-
মধুর স্মৃতি
মধুর স্মৃতি তাহমিনা খাতুন অল্প বয়সের স্মৃতি হয়তো মানুষ কখনো ভোলে না। তেমনি একটি স্মৃতি এখনও মনে পড়ে। আমার বড় ভাবী ও ওনার মায়ের টাইফয়েড বা ম্যালেরিয়া জাতীয় কোন জ্বর হয়েছিল। আমার ভাবী ছিলেন বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। ভাবীর বাবার একার পক্ষে দুই জন অসুস্থ মানুষকে সুশ্রুষা করা কঠিন হয়ে উঠেছিল। খবর পেয়ে মা ওনাদের সেবা করার জন্য আমাকে আর ছোট দুই ভাই-বোন বাসার আর তুষারকে নিয়ে ভাবীর বাবার বাড়ি সৈয়দপুর গেলেন। কয়েকদিন পর আব্বা আমাকে আনতে গেলেন। কয়দিনেই ভাবীর চাচাত বোনদের সাথে আমার বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছিল। আমি ফিরে আসার আগে আমার বন্ধুটি আমাকে ভালবেসে তার কিছু পুতুলের কাপড় আমাকে…
-
তৎকালীন গ্রামের চিত্র
তৎকালীন গ্রামের চিত্র ও শৈশবের পালা-পার্বন তাহমিনা খাতুন তৎকালীন গ্রামের চিত্র আমাদের ছেলেবেলার দ্বারিয়াপুরের সাথে বর্তমানের দ্বারিয়াপুরের এখন আর কোন মিলই খুঁজে পাওয়া যাবে না। আজ থেকে পঞ্চাশ বছর বা তার আগের দ্বারিয়াপুর ছিল ঘন বন-জঙ্গল, বিশাল বিশাল তেঁতুল গাছ, বিশাল আম, কাঁঠাল, লিচু, জাম, জামরুল ইত্যাদি গাছ-গাছালিতে ভরপুর। ছিল তাল, খেজুর, নারকেল, সুপারি। এক শান্ত গ্রাম। ভোর হওয়ার সাথে সাথেই পাখির কলকাকলীতে মুখরিত হয়ে উঠত চারিদিক। সন্ধ্যা নামার সাথে সাথেই শোনা যেত শেয়ালের হুক্কাহুয়া রব। বনবিড়াল, মেছো বাঘ (স্থানীয়ভাবে বলা হত বাঘ ডাঁশ) ঘরের আশেপাশে উঁকি-ঝুঁকি দিত। বাড়ির আশেপাশে ঝোপ জঙ্গলে সজারু, বেজী, বুনো খরগোশের (যাকে স্থানীয় ভাষায়…
-
শ্রদ্ধেয় শিক্ষকগণ
শ্রদ্ধেয় শিক্ষকগণ তাহমিনা খাতুন কিছুদিন আগে আমার স্কুল জীবনের প্রথম শিক্ষক জনাব নূরুল ইসলামের মৃত্যু সংবাদ পেলাম। প্রথম যেদিন আমার গ্রাম দ্বারিয়াপুরের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিশু শ্রেণিতে ক্লাস করতে গিয়েছিলাম, হয়তো বছর চারেক বয়স হবে, জনাব নুরুল ইসলাম আমাকে ডেকে কাছে বসিয়ে একটা ছড়া পড়ে শুনিয়েছিলেন। ছড়াটি এত বছর পরেও স্পষ্ট মনে আছে, এক যে ছিল ময়না, কত যে তার গয় না, আসমার কিছু দেয় না! আসমা আমার ডাক নাম। পরবর্তীতে শিক্ষক নূরুল ইসলাম সাহেব বৈবাহিক সূত্রে আমার ঘনিষ্ট আত্মীয় হয়েছিলেন। তিনি আমার আপন চাচাতো বোন লিলিকে বিয়ে করেছিলেন। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রায় সবার কথাই আমার মনে আছে! আমি যখন…
-
কামাল লোহানীর বিপ্লবমন্ত্রের প্রথম পাঠশালা
কামাল লোহানীর বিপ্লবমন্ত্রের প্রথম পাঠশালা ড. এম আবদুল আলীম ০১.বাংলাদেশের উত্তর জনপদের এক ঐতিহ্যবাহী জেলা পাবনা। এ জেলার মানুষ ইতিহাস-ঐতিহ্য-সংস্কৃতির নানা গৌরব বুকে ধারণ করে আছে। পাল রাজত্বকালের শেষভাগে বরেন্দ্র অঞ্চলের মাটিতে আছড়ে পড়া কৈবর্ত বিদ্রোহে এখানকার মানুষ অংশগ্রহণ করেছিলো। মুসলিম শাসনামলে পাঠান-মোগল সেনাদের ছাউনি ছিলো এই মাটিতে। ইংরেজ আমলে এখানে সংঘটিত হয় সন্ন্যাসী বিদ্রোহ, কৃষক বিদ্রোহ, স্বদেশি আন্দোলনসহ নানা সংগ্রাম। ব্রিটিশদের বিতাড়িত করতে পাবনার মেয়েরা পর্যন্ত অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিলো! বিপ্লবী চারু মজুমদার বিপ্লবের প্রথম পাঠ গ্রহণ করেছিলেন পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ থেকে। পরবর্তীকালে ভাষা-আন্দোলন, স্বাধিকার-সংগ্রাম এবং মুক্তিযুদ্ধে এ মাটির সন্তানেরা বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়েছেন। একাত্তরের পঁচিশে মার্চ অপারেশন সার্চলাইট…