাসক এবং ১৯৭৪ থেকে ১৯৭৬ সালেদে সংবাদপত্র ব্যবস্থাপনা বোর্ডের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া তিনি লেখক সংঘ, ঢাকা আর্ট স্কুল, ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশনসহ বেশি কিছু সংগঠন প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন।

সাহিত্য কর্ম: আবদুল গনি হাজারী কবিতা রচনা করেও খ্যাতি অর্জন করেন। নাগরিক চেতনা ও বৈদগ্ধ্য তাঁর কবিতায় প্রতিফলিত হয়েছে। তিনি নগর জীবনের অসঙ্গতি ও বিকারসমূহ বিদ্রূপের ভাষায় তাঁর কাব্যে সফলভাবে তুলে ধরেছেন। তাঁর প্রতিটি কাব্যগ্রন্থেই সমকালীন সমাজচিত্র প্রতিফলিত হয়েছে। বিশেষ করে তাঁর কাব্যসমূহে ধরা পড়েছে মধ্যবিত্ত জীবনের অসহায়ত্ববোধ আর উচ্চবিত্ত জীবনের উচ্ছৃঙ্খলতা।

আরও পড়ুন মোহাম্মদ আবিদ আলী

কাব্যগ্রন্থ:

  • সামান্য ধন (১৯৫৯ খ্রি.)
  • সূর্যের সিঁড়ি (১৯৬৫ খ্রি.)
  • জাগ্রত প্রদীপ (১৯৭০ খ্রি.)

অনুবাদ গ্রন্থ:

  • লুসিয়াস এপুলিয়াসের স্বর্ণগর্দভ (১৯৬৪ খ্রি.)
  • ফ্রয়েডের মনঃসমীক্ষা (১৯৭৫ খ্রি.)

রম্যরচনা:

  • কালপেঁচার ডায়েরী (১৯৭৬ খ্রি.)

সম্মাননা:

  • কতিপয় আমলার স্ত্রী কাব্যের জন্য ইউনেস্কো পুরস্কার (১৯৬৪ খ্রি.)
  • কাব্যসাহিত্যে অবদানের জন্য বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৭২ খ্রি.)
  • সাংবাদিকতায় অবদানের জন্য একুশে পদক (১৯৯০ খ্রি.)

মৃত্যু: আবদুল গনি হাজারী  ১৯৭৬ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর মৃত্যুবরণ  করেন।

আরও পড়ুন আবদুল গনি হাজারী-
২য় পর্ব
৩য় পর্ব
৪র্থ পর্ব

 

 

ঘুরে আসুন আমাদের অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেলফেসবুক পেইজে

আবদুল গনি হাজারী (১ম পর্ব)

Facebook Comments Box

প্রকৌশলী আলতাব হোসেন, সাহিত্য-সংস্কৃতি বিকাশ এবং সমাজ উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে নিবেদিত অলাভজনক ও অরাজনৈতিক সংগঠন ‘আমাদের সুজানগর’-এর প্রতিষ্ঠাতা। তিনি ‘আমাদের সুজানগর’ ম্যাগাজিনের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ও প্রকাশক। এছাড়া ‘অন্তরের কথা’ লাইভ অনুষ্ঠানের সার্বিক তত্ত্বাবধায়ক তিনি। সুজানগর উপজেলার ইতিহাস, ঐতিহ্য, সাহিত্য, শিক্ষা, মুক্তিযুদ্ধ, কৃতি ব্যক্তিবর্গ ইত্যাদি বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করতে ভালোবাসেন। বিএসসি ইন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পন্ন করে বর্তমানে একটি স্বনামধন্য ওয়াশিং প্লান্টের রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট সেকশনে কর্মরত আছেন। তিনি ১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ই জুন পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার অন্তর্গত হাটখালি ইউনিয়নের সাগতা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

error: Content is protected !!