-
হৃদয়পটে, আসবো ফিরে, দহন দাবানল
হৃদয়পটে পূর্ণিমা হক এখানে আকাশ নীল জমিনের বিস্তৃত সুবিশাল পরিসরে নির্জনতায়, নিঃশব্দে সাড়ে তিন হাত মাটির হৃদয়ে ঠিকানা হয়েছে তোমার। তোমার রেখে যাওয়া আনন্দ বেদনাগুলো করে বাস অবিচ্ছেদ্য আত্মীয়ের মতো- আমার হৃদয় পিঞ্জরে। ঋতু যায় ঋতু আসে জীবন শুধু যেতে পারে না ফেরার দেশে। তুমি তো নিসর্গের মতো- আপন আত্মার বিচ্ছেদে হয়েছো বিলীন, হাত রেখেছি আমি তোমার নিথর দেহে, শীতল কপালে- শেষ স্পর্শের অনুভূতিটুকু নিয়ে আমিও হয়েছি বিলীন। তবুও ব্যথার নীল বেয়ে জ্বলে ওঠে অন্য এক সুখ। পূর্ণিমার চাঁদ, স্নিগ্ধ হাওয়া, পাখির কলতান আকাশের নীলে তোমার বসতি যেনো নতুন দিনের মতো পুবাকাশে নতুন জীবন। তোমার প্রেরণাগুলো ঘাসফুল হয়ে রয়…
-
সম্পর্ক, আমার জন্য নয়
সম্পর্ক পূর্ণিমা হক বাবা বেঁচে থাকতে আমাদের সম্পর্কগুলো ছিল বৃষ্টিস্নাত পুঁইডাঁটার মতো লকলকে সবুজ প্রাণময়, বাবা সযত্নে মাচানে ছড়িয়ে দিতেন সম্পর্কের সবুজ ডালপালাগুলো, একসময় সেগুলো ছড়াতো বাড়ির উঠোন জুড়ে। বাবা ছিলেন সফল মায়া চাষি মাঙ্গলিক আয়োজনে দিনরাত সাজাতেন সম্পর্কের সাতরং, শেখাতেন ভালোবাসার নিবিড়তায় মানুষ হয়ে ওঠার স্বাবলম্বীতা। দুধসাদা পায়রার দল এসে যখন আমাদের মাচানে পুচ্ছ দুলিয়ে বাকম বাকম স্বরে ডেকে উঠতো সম্পর্কের মুখগুলো ভরে যেতো ভালোবাসার অব্যক্ত জলছাপে; আলোক জোছনার মতো সবুজ মায়ার ঘরে নেমে আসতো সাদা সুখের শুভ্রতা ঠিক বুঝে নিতাম সম্পর্কটা এমনই হয়, হতে হয়। বাবাহীন সম্পর্কের মাচান জুড়ে আজ প্রাণহীন পুঁইডাঁটা উঠোন জুড়ে শুকনো পাতার রিক্ততা…
-
অষ্টাদশী মন, মল্লিক বাড়ির চাঁদ
অষ্টাদশী মন পূর্ণিমা হক কুড়ি বছর আগের অষ্টাদশী আমি চোখে কাজল এঁকে, মুখে তিব্বত স্নো মেখে বেণী দোলাতে দোলাতে শ্যামলীদির বাগানে যেতাম। বাগানের বকুল, বেলী, কামিনী, হাসনাহেনার মন মাতানো সৌরভ আমায় আচ্ছন্ন করত, মন চাইতো রঙিন প্রজাপতি হয়ে উড়ে বেড়াই ফুলে ফুলে আকাশের নীলে; ভালোবাসার পংক্তি সাজাতে সাজাতে কখন যেনো পাড়াগাঁয়ের নদী হয়ে যেতাম শান্ত জলে সাঁতার কাটতো ইচ্ছের শাদা শাদা পাতিহাঁস, পানকৌড়ির মতো চুপচুপ ডুব দিতো সত্তার অজানা অনুভূতি; কখনো বা হয়ে যেতাম ফুল পাতার মায়াময় অরণ্য। মনের গোপন গহীনে আজও অষ্টাদশী আমি আর শ্যামলীদির সুবাসিত বাগান। ইদানীং সৌখিন সুখগুলো ঝুলবারান্দায় ফুটতে দেখি কাগজের ফুলের মতো গন্ধহীন,অনুভূতিহীন। নাগরিক…
-
ফেরা হয় যদি আবার, ভেতরবাড়ীর মাঠ, অথচ মানুষ
ফেরা হয় যদি আবার পূর্ণিমা হক ফেরা হয় যদি ছেলেবেলায় আবার ঘাসফুল হয়ে রবো বুনোলতার ছায়; মাথার উপরে শরতের চাঁদ হিল্লোলিত সারাক্ষণ নিঃশঙ্ক হাওয়ায় ভেজা রাত, পত্রপুটে রেখে দেবো মায়ার শরাব। ফেরা হয় যদি আবার ধুলোমাখা মলিন বসনে- কুড়াবো বকুল,পলাশ, শিমুল কোচাভরা পাকা পাকা কুল, রাঙাবো আলতা পায়ে, পরে নেব কলাপাতা নূপুর। ফেরা হয় যদি পেছনের তামাটে জীবন ভুলে কাটবো সাঁতার শাপলাফোটা বিলে স্মৃতিকুড়ানী হবো, ঘুরে ঘুরে চেনা প্রান্তরে গাইবো দুঃখ ভোলানিয়া গান কোকিলের মধুক্ষরা স্বরে। ফেরা হয় যদি আবার নিস্তব্ধ রাতের প্রার্থনায় স্রষ্টার কাছে মিনতি রেখে মৃত্যুপুরীর রোজনামচা থেকে কেটে নেবো বাবার নাম! নির্ভার হাতটি ধরে হেঁটে হেঁটে…
-
পূর্ণিমা হক
পূর্ণিমা হক, এ সময়ের একজন জনপ্রিয় কবি হিসেবে কবিতা প্রেমিদের মনে জায়গা করে নিয়েছেন। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থের বাইরেও তাঁর লেখা বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকা ও অনলাইন পত্রিকায় নিয়মিত প্রকাশ হচ্ছে। জন্ম: পূর্ণিমা হক ১৯৭৮ সালের ৫ নভেম্বর, রংপুর সদর উপজেলার পুটিমারি গ্রামের শেখ পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার অন্তর্গত সাতবাড়িয়া ইউনিয়নের ভাটপাড়া গ্রামের পুত্রবধু। পারিবারিক জীবন: পিতা মৃত আতিয়ার রহমান (অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ), মাতা ফজিলাতুন্নেছা, পেশায় গৃহিণী। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে তিনি প্রথম। স্বামী কবি মো: ফজলুল হক, পেশায় সরকারি কর্মকর্তা। তিনি দুই কন্যা সন্তানের জননী। বড় মেয়ে রাজশাহী নিউ ডিগ্রী সরকারি কলেজ থেকে এবছর (২০২১) এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে।…