-
একজন কিশোরীর প্রেম (শেষ পর্ব)
একজন কিশোরীর প্রেম (শেষ পর্ব) এ কে আজাদ দুলাল ──জানো বৌদি, দেশ ছেড়ে যাওয়ার ঠিক রাতে কি ঘটেছিলো? আমরা দেশ ছেড়ে চলে যাবো এটা মোটামুটি সিদ্ধান্ত ছিলো। সব জায়গায় কেমন যেন থমথমে আতঙ্কভাব। নিরাপত্তার অভাব সবার ভেতরে। আমাদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বিক্রি হয়ে গেছে। যারা কিনেছিল তারাই বাবাকে আশ্বাস দিয়েছিলো সুযোগ বুঝে বর্ডার পাড় করে দিবে। তারা কথা রেখেছিলেন। কিন্তু বর্ডার পাড় হয়ে আমাদের বেশ ক’মাস কষ্টে দিন কাটাতে হয়েছিল। মামা আমাদের সব ব্যবস্থা করে রেখেছিলো। তখন গ্রামের কথা খুব মনে পড়তো। দিন তো সমান যায় না। ──প্রতিবারের মতো এবাবও দূর্গাপূজা দেখতে গেছি ঠাকুর বাড়িতে। বিমলদা তার বন্ধুদের নিয়ে রাতে…
-
একজন কিশোরীর প্রেম (২য় পর্ব)
একজন কিশোরীর প্রেম (২য় পর্ব) এ কে আজাদ দুলাল ──সাগরদা কেমন আছো? সাগর ক্রমান্বয়ে কেমন যেন অতল চিন্তার ভেতরে ঢুকে যাচ্ছে। বিমল-বাসন্তীর পাতা এ কোন ধরনের ফাঁদে ফেললো তাকে। এটা নিছক মজা বা কৌতুক নয় তো? শীতের সকাল সাগরের শরীর ঘামছে। ফুলহাতা সোয়েটার পরেছে। অস্বস্তি বোধ করছে। এটা কি রসিকতা, না অন্য কিছু? ──বাসন্তীদি, তোমাদের বন্ধু ঘামছেন। ফ্যান চালু করে দাও। সাগরদা বলতো ছোট বেলায় তোমার কোন ফুল প্রিয় ছিলো? সাগর আরও আশ্চর্য হয়ে গেলো সরাসরি তুমিতে এবং ছোট বেলায় তার কোন ফুল প্রিয় ছিলো। হ্যাঁ, ছিলো তো বটেই। এই তো গাঁদা ফুল। এখনই হয়ত বলবে প্রতিদিন স্কুলে ফুলগুলো…
-
একজন কিশোরীর প্রেম (১ম পর্ব)
একজন কিশোরীর প্রেম (১ম পর্ব) এ কে আজাদ দুলাল শীতের সকাল। গ্রামে শীতের আমেজ আলাদা। ইচ্ছে করে বিছানায় শুয়ে থাকা যায় না। অনেক দিন পর সপরিবারে গ্রামের বাড়িতে এসেছে সাগর। গ্রামের লোকজন এবং আত্মীয়-স্বজনের কাছে সাগর নামেই পরিচিত। সমবয়সী এবং বয়োজ্যেষ্ঠ আত্মীয়-স্বজন এবং গ্রামবাসী তাকে এই নামে চেনে। এ প্রজন্মের অধিকাংশ ছেলে-মেয়ে তার নাম শুনেছে, তবে পরিচয় হওয়ার সুযোগ হয়নি। বছর দুয়েক হলো নিয়মিত গ্রামে যাতায়াতে অনেকেই এখন তাকে চেনে। তাদের সঙ্গে আড্ডা দেয় সাগর। সাগর বাড়িতে এলে আলাদা আনন্দের ঢেউ বয়ে যায়। যে ক’দিন ছেলে-মেয়ে নিয়ে থাকে, সবার সাথে মিলেমিশে থাকে। ছেলে-মেয়েরা বেশ আনন্দ করে অবকাশ সময় কাটিয়ে…
-
জোছনা মাখা আলো (শেষ পর্ব)
জোছনা মাখা আলো (শেষ পর্ব) এ কে আজাদ দুলাল হক সাহেবের পিছনে পিছনে পশ্চিম দিকের দরজা দিয়ে ঢুকতেই চোখে পড়ে লম্বা বারান্দা। বারান্দায় ডান দিকে পর পর দুটো কামরা। তালা দেয়া। তারপর রান্না ঘর। রান্না ঘরের সামনে ডাইনিং। বাম দিক পুরোটা গ্রিল দিয়ে আটকানো। বেশ বড় উঠোন এবং তারপর বিভিন্ন জাতের ফলজ গাছ। আছে বিভিন্ন জাতের ফুল গাছ। এটা একটা সৌখিন রুচিশীল শিক্ষিত ভদ্রলোকের বাড়ি এতে কোন সন্দেহ নেই। দু’ভাই একে অপরের দিকে তাকায়। আলো বুঝতে পারছে, এ রকম পরিবেশ দেখে মনে খটকা লাগছে দু’ভাইয়ের মনে। —কি, বিশ্বাস হচ্ছে না গ্রামে এ রকম একটা বাড়ি থাকতে পারে? এটা আমার…
-
জোছনা মাখা আলো (২য় পর্ব)
জোছনা মাখা আলো (২য় পর্ব) এ কে আজাদ দুলাল একটা জিনিস শামিমের চোখে পড়ে ঘরে ঢুকতেই তা হলো, সামনে দেয়ালে বঙ্গবন্ধুর একটা ছবি টাঙানো এবং তার পাশে একটু নিচে পাঁচজনের একটা গ্রুপ ছবি। তাদের হাতে যুদ্ধকালীন ব্যবহৃত অস্ত্র। কি সুন্দর উজ্জ্বল সাহসী যুবক। এক নজরে শামিম সব দেখে নিয়েছে। ভেতরে হয়ত আরো দু’তিনটি ঘর বা রুম থাকতে পারে। সব মিলে রুচি সম্পন্ন ভদ্র লোকের বাসগৃহ। গ্রামে এ রকম পরিবেশ খুব কমই চোখে পড়ে। দুজন দুটো চেয়ারে বসে পড়ে। ডান দিকে দরজা দিয়ে মুরুব্বি ভেতরে গেলেন। হয়ত তিনি তার মেয়ের অনুমতি নিয়ে ফিরে আসবেন। প্রায় পনের মিনিট পর গায়ের পোশাক…
-
জোছনা মাখা আলো (১ম পর্ব)
জোছনা মাখা আলো (১ম পর্ব) এ কে আজাদ দুলাল হেমন্ত কাল চলছে। বর্ষা-শরৎ শেষ হলেও হেমন্তে বর্ষায় প্লাবিত ডুবে যাওয়া খাল-বিল এখনো পানিতে থৈ থৈ। গ্রামের নিচু জায়গা নরম কাঁদায় তুলতুলে মাটি। কেমন যেন একটা মিষ্টি গন্ধ শামিমের নাকে এসে ঢোকে । গন্ধটা খারাপ লাগছে না শামিমের। এমন গ্রাম বাংলা পৃথিবীর অন্য কোথাও আছে কিনা সন্দেহ। “আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি” জাতীয় সংগীতের লাইনটি মনের ভেতরে বেজে ওঠে। এই তো মাস ছয় হলো এমপিও ভুক্ত কলেজে পদার্থ বিজ্ঞানে প্রভাষক পদে যোগদান করেছে। হাতের নাগালেই কলেজ। মায়ের ইচ্ছে তাকে বাড়িতে থাকতে হবে। আর বাবার ইচ্ছে ছোট ভাই তামিম একজন…
-
পথভোলা এক পথিক (শেষ পর্ব)
পথভোলা এক পথিক (শেষ পর্ব) এ কে আজাদ দুলাল বড় বোন নতুন বৌকে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। নতুন গৃহিণী বু’র সাথে দল বেধেছে। ছুটির ব্যবস্থা করেছে। বাকী আমি। ভাগনের পরীক্ষা শেষ হলেই যাত্রা শুরু করবো। তারা কেনাকাটা শুরু করেছে। আর মাত্র ক’টা দিন, তারপর এক সপ্তাহের ছুটি। কতদিন গ্রামে যাওয়া হয় না। সাথে থাকবে নতুন বৌ। মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে ছুটি শুরু হবে। কলেজে প্রয়োজনীয় কাজ সেরে বেড়িয়ে পড়লাম। সাথে শাহানা। হাঁটতে হাঁটতে বাসস্টাণ্ডে এসে, ওভার ব্রিজের মাথায় দাঁড়াতেই ঘুর্ণিঝড়ের মত সাঁ করে সামনে দাঁড়ালো শ্যামলী। আজ সুন্দর করে সেজেছে। চোখে পড়ার মত। প্রথমে টের পায়নি। কথা বলার…
-
পথভোলা এক পথিক (৩য় পর্ব)
পথভোলা এক পথিক (৩য় পর্ব) এ কে আজাদ দুলাল শ্যামলীর সঙ্গে প্রতিদিন বাস স্টেশনে দেখা হচ্ছে, কথা হচ্ছে। ইদানিং লক্ষ্য করছি, আমাকে আরো কাছে পেতে চায় এবং বেশ কিছু সময় কাটাতে আগ্রহ দেখায়। ভাবলাম এভাবে চলতে দেয়া ঠিক হবে না। আবার হঠাৎ করে বন্ধও করা যাবে না। কৌশলে সব কিছু করতে হবে। কথায় আছে লাঠিও ভাঙবে, না সাপও মরবে। একটু সময় নিয়ে কথা বলতে হবে, তারপর মন্ত্র পড়তে হবে, যদি কাজে লাগে তো ভাল। আর যদি না হয়, পথ তো একটা ধরতেই হবে। এ নিয়ে কারো সাথে আলোচনা-পরামর্শ করার উপায় নেই। বাসা হতে সিদ্ধান্ত নিয়েই বের হলাম। আজ বৃহস্পতিবার।…
-
পথভোলা এক পথিক (২য় পর্ব)
পথভোলা এক পথিক (২য় পর্ব) এ কে আজাদ দুলাল তখন আমি সবেমাত্র সরকারি কলেজে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেছি। থাকি মোহাম্মদপুর, বড় বোনের বাসায়। মোহাম্মদপুর হতে ফার্মগেট, তারপর সরকারী বিজ্ঞান কলেজ। দশটা-পাঁচটা কলেজ। পাবলিক বাসে আসা-যাওয়া। উপায় নেই। বিয়ে না করা পর্যন্ত আলাদা বাসস্থানে যাওয়া যাবে না, বড় বোনের নির্দেশ। দুলাভাই এজিবি অফিসে অডিটর পদে চাকরিরত। দুটো বাচ্চা। বোনের সাথে চুক্তি ছিলো মাস শেষে তাদের সংসারে কিছু অর্থ দেবো। বোন বলে কথা। প্রথমে রাজি হয়নি। অনেক পীড়াপীড়িতে রাজি হয়েছিল। ছোট দুটো ভাই-বোন এখন ছাত্র। বাবা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। চাকরি বেশি দিন নেই। সংসারের কথা চিন্তা করে বিয়ের পথে এখনো হাটা…
-
পথভোলা এক পথিক (১ম পর্ব)
পথভোলা এক পথিক (১ম পর্ব) এ কে আজাদ দুলাল করোনা বিষাদ কাল। সারা বিশ্ব স্থবির। ব্যবসা থেকে আরম্ভ করে সকল প্রকার কর্মকাণ্ড এক কথায় অচল। এর মধ্যে বিনোদনের কথা ভাবাই যায় না। তাই বলতে গেলে গত বছর বাঙালির জীবনের শ্রেষ্ঠ উৎসব পহেলা বৈশাখ এবং ভাষার মাস ফ্রেরুয়ারি যাপন করা সম্ভব হয়নি। এ বছরে যথা সময়ে বইমেলা আয়োজন করা সম্ভবপর হয়নি। তবে সেটা হয়েছে মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে, দু-সপ্তাহের জন্য। এবার একটা উপন্যাস বের হয়েছে। প্রকাশক সাহেব একদিন মোবাইলে কটুকথা শোনালেন। __আরে ভাই, বই প্রকাশ করে, ঘরে ঘোমটা দিয়ে বসে থাকলে কি বই প্রচার হবে? কাহিনী ভালো দেখে বইটি প্রকাশ করলাম।…