-
প্রথম শহর দেখা ও বিদেশ ভ্রমণ
প্রথম শহর দেখা ও বিদেশ ভ্রমণ তাহমিনা খাতুন শহর দেখা সম্ভবত দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময় পাবনা শহর দেখতে গিয়েছিলাম মেজ ভগ্নিপতি কাজী মর্তুজা মজিদের (মেজ দুলাভাই) এর সাথে। পেট্রোল চালিত লক্কড়-ঝক্কর বাসে চড়ে পাবনা শহর দেখতে গেলাম। এর আগে কোথাও বেড়াতে যাওয়া বলতে নিজের গ্রাম থেকে ৫/৬ কিলোমিটার দূরে মেজ বোনের শ্বশুর বাড়ি চরগোবিন্দপুর অথবা মাইল দুই/তিন দূরে বড় ভাইয়ের শ্বশুরবাড়ি সৈয়দপুর গ্রামে! আর সে ভ্রমণও ছিল মহিষের বা গরুর গাড়ি অথবা নৌকায় চড়ে। ষাটের দশকের মাঝামাঝি সময়ে ইঞ্জিন চালিত কোন যানবাহনে প্রথম ভ্রমণ করা! কাজেই বাসে চড়ে সেই প্রথম ভ্রমণ ছিল রীতিমত রোমাঞ্চকর! পাবনা শহরে ভ্রমণ করতে গিয়ে…
-
আত্মজীবনী, আহম্মদপুর, দ্বারিয়াপুর, মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধে সুজানগর, লেখক পরিচিতি, সাহিত্য, সৈয়দপুর (আহম্মদপুর)
একাত্তরের অগ্নিঝরা দিনগুলি
একাত্তরের অগ্নিঝরা দিনগুলি তাহমিনা খাতুন ১৯৭০ সালে অনুষ্ঠিত হয় পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচন। সে নির্বাচনে জাতীয় পরিষদের ১৬৯ টি আসনের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবর রহমানের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ ১৬৭ টি আসনে জয়লাভ করে। পক্ষান্তরে পশ্চিম পাকিস্তানে জুলফিকার আলী ভুট্টোর নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান পিপলস্ পার্টি ৮১টি আসনে জয়লাভ করে। পাকিস্তানের সামরিক শাসক ইয়াহিয়া খান, ৩ মার্চ ১৯৭১ ঢাকায় জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহ্বান করেন। পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ আনন্দে উৎফুল্ল। সবার আশা এতদিনে বাঙ্গালীর হাতে পাকিস্তানের শাসন ক্ষমতা আসার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। কিন্তু বাঙ্গালীর স্বপ্ন ভঙ্গ হতে দেরি হলো না। পাকিস্তানের সামরিক জান্তা ইয়াহিয়া খান ১৯৭০ সালের নির্বাচনের গণ রায়কে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ…
-
আমার শিক্ষাজীবন
আমার শিক্ষাজীবন তাহমিনা খাতুন আমি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের লেখাপড়া শেষ করলাম। পূর্বসূরী বড় বোনদের চেয়ে আলাদা নয় আমার গল্প! উচ্চশিক্ষার সুযোগের অভাব। প্রায় বছর খানেক কেটে গেল ঘরে বসেই। আমার তৃতীয় ভাই মরহুম খন্দকার আবুল খায়ের (বড় তিন ভাইয়ের মধ্যে কনিষ্ঠ হওয়ায় আমরা ছোট ভাই-বোনেরা তাঁকে ‘ছোট ভাই’ বলে সম্বোধন করতাম) যাঁর অবদান আমার জীবনে সবচেয়ে বেশী। শুধু আমার জীবনে নয়, আমার ছোট আরও তিন ভাই, বোনের জীবনেও ছোট ভাইয়ের অবদান অনস্বীকার্য! ছোট ভাই নিজে তখন ঢাকায় সামান্য বেতনে একটি চাকুরীর পাশাপাশি নৈশ কলেজে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করছিলেন। ছোট ভাই ছুটিতে বাড়ি এলেন। আমার কাছে জানতে চাইলেন কি করে সময়…
-
ভাই-বোনদের কথা
ভাই-বোনদের কথা তাহমিনা খাতুন আমারা মোট এগারো ভাই-বোন। আমাদের সবার বড় ভাই মরহুম খন্দকার আবু তাহের। আমাদের বড় ভাইকে আমরা ‘মিয়াভাই’ বলে সম্বোধন করতাম। মিয়া ভাই বয়সে আমার চেয়ে অনেক বড় ছিলেন। তিনি ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী। গ্রাম থেকে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে, মিয়া ভাই আমাদের গ্রাম থেকে বেশ কয়েক মাইল দূরে ধোবাখোলা করোরেশন উচ্চ বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হন, আমার জন্মেরও আগে! মাত্র ৫ম শ্রেণি থেকে ষষ্ঠ শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হওয়া এক বালক নিজ পরিবার ছেড়ে দূর গ্রামের অপরিচিত এক পরিবারে ‘লজিং’ বা ‘জায়গীর’ থেকে লেখা-পড়া চালিয়ে গেলেন। লজিং বা ‘জায়গীর থাকার’ ধারণাটা হয়তো এখন অনেকেরই অপরিচিত। বৃটিশ ভারতের শেষের…