-
সুকৃতি এবং বৈরীকাল (শেষ পর্ব)
সুকৃতি এবং বৈরীকাল (শেষ পর্ব) খলিফা আশরাফ ইদানিং সুকৃতির কিছু নতুন বন্ধু জুটেছে। ওরা গান গায়, গিটার বাজায়, ব্যান্ড দল করে। তারা এসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সুকৃতির রুমে আড্ডা মারে। ওর মা বলছিল, আজকাল সুকৃতি সিগারেট খাওয়া শুরু করেছে। প্রায়শই ওর রুম থেকে গন্ধ পাওয়া যায়। কখনো কখনো নাকি বেশ কটু গন্ধ আসে। খুবই দুশ্চিন্তায় পড়লেন বাবা। বাউলদের মজমা-আসরের সাথে গাঁজার একটা অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক আছে। বেশির ভাগ বাউলই গাঁজায় বুঁদ হয়ে বিশেষ উন্মাদনায় নিজেদের সমর্পণ করে ভাবের জগতে। তাই বাউলদের আসরে যাবার তথ্য যখন বাবা পেয়েছিলেন, তখন থেকেই এক অজানা আশঙ্কা তাকে তাড়া করে ফিরছিল। সেটাই বুঝি সত্য হলো!…
-
সুকৃতি এবং বৈরীকাল (২য় পর্ব)
সুকৃতি এবং বৈরীকাল (২য় পর্ব) খলিফা আশরাফ অনেক বাবা-মা এক সাথে থেকেও হাজার কাজের চাপে সন্তানদের একেবারেই সময় দিতে পারেন না। কিন্তু তাঁরা বুঝতেও পারেন না নিজের অজান্তে কত বড় ক্ষতি করছেন সন্তানের। যে সন্তানের জন্যে বাবা-মা’র হাড়ভাঙ্গা শ্রম, সার্বিক চেষ্টা-প্ৰয়াস, সেই পিতা-মাতাই যদি সন্তানের সুন্দর মানসিক গঠনে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়, তবে অনুশোচনার আর জায়গা থাকে না। সুকৃতি তার বঞ্চনা নিয়ে কোনোদিন মুখে অনুযোগ না করলেও ভেতরের উষ্মা থেকে তার মধ্যে এক ধরনের নিভৃতচারিতা গড়ে উঠেছিল। সে হয়ে উঠেছিল ভীষণ রকম অন্তর্মুখী। ছুটি-ছাটায় বাড়িতে এলেও সারাক্ষণ ডেক্সটপ আর বই নিয়েই ব্যস্ত থাকত সে। আচরণেও তেমন কোনো চপলতা নেই, বয়সের…
-
সুকৃতি এবং বৈরীকাল (১ম পর্ব)
সুকৃতি এবং বৈরীকাল (১ম পর্ব) খলিফা আশরাফ সুকৃতির লাশটা পৌছুতেই এক অভূতপূর্ব বিষাদ আর অন্তহীন কান্না গ্রাস করল পুরো বাড়িটাকে। বেদনার একটা গাঢ় নিকশ কালো চাদর ঢেকে দিলো সবুজ হৃদয়ের সুবর্ণ প্রত্যাশা, হিরণময় সম্ভাবনার মোহন শরীর। তেইশ বছরের টগবগে সুদর্শন সুকৃতি যখন বাড়ি থেকে ‘এই আসছি’ বলে বেরিয়েছিল, তখন কেউ ভাবতেই পারেনি সবাইকে কাঁদিয়ে সে ফিরবে নিঃসার লাশ হয়ে। বহুমুখী প্রতিভাময় সুকৃতিকে ঘিরে বাবা-মায়ের স্বপ্নের এক সুরম্য ভূবন তৈরি হয়েছিল। খুব ছোটবেলায় ওকে দেখেই এক জ্যোতিষী বলেছিল, এ ছেলে অনেক বড় হয়ে দেশের মুখ উজ্জ্বল করবে। ক্রমাগত ওর বহুমাত্রিক প্রতিভার স্বতঃস্ফুরন আর জ্যোতিষীর কথায় প্রত্যয়ী হয়ে উঠেছিল বাবা-মা’র মনও।…
-
তিনি একজন মহিলা মুক্তিযোদ্ধা (শেষ পর্ব)
তিনি একজন মহিলা মুক্তিযোদ্ধা (শেষ পর্ব) খলিফা আশরাফ যুদ্ধাহত মহিলা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ময়নার তখন আলাদা সম্মান। এলাকার মানুষের কাছে তার বীরের মর্যাদা। একদিনের অপাংতেয় ময়না এখন সকলের গর্বের প্রতিক। ক্র্যাচে ভর করা ময়নাকে যেদিন এলাকায় নিয়ে যাওয়া হলো, অবাক হয়ে সে দেখলো তার জন্যে আয়োজন করা হয়েছে বীরোচিত সংবর্ধনা। প্যান্ডেল টাঙ্গিয়ে স্টেজ করা হয়েছে, দুপাশে বাঁশের মাথায় বাঁধা হয়েছে মাইক, তিনকোণা করে রঙ্গিন কাগজ কেটে আর বাংলাদেশের ছোট ছোট পতাকা দড়িতে আঠা দিয়ে লাগিয়ে দিয়ে সাজানো হয়েছে চারিদিক। উঁচু করে তৈরি করা হয়েছে স্টেজ। তার উপর টেবিল, পেছনে কয়েকটা চেয়ার। মাঝখানের চেয়ারটা একটু বড়। উপরে সুন্দর একটা তোয়ালে বিছানো।…
-
তিনি একজন মহিলা মুক্তিযোদ্ধা (৪র্থ পর্ব)
তিনি একজন মহিলা মুক্তিযোদ্ধা (৪র্থ পর্ব) খলিফা আশরাফ ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ। কাল রাত্রে ঢাকায় হাজার হাজার নিরস্ত্র নিরীহ বাঙ্গালীকে হত্যা করলো বর্বর পাকিস্তানি বাহিনী। নৃশংস হত্যাকান্ড। রাস্তা-ঘাট, অলি-গলি, ঘরে-বাইরে সর্বত্র লাশের স্তুপ। পুড়িয়ে দেয়া হলো ঘর-বাড়ি, দোকান-পাট, অফিস-আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ঢাকা নগরী ভাগাড়ে পরিণত হলো। জীবন বাঁচাতে সব কিছু ফেলে ঊর্ধ্বশ্বাসে মানুষ পালাতে শুরু করলো। কেউ পারলো, আবার কেউবা পালাতে গিয়ে বেঘোরে প্রাণ দিলো। ২৬ মার্চে হাজি সাহেব দোকানও খোলেননি, বাইরেও বের হননি। বংশাল মেইন রোডের সাথেই তিন তলা বিশাল বাড়ি তাঁর। দোকানের ম্যানেজারও তাঁর বাড়িতেই ছিলেন। কিন্তু কেউই বাঁচতে পারেনি। কসাই পাকসেনারা নির্মমভাবে হত্যা করেছিলো পুরো পরিবারকে।…
-
তিনি একজন মহিলা মুক্তিযোদ্ধা (৩য় পর্ব)
তিনি একজন মহিলা মুক্তিযোদ্ধা (৩য় পর্ব) খলিফা আশরাফ একদিন রাতে মধুকে তাঁর ঘরে ডেকে নিয়ে হাজি সাহেব বললেন, “ওই মধু তুই তো বহুতদিন আমার এইহানে কাম করছস। তর মেলা ট্যাকা জইমা গ্যাছে। আমারও বয়স হইচে। কহন কি হয়া যায় কয়া তো যায় না। আমি দেনা রাইখ্যা মরবার পারুম না। তর ট্যাকা তুই হিসাব কইরা লইয়া ল।” মধু কোন কথা না বলে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে। লোকটাকে সে বাবার মতো শ্রদ্ধা করে। এই মানুষটা কখনো মধুকে কর্মচারীর মতো দেখেননি। সন্তান স্নেহেই আগলে রেখেছেন। বিশাল বাড়িতে তাঁর অন্য দুই ছেলের মতো মধুর জন্যেও আলাদা একটা রুম দেয়া হয়েছে। এক সময়ের নিরাশ্রয়…
-
তিনি একজন মহিলা মুক্তিযোদ্ধা (২য় পর্ব)
তিনি একজন মহিলা মুক্তিযোদ্ধা (২য় পর্ব) খলিফা আশরাফ গরিব মুদি দোকানদার সহ-মুক্তিযোদ্ধা শফি সাহেব, তাঁর ঘরের বারান্দায় থাকতে দিয়েছেন বীর মহিলা মুক্তিযোদ্ধাকে। বাঁশের চাটাই দিয়ে চার পাশটা ঘিরে দিয়ে একটা ঘরের মতো করা হয়েছে। সেখানেই থাকেন তিনি। কোন ভাড়া দিতে হয় না। শুধু তিন বেলা খাবারের জন্যে প্রতি মাসে যা পারেন দেনতিনি। তাও ধরাবাঁধা কিছু নেই। কোন মাসে একেবারেই দিতে পারেন না। আবার কোন মাসে হয়তো প্রয়োজনে মুক্তিযোদ্ধা ভাতার পুরোটাই দিয়ে দেন। এ নিয়ে আশ্রয়দাতার কোন অনুযোগ বা চাহিদা নেই। একজন অসহায় সহ-মুক্তিযোদ্ধাকে যে তিনি সহযোগিতা করতে পারছেন, সেটাই বড় কথা তার কাছে। বরং সবিনয়ে তিনি বলেছেন, “আপা, আমি…
-
তিনি একজন মহিলা মুক্তিযোদ্ধা (১ম পর্ব)
তিনি একজন মহিলা মুক্তিযোদ্ধা (১ম পর্ব) খলিফা আশরাফ বাসে করে মিরপুর যাচ্ছি। প্রচণ্ড ভিড়। সিট ছাড়াও গাদাগাদি করে দাঁড়িয়ে আছে অনেক যাত্রী। কয়েকজন মহিলা যাত্রীও রড ধরে দাঁড়িয়ে আছেন। এমনিতেই তিল ধারনের জায়গা নেই, তারপর আরও যাত্রী তুলতে “মিরপুর-১১/১২, মিরপুর-১১/১২” করে চেঁচাচ্ছে হেল্পার। গরমে অতিষ্ঠ কয়েকজন যাত্রী ক্ষেপে উঠলো, “ঐ মিয়া যাত্রী কি তোমার মাথায় লইবা?” কয়েকজন তো রেগে খুব বিশ্রী ভাষায় গাল দিলো হেল্পারকে। কিন্তু হেল্পার ছেলেটা খুবই বেহায়া টাইপের। ওইসব নোংরা গালটাল গায়ে না মেখে দাঁত কেলিয়ে হাসছে সে। আবার গদগদ বিনয় দেখিয়ে বলছে, “রাগ কইরেন না সাব। একটু পিছায়া খাড়ান, কম কইরা আরও ১০ জন লওন…
-
অন্ধকারে জ্বলে দ্বীপশিখা (শেষ পর্ব)
অন্ধকারে জ্বলে দ্বীপশিখা (শেষ পর্ব) খলিফা আশরাফ মেম্বারের ছেলেরা নিজেদের মধ্যে আলাপ আলোচনা করে এভাবে আপোসে রাজি হয়ে গেলো। চেয়ারম্যান সাহেব বললেন, ── ঠিক আছে, আমি একটু শুকুর আলির সাথে কথা বলে নেই। আমার মনে হয়, তার পাছেও শিক্ষিত লোক আচে। তা না হলি সে DNA টেস্ট বুঝতো না। সে জন্যে, সব গোপন ভাবেই করা লাগবি। তোমরা এখন যাও, খবর দিলি আসো। পরদিন সকালে শুকুর আলিকে আসবার জন্য খবর দিলেন তিনি। শুকুর আলি কাজ কাম সেরে বিকালে এলো। চেয়ারম্যান সাহেব তাকে নিয়ে একা বসলেন। মেম্বারের ছেলেদের সাথে আলোচনার কথা গোপন রেখেই বললেন, ── দ্যাখো শুকুর আলি, তোমরা সগলেই আমার…
-
অন্ধকারে জ্বলে দ্বীপশিখা (২য় পর্ব)
অন্ধকারে জ্বলে দ্বীপশিখা (২য় পর্ব) খলিফা আশরাফ পরদিন সকালেই জজ কোর্টে ছুটলো শকুর আলি। মাস দেড়েক পরে কোর্ট থেকে মতিন মেম্বারের নামে DNA টেস্টের জন্য সমন জারি হল, সিভিল সার্জনকে দুই মাসে মধ্যে DNA টেস্টের রিপোর্ট দাখিল করতে নির্দেশ দিলো কোর্ট। কোর্টের সমন এলাকায় একেবারে হৈচৈ ফেলে দিলো। অনেক দিনের পুরনো প্রায় মৃত বিষয় আবার আলোচনার প্রধান আকর্ষণ হয়ে দাঁড়ালো। মতিন মিয়া মুখে এটাকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিতে চাইলেও মনের কছে সঙ্কিত হয়ে উঠলেন। তিনি চেয়ারম্যানকে সাথে নিয়ে শহরের সবচেয়ে বড় উকিলের কাছে গেলেন। তাঁর পরামর্শেই urgent fee দিয়ে আর্জির নকল তুললেন। উকিল সাহেব মনোযোগ দিয়ে আর্জিটা পড়লেন। তারপর…